ডিম বিরিয়ানি রেসিপি
আচ্ছা, ডিম বিরিয়ানি নামটা শুনলেই জিভে জল আসে, তাই না? বিশেষ করে যখন পেটে রাজ্যের খিদে! আর যদি হয় ছুটির দিন, তাহলে তো কথাই নেই। আজ আমি আপনাদের শেখাবো কিভাবে খুব সহজে এবং দারুণ স্বাদে ডিম বিরিয়ানি রান্না করা যায়। আমার রেসিপিটি একটু আলাদা, একটু স্পেশাল। তাই শেষ পর্যন্ত সঙ্গে থাকুন, কথা দিচ্ছি হতাশ হবেন না!
ডিম বিরিয়ানি: স্বাদে অতুলনীয়, রাঁধতে সহজ!
বিরিয়ানি বলতেই কেমন একটা উৎসব উৎসব মনে হয়, তাই না? আর ডিম বিরিয়ানি হলে তো কোনো কথাই নেই। এটা শুধু সুস্বাদু নয়, তৈরি করাও খুব সহজ। যারা নতুন রাঁধুনি, তারাও খুব সহজে এটা বানিয়ে ফেলতে পারবেন। তাহলে চলুন, দেখে নেই কী কী লাগবে আর কিভাবে বানাতে হবে।
ডিমের প্রস্তুতি:
ডিমের বিরিয়ানি বানানোর প্রথম ধাপ হলো ডিমগুলোকে সুন্দর করে তৈরি করা।
উপকরণ:
- ডিম: ৪টি
- পেঁয়াজ কুচি: ১টি (বড়)
- আদা বাটা: ১ চামচ
- রসুন বাটা: ১ চামচ
- হলুদ গুঁড়ো: ১/২ চামচ
- লাল লঙ্কার গুঁড়ো: ১/২ চামচ (ইচ্ছা অনুযায়ী)
- গরম মশলা গুঁড়ো: ১/২ চামচ
- নুন: স্বাদমতো
- তেল: ভাজার জন্য পরিমাণ মতো
প্রণালী:
- প্রথমে ডিমগুলো সেদ্ধ করে নিন। ডিম সেদ্ধ করার সময় সামান্য নুন দিলে ডিমের খোসা সহজে ছাড়ানো যায়।
- ডিমগুলো ঠান্ডা হয়ে গেলে খোসা ছাড়িয়ে নিন এবং হালকা করে ছুরি দিয়ে চিরে দিন, যাতে মশলা ভালোভাবে ঢোকে।
- একটি পাত্রে পেঁয়াজ কুচি, আদা বাটা, রসুন বাটা, হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কার গুঁড়ো, গরম মশলা গুঁড়ো এবং নুন মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন।
- এই মিশ্রণটি ডিমের গায়ে ভালো করে মাখিয়ে নিন এবং ১০-১৫ মিনিটের জন্য রেখে দিন।
- এবার একটি কড়াইয়ে তেল গরম করে ডিমগুলো হালকা সোনালী করে ভেজে তুলে নিন।
বিরিয়ানির চালের প্রস্তুতি:
বিরিয়ানির জন্য পারফেক্ট চাল নির্বাচন করা এবং সেটাকে সঠিকভাবে রান্না করাটা খুব জরুরি।
উপকরণ:
- বাসমতী চাল: ২ কাপ
- নুন: পরিমাণ মতো
- সাদা তেল: ১ চামচ
- এলাচ: ২টি
- দারুচিনি: ১টি ছোট টুকরা
- তেজপাতা: ১টি
প্রণালী:
- প্রথমে বাসমতী চাল ভালো করে ধুয়ে ৩০ মিনিটের জন্য ভিজিয়ে রাখুন। এতে চালগুলো নরম হবে এবং বিরিয়ানি ঝরঝরে হবে।
- একটি পাত্রে পরিমাণ মতো জল গরম করুন। জলের মধ্যে নুন, সাদা তেল, এলাচ, দারুচিনি ও তেজপাতা দিন।
- জল ফুটে উঠলে ভেজানো চাল দিয়ে দিন।
- চাল প্রায় ৮০% সেদ্ধ হয়ে গেলে নামিয়ে নিন এবং জল ঝরিয়ে দিন। খেয়াল রাখবেন চাল যেন বেশি নরম না হয়ে যায়।
