সিঙ্গারা! এই নামটা শুনলেই জিভে জল এসে যায়, তাই না? বৃষ্টি ভেজা বিকেলে কিংবা অলস দুপুরে, এক কাপ চা আর গরম সিঙ্গারা – জাস্ট জমে যায়! কিন্তু দোকানের সিঙ্গারার উপর ভরসা না করে, যদি নিজেই পারফেক্ট সিঙ্গারা বানাতে পারেন, তাহলে কেমন হয় বলুন তো? ভয় নেই, সিঙ্গারা বানানো মোটেও কঠিন নয়। আমি আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব একদম পারফেক্ট, ফুলকো আর খাস্তা সিঙ্গারা বানানোর রেসিপি।
সিঙ্গারা বানানোর সহজ রেসিপি
সিঙ্গারা বানানোর জন্য আমাদের প্রধানত দুটি ধাপ অনুসরণ করতে হবে – পুর তৈরি করা এবং সিঙ্গারার খাস্তা dough তৈরি করা। তাহলে চলুন, শুরু করা যাক!
সিঙ্গারার পুর তৈরির নিয়ম
সিঙ্গারার পুর হল আসল ম্যাজিক! পুর যদি মশলাদার আর সুস্বাদু না হয়, তাহলে সিঙ্গারা খেয়ে শান্তি পাওয়া যায় না। তাই, আসুন দেখে নিই কিভাবে পারফেক্ট পুর তৈরি করা যায়:
পুরের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ:
- আলু – ২৫০ গ্রাম (ছোট করে কাটা)
- ফুলকপি – ১০০ গ্রাম (ছোট করে কাটা)
- মটরশুঁটি – ১/২ কাপ
- পেঁয়াজ কুচি – ১টি মাঝারি সাইজের
- আদা বাটা – ১ চামচ
- রসুন বাটা – ১/২ চামচ
- কাঁচা লঙ্কা – ২-৩টি (স্বাদমতো)
- জিরা – ১ চামচ
- ধনে গুঁড়ো – ১ চামচ
- হলুদ গুঁড়ো – ১/২ চামচ
- গরম মশলা – ১/২ চামচ
- সর্ষের তেল – ২ চামচ
- নুন – স্বাদমতো
- চিনি – ১/২ চামচ (ইচ্ছা অনুযায়ী)
- কিসমিস ও কাজু – সামান্য (ছোট করে কাটা)
পুর তৈরির পদ্ধতি:
- প্রথমে আলু ও ফুলকপি সামান্য নুন দিয়ে হালকা ভাপিয়ে নিন। খেয়াল রাখবেন, সবজি যেন গলে না যায়।
- কড়াইতে তেল গরম করে জিরা দিন। জিরা ফুটে উঠলে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে হালকা সোনালী করে ভাজুন।
- আদা ও রসুন বাটা দিয়ে কিছুক্ষণ ভেজে কাঁচা লঙ্কা কুচি দিন।
- এবার জিরা, ধনে ও হলুদ গুঁড়ো দিয়ে সামান্য জল দিয়ে কষিয়ে নিন, যাতে মশলা পুড়ে না যায়।
- ভাপানো আলু, ফুলকপি ও মটরশুঁটি দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। নুন ও চিনি দিয়ে দিন।
- সবশেষে গরম মশলা, কিসমিস ও কাজু দিয়ে কিছুক্ষণ নেড়ে পুর ঠান্