আজকে নেকলেস গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর তুলে ধরব। আশা করি, এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের খুব উপকার হবে। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক, নেকলেস গল্পের ২টি গুরুত্বপূর্ণ ও কমন উপযোগী সৃজনশীল ও উত্তর।
সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর-১:
পিয়াসা দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সে সাদামাটা পোশাকেই যায়। তার অনেক সহপাঠী জৌলুসপূর্ণ চাকচিক্য জীবন যাপন করে। তা দেখে কখনো কখনো কষ্ট লাগলেও, সে কখনো আফসোস করে না। সে মনে করে জীবনটা কুসুমাস্তীর্ণ নয়, বিলাসব্যসনে মত্ত থাকার মানে হয় না। কঠোর পরিশ্রম করে সে পরীক্ষায় ভালো ফলায করে। আজ পিয়াসা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।
ক. নেকলেস গল্পটি ফরাসি ভাষা থেকে অনূদিত?
খ. মাদাম লোইসেলকে ফুল দিয়ে সাজতে বলার কারণ ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের পিয়াসার সাথে ‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেলের সাদৃশ্যগুলো তুলে ধরো।
ঘ. পারস্পরিক সাদৃশ্য থাকলেও দুজনের পরিণতি ভিন্নধারায় প্রবাহিত – উদ্দীপক ও ‘নেকলেস’ গল্প অবলম্বনে বিশ্লেষণ কর।
১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. নেকলেস গল্পটি ফরাসি ভাষা থেকে অনূদিত।
খ. দারিদ্র্যতার কারণে মি. লোইসেল মাদাম লোইসেলকে ফুল দিয়ে সাজতে বলেছেন।
‘নেকলেস’ গল্পে মি. লোইসেলের নিম্ন মধ্যবিত্ত পারিবারিক জীবনের কথা বিধৃত হয়েছে। মি. লোইসেল ছিলেন শিক্ষা পরিষদ অফিসের সামান্য কেরানি। তার পক্ষে মাদাম লোইসেনকে দামি অলংকার কিনে দেওয়া সম্ভবপর ছিল না। তাই তিনি বল নাচের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য মাদাম লোইসেলকে ফুল দিয়ে সাজতে বলেছিলেন।
গ. উদ্দীপকের পিয়াসার সাথে ‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেলের দারিদ্র্যপূর্ণ জীবনের সাদৃশ্য রয়েছে।
সমাজের সব মানুষ অবস্থাসম্পন্ন নয়। কেউ ধনী, কেউ দরিদ্র। দরিদ্র জীবনে ভেঙে না পড়ে দরিদ্র্যতাকে উত্তরণ করার সংগ্রামে নিবেদিত হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। উদ্দীপক ও ‘নেকলেস’ গল্পে এমন জীবন বৈচিত্র্যের কথা চিত্রিত হয়েছে। উদ্দীপকের পিয়াসা ও ‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেল দুজনই দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। উদ্দীপকে দরিদ্র পরিবারের মেয়ে পিয়াসা সাদামাটা পোশাকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়। তার অনেক সহপাঠী জৌলুসময় চাকচিক্যজীবন যাপন করে। তা দেখে পিয়াসা কখনো কখনো কষ্ট পায়।
‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেল দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তার পিতা ছিলেন নিম্ন আয়ের একজন কেরানি। স্বামীর অবস্থাও ছিল সে রকম। দারিদ্র্যের কারণে তার জীবনের প্রায় সব ইচ্ছাই অপূর্ণ থেকে যায়। সে তার ধনী বান্ধবীকে দেখে ঈর্ষান্বিত হয়। তাই জীবনের দারিদ্র্যপূর্ণ দিকটিই উদ্দীপকের পিয়াসার সাথে ‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেলের মধ্যে সাদৃশ্য তুলে ধরেছে।
ঘ. দারিদ্র্যতার দিক থেকে সাদৃশ্য থাকলেও পিয়াসা ও মাদাম লোইসেলের পরিণতি ভিন্নধারায় প্রবাহিত। কারণ পিয়াসা কঠিন পরিশ্রমে দারিদ্র্যকে উত্তরণ করেছে। আর মাদাম লোইসেল বিলাসী জীবনের উচ্চাকাঙ্ক্ষায় করুণ পরিণতির সম্মুখীন হয়েছিল।
দুঃখ-দারিদ্র্যতা মানুষের জীবনের নিত্যসঙ্গী। কঠোর সাধনায় দারিদ্র্যতাকে জয় করা যায়। যারা বিনা পরিশ্রমে বিলাসী জীবনের প্রত্যাশা করে এবং কঠিন বাস্তবতাকে মেনে না নেয় তারা দুঃখের সাগরে নিমজ্জিত হয়। এমন বাস্তবতা উদ্দীপক ও ‘নেকলেস’ গল্পে ধারণ করা হয়েছে।
উদ্দীপকে পিয়াসা দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। কিন্তু এ নিয়ে সে হীনমন্যতায় ভোগে না। সে মনে করে জীবনটা কুসুমাস্তীর্ণ নয়, বিলাসবসনে মত্ত থাকার কোনো মানে হয় না। সে কঠোর পরিশ্রম করে লেখাপড়া শিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে। অন্যদিকে ‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেল সব সময় স্বপ্ন দেখতো আয়েশি জীবনযাপনের। আর অন্যের জৌলুসপূর্ণ জীবনের সঙ্গে তুলনা করে নিজের দারিদ্র্যতা নিয়ে সব সময় হতাশ ও ব্যথিত থাকতো।
দারিদ্র্যতার দিক দিয়ে সাদৃশ্য থাকলেও মানসিকতার পার্থক্য পিয়াসা ও মাদাম লোইসেলের জীবনকে দুটি ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত করেছে। পিয়াসা জৌলুসপূর্ণ চাকচিক্যময় জীবন না পাওয়ার দুঃখে ভেঙে না পড়ে নিজের জীবন নিজেই গড়ে নিয়েছে। কঠোর পরিশ্রম করে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকে পরিণত হয়। কিন্তু মাদাম লোইসেল উচ্চাভিলাসী চিন্তায় নিমগ্ন হয়ে নিজের জীবনকে নিরানন্দ ও নির্জীব করে তোলে। ধার করা হীরার নেকলেসে নিজেকে সজ্জিত করে এক সময় তা হারিয়ে ফেলে নিজেকে করুণ পরিণতির দিকে ঠেলে দিয়েছিল। ইতিবাচক মানসিকতার শক্তিতে পিয়াসা হয়েছে জীবনে সফল। আর মাদাম লোইসেল নেতিবাচক মানসিকতায় নিমজ্জিত হয়েছে করুণ দুঃখময় জীবনে। ঘটনার এমন চাক্ষুস বাস্তবতায় মন্তব্যটি সঠিক ও যথার্থ।
সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর-২ :
চৈতীর পড়ালেখার প্রধান বাধা সীমাহীন দরিদ্র। অন্যের বাড়িতে ছাত্র পড়িয়ে ও সেলাইয়ের কাজ করে সে কোনোমতে পড়ালেখা চালিয়ে নিচ্ছে। তারই বন্ধু প্রীতি বিভিন্ন রকম পোশাক ও সামাজিক আমোদে মেতে থাকে। বিভিন্ন সময়ে প্রীতি চৈতীকে অর্থ কিংবা পোশাক দিয়ে সহযোগিতা করতে চাইলেও চৈতী তা নেয় না। নিজের দারিদ্র্যে চৈতীর মনে কোনো দুঃখবোধ কাজ করে না।
ক. লোইসেলের কাছে বাবার মৃত্যুর পরে প্রাপ্ত কত ফ্রা ছিল?
খ. বিরক্ত, দুঃখ, হতাশা ও নৈরাশ্যে সমস্ত দিন ধরে সে কাঁদত”— কে, কেন?
