প্রিয় পাঠক ধন্যবাদ আপনার অনুসন্ধানের জন্য এবং আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করার জন্য। আপনি যদি ইতিমধ্যে অনুসন্ধান করে থাকেন নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর তবে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানতে পারবেন।
সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর 01
অমাবস্যা এলেই
পরান মাঝিকে খুব মনে পড়ে
সেই দিন এই অবেলায়, বিদ্রোহ আর ক্ষোভানলে
কোল হাতে লাঠি ছিল তার, কিছু জনবল
পাহাড় সমান সাহস আর অগ্নিদ্রোহ নিয়ে
যখন সে ঝাঁপিয়ে পড়ল।
ইতিহাস রচিত হলো মুহেূর্তের মধ্যে
তারপর শ্রমজীবীরা আর কাঁদেনি, অশ্রু ফেলেনি।
শান্ত হয়েছিল সব
প্রয়োজন হয়নি আন্দোলন সংগ্রামের
একাত্তরে এসে আবার বুঝতে পারি, তাই ডাকি
পরান মাঝি তুমি কোথায়?
ক. নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতায় উল্লিখিত লােকালয়ের সংখ্যা কত?
খ. যখন শকুন নেমে আসে এই সােনার বাংলায়’- উক্তিটির দ্বারা কী বােঝানাে হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের কবিতাংশে কবির চেতনার সঙ্গে নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতার নূরলদীনের চেতনাগত | সাদৃশ্য আলােচনা কর।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতার সম্পূর্ণ প্রতিফলন”- উক্তিটির যথার্থতা যাচাই কর।।
সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর 01 এর উত্তর সমূহ
ক উত্তরঃ ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতায় উল্লিখিত লােকালয়ের সংখ্যা- ঊনসত্তর হাজার।
খ উত্তরঃ যখন শকুন নেমে আসে এই সােনার বাংলায়’- উক্তিটি দ্বারা সােনার বাংলায় শত্রুদের অতর্কিত আক্রমণকে বােঝানাে হয়েছে। নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতায় কবি নূরলদীনকে স্মরণ করেছেন। কবি মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নূরলদীনের সাহস ও ক্ষোভকে বাঙালির মুক্তির সংগ্রামের সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন। এই সােনার বাংলা বারবার বিদেশি শাসকদের লােলুপতার শিকার হয়েছে। শত্রুরা বারবার এ দেশের সবুজ-শ্যামল প্রান্তরে হানা দিয়েছে। কবি সেসব ঘাতক এবং তাদের সহযােগীদের শকুন বলে আখ্যায়িত করেছেন। সােনার বাংলাকে ধ্বংস করার কাজে লিপ্তদের বােঝাতে কবি প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছেন।
‘ সারকথা : বাঙালির স্বাধীনতার শত্রু পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে কবি রূপক অর্থে শকুন বলেছেন।
গ উত্তরঃ অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের প্রসঙ্গে উদ্দীপকের কবিতাংশের কবির চেতনার সঙ্গে নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতার নূরলদীনের চেতনার সাদৃশ্য রয়েছে। ও সংকটকালে ইতিবাচক চেতনা মানুষকে প্রভাবিত করে। কোনাে জাতি যখন আত্মবিশ্বাস ও চেতনার অভাবে হতাশ হয়ে পড়ে তখন সেই জাতিকে তার সমৃদ্ধ ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়। এ সময় স্বদেশের সাহসী বীরের জীবনী অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে।
‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতায় কবি রংপুরের কৃষকনেতা নূরলদীনের দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগের বিষয়টি তুলে ধরেছেন। সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ ও সামন্তবাদীরা যখন বাঙালি কৃষকদের ওপর নিপীড়ন-নিম্পেষণ চালিয়েছিল তখন কৃষকনেতা নূরলদীনের নেতৃত্বে রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। তার আহ্বানে সাধারণ মানুষ জেগে উঠেছিল। উদ্দীপকেও এই বিষয়টি লক্ষ করা যায়। এখানে পরান মাঝির দেশপ্রেম ও সংগ্রামের কথা বলা হয়েছে।
