প্রিয় পাঠক আপনি যদি ইতিমধ্যে অনুসন্ধান করে থাকেন তাহারেই পড়ে মনে কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে তবে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানতে পারবেন। উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনায় সিলেবাস ভুক্ত এই কবিতাটি। চলুন তবে দেখে নেওয়া যাক।
সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ১
অকালে বাবাকে হারিয়ে আবিদের মন ভীষণ খারাপ। বন্ধু বাতেন এসে বলল, “তুমি তাে ঘুরতে খুব পছন্দ কর, চলাে নৌকায় কোথাও ঘুরে আসি। শরতের শুভ্র জ্যোৎস্নায় দু’ধারে কাশবন, মৃদু বাতাসে নৌকার দোলা তােমার মন ভালাে হয়ে যাবে।” জবাবে | আবিদ বলল, “নির্মল জলে রুপালি চাদ কোনােকিছুতে আর মন নেই ব! আমার সব ভালাে লাগা পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে।”
ক. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির নীরবতার কারণ কী?
খ. কবিতায় কবির ব্যক্তিজীবন কীভাবে ধরা পড়েছে?
গ. উদ্দীপকের বাতেন তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়? উভয়ের ভূমিকার তুলনা কর।
ঘ. “আবিদের জবাবে ‘তাহারই পড়ে মনে’ কবিতার মূল বক্তব্যই প্রতিধ্বনিত হয়েছে” – উক্তিটির যথার্থতা বিচার কর।
সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ১ এর উত্তর সমূহ
ক উত্তরঃ ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির নীরবতার কারণ প্রিয়জন হারানাের শােক ও গভীর বেদনাবােধ।
খ উত্তরঃ ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির প্রিয়জন হারানাের স্মৃতি মনে পড়ে। তাঁর প্রতি গভীর হৃদয়বেদনা অনুভবের মাধ্যমে কবির ব্যক্তিগত জীবন ধরা পড়েছে।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির ব্যক্তিগত শােক ও দুঃখবােধের বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। কবির সাহিত্য সাধনার প্রধান সহায়ক ছিলেন তাঁর স্বামী সৈয়দ নেহাল হােসেন। তাঁর মৃত্যুতে কবির জীবনে প্রচণ্ড শূন্যতা নেমে আসে। প্রকৃতিতে বসন্ত এলেও কবির অন্তরজুড়ে শীতের রিক্ততা বিরাজ করে।
তিনি কোনােমতেই তাকে ভুলতে পারেন না। শীতের রিক্ত পরিবেশের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে ওঠে তার জীবন। প্রিয়জন হারিয়ে তার হৃদয় বেদনায় কাতর, তার হৃদয়জুড়ে যেন সমস্ত শূন্যতা বিরাজ করছে। তিনি বসন্তের ফুলের সৌরভ অনুভব করতে পারেন না এবং তার ভক্তকুলের বিনীত অনুরােধও রক্ষা করতে পারেন না। শীতের প্রকৃতি যেন বিরাজ করছে তার জীবনে। এভাবে কবিতায় কবির ব্যক্তিগত জীবন ধরা পড়েছে।
সারকথা : কবি প্রিয় স্বামী হারানাের গভীর বেদনায় ক্লান্ত-বিষন্ন। প্রিয়জনের শােকের কারণে তিনি বসন্তকে স্বাগত জানাতে পারেন না। তাঁর জীবনজুড়ে যেন শীতের রিক্ততা বিরাজ করছে।
গ উত্তরঃ উদ্দীপকের বাতেন তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কবিভক্তদের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। প্রিয়জন হারানাের বেদনা অত্যন্ত গভীর। মানুষ সহজে তা ভুলতে পারে না। শােকাহত মানুষ প্রকৃতির রূপ-রস, গন্ধ-বর্ণ উপভােগ করতে পারে না। প্রিয়জন হারানাের বেদনা তাকে প্রকৃতিবিমুখ করে তােলে। প্রকৃতি সাধারণ মানুষকে আনন্দ দিতে পারলেও বেদনাহত মানুষকে আন্দোলিত করতে পারে না।