বিরিয়ানির মশলার প্রস্তুতি:
বিরিয়ানির আসল স্বাদ আসে মশলার সঠিক মিশ্রণে। তাই মশলা তৈরিতে একটু মনোযোগ দিতে হবে।
উপকরণ:
- পেঁয়াজ কুচি: ২টি (বড়)
- আদা বাটা: ২ চামচ
- রসুন বাটা: ২ চামচ
- হলুদ গুঁড়ো: ১ চামচ
- লাল লঙ্কার গুঁড়ো: ১ চামচ (ইচ্ছা অনুযায়ী)
- ধনে গুঁড়ো: ১ চামচ
- জিরা গুঁড়ো: ১ চামচ
- গরম মশলা গুঁড়ো: ১ চামচ
- বিরিয়ানি মশলা: ২ চামচ (বাজারে কিনতে পাওয়া যায়)
- টক দই: ১/২ কাপ
- পেঁয়াজ বেরেস্তা: ১/২ কাপ
- কাঁচা লঙ্কা: ২-৩টি (ফালি করে কাটা)
- নুন: স্বাদমতো
- সাদা তেল: ৩-৪ চামচ
- কেওড়া জল: ১ চামচ (ইচ্ছা অনুযায়ী)
- গোলাপ জল: ১ চামচ (ইচ্ছা অনুযায়ী)
- জাফরান: সামান্য (১/৪ কাপ গরম দুধে ভেজানো)
প্রণালী:
- প্রথমে একটি পাত্রে টক দই, হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কার গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, জিরা গুঁড়ো, গরম মশলা গুঁড়ো ও বিরিয়ানি মশলা মিশিয়ে নিন।
- কড়াইয়ে তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি সোনালী করে ভেজে বেরেস্তা করে তুলে রাখুন।
- ওই তেলে আদা বাটা ও রসুন বাটা দিয়ে কিছুক্ষণ ভাজুন, যতক্ষণ না কাঁচা গন্ধ চলে যায়।
- এবার মশলার মিশ্রণটি দিয়ে ভালো করে কষান। মশলা কষানোর সময় সামান্য জল দিতে পারেন, যাতে মশলা পুড়ে না যায়।
- মশলা থেকে তেল ছেড়ে আসলে বুঝবেন মশলা কষানো হয়ে গেছে।
ডিম বিরিয়ানি তৈরির পদ্ধতি:
সবকিছু প্রস্তুত হয়ে গেলে এবার শুধু একসাথে মিশিয়ে দমে বসানোর পালা।
প্রণালী:
- একটি বড় পাত্রে প্রথমে অর্ধেক সেদ্ধ করা চালের একটি স্তর দিন।
- তারপর মশলার স্তর দিন এবং এর উপরে ভাজা ডিমগুলো সাজিয়ে দিন।
- পেঁয়াজ বেরেস্তা, কাঁচা লঙ্কা ও সামান্য কেওড়া জল এবং গোলাপ জল ছিটিয়ে দিন।
- বাকি চালের স্তরটি ডিমের উপরে দিন এবং জাফরান ভেজানো দুধ ছড়িয়ে দিন।
- পাত্রটি ঢাকনা দিয়ে ভালোভাবে ঢেকে দিন, যাতে ভেতরের গরম হাওয়া বাইরে না যেতে পারে।
- এবার খুব সামান্য আঁচে ২০-২৫ মিনিটের জন্য দমে বসান। আপনি চাইলে তাওয়ার উপরে পাত্রটি বসিয়ে দিতে পারেন, এতে বিরিয়ানি নিচে লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
- ২৫ মিনিট পর ঢাকনা খুলে সাবধানে বিরিয়ানি মিশিয়ে নিন, যাতে ডিমগুলো ভেঙে না যায়।
পরিবেশন:
গরম গরম সুস্বাদু ডিম বিরিয়ানি পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত! রায়তা, সালাদ বা আপনার পছন্দের যেকোনো সাইড ডিশের সাথে পরিবেশন করুন এবং উপভোগ করুন।
