প্রিয় পাঠক আপনি যদি ইতিমধ্যে অনুসন্ধান করে থাকেন আঠারাে বছর বয়স কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে তবে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানতে পারবেন। উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনায় সিলেবাস ভুক্ত এই কবিতাটি। চলুন তবে দেখে নেওয়া যাক।
সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ১
ওগাে যৌবনতরী
এবার বােঝাই সাঙ্গ করে
দিলেম বিদায় করি ।
কতই খেয়া কতই খেয়াল
কতই না দাঁড়
বাওয়া
তোমার পালে লেগেছিল
কত দখিন হাওয়া!
ক. ‘পদাঘাত’ শব্দটির অর্থ কী?
খ. “এ বয়স তবু নতুন কিছু তাে করে।”- উক্তিটি বুঝিয়ে দাও।
গ. আঠারাে বছর বয়স’ কবিতার সাথে উদ্দীপকের বৈসাদৃশ্য তুলে ধর।
ঘ. “বৈসাদৃশ্য থাকলেও উদ্দীপকের কবি যেন আঠারাে বছর বয়সেরই পূজারি।” মূল্যায়ন কর।
সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ১ এর উত্তর সমূহ
ক উত্তরঃ ‘পদাঘাত’ শব্দটির অর্থ পা দিয়ে আঘাত।
খ অনুধাবন • মানবজীবন পরিক্রমায় আঠারাে বছর বয়স তারুণ্যের দীপ্তিতে মানবকল্যাণ সাধনায় চিরভাস্বর।
আঠারাে বছর বয়সে উত্তেজনার প্রবল আবেগে ঝুঁকিপূর্ণ সাধনায় অবিরাম গতিতে জীবনসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে তরুণ প্রাণ। অদম্য দুঃসাহসে কঠিন বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানাের সময় এই বয়স। বিপদের মুখে তরুণরাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। বিপদসংকুল পথেই তারুণ্যের পদযাত্রা। নতুন সমাজ ও জাতি গঠনে তরুণদের অবদানই সবচেয়ে বেশি। সেজন্য কবি তারুণ্যের জয়গান গেয়েছেন এবং বলেছেন, “এ বয়স তবু নতুন কিছু তাে করে।” এ সারকথা : আঠারাে বছর বয়সের তরুণরা প্রবল আবেগে ঝুঁকিপূর্ণ সাধনায় অবিরাম গতিতে জীবনসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বিপদের সময় এই
বয়সের তরুণরাই সবার আগে এগিয়ে আসে। [গ প্রয়ােগ। • উদ্দীপকে তারুণ্যোত্তর জীবনের কথা বলা হয়েছে; আর আঠারাে বছর বয়স’ কবিতায় তারুণ্যধর্ম তুলে ধরা হয়েছে। এখানেই
এই দুয়ের মধ্যে বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান। তারুণ্য ও বার্ধক্য একজন মানুষেরই কালগত দুটি রূপ। বার্ধক্য সমস্ত শিথিলতা, স্থবিরতার ধারক-বাহক। অন্যদিকে তরুণরা অফুরন্ত প্রাণশক্তি ও জীবনপ্রাবল্যে পূর্ণ। সব বিধি-নিষেধ, বাধা-বিপত্তির উর্ধ্বে তাদের অবস্থান। ‘আঠারাে বছর বয়স’ কবিতায় কবি কৈশ্নের উত্তীর্ণ সময়ের কথা বলেছেন। প্রগতি ও অগ্রগতির পথে প্রতিনিয়ত ধাবমান তারুণ্যশক্তি। সে তার চলার পথের সব বাধা পদদলিত করে অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যায়। অন্যদিকে উদ্দীপকে যৌবনােত্তীর্ণ হওয়ার কথা বলা হয়েছে। কবি সেখানে যৌবনকে বিদায় দিয়ে এসেছেন।