উদ্দীপকে পিতা হারানাের শােকে কাতর এক পুত্রের প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভােগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার কথা তুলে ধরা হয়েছে। এখানে আবিদ তার পিতাকে হারিয়ে গভীরভাবে শােকাহত। তাই সে তার বন্ধু বাতেনের শরতের শুভ্র জ্যোৎস্নায় দু’ধারের কাশবন, মৃদু বাতাসে নৌকার দোলা দর্শন উপভােগ করার আহ্বানে সাড়া দিতে পারে না।
এই বিষয়টি তাহারেই পড়ে মনে কবিতার বসন্ত গীত রচনা এবং বসন্তের সৌন্দর্য উপভােগের জন্য কবির প্রতি কবিভক্তদের আহ্বানের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। কারণ কবিও তার ভক্তদের ডাকে সাড়া দিতে পারেননি তার হৃদয়-বেদনার জন্য। তিনি প্রকৃতির রূপৈশ্বর্য কিংবা প্রকৃতির পরিবর্তনে সাড়া না দিয়ে নীরব। কবিভক্তরা তাই কবিকে প্রকৃতির অমিয় সৌন্দর্য উপভােগ করার আহ্বান জানান। যেমন জানিয়েছে উদ্দীপকের বাতেন।
সারকথা : ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবি প্রিয়জন হারানাের বেদনায় ভারাক্রান্ত। উদ্দীপকের আবিদও তার পিতাকে হারিয়ে গভীরভাবে শােকাহত। তাই উদ্দীপকের বাতেনের আহ্বানে আবিদ এবং কবিতায় কবিভক্তদের ডাকে কবি সাড়া দিতে পারেন না।
ঘ উত্তরঃ “আবিদের জবাবে তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার মূল বক্তব্যই প্রতিধ্বনিত হয়েছে”- উক্তিটি যথার্থ। প্রকৃতিতে শীতের শূন্যতাকে পূর্ণ করে তােলে বসন্ত। বসন্তের আগমনে গাছে গাছে নতুন পাতা দেখা দেয়, নানা রঙের ফুল | ফোটে, মানবমনে শিহরণ জাগে। কিন্তু প্রিয়জন হারিয়ে যার মন বিরহকাতর তার মনে প্রকৃতির এই পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগে না।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির ব্যক্তিজীবনে প্রিয়জন হারানাের বেদনার ছায়াপাত ঘটেছে। শীতের প্রভাবে প্রকৃতির শূন্যতা যেমন স্পষ্ট হয়ে ওঠে, কবির বেলায়ও তাই হয়েছে। প্রকৃতিতে বসন্ত এলেও তাঁর বিরহকাতর মনকে জাগাতে পারেনি। কবিতায় প্রতিফলিত কবির এই হৃদয় বেদনার সঙ্গে উদ্দীপকের আবিদের বেদনার মিল লক্ষ করা যায়।
আবিদও তার পিতাকে হারিয়ে গভীরভাবে শােকাহত। শরতের শুভ্র জ্যোৎস্নায় দু’ধারে কাশবন, মৃদু বাতাসে নৌকার দোলা— তার মনকে জাগাতে পারে না। তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবি তার অন্তর বেদনার কারণে বসন্ত প্রকৃতিকে অভ্যর্থনা জানাতে পারেন না। কারণ প্রিয়জন হারানাের স্মৃতি তাঁকে দুঃখভারাক্রান্ত করে রেখেছে। তার হৃদয়ে প্রকৃতির বসন্তের রূপবৈচিত্র্যের পরিবর্তে শীতের শূন্যতা বিরাজ করে।
উদ্দীপকের আবিদের বেলায়ও অনুরূপ ঘটনা ঘটেছে। প্রিয় পিতার মৃত্যুতে সে গভীর বেদনায় আচ্ছন্ন বলে কোনােকিছুতেই তার মন বসে না। এইসব দিক বিচারে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
সারকথা : ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কবি শীতের রিক্ততার মাঝেই জীবনের অনন্ত শূন্যতা ও মর্মপীড়ার সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন। তাঁর বেদনাবােধের সঙ্গে উদ্দীপকের আবিদের বেদনাবােধ সাদৃশ্যপূর্ণ। এই দিক থেকে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ২
“বহুদিন পরে মনে পড়ে আজি পল্লীমায়ের কোল, । ঝাউশাখে সেথা বনলতা বাধি, হরষে খেয়েছি দোল, কুলের কাটার আঘাত সহিয়া কাঁচাপাকা কুল খেয়ে, অমৃতের স্বাদ যেন লভিয়াছি গাঁয়ের দুলালী মেয়ে।”
ক. ‘পাথার’ শব্দের অর্থ কী?