ডিম বিরিয়ানি রান্নার কিছু দরকারি টিপস
ডিম বিরিয়ানি বানানোর সময় কিছু জিনিস মাথায় রাখলে আপনার বিরিয়ানি আরও সুস্বাদু হবে:
- ডিম ভাজার সময় সামান্য হলুদ ও নুন ব্যবহার করুন, এতে ডিমের স্বাদ বাড়বে।
- বাসমতী চাল ভালো করে ধুয়ে ভিজিয়ে রাখলে বিরিয়ানি ঝরঝরে হয়।
- মশলা কষানোর সময় অল্প অল্প করে জল দিন, যাতে মশলা পুড়ে না যায়।
- বিরিয়ানি দমে বসানোর সময় পাত্রের মুখ ভালোভাবে বন্ধ করুন, যাতে ভেতরের গরম হাওয়া বাইরে না যায়।
- পরিবেশনের আগে বিরিয়ানি হালকা হাতে মিশিয়ে নিন, যাতে ডিমগুলো না ভাঙে।
ডিম বিরিয়ানি রেসিপি নিয়ে কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)
ডিম বিরিয়ানি নিয়ে আপনাদের মনে কিছু প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক। নিচে কয়েকটি সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো:
ডিম বিরিয়ানি কি স্বাস্থ্যকর?
ডিম বিরিয়ানি অবশ্যই স্বাস্থ্যকর হতে পারে, যদি সঠিক পরিমাণে তেল এবং মশলা ব্যবহার করা হয়। ডিমে প্রচুর প্রোটিন থাকে, যা শরীরের জন্য খুবই দরকারি। তবে, অতিরিক্ত তেল ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
ডিম বিরিয়ানি কত দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়?
ডিম বিরিয়ানি সাধারণত ১-২ দিন পর্যন্ত ফ্রিজে সংরক্ষণ করা যায়। তবে, টাটকা রান্না করা বিরিয়ানি খাওয়াই ভালো।
ডিম বিরিয়ানি তে কি কি মশলা ব্যবহার করা হয়?
ডিম বিরিয়ানিতে সাধারণত পেঁয়াজ, আদা, রসুন, হলুদ, লঙ্কা, ধনে, জিরা, গরম মশলা এবং বিরিয়ানি মশলা ব্যবহার করা হয়।
ডিম বিরিয়ানি কিভাবে পরিবেশন করতে হয়?
ডিম বিরিয়ানি রায়তা, সালাদ বা আপনার পছন্দের যেকোনো সাইড ডিশের সাথে গরম গরম পরিবেশন করতে পারেন।
ডিম বিরিয়ানি তৈরিতে কত সময় লাগে?
ডিম বিরিয়ানি তৈরি করতে সাধারণত ১ ঘণ্টা থেকে ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট সময় লাগে।
ডিম বিরিয়ানি রেসিপিতে কি পেঁয়াজ বেরেস্তা ব্যবহার করা জরুরি?
পেঁয়াজ বেরেস্তা ডিম বিরিয়ানির স্বাদ অনেক বাড়িয়ে দেয়, তবে এটা জরুরি নয়। আপনার হাতের কাছে না থাকলে, এটা বাদ দিতে পারেন।
ডিম বিরিয়ানিতে জাফরান ব্যবহার না করলে কি স্বাদের পরিবর্তন হবে?
জাফরান ডিম বিরিয়ানিতে সুন্দর একটা রং এবং সুগন্ধ যোগ করে। এটা ব্যবহার না করলে স্বাদের খুব বেশি পরিবর্তন হবে না, তবে দেখতে একটু অন্যরকম লাগবে।
ডিম বিরিয়ানিকে আরও সুস্বাদু করার উপায় কী?
