প্রিয় পাঠক আপনি যদি ইতিমধ্যে অনুসন্ধান করে থাকেন আঠারাে বছর বয়স কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে তবে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানতে পারবেন। উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনায় সিলেবাস ভুক্ত এই কবিতাটি। চলুন তবে দেখে নেওয়া যাক।
সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ১
চিত্রকর্ম : তাজমহল। পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের একটি। নির্মাতা : সম্রাট শাহজাহান (১৫৯২-১৬৬৭) নির্মাণকাল : ১৬৩২ থেকে ১৬৫৪ পর্যন্ত ।
ক. ক্ষুরধারা’ শব্দের অর্থ কী?
খ. কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা।’- বুঝিয়ে লেখ।
গ. ‘এখন আমারে লহাে করুণা করে৷– ‘সােনার তরী’ কবিতার এই পক্তির সঙ্গে উদ্দীপকের চিত্রকর্মটির ভাবের সাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. উদ্দীপকের চিত্রকর্মটিতে ‘সােনার তরী’ কবিতার ধানের তুলনা করা কতটুকু যুক্তিসংগত বলে তুমি মনে কর? বিশ্লেষণ কর।।
সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ১ এর উত্তর সমূহ
ক উত্তরঃ ক্ষুরধারা’ শব্দের অর্থ ক্ষুরের মতাে ধারালাে যে প্রবাহ বা স্রোত ।
খ উত্তরঃ একজন কৃষক দ্বীপসদৃশ ধানখেতে তার সােনার ফসল নিয়ে অপেক্ষা করছে। ঘন বর্ষা আর তীব্র সােতের কারণে তীরে যাওয়ারও কোনাে ভরসা নেই— এ কথা বােঝাতেই উক্তিটি করা হয়েছে। ‘সােনার তরী’ কবিতায় কবির জীবনদর্শন চিত্রায়িত হয়েছে।
কবিতায় একজন কৃষক তার ধান নিয়ে ক্ষুরের মতাে ধারালাে বর্ষার স্রোতে ঘেরা দ্বীপসদৃশ ধানখেতে নানা আশঙ্কা নিয়ে অপেক্ষা করছে। সে সেখানে নিঃসঙ্গ, কারও কোনাে দেখা নেই। আকাশে ঘন ঘন মেঘ গর্জন করছে। এমন বৈরী পরিবেশে কৃষকরূপী কবি নিজের নিঃসঙ্গতা ও ভরসাহীনতাকে বােঝাতে গিয়ে কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা’ কথাটি বলেছেন। সারকথা : প্রশ্নোক্ত লাইনের মধ্য দিয়ে বৈরী পরিবেশে নিঃসঙ্গ এক কৃষকের ভরসাহীন অবস্থার কথা প্রকাশ পেয়েছে।
গ উত্তরঃ ‘এখন আমারে লহাে করুণা করে ।।’- ‘সােনার তরী’ কবিতার এই পঙক্তির সঙ্গে উদ্দীপকের চিত্রকর্মটির ভাবের সাদৃশ্য রয়েছে। সুখ-শান্তির জন্য মানুষ ঘর-বাড়ি, দালানকোঠা নির্মাণ করে। কিন্তু সেই সুখ চিরকাল স্থায়ী হয় না, সব রেখে সে মহাকালের শিকার হয়।
‘সােনার তরী’ কবিতায় এক কৃষক রাশি রাশি ধান কেটে নানা আশঙ্কা নিয়ে দ্বীপসদৃশ ধানখেতে একাকী অপেক্ষা করে। এরই মধ্যে এক মাঝি ভরা পালে তরি বেয়ে আসতে থাকলে সে খুশি হয়। কিন্তু সে যখন তার দিকে দৃষ্টি না দিয়ে অজানার দেশে চলে যেতে থাকে তখন কৃষক তাকে অনুরােধ করে তার তরিতে সােনার ধান তুলে নিতে ।
মাঝি সেই তরিতে ধান তুলে নিলেও কৃষককে নেয় না। উদ্দীপকের সম্রাট শাহজাহানও তাজমহল নির্মাণ করেছিলেন প্রিয়তমার স্মৃতি রক্ষার জন্য। এ দিক থেকে ‘সােনার তরী’ কবিতার উল্লিখিত পঙক্তির সঙ্গে উদ্দীপকের চিত্রকর্মটির ভাবের সাদৃশ্য বিদ্যমান।