সারকথা : যৌবন ও যৌবনােত্তীর্ণ সময়। এই দুই বিবেচনায় উদ্দীপক ও ‘আঠারাে বছর বয়স’ কবিতাটি বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ উত্তরঃ “বৈসাদৃশ্য থাকলেও উদ্দীপকের কবি যেন ‘আঠারাে বছর বয়সেরই পূজারি।” মন্তব্যটি যথার্থ।
তারুণ্যশক্তি স্বমহিমায় ভাস্বর। তরুণরা আপন গতিতে চলে। তারা দৃঢ়তা, সাহসিকতা এবং প্রাণের আবেগে এগিয়ে চলে। এই যাত্রায় তারা অর্জন করে অনেক কিছু। আর যৌবন ফুরিয়ে গেলে জীবনের গতিবেগ, দৃঢ়তা, সাহসিকতা ইত্যাদি থেমে যায়। তবে কারও কারও মন থেকে রেখাপাত একেবারে মুছে যায় না।
‘আঠারাে বছর বয়স’ কবিতায় কবি বলেছেন যে, সমস্ত দুর্যোগ আর দুর্বিপাক মােকাবিলা করার প্রাণশক্তি কেবল আঠারাে বছর বয়সেরই আছে। ফলে তারুণ্য দুর্বার বেগে এগিয়ে যায় কল্যাণের পথে, প্রগতির পথে। এই বয়স অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাড়ানাের জন্য সদা প্রস্তুত।
উদ্দীপকে কবি যৌবনােত্তীর্ণ সময়ের কথা বললেও মূলত যৌবনেরই স্মৃতিচারণ করেছেন। তিনি বলেছেন যৌবন খেয়াল-খুশিতে পূর্ণ, যৌবন নানা অর্জনে সমৃদ্ধ। তারুণ্য তথা যৌবনই সব বয়সের সেরা। আঠারাে বছর বয়স’ কবিতায় কবি আঠারাে বছর বয়সের তথা তারুণ্যের যৌবনশক্তির জয়গান করেছেন। উদ্দীপকের কবিও যৌবনেরই পূজারি। এসব দিক বিবেচনায় তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
সারকথা : যৌবন তথা তারুণ্য আপন প্রাণাবেগে সকলের সেরা। তাই উদ্দীপক এবং আলােচ্য কবিতার কবি এই বয়সের পূজারি।
সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ২
তরুণদের অদম্য প্রাণশক্তি-এর আলােকে প্রণীত। কিছু উদ্যমী তরুণ যুবক আর একটি ক্যামেরাই সৃষ্টি করল ইতিহাস। টানা ২৩ ঘণ্টার চেষ্টার পর উদ্ধার হলাে ছােট্ট শিশু জিহাদ। তবে জীবিত নয়, মৃত। ১০-১৫ জন উদ্যমী তরুণ-যুবকের একটি দলই টেনে তুলে আনে জিহাদের দেহ।… শাহজাহানপুরের রেলওয়ে কলােনিতে পাইপের ভেতর শিশু আটকে যাওয়ার পর শুক্রবার রাতেই তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে এ অভিযান চালায়।
ক. আঠারাে বছর বয়স শপথের কোলাহলে কী করে?