গ. উদ্দীপকের প্রীতি ‘নেকলেস’ গল্পের কোন চরিত্রের সঙ্গে তুলনীয়?— ব্যাখ্যা করো।
ঘ.“উদ্দীপকের চৈতী এবং ‘নেকলেস’ গল্পের মাতিলদা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে বিপ্রতীপ।” – তোমার মতামত দাও।
২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. লোইসেলের কাছে বাবার মৃত্যুর পরে প্রাপ্ত আঠারো হাজার ফ্রা ছিল।
খ. সহপাঠিনী ধনী বান্ধবীর ঐশ্বর্য দেখে কষ্ট পেতো বলে মাদাম লোইসেল বিরক্ত, দুঃখ, হতাশা ও নৈরাশ্যে সমস্ত দিন ধরে কাঁদত।
মাদাম লোইসেল ছিল সুখ ও ঐশ্বর্যপ্রিয়। অন্যের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে সে দুঃখ পেত। সামান্য কেরানির স্বামী তার সকল চাহিদা পূরণে অক্ষম বলে সে রীতিমত বিরক্ত ও হতাশ। বান্ধবী ধনী হওয়ায় সে তার কাছে দেখা করতে যেতে চাইত না এই ভেবে যে, এতে সে শুধু কষ্ট পাবে। তাইতো জীবনের এমন অপূর্ণতা থেকে মাদাম লোইসেল দুঃখ, নৈরাশ্যে সারাদিন ধরে কাঁদত।
গ. উদ্দীপকের প্রীতি ‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেল চরিত্রের সাথে তুলনীয়।
‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেল বিলাসিতা ও আমোদ প্রমোদে থাকতে ইচ্ছুক। সে উচ্চাশার ভাবনায় বিভোর থাকে। উদ্দীপকের প্রীতিও সামাজিক আমোদে মেতে থাকে এবং বিভিন্ন রকম পোশাক পরে। উদ্দীপকের প্রীতি আধুনিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত। সে নানারকম পোশাক পরিধান করে নিজেকে সাজিয়ে রাখে। তাছাড়া বিভিন্ন সামাজিক আমোদেও যেতে থাকে। প্রীতি। তার দরিদ্র বন্ধু চৈতিকে পোশাক দিয়ে সহযোগিতা করতে চায় সে।
উদ্দীপকের এই প্রীতির সঙ্গে ‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেলের তুলনা করা যায়। মাদাম লোইসেল যদিও কেরানির স্ত্রী, তবুও তার উচ্চাশা ও ভাবনার অন্ত নেই। সুখ ও আভিজাত্যের আশায় সে বিভোর থাকে। সে প্রত্যাশা করে দামি পোশাক ও গহনার। তার সামর্থ্য না থাকা সত্ত্বেও এসবের স্বপ্নে সে ব্যাকুল থাকে। তাই তার জীবন হয়ে ওঠে বিরক্তিকর, হতাশাযুক্ত ও দুঃখবোধে পূর্ণ। উদ্দীপকের প্রীতির থেকে এ বৈশিষ্ট্যের মাদাম লোইসেল আলাদা চরিত্র বলা যায়। প্রীতি বন্ধু চৈতিকে যেমন পোশাক দিয়ে সহযোগিতা করতে চায় মাদাম লোইসেল উল্টো বান্ধবীর কাছে পোশাক ও গহনা ধার নিতে যায়। তুলনামূলকভাবে উদ্দীপকের প্রীতি চরিত্রকে ‘নেকলেস’ গল্পের মাদাম লোইসেলের চেয়ে উন্নত বলে প্রতীয়মান হয়।
ঘ. উদ্দীপকের চৈতী এবং ‘নেকলেস’ গল্পের মাতিলদা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে বিপ্রতীপ বলেই বিবেচ্য।
