ডিম চপ রেসিপি
ডিম চপ! নামটা শুনলেই জিভে জল এসে যায়, তাই না? বৃষ্টি ভেজা দিনে কিংবা অলস বিকেলে এক কাপ চা আর সাথে মুচমুচে ডিম চপ – জাস্ট জমে যায়! কিন্তু দোকানের মতো পারফেক্ট ডিম চপ বানানোর রেসিপিটা জানা না থাকলে মন খারাপ হওয়াটা স্বাভাবিক। চিন্তা নেই, আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব একদম সহজ আর পারফেক্ট ডিম চপ রেসিপি, যা আপনাদের মন জয় করে নেবে।
ডিম চপ তৈরির উপকরণ
ডিম চপ বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো হাতের কাছে থাকলেই কাজটা সহজ হয়ে যায়। চলুন, দেখে নেয়া যাক কী কী লাগবে:
ডিমের প্রস্তুতি
- ডিম: ৪টি (সেদ্ধ করা)
- লবণ: পরিমাণ মতো
আলুর পুরের জন্য
- আলু: ২৫০ গ্রাম (সেদ্ধ করে ম্যাশ করা)
- পেঁয়াজ কুচি: ১টি (বড়)
- কাঁচা লঙ্কা: ২-৩টি (স্বাদমতো)
- আদা বাটা: ১ চামচ
- রসুন বাটা: ১ চামচ
- জিরা গুঁড়া: ১/২ চামচ
- ধনে গুঁড়া: ১/২ চামচ
- গরম মসলা: ১/৪ চামচ
- লবণ: স্বাদমতো
- হলুদ গুঁড়া: ১/৪ চামচ
- সরিষার তেল: ২ চামচ
- ধনে পাতা কুচি: ২ চামচ
কোর্টিং-এর জন্য
- ডিম: ১টি (ফেটানো)
- বেসন: ১/২ কাপ
- কর্ণফ্লাওয়ার: ২ চামচ
- লবণ: সামান্য
- বিস্কুটের গুঁড়া: ১ কাপ (ব্রেড ক্রাম্বস)
- সাদা তেল: ভাজার জন্য
ডিম চপ তৈরির পদ্ধতি
ডিম চপ তৈরি করাটা খুব একটা কঠিন নয়। একটু মনোযোগ দিলেই দোকানের চেয়েও ভালো ডিম চপ তৈরি করতে পারবেন।
ডিমের প্রস্তুতি
- প্রথমে ডিমগুলো সেদ্ধ করে নিন। ডিম সেদ্ধ হয়ে গেলে খোসা ছাড়িয়ে মাঝখান থেকে অর্ধেক করে কেটে নিন।
- ডিমের কাটিং অংশে সামান্য লবণ ছিটিয়ে দিন। এতে ডিমের স্বাদ বাড়বে।
আলুর পুর তৈরি
- একটি কড়াইয়ে সরিষার তেল গরম করুন। তেল গরম হলে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে হালকা সোনালী করে ভেজে নিন।
- পেঁয়াজ ভাজা হয়ে গেলে আদা বাটা, রসুন বাটা এবং কাঁচালঙ্কা কুচি দিয়ে কিছুক্ষণ ভাজুন।
- এরপর জিরা গুঁড়া, ধনে গুঁড়া, হলুদ গুঁড়া এবং লবণ দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। সামান্য পানি দিয়ে মসলা কষিয়ে নিন, যাতে পুড়ে না যায়।
- ম্যাশ করা আলু দিয়ে মসলার সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। গরম মসলা এবং ধনে পাতা কুচি দিয়ে আরও কিছুক্ষণ ভেজে পুর তৈরি করে নিন।
- পুর ঠান্ডা হতে দিন।
ডিমের সাথে আলুর পুর মেশানো
- ডিমের অর্ধেক অংশের উপরে আলুর পুর দিয়ে ভালোভাবে ঢেকে দিন। ডিমের আকার অনুযায়ী পুরের পরিমাণ ঠিক করে নিন।
- ডিমের চারপাশে পুর দিয়ে সুন্দর একটা চপের আকার দিন।
কোর্টিং-এর প্রস্তুতি
