প্রিয় পাঠক আপনি যদি ইতিমধ্যে অনুসন্ধান করে থাকেন আমার পথ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে তবে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানতে পারবেন। উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনায় সিলেবাস ভুক্ত এই কবিতাটি। চলুন তবে দেখে নেওয়া যাক।
সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ১
যাকে অপদার্থ, অকর্মণ্য বলে উপহাস করা হচ্ছে, তাকে যদি কেউ সাহস দেয়, এগিয়ে যাবার পরামর্শ এবং সহযােগিতার হাত বাড়ায়, তবে সেই মানুষটির মানসিক ও আত্মিক বিবর্তন ঘটবে। এতে অলস পরিশ্রমী হতে পারে, অপ্রতিভ সপ্রতিভ হবে, ভীরু সাহসী হবে, মূখ বিদ্বান হবে, দুর্বল বলবান হতে পারে। এর অন্যতম কারণ, সেই মানুষটির অন্তর্নিহিত সত্যের বিকাশ।
ক. ‘আমার পথ’ প্রবন্ধেটি কোন প্রবন্ধগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে?
খ. কাজী নজরুল ইসলাম আমার সত্য বলতে কী বুঝিয়েছেন?
গ. উদ্দীপকের ভাবনা আমার পথ’ প্রবন্ধের সঙ্গে কীভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ?
ঘ. “আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে”- উদ্দীপক ও.‘আমার পথ’ প্রবন্ধের আলােকে মন্তব্যটি বিচার কর ।
সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ১ এর উত্তর সমূহ
ক উত্তরঃ ‘আমার পথ’ প্রবন্ধকটি রূদ্ধ সকাল’ গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
খ উত্তরঃ কাজী নজরুল ইসলাম আমার সত্য’ বলতে পরাবলম্বন ও দাসত্ব পরিহার করে নিজের আমিত্ব শক্তির দিকে ইঙ্গিত করেছেন। ও মানুষ তাদের আলস্য, কর্মবিমুখতা ও পরাবলম্বনের কারণে পিছিয়ে পড়েছে। তাদের অন্তর গােলামি ও দাসত্বের ভাব।
কিন্তু তারা যদি আপন সত্যকে জানে তাহলে তারা তাদের হারানাে গৌরব ও মর্যাদা ফিরে পাবে। তাই নিজের সত্তাকে জাগিয়ে তুলতে দাসত্ব ও গােলামি দূর করতে নিজের শক্তি ও নিজের সত্যর ওপর অটুট বিশ্বাস রাখতে হবে । আর পরাধীনতা, দাসবৃত্তি থেকে মুক্ত হয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার উপায় হচ্ছে অন্তর্নিহিত সত্যকে অনুধাবন করা। আমার সত্য বলতে লেখক এই অনুধাবন শক্তিকেই বুঝিয়েছেন।
সারকথা : কাজী নজরুল ইসলাম আমার সত্য বলতে তাঁর নিজের শক্তির উপর আত্মনির্ভরতা অর্জনকে বুঝিয়েছেন।
গ উত্তরঃ উদ্দীপকের ভাবনা আত্মশক্তিতে উদ্বুদ্ধ হওয়ার দিক দিয়ে আমার পথ’ প্রবন্ধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে হলে প্রয়ােজন আত্মবিশ্বাসী ও স্বাবলম্বী হওয়া। অন্যের নির্দেশ মতাে চললে স্বকীয়তা হারিয়ে যায়। নিজের সত্য শক্তিকে সঠিকভাবে জানা গেলে পৃথিবীর অন্যান্য বিষয়ও জানা যায়।
‘আমার পথ’ প্রবন্ধে লেখক আত্মার শক্তি ও আমিত্বশক্তিকে গুরুত্ব দিয়েছেন। পরাবলম্বন আমাদের নিষ্ক্রিয় করে ফেলে । পরাবলম্বনই মানুষের সবচেয়ে বড়াে দাসত্ব। অন্তরে যাদের গােলামির ভাব বাইরের গােলামি থেকে তাদের মুক্তি নেই। আত্মনির্ভরশীল ব্যক্তি নিজের আত্মার শক্তিতে বিশ্বাসী।
অন্যের শক্তিতে তার বিশ্বাস নেই। এই আত্মনির্ভরশীলতা না থাকলে মানুষ নিজের উন্নতির জন্য অন্যে ওপর নির্ভর করে। কিন্তু যেদিন মানুষের মনে আত্মনির্ভশীলতা আসবে, যেদিন মানুষ আত্মশক্তিতে উদ্বুদ্ধ হবে সেদিনই মানুষ স্বাধীন হবে। উদ্দীপকে আত্মিক বিবর্তন ও মানসিক বিকাশের মাধ্যমে আত্মশক্তিতে বলিয়ান হবার কথা বলা হয়েছে।