ডিম বিরিয়ানিকে আরও সুস্বাদু করতে আপনি কিছু জিনিস যোগ করতে পারেন, যেমন – গোলাপ জল, কেওড়া জল অথবা সামান্য ঘি।
ডিম বিরিয়ানি: কিছু স্বাস্থ্য টিপস
ডিম বিরিয়ানি নিঃসন্দেহে একটি মুখরোচক খাবার, তবে এর স্বাস্থ্যগুণ সম্পর্কেও আমাদের সচেতন থাকা উচিত। এখানে কিছু টিপস দেওয়া হলো, যা আপনাকে স্বাস্থ্যকর ডিম বিরিয়ানি উপভোগ করতে সাহায্য করবে:
- কম তেল ব্যবহার করুন: বিরিয়ানি রান্নার সময় তেলের পরিমাণ কমিয়ে দিন। আপনি অলিভ অয়েল বা অন্য কোনো স্বাস্থ্যকর তেল ব্যবহার করতে পারেন।
- সবজির ব্যবহার: বিরিয়ানিতে গাজর, মটরশুঁটি, ফুলকপি ইত্যাদি সবজি যোগ করুন। এতে বিরিয়ানির পুষ্টিগুণ বাড়বে।
- ডিমের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করুন: বেশি ডিম ব্যবহার না করে পরিমাণ মতো ডিম ব্যবহার করুন।
- টক দই ব্যবহার করুন: টক দই ব্যবহার করলে বিরিয়ানির স্বাদ বাড়বে এবং এটি হজমের জন্য ভালো।
- পরিমিত পরিমাণে খান: বিরিয়ানি অবশ্যই মুখরোচক, তবে এটি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
ডিম বিরিয়ানি: বিভিন্ন ধরনের রেসিপি
ডিম বিরিয়ানি বিভিন্নভাবে রান্না করা যায়। নিচে কয়েকটি জনপ্রিয় রেসিপি উল্লেখ করা হলো:
- হায়দ্রাবাদী ডিম বিরিয়ানি: এটি হায়দ্রাবাদের একটি জনপ্রিয় রেসিপি, যা ডিম এবং বিশেষ মশলার সংমিশ্রণে তৈরি করা হয়।
- লাখনৌয়ী ডিম বিরিয়ানি: এটি লাখনৌয়ের একটি বিখ্যাত রেসিপি, যা হালকা মশলা এবং সুগন্ধি চাল দিয়ে তৈরি করা হয়।
- কলকাতা ডিম বিরিয়ানি: এটি কলকাতার একটি জনপ্রিয় রেসিপি, যাতে আলু এবং ডিম ব্যবহার করা হয়।
ডিম বিরিয়ানি: ক্যালোরি এবং পুষ্টি উপাদান
ডিম বিরিয়ানিতে ক্যালোরি এবং পুষ্টি উপাদান নির্ভর করে এর উপকরণ এবং রান্নার পদ্ধতির উপর। সাধারণভাবে, এক প্লেট ডিম বিরিয়ানিতে প্রায় ৩০০-৪০০ ক্যালোরি থাকে। এতে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাট এর পরিমাণও বেশ ভালো থাকে।
নিচে একটি টেবিলের মাধ্যমে ডিম বিরিয়ানির পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হলো:
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ (আনুমানিক) |
---|---|
ক্যালোরি | ৩০০-৪০০ |
প্রোটিন | ১৫-২০ গ্রাম |
ফ্যাট | ১০-১৫ গ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট | ৪০-৫০ গ্রাম |
ফাইবার | ২-৩ গ্রাম |
ডিম বিরিয়ানি: শেষ কথা
তাহলে দেখলেন তো, ডিম বিরিয়ানি বানানো কতোটা সহজ? শুধু কয়েকটা জিনিস মনে রাখলেই আপনিও বানাতে পারবেন পারফেক্ট ডিম বিরিয়ানি। আর হ্যাঁ, কেমন হলো জানাতে ভুলবেন না কিন্তু!
যদি আপনি ডিম বিরিয়ানি তৈরি করার সময় কোনো সমস্যায় পড়েন, তাহলে আমাকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমি অবশ্যই আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। আর যদি আপনার কোনো স্পেশাল রেসিপি থাকে, তবে সেটাও আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।
তাহলে আজ এই পর্যন্তই। আবার দেখা হবে নতুন কোনো রেসিপি নিয়ে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং রান্না করতে থাকুন!