- একটি পাত্রে বেসন, কর্ণফ্লাওয়ার এবং সামান্য লবণ মিশিয়ে নিন। অল্প অল্প করে পানি দিয়ে ঘন ব্যাটার তৈরি করুন। খেয়াল রাখবেন, ব্যাটার যেন বেশি পাতলা না হয়।
- অন্য একটি পাত্রে বিস্কুটের গুঁড়া ছড়িয়ে রাখুন।
- ডিমের চপগুলো প্রথমে বেসনের ব্যাটারে ডুবিয়ে নিন, তারপর বিস্কুটের গুঁড়াতে ভালোভাবে গড়িয়ে নিন।
ডিম চপ ভাজা
- কড়াইয়ে তেল গরম করুন। তেল মাঝারি আঁচে গরম হতে দিন।
- ডিম চপগুলো সাবধানে তেলে ছাড়ুন এবং সোনালী হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। খেয়াল রাখবেন, একবারে বেশি চপ না দেওয়াই ভালো, এতে তাপমাত্রা কমে যেতে পারে।
- চপগুলো ভাজা হয়ে গেলে তেল থেকে তুলে কিচেন টিস্যুর উপর রাখুন, যাতে অতিরিক্ত তেল শুষে নেয়।
ডিম চপ পরিবেশন
গরম গরম মুচমুচে ডিম চপ পরিবেশনের জন্য একদম প্রস্তুত! টমেটো সস, চিলি সস অথবা কাসুন্দির সাথে পরিবেশন করুন। বৃষ্টির দিনে কিংবা বন্ধুদের আড্ডায় ডিম চপ একটি অসাধারণ খাবার।
ডিম চপ রেসিপি: কিছু অতিরিক্ত টিপস
ডিম চপকে আরও সুস্বাদু করতে কিছু টিপস অনুসরণ করতে পারেন:
- আলুর পুর বানানোর সময় সামান্য চাট মসলা ব্যবহার করতে পারেন, এতে স্বাদ বাড়বে।
- ডিমের মধ্যে পুর দেওয়ার আগে ডিমের চারপাশে অল্প করে ফেটানো ডিম লাগিয়ে নিলে পুর ভালোভাবে সেট হয়ে যায়।
- ডিম চপ ভাজার সময় তেল যেন খুব বেশি গরম না হয়, তাহলে চপ পুড়ে যেতে পারে।
- ডিম চপ বানানোর পরে কিছুক্ষণের জন্য ফ্রিজে রেখে দিলে এটি আরও সেট হয়ে যায় এবং ভাজতে সুবিধা হয়।
ডিম চপ রেসিপি: স্বাস্থ্যকর দিক
ডিম চপ একটি মুখরোচক খাবার হলেও এর কিছু স্বাস্থ্যকর দিক রয়েছে:
- ডিম প্রোটিনের উৎস, যা শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।
- আলুতে ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- ডিম চপে ব্যবহৃত মসলা হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
তবে, ডিম চপ তেলে ভাজা হয় বলে এটিতে ফ্যাটের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই, পরিমিত পরিমাণে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
ডিম চপ নিয়ে কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)
ডিম চপ তৈরি করার সময় কিছু প্রশ্ন প্রায়ই আমাদের মনে আসে। এখানে কয়েকটি সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো:
ডিম চপ বানানোর জন্য কোন তেল ব্যবহার করা ভালো?
ডিম চপ ভাজার জন্য সাদা তেল, যেমন সানফ্লাওয়ার তেল বা সয়াবিন তেল ব্যবহার করা ভালো। এই তেলগুলোর স্বাদ হালকা হয় এবং ডিম চপের আসল স্বাদ বজায় থাকে।
ডিম চপ কি এয়ার ফ্রায়ারে বানানো যায়?