অপদার্থ, অকর্মণ্য ব্যক্তিও অনুপ্রেরণা পেলে সপ্রতিভ হয়ে ওঠে। আমার পথ’ প্রবন্ধেও নজরুল ইসলাম ‘আমি’ সত্তার জাগরণের প্রত্যাশা করেছেন। নিজেকে চেনা, নিজের সত্যকে উপলব্ধি করার মাধ্যমে মানুষ স্বাধীনতার, মুক্তির পথে অগ্রসর হতে পারে । এ দিক থেকেই উদ্দীপকের ভাবনা ও আলােচ্য প্রবন্ধের ভাবনা সামঞ্জস্যমপূর্ণ।
সারকথা : আত্মশক্তির জাগরণ ঘটিয়ে আত্মমুক্তির মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করা সম্ভব। এই ভাবটি উদ্দীপক ও ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে পরস্পর সামঞ্জস্যপূর্ণ।
ঘ উত্তরঃ “আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে”- উদ্দীপক ও ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের আলােকে মন্তব্যটি যথার্থ । মানুষের জীবনে আছে অফুরন্ত আশা, আছে নিরাশার বেদনা যা তাকে যন্ত্রণায় দগ্ধ করে। পরনির্ভরতার কারণে এক অপার শূন্যতা মানুষের জীবনকে করে তােলে অর্থহীন। তবে জীবনের যে জাগ্রত অস্তিত্ব আছে, তার ওপর ভিত্তি করে মানুষ নতুন আশায় উদ্দীপ্ত হয়।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে, পরনির্ভর্তা কাটিয়ে কাউকে যদি তার আপন সত্যে উদ্ভাসিত করা হয় তবে তার বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে। অলস হয়ে উঠবে পরিশ্রমী, ভীরু হয়ে উঠবে সাহসী, দুর্বল হয়ে উঠবে বলবান। কারণ তখন সে নিজেকে চিনবে । নিজের শক্তিতে তার অন্তর্নিহিত সত্যের বিকাশ ঘটবে। তখন সেই উত্তাপে পুড়বে তার পরনির্ভরতা ও জড়তা।
আমার পথ’ প্রবন্ধেও লেখক আপন সত্যকে চেনার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন নিজেকে চেনা ও নিজে সত্যকে জানার মধ্য দিয়ে প্রাবন্ধিক আত্মবিশ্বাসী ও আত্মপ্রত্যয়ী হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। কারণ তিনি জানেন আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসবে।
‘আমার পথ’ প্রবন্ধে লেখক আপন সত্যকে চেনার মধ্য দিয়ে বােঝাতে চেয়েছেন পরনির্ভরতা কোনাে মানুষেরই কাম্য নয়। কারণ আত্মশক্তিতে বলীয়ান ব্যক্তি সত্যের শক্তিতে ভাস্বর। আর এমন ইঙ্গিত উদ্দীপকেও প্রকাশ পেয়েছে। এসব বিচারে বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
সারকথা : পরনির্ভরতা পরিহার করতে আত্মজাগরণের গুরুত্ব সম্পর্কে আমার পথ’ প্রবন্ধে কাজী নজরুল ইসলাম যে বক্তব্য উপস্থাপন স্ত করেছেন, তা উদ্দীপকের মূল ভাবেও প্রতিফলিত হয়েছে।
সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ২
আলম একজন সংগঠক। এলাকার ছেলেমেয়েদের নিয়ে তিনি কবি সুকান্ত পাঠাগার ও সংগীত বিদ্যালয় নামে সংগঠন গড়ে। তােলেন। তিনি মিথ্যাকে উড়িয়ে দিয়ে, সামাজিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে সংগঠনের রজত জয়ন্তী’র আয়ােজন করেছেন। তিনি দমে যাওয়ার মানুষ নন। তার সংগঠনের ছেলেমেয়েরা আজ গুণী শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, প্রশাসনের কর্মকর্তা, চিকিৎসাবিদ আরাে কতাে সফল মানুষ। তিনি আলােকিত মানুষ হিসেবে সকলের মন আনন্দে ভরিয়ে দিয়েছেন।
ক. আমার পথ’ প্রবন্ধে আমার পথ’ আমাকে কী দেখাবে?