নীলকররা যখন এদেশীয়দের ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন করছিল তখন পরান মাঝির নেতৃত্বে অনেক সাহসী মানুষ সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ে। উদ্দীপকের পরান মাঝি ও কবিতার নূরলদীন অভিন্ন চেতনার পথিক। এভাবে উদ্দীপকের কবিতাংশের কবির চেতনার সঙ্গে আলােচ্য কবিতায় নূরলদীনের চেতনা সাদৃশ্যপূর্ণ।
আর সারকথা : অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামী চেতনার দিক থেকে নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতা এবং উদ্দীপকের বিষয়টি পরস্পরযু সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ উত্তরঃ “উদ্দীপকটি ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতার সম্পূর্ণ প্রতিফলন” – উক্তিটি সর্বৈব সত্য। যুগে যুগে এদেশের মানুষ অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে। এদেশের মানুষের সংগ্রামী চেতনাই মুক্তির পথ দেখিয়েছে।
উদ্দীপকে ব্রিটিশ শাসকদের দ্বারা পরিচালিত নীলকররা বাঙালিদের জোরপূর্বক নীল চাষ করতে বাধ্য করে। এদেশের কৃষকরা বাধ্য হয় ধানি জমিতে নীল চাষ করে। বাঙালি খুব বেশি দিন সেই জুলুম সহ্য করেনি। এক সংগ্রামী নেতা পরাণ মাঝির নেতৃত্বে অনেক বাঙালি কৃষক-শ্রমিক তখন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ফলে আন্দোলন-সংগ্রামের প্রসঙ্গে এলেই মানুষ পরান মাঝির কথা স্মরণ করে। একইভাবে নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতায় কবিরও রংপুরের কৃষকনেতা নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়।
কৃষকনেতা নূরলদীন ১১৮৯ বঙ্গাব্দে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ ও এদেশীয় সামন্তবাদীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ডাক দিয়েছিলেন। সেই নূরলদীনের ডাকে রংপুরসহ বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলের কৃষক বিদ্রোহ করেছিল। তাই এখনও কোনাে আন্দোলন-সংগ্রামের প্রসঙ্গ এলে নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়।
ৎউদ্দীপকের পরাণ মাঝির বিপ্লবী চেতনা ও নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতার নূরলদীনের সংগ্রামী চেতনা একই সূত্রে গাঁথা। সুতরাং এভাবে উদ্দীপকটি নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতার সম্পূর্ণ প্রতিফলন। সুতরাং উক্তিটি যথার্থ।
এ সারকথা : নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় এবং উদ্দীপক উভয় ক্ষেত্রেই শােষকের বিরুদ্ধে প্রতিরােধ গড়ে তােলার সংগ্রামী চেতনার য় প্রতিফলন ঘটেছে। এই দিক থেকে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর 02
ক্ষুদিরাম মাত্র ১৭ বছর বয়সে দেশকে শত্রুমুক্ত করার জন্য গেরিলা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। অনেকগুলাে মিশন সফল করার পরে ইংরেজ সরকার ভয়ে শঙ্কিত হয়ে তাঁকে গ্রেফতার করে। বিচারে তার ফাঁসির রায় হয়। ফাঁসি কার্যকরের পূর্বে ম্যাজিস্ট্রেট তার শেষ ইচ্ছার কথা জানতে চান। জবাবে ক্ষুদিরাম বললেন, “আমি খুব ভালাে বােমা বানাতে পারি। আমার ইচ্ছা প্রতিটি ভারতবাসীকে এই বিদ্যা দান করা।”
ক. নিলক্ষা শব্দের অর্থ কী?
খ. ‘আবার নূরলদীন একদিন আসিবে বাংলায়’- উক্তিটি দ্বারা কী বােঝানাে হয়েছে?