হ্যাঁ, ডিম চপ এয়ার ফ্রায়ারেও বানানো যায়। এতে তেলের ব্যবহার কম হয় এবং এটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প। এয়ার ফ্রায়ারে ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ১৫-২০ মিনিট ভাজলেই ডিম চপ তৈরি হয়ে যাবে।
ডিম চপ কতদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়?
ডিম চপ তৈরি করার পর ফ্রিজে ২-৩ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। তবে, টাটকা ডিম চপ খেতে বেশি ভালো লাগে।
ডিম চপকে আরও মুচমুচে করার উপায় কী?
ডিম চপকে আরও মুচমুচে করার জন্য ডাবল কোটিং করতে পারেন। প্রথমে বেসনের ব্যাটারে ডুবিয়ে, তারপর বিস্কুটের গুঁড়াতে গড়িয়ে, আবার বেসনের ব্যাটারে ডুবিয়ে বিস্কুটের গুঁড়াতে গড়িয়ে ভেজে নিন।
ডিম চপের পুরের জন্য আলু ছাড়াও অন্য কিছু ব্যবহার করা যায়?
হ্যাঁ, আলুর পরিবর্তে আপনি ফুলকপি, গাজর বা বিট ব্যবহার করতে পারেন। সেক্ষেত্রে সবজিগুলো সেদ্ধ করে ম্যাশ করে পুর তৈরি করতে হবে।
ডিম চপ রেসিপি: বিভিন্ন অঞ্চলের ভিন্নতা
ডিম চপ একটি জনপ্রিয় খাবার এবং বিভিন্ন অঞ্চলে এর ভিন্নতা দেখা যায়।
কলকাতা স্টাইল ডিম চপ
কলকাতার ডিম চপ একটু স্পেশাল। এতে আলুর পুরের সাথে বিট এবং নারকেল কোরা মেশানো হয়, যা এর স্বাদকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
ঢাকা স্টাইল ডিম চপ
ঢাকার ডিম চপে আলুর পুরের সাথে ডিমের কুসুম এবং স্পেশাল মসলার ব্যবহার করা হয়। এটি খেতে একটু বেশি ঝাল এবং মুখরোচক হয়।
চট্টগ্রাম স্টাইল ডিম চপ
চট্টগ্রামের ডিম চপে সাধারণত শুকনো মরিচ এবং পেঁয়াজের বেরেস্তা ব্যবহার করা হয়, যা এর স্বাদকে একটু ভিন্নতা দেয়।
ডিম চপ রেসিপি: উৎসবের আমেজ
ডিম চপ শুধু একটি খাবার নয়, এটি উৎসবের আমেজও নিয়ে আসে। ঈদ, পূজা বা যে কোনো অনুষ্ঠানে ডিম চপ একটি জনপ্রিয় খাবার। এছাড়া, জন্মদিন বা অন্য কোনো বিশেষ দিনেও ডিম চপ তৈরি করে আপনজনদের খুশি করা যায়।
ডিম চপ রেসিপি: কেন এত জনপ্রিয়?
ডিম চপ কেন এত জনপ্রিয়, তার কিছু কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো:
- এটি তৈরি করা সহজ এবং কম সময়ে বানানো যায়।
- এর স্বাদ ছোট থেকে বড় সবার কাছে প্রিয়।
- এটি একটি সাশ্রয়ী খাবার, যা সহজেই তৈরি করা যায়।
- ডিম চপ বিভিন্ন সসের সাথে পরিবেশন করা যায়, যা এর স্বাদকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
ডিম চপ রেসিপি: শেষ কথা
তাহলে, আজই তৈরি করে ফেলুন মজাদার ডিম চপ এবং উপভোগ করুন পরিবারের সাথে। আর হ্যাঁ, আপনার ডিম চপ কেমন হলো, তা জানাতে ভুলবেন না! শুভকামনা!