খ. “কুহেলি উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী।”– পঙক্তিটি বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকের ভাববস্তুর সাথে তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার ভাববস্তুর বৈসাদৃশ্য আলােচনা কর।
ঘ. উদ্দীপকে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার মূল সুর প্রতিফলিত হয়েছে কি? তােমার মতামত দাও।
সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ২ এর উত্তর সমূহ
ক উত্তরঃ ‘পাথার’ শব্দের অর্থ সমুদ্র।
খ উত্তরঃ “কুহেলি উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী।” – এই পঙক্তিটিতে কবি শীতকে মাঘের সন্ন্যাসীরূপে কল্পনা করেছেন।
শীত ঋতুতে কুয়াশা চারদিক আচ্ছন্ন করে রাখে। গাছের পাতা ঝরে যায়। পরিবেশে এক নিঃস্ব-রিক্ত রূপ চোখে পড়ে। কবি শীতের এই অবস্থাকে সন্ন্যাসীর সঙ্গে তুলনা করেছেন। সন্ন্যাসীরা জাগতিক বিলাস-ব্যসন ত্যাগ করে সহজ-সরল জীবনযাপন করেন। তারা সংসারবিবাগী, সর্বত্যাগী। শীতও যেন তাই বসন্ত আসার আগে সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীর মতাে প্রকৃতিকে রিক্ত-শূন্য করে কুয়াশার চাদরে আচ্ছন্ন করে রাখে।
সারকথা : শীত ঋতুতে প্রকৃতি রিক্ত-শূন্য হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় প্রকৃতিতে যেন কোনাে প্রাণের সাড়া থাকে না। মনে হয় কোনাে সন্ন্যাসী রিক্ত-নিঃস্ব অবস্থায় ধ্যানে মগ্ন।
গ উত্তরঃ অতীত সুখস্মৃতি রােমন্থনের দিক দিয়ে উদ্দীপকের ভাববস্তুর সঙ্গে তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার ভাববস্তু বৈসাদৃশ্যপূর্ণ। সুখ-দুখ, আনন্দ-বেদনা নিয়েই মানুষের জীবন। জীবন চলার পথে মানুষ সুখের স্মৃতি ভুলে গেলেও দুঃখের স্মৃতি ভুলতে পারে।
প্রিয়জন হারানাের বেদনাহত মনকে কেউ জাগাতে পারে না। ব্যক্তি তার জীবনের বেদনার স্মৃতি আমৃত্যু বয়ে বেড়ায়। উদ্দীপকে পল্লিপ্রকৃতিতে বেড়ে ওঠা কবি তাঁর শৈশবে ঝাউশাখে বনলতা বেঁধে আনন্দে দোল খাওয়া, কাঁটার আঘাত সহ্য করে কাঁচা-পাকা কুল খেয়ে অমৃতের স্বাদ লাভের কথা বলেছেন। অর্থাৎ উদ্দীপকে শৈশবের আনন্দঘন স্মৃতির কথা বলা হয়েছে।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবি প্রিয়জনকে হারানাের শােকস্মৃতিতে ভারাক্রান্ত। তিনি গভীরভাবে বেদনাহত বলে প্রকৃতিতে বসন্তের আগমনকে সাদরে গ্রহণ করতে পারেন না। তার মনে কোনাে আনন্দ নেই বলে বসন্তের ঘনঘটা তাঁকে জাগায় না। কবির জীবনে প্রিয়জন হারানাের বিয়ােগব্যথার ছায়াপাত ঘটেছে। তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার এই মৌল বিষয়টি উদ্দীপকের কবিতাংশের বিষয়বস্তুর বিপরীত।
সারকথা : উদ্দীপকে শৈশবের আনন্দঘন স্মৃতি প্রতিফলিত হয়েছে। আর তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় প্রিয়জন হারানাের শােকস্মৃতি এবং য় শূন্য হৃদয়ের আকুতি প্রকাশ পেয়েছে। এভাবে উদ্দীপক ও কবিতার ভাববস্তু পরস্পর বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ উত্তরঃ না, উদ্দীপকে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার মূল সুর প্রতিফলিত হয়নি । • শৈশবের আনন্দস্মৃতি মানুষকে যেমন আলােড়িত করে, তেমনই শােকের স্মৃতি মানুষকে গভীরভাবে যন্ত্রণাকাতর করে। মানুষের
ব্যক্তিজীবনে নানা রকম সুখ-দুঃখ-আনন্দ-বেদনার স্মৃতি থাকে। সেসব নিয়েই তাদের বাঁচতে হয়। উদ্দীপকের কবিতাংশে কবি তাঁর শৈশবের আনন্দঘন দিন কাটানাের কথা বলেছেন। তিনি পল্লিমায়ের কোলে ঝাউশাখে বনলতা বেঁধে আনন্দে দোল খাওয়া, কাঁটার আঘাত সহ্য করে কাঁচা-পাকা কুল খাওয়ার কথা বলেছেন। এসব কাজ করে কবি অমৃতের স্বাদ লাভ করেছেন। উদ্দীপকের এই বিষয় বর্ণনায় প্রিয়জন হারানাের কষ্ট বা বেদনা নেই।
তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির ব্যক্তিগত জীবনের যে দুঃখময় স্মৃতির কথা বলা হয়েছে তা উদ্দীপকের বিষয়ের সঙ্গে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ। উদ্দীপকের স্মৃতিটি শৈশবের সুখস্মৃতি। অন্যদিকে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় বর্ণিত হয়েছে কবির স্বামী হারানাের শােকস্মৃতি। ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় বিচ্ছেদ বেদনায় কবির মন দুঃখভারাক্রান্ত। তাঁর কণ্ঠ নীরব ।
প্রকৃতিতে বসন্ত এলেও তাঁর মনজুড়ে শীতের রিক্ততা। ভক্তদের আহ্বান সত্ত্বেও তাঁর মন জাগে না, প্রকৃতির পরিবর্তন তাঁকে প্রভাবিত করতে পারে না। এসব বিষয়ের কোনােটিই উদ্দীপকে নেই। সেখানে কবির শৈশবের সুখের স্মৃতি প্রতিফলিত হয়েছে। এই কারণেই বলা যায়, উদ্দীপকে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার মূল সুর প্রতিফলিত হয়নি।
সারকথা : উদ্দীপকের কবিতাংশে কবির শৈশবের আনন্দঘন পল্লিস্মৃতি মনে পড়েছে। আর তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কবির স্বামী i) হারানাের বেদনাঘন শােকস্মৃতি প্রতিফলিত হয়েছে। উদ্দীপক ও কবিতার ভাববস্তু এভাবে পরস্পরের বিপরীত। তাই উদ্দীপকে তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার মূল সুর প্রতিফলিত হয়নি।