খ. কবি আঠারাে বছর বয়সকে ভয়ংকর বলেছেন কেন? বুঝিয়ে দাও
গ. উদ্দীপকটি আঠারাে বছর বয়সের কোন বৈশিষ্ট্যকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “মানবকল্যাণে আঠারাে বছর বয়স সর্বদাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।” উদ্দীপক এবং আঠারাে বছর বয়স। কবিতার আলােকে মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ২ এর উত্তর সমূহ
ক উত্তরঃ আঠারাে বছর বয়স শপথের কোলাহলে আত্মাকে সঁপে দেয়।
খ উত্তরঃ আঠারাে বছর বয়সের কিছু নেতিবাচক দিকের কারণে কবি এই বয়সকে ভয়ংকর বলেছেন।
আঠারাে বছর বয়সে প্রত্যেক মানুষই যৌবনদীপ্ত হয় এবং তারুণ্যশক্তি লাভ করে। এই বয়সের যেমন ইতিবাচক দিক আছে তেমনি নেতিবাচক দিকও আছে। এই বয়স সমাজজীবনের নানা বিকার ও সর্বনাশের অভিঘাতে ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। অনেকেই বিপথে পা বাড়িয়ে সুন্দর জীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে পারে। যৌবনদীপ্ত তারুণ্যশক্তির অপচয়ও হতে পারে সেই পথে । এসব কারণে কবি এ বয়সকে ভয়ংকর বলেছেন।
সারকথা : আঠারাে বছর বয়সেই বিপথে যাওয়ার ঝুঁকিটা বেশি থাকে। তাই কবি এই বয়সকে ভয়ংকর বলেছেন।
গ উত্তরঃ উদ্দীপকটি আঠারাে বছর বয়সে মানবকল্যাণে নিবেদিত হওয়ার বৈশিষ্ট্যকে নির্দেশ করে। তরুণরা প্রাণের উদ্দামতায় পৃথিবীর সব বাধা-বিপত্তি দূর করে এগিয়ে চলে। নিজেদের নিয়ে ভাবার অবকাশ তাদের থাকে না। তাই তরুণরাই মানবকল্যাণে নিজেদের নিয়ােগ করে।
‘আঠারাে বছর বয়স’ কবিতায় কবি বলেছেন যে, কৈশাের থেকে যৌবনে পদার্পণের এই বয়সটি উত্তেজনা, প্রবল আবেগ ও উচ্ছাসে জীবনের ঝুঁকি নেওয়ার উপযােগী। এই বয়সেই তরুণরা দুর্যোগ আর দুর্বিপাক মােকাবিলা করে। মানবকল্যাণে এগিয়ে আসার দুঃসাহস তরুণদেরই আছে।
উদ্দীপকেও তরুণদের মধ্যে মানবকল্যাণে ব্রতী হওয়ার বিষয়টি দেখা যায়। ১০-১৫ জনের। উদ্যমী তরুণের একটি দল শিশু জিহাদের মৃতদেহ পাইপের ভেতর থেকে বের করে আনতে সক্ষম হয়।
সারকথা : মানবকল্যাণে ব্রতী হওয়া আঠারাে বছর বয়সের বৈশিষ্ট্য, যা উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে।
ঘ উত্তরঃ “মানবকল্যাণে আঠারাে বছর বয়স সর্বদাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে”- মন্তব্যটি যথার্থ।
তরুণরাই যেকোনাে দেশের মানবকল্যাণের অগ্রদূত। তরুণদের ধর্মই হলাে ত্যাগ ও সেবা। তরুণরাই অন্যের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ার মতাে ঝুঁকি নিতে পারে। আর তাই মানুষের বিপদে তারাই সর্বপ্রথম এগিয়ে আসে। আঠারাে বছর বয়স’ কবিতায় কবি তারুণ্যের নানা বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন।
কবি বলছেন আঠারাে বছর বয়সের তরুণরা চারপাশের অন্যায়-অত্যাচার, শােষণ-পীড়ন, সামাজিক বৈষম্য ও ভেদাভেদ দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তরুণরা সেবাব্রত জীবনের অধিকারী। তাই তারা সবার আগে আর্তের পাশে এসে দাঁড়ায়। উদ্দীপকেও তারুণ্যের এই সেবাব্রতের পরিচয় পাওয়া যায়।
কয়েকজন উদ্যমী তরুণই পাইপ থেকে বের করে আনে শিশু জিহাদের মৃতদেহ। কোনাে স্বার্থ নয়, এটি কেবল দায়িত্ব-কর্তব্যবােধ ও জনকল্যাণে এগিয়ে আসার বৈশিষ্ট্য। কালে কালে তরুণরাই সবসময় বিপদে, সেবাব্রতে অগ্রগামী। উদ্দীপকে এই বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। আঠারাে বছর বয়স’ কবিতায়ও কবি তারুণ্যের ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন।
সারকথা : তরুণরাই সবসময় সবার আগে মানুষের বিপদে-আপদে অগ্রগামী। উদ্দীপক এবং আলােচ্য কবিতায় এই বিষয়টি সুস্পষ্ট।