সারকথা : ‘সােনার তরী’ কবিতার কৃষকের মতােই উদ্দীপকের চিত্রকর্মটির নির্মাতারও অনুরূপ আকুতি রয়েছে।
ঘ উত্তর: উচ্চতর দক্ষতা উদ্দীপকের চিত্রকর্মটিকে ‘সােনার তরী’ কবিতার ধানের সঙ্গে তুলনা করা অনেকটাই যুক্তিসংগত বলে আমি মনে করি।
মানুষ তার কর্মের দ্বারা পৃথিবীতে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে। মহৎ ব্যক্তিরা কর্মের মাধ্যমে বেঁচে আছেন। ‘সােনার তরী’ কবিতায় একজন কৃষক রাশি রাশি সােনার ধান কেটে নানা আশঙ্কা নিয়ে ক্ষুরধারা বর্ষার নদীস্রোতবেষ্টিত দ্বীপসদৃশ ধানখেতে অপেক্ষা করছে। এই সময় একজন মাঝিকে আসতে দেখে সে খুশি হয়। অথচ কাছে এসে মাঝি তাকে.উপেক্ষা করে অজানার উদ্দেশে চলে যেতে থাকে; তখন কৃষক তাকে তার সােনার ধান নিয়ে যেতে বলে। অবশেষে মাঝি সােনার ধান তরিতে তুলে নিলেও কৃষককে নেয় না।
উদ্দীপকের চিত্রকর্মটির নির্মাতা সম্রাট শাহজাহানও এই কৃষকের অনুরূপ। সবাই তাঁর কর্মকে গ্রহণ করেছে তাকে মনে রাখেনি। ‘সােনার তরী’ কবিতার কৃষকরূপী কবির ধান যেমন মহাকালের প্রতীকরূপী সােনার তরিতে স্থান পেয়েছে, উদ্দীপকের চিত্রকর্মের নির্মাতা সম্রাট শাহজাহানের নির্মিত তাজমহলও মহাকালের ধারক পৃথিবীর বুকে স্থান পেয়েছে। ব্যক্তি কৃষকরূপী কবি ও ব্যক্তি সম্রাট তাতে স্থান পাননি।
সারকথা : উদ্দীপকের চিত্রকর্মটি মানুষ গ্রহণ করলেও এর স্রষ্টাকে মনে রাখেনি। এই বিষয়টি কবিতার কৃষকের পরিণতির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ২
এই পৃথিবী যেমন আছে তেমনই ঠিক রবে, সুন্দর এ পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে । তােমার টাকা কড়ি সুন্দর বাড়ি সবই পড়ে রবে, তােমার কর্মসাধন সৃজন পূজন তােমায় স্মরণ নেবে তুমি আর থাকবে না এই জনাকীর্ণ ভবে।।
ক. ‘সােনার তরী’ কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত?
খ. ঠাই নাই, ঠাই নাই— ছােটো সে তরী’– চরণটি দ্বারা কবি কী বােঝাতে চেয়েছেন?
গ. উদ্দীপকে সােনার তরী’ কবিতার কোন ভাবের প্রকাশ ঘটেছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের শেষ চরণ দুটি যেন ‘সােনার তরী’ কবিতার কবির জীবনদর্শনের প্রতিচ্ছবি ‘সােনার তরী’ কবিতার আলােকে মূল্যায়ন কর।
সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ২ এর উত্তর সমূহ
ক উত্তরঃ ‘সােনার তরী’ কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সােনার তরী’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত।
খ উত্তরঃ প্রশ্নোক্ত চরণটি দ্বারা কবি মহাকালরূপী ছােট তরণিতে ব্যক্তিসত্তার ঠাই না পাওয়াকে বােঝাতে চেয়েছেন। ‘সােনার তরী’ কবিতায় একজন কৃষকের রূপকে কবি ব্যক্তিজীবনের দর্শন চিত্র এঁকেছেন। একজন কৃষক তার অক্লান্ত শ্রমের ফসল রাশি রাশি সােনার ধান কেটে নানা আশঙ্কা নিয়ে ছােট খেতে একাকী অপেক্ষা করছে।
এমন সময় অপ্রত্যাশিতভাবে ভরা পালে তরি বেয়ে আসে এক মাঝি । তখন কৃষক তাকে কাতরভাবে অনুরােধ করে বলে সে যেন কূলে তরি ভিড়িয়ে তার সােনার ধানটুকু নিয়ে যায়। কৃষকের অনুরােধ শুনে মাঝি তরিতে তার ফসল তুলে নেয়। কৃষকও সঙ্গে যেতে চাইলে মাঝি বলে যে তার ছােট তরিতে জায়গা নেই। ছােট সেই তরিতে সােনার ধানের স্থান সংকুলান হলেও কৃষকের ঠাই হয় না। আলােচ্য উক্তিটির মধ্য দিয়ে এ কথাই প্রকাশ পেয়েছে।