খ. “আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে।” – ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে আলমের নেতৃত্বের স্বরূপ ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছে? বিশ্লেষণ কর।
ঘ. “মনুষ্যত্ব মানুষকে আলাের পথ দেখাতে পারে।” উদ্দীপক ও আমার পথ’ প্রবন্ধের আলােকে উক্তির যথার্থতা বিচার কর।
সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ২ এর উত্তর সমূহ
ক উত্তরঃ ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে আমার পথ’ আমাকে আমার সত্য দেখাবে।
খ উত্তরঃ সত্যকে জানা ও আত্মশক্তির বিকাশের মাধ্যমে আত্মনির্ভরতা অর্জনের বিষয়টি বােঝাতে লেখক প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছেন।
অন্যের ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকাকে বলা হয় পরনির্ভরতা। যার নিজের শক্তির ওপর বিশ্বাস নেই, যে আত্মশক্তি ও সত্যকে জানে না সেই পরনির্ভর। নিজের সত্যকে না জানলে আত্মনির্ভরতা অর্জন করা যায় না। তাই পরনির্ভরশীলতাকে বর্জন করতে হলে নিজের সত্যকে জানতে হবে, নিজের শক্তির ওপর আস্থা স্থাপন করতে হবে। আর তা হলেই মানুষ আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠবে। আর এভাবেই আত্মনির্ভরতা আসে। প্রশ্নোক্ত কথাটির মাধ্যমে লেখক এ বিষয়টিই তুলে ধরেছেন।
সারকথা : মানুষ কীভাবে আত্মনির্ভরশীল হতে পারে সে কথা বলতে গিয়ে লেখক প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছেন।
গ উত্তরঃ উদ্দীপকের আলমের নেতৃত্বের স্বরূপ ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে সম্পূর্ণভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। নিজের মতাে করে জীবন গড়তে হলে আত্মবিশ্বাসী ও স্বাবলম্বী হতে হয়। কারও নির্দেশমতাে চলতে গেলে নিজের স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলতে হয়, যা একজন মানুষের জন্য কোনােভাবেই মঙ্গল বয়ে আনে না। এ জগতে তারাই সফল, |
যারা নিজের মতাে করে পৃথিবীটা গড়ে নেয়। উদ্দীপকে একজন সফল সংগঠক আলমের কথা বলা হয়েছে। তিনি বিভিন্ন সামাজিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে নিজের মনের মতাে করে একটি সংগীত বিদ্যালয় ও পাঠাগার গড়ে তােলেন। তাই তিনি আজ সবার শ্রদ্ধার পাত্র।
আমার পথ’ প্রবন্ধেও লেখক নিজেকে চেনা ও জানার কথা বলেছেন। তিনি নিজেকে ছাড়া অন্য কাউকে কুর্নিশ করতে রাজি নন। তার কাছে বিনয়ের চেয়ে অহংকারের পৌরুষ অনেক ভালাে। তিনি আপন সত্যকে সম্মান করেছেন বলেই বাইরের মিথ্যাকে ভয় পাননি। তাই তিনি আত্মনির্ভর এবং অন্যের দাসত্ব থেকে মুক্ত।
উদ্দীপকের আলম সাহেবও একই চেতনার মানুষ। তাই তিনি আপন কাজে জয়ী। এভাবে উদ্দীপকের আলমের নেতৃত্বের স্বরূপ ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে সম্পূর্ণভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
সারকথা : উদ্দীপকের আলম নেতৃত্বের গুণে আজ সফল মানুষ। আমার পথ’ প্রবন্ধেও এ দিকটি আলােচিত হয়েছে।
ঘ উত্তরঃ “মনুষ্যত্ব মানুষকে আলাের পথ দেখাতে পারে।”- উদ্দীপক ও ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের আলােকে উক্তিটি যথার্থ ।
যা ন্যায়, যা মানুষের জন্য কল্যাণকার তাই সত্য। এ সত্য মানুষকে মনুষ্যত্বলােকে পৌঁছে দেয়। জীবনের সংকটময় মুহূর্তে এ । সত্যই মানুষকে রক্ষা করে। নতুন পথের সন্ধান দেয়।
উদ্দীপকের আলম একজন আত্মনির্ভরশীল ও মনুষ্যত্ববােধসম্পন্ন মানুষ। তিনি অন্যায় বা মিথ্যার কাছে নতি স্বীকার না করে আপন সত্যে অবিচল থেকেছেন। মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করে মনুষ্যত্বলােকের অমিয় সুধা পান করেছেন। আমার পথ’ প্রবন্ধেও লেখক এ বিষয়টি গভীর সংবেদনশীলতার সঙ্গে উপস্থাপন করেছেন।
‘আমার পথ’ প্রবন্ধে লেখক এমন এক ‘আমি’র আহ্বান করেছেন যার পথ সত্যের পথ। তিনি প্রত্যেক মানুষকে আরেক মানুষের সঙ্গে মিলিয়ে আমরা হয়ে উঠতে চেয়েছেন। তিনি জানেন মনুষ্যত্ববােধ জাগ্রত হলেই ধর্মের সত্য উন্মােচিত হবে। সব বিরােধ মিটে যাবে, সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ় হবে। এই মনুষ্যত্ববােধই মানুষকে আলাের পথ দেখাবে। এ বিষয়টিই উদ্দীপকের মূল ভাব। এদিক বিচারে তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ ।
সারকথা : উদ্দীপকের আলম সাহেবের কর্মকাণ্ডে মনুষ্যত্ববােধের সার্থক প্রকাশ ঘটেছে। আমার পথ’ প্রবন্ধেও লেখক এ বােধের উদ্বোধন 9 ঘটাতে চেয়েছেন। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ। ।