‘নেকলেস’ গল্পের মাতিলদা লোইসেল উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও স্বপ্ন বিলাসী প্রকৃতির। সে তার সাধ্য ও সামর্থ্যের চেয়ে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির প্রতি বেশি মনোযোগী বলে তার জীবন হয়েছে দুঃখবোধে আচ্ছন্ন ও বিপর্যস্ত। অন্যদিকে উদ্দীপকে চৈতী নিজের সামর্থ্যের অতিরিক্ত প্রত্যাশী নয় বলে দুঃখবোধ ও না পাওয়ার বেদনা তার মাঝে অনুপস্থিত।
উদ্দীপকের চৈতী সীমাহীন দারিদ্র্যের মধ্যেও লেখাপড়ায় মনোযোগী হয়। অন্যের চাকচিক্য ও ধনে তার লোভ নেই। এ নিয়ে সে বিন্দুমাত্রও ভাবে না, আক্ষেপ করে না। বরং সে অন্যের বাড়িতে ছাত্র পড়িয়ে ও সেলাইয়ের কাজ করে লেখাপড়া চালায়। ধনী বন্ধু প্রীতি তাকে পোশাক দিয়ে সাহায্য করতে চাইলেও সে তা গ্রহণ করে না। বন্ধুর পোশাক ও বিনোদনে মেতে থাকায় তার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। তার এমন নির্লোভ ও অতি স্বপ্ন না থাকায় তার মাঝে দুঃখবোধ কাজ করে না।
‘নেকলেস’ গল্পের মাতিলদা লোইসেল উদ্দীপকের চৈতীর বিপরীত বৈশিষ্ট্য ধারণ করে আছে। সে সুন্দরী, সুরুচিময়ী, সুদর্শনা, হাস্যময়ী হওয়া সত্ত্বেও তার জীবন দুঃখবোধে আচ্ছন্ন। এসবের কারণ হচ্ছে তার অতিরিক্ত উচ্চাশা, স্বপ্নচারিতা ও বিলাসী মনোভাব। মাতিলদার বিয়ে হয় সামান্য এক কেরানির সাথে। ফলে তার আভিজাত্যময় জীবনযাপনের স্বপ্নগুলো পূরণ হয় না। সে তার ধনী বান্ধবীদের দেখে কষ্টে দিনরাত কান্না করে। তাদের সামনে সে যেতে সংকোচ বোধ করে। তার ধারণা ছিল সুন্দর আলোকময়, আধুনিক সাজসজ্জায় সজ্জিত থাকবে বাসগৃহ। সেখানে থাকবে দামি সব আসবাবপত্র, মোটাসোটা গৃহ-ভৃত্য। সে মনে করেছে জগতের সব সুরুচিপূর্ণ ও বিলাসিতার বস্তু তার জন্যই জন্ম হয়েছে। কিন্তু তার বাসকক্ষের দারিদ্র্য, হতশ্রী দেওয়াল, জীর্ণ চেয়ার এবং বিবর্ণ জিনিসপত্রের জন্য সে ব্যথিত। সে তার স্বামীকে বিভিন্ন জিনিসের আবদারে ব্যাকুল করে তোলে। স্ত্রীর প্রত্যাশা পূরণে স্বামীও নিতান্ত অসহায় হয়ে পড়ে। বল নাচের অনুষ্ঠানে যেতে বান্ধবীর হীরার হার ও পোশাক ধার আনে মাতিলদা। সে হার হারিয়ে চরম বিপাকে পড়ে সে এবং তার স্বামী। বান্ধবীকে হার ফেরত দিতে দশ বছর সীমাহীন কষ্ট ভোগ করে এ দম্পতি। ততদিনে উঠে যায় মাতিলদার সুন্দর দেহ উচ্চাশা ও বেপরোয়া সব স্বপ্ন। নিজের সামর্থ্যের চেয়ে বেশি প্রত্যাশা তার জীবনে বয়ে আনে অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশা। উদ্দীপকের চৈতী দরিদ্র হলেও এমন বৈশিষ্ট্য ধারণ করেনি। বিধায়, সে মাতিলদা থেকে স্বতন্ত্র।
আশা করি, আজকের আর্টিকেল নেকলেস গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর আপনার ভালো লেগেছে।