সারকথা : কৃষকরূপী কবির সৃষ্টকর্মের সােনার ফসল মহাকালরূপী ছােট তরিকে পূর্ণ করে তুলেছে। সেখানে কৃষকের জন্য আর ঠাই নেই।
গ উত্তরঃ উদ্দীপকে ‘সােনার তরী’ কবিতার মানুষ নশ্বর এ ভাবের প্রকাশ ঘটেছে। জগৎ-সংসারে ব্যক্তির মূল্য নেই, মূল্য তার কর্মের। কর্ম রেখে ব্যক্তিমানুষকে চলে যেতে হয়। মৃত্যুই মানুষের শেষ নিয়তি।
‘সােনার তরী’ কবিতায় কবি একজন কৃষকের রূপকে মানুষের জীবনদর্শন তুলে ধরেছেন। এ কবিতায় একজন কৃষক তার সােনার ধান কেটে পাড়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। সে তার সােনার ফসল নিয়ে নিজের আশ্রয়ে ফিরতে চায় । কিন্তু বৈরী পরিবেশে সে শুধু নিজের কর্মের ফসলকেই বাঁচাতে পারে। নিজে মহাকালের গহ্বরে বিলীন হয়ে যায়।
অন্যদিকে উদ্দীপকেও বলা হয়েছে, মানুষের মহৎ কর্ম চিরকাল বেঁচে থাকে। মানুষ কর্মের মধ্য দিয়েই সৃজিত হয়। কিন্তু মানুষ নশ্বর। তাই বলা যায়, উদ্দীপক ও আলােচ্য কবিতা উভয় জায়গায়ই মানুষের নশ্বর ভাবটি প্রকাশ পেয়েছে।
সারকথা : পৃথিবীর সবকিছু একই রকম থাকলেও অনিবার্যভাবে মহাকালের শূন্যতায় সবাইকে বিলীন হতে হবে। কবিতা ও উদ্দীপকে এ কথাই বলা হয়েছে।
ঘ উত্তরঃ উদ্দীপকের শেষ চরণ দুটি যেন ‘সােনার তরী’ কবিতার কবির জীবনদর্শনের প্রতিচ্ছবি- মন্তব্যটি যথার্থ। মানুষ মরণশীল। ব্যক্তিমানুষ মৃত্যুর মধ্য দিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেও কর্মের জন্য মানুষ তাকে স্মরণ করে। কারণ সৃষ্টির বিনাশ হয় না। তা পরম্পরায় মানুষের মাঝে অনন্তকাল বেঁচে থাকে।
‘সােনার তরী’ কবিতায় কৃষকের রূপকে কবির জীবনদর্শনের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। এখানে কৃষকের কষ্টের ফসল মহাকালরূপী সােনার তরিতে স্থান পেলেও কৃষকের স্থান হয় না। কবিতার এ বিষয়টি উদ্দীপকের কবিতাংশের শেষােক্ত চরণ দুটিতে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
উদ্ধৃতাংশে বর্ণিত হয়েছে এই সুন্দর পৃথিবী থেকে মানুষকে একদিন চলে যেতে হবে । কিন্তু মহৎ কর্মের জন্য মানুষ তাকে স্মরণ করবে। তার কর্ম মানুষের মধ্যে টিকে থাকবে। ‘সােনার তরী’ কবিতায় কবি সারা জীবন যা কিছু সৃষ্টি করেছেন সেই সৃষ্টিসম্ভার মহাকালের নৌকায় স্থান পেলেও তাঁর নশ্বর দেহ ঠাই পায় না সেই নৌকায়।
এটিই চিরন্তন সত্য। মানুষ তার কর্মের মধ্যে বেঁচে থাকে। এ বিষয়টি উদ্ধৃত কবিতাংশের শেষােক্ত চরণেও প্রকাশ পেয়েছে। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
সারকথা : রবীন্দ্রনাথ মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেও কর্মের মধ্যে বেঁচে আছেন। উদ্দীপকেও সেই দিকটি প্রকাশ পেয়েছে।
এরকম আরও অসংখ্য সোনার তরী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর পেয়ে যাবে এই পিডিএফ এ। পিডিএফ টি ডাউনলোড করতে ক্লিক করো নিচের লিংকে।