গ. “আমি ভালাে বােমা বানাতে পারি। আমার ইচ্ছা প্রতিটি ভারতবাসীকে এই বিদ্যা দান করা”- ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতায় প্রতিফলিত কোন দিকটির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের ক্ষুদিরামই নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতার নূরলদীনের আদর্শ” উদ্দীপকের যথার্থতা বিচার কর।
সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর 02 এর উত্তর সমূহ
ক উত্তরঃ নিলক্ষা শব্দের অর্থ দৃষ্টিসীমা অতিক্রমী।
খ উত্তরঃ আবার নূরলদীন একদিন আসিবে বাংলায় কথাটি দ্বারা বাঙালির স্থবির জীবনে নূরলদীনের মতাে সংগ্রামী গণনায়কের আবির্ভাবকে বােঝানাে হয়েছে। নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতায় রংপুর অঞলের কৃষক বিদ্রোহের নেতা নূরলদীনের সংগ্রামী চেতনাকে স্মরণ করা হয়েছে।
১৭৮২ সালে নূরলদীন একদিন রংপুরের মানুষকে জেগে ওঠার আহ্বান করেছিলেন। সেখানকার মানুষ তার ডাকে সাড়া দিয়ে জেগে উঠেছিল। বাংলার মানুষ এখনও সেভাবেই জেগে উঠবে কবির এটাই বিশ্বাস। কবি মনে করেন নূরলদীনের ডাকে মানুষ আবারও জেগে উঠে পাহাড়ি ঢলের মতাে সব অন্যায় ভাসিয়ে দেবে ।।
সারকথা : নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতায় কবি সংগ্রামী চেতনার পুনর্জাগরণের জন্য এই বাংলায় নূরলদীনের আবার আগমনের এ প্রত্যাশা করেছেন।
গ উত্তরঃ “আমি ভালাে বােমা বানাতে পারি। আমার ইচ্ছা প্রতিটি ভারতবাসীকে এই বিদ্যা দান করা”– নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতায় প্রতিফলিত নূরলদীনের সংগ্রামী চেতনার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
যুগে যুগে অত্যাচারের বিরুদ্ধে এদেশের সাহসী সন্তানরা রুখে দাঁড়িয়েছে। তারা অত্যাচারীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে নিজেদের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে বহু ব্যক্তি আছেন যারা শােষকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতায় কবি নূরলদীনের সংগ্রামী চেতনাকে তুলে ধরেছেন।
কবি এখানে বাঙালিদের শােষণবঞ্চনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানাের প্রত্যাশা করেছেন। নূরলদীনের আহ্বানে যেমন বাংলার মানুষ একদিন জেগেছিল তেমনই তারা আবার জাগবে বলে কবির আশা। উদ্দীপকে বর্ণিত তরুণ ক্ষুদিরাম ভারতবাসীর মুক্তিকামী। তাই তিনি চান পুরাে ভারতবাসীই অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে এক একটা অগ্নিস্ফুলিঙ্গ হয়ে ফুটুক। ভারতের প্রত্যেকটি মানুষ তার স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনুক। এভাবে উদ্দীপকের চেতনা কবিতার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
সারকথা : উদ্দীপকের ক্ষুদিরামের কথায় যে বিদ্রোহ চেতনা ও স্বদেশপ্রেম প্রকাশ পেয়েছে তা ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতার এ সংগ্রামী চেতনার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ উত্তরঃ “উদ্দীপকের ক্ষুদিরামই নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতার নূরলদীনের আদর্শ”- মন্তব্যটি যথার্থ। বাঙালি বীরের জাতি। যুগে যুগে অন্যায়, অবিচার ও জুলুমের বিরুদ্ধে বাঙালি রুখে দাঁড়িয়েছে। তারা অন্যায়ের কাছে কখনাে মাথা নত করেনি। নূরলদীন, ক্ষুদিরাম, সূর্যসেন, তিতুমীর, হাজী শরীয়তউল্লাহ প্রমুখ এর উৎকৃষ্ট প্রমাণ।
শােষকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাই ছিল তাঁদের জীবনের একমাত্র ব্রত। তারা মানুষকে জেগে ওঠার আহ্বান করেছেন। উদ্দীপকে ১৭ বছরের তরুণ ক্ষুদিরামের দেশকে শত্রুমুক্ত করতে গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণ নিয়ে নিজের জীবন উৎসর্গ করার কথা বলা হয়েছে। মৃত্যুপূর্ববর্তী মুহূর্তে তার জীবনের শেষ ইচ্ছা ছিল প্রত্যেক ভারতবাসীকে তার মতাে বিদ্রোহী ও চেতনাদীপ্ত করে সবার মুক্তি নিশ্চিত করা। যাতে ভারতবাসী, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারে। তারা প্রত্যেকেই যেন এক-একটি বােমায়। রূপান্তরিত হয়।
নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতায়ও কবি বাঙালির মুক্তির আশা ব্যাক্ত করেছেন। নূরলদীন একদিন বাঙালিদের জাগিয়ে তােলেন। বাঙালিদের মুক্তি সংগ্রামে আহ্বান করেন। উদ্দীপকের ক্ষুদিরাম এবং কবিতায় নূরলদীনের চেতনাগত মিল দেখা যায়। তাই বলা যায় উদ্দীপকের ক্ষুদিরামই নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতার নূরলদীনের আদর্শ।
সারকথা : অধিকার আদায় সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরােধ গড়ে তােলার চেতনার দিক থেকে উদ্দীপকের ক্ষুদিরাম এবং কবিতার নূরলদীন অভিন্ন চেতনার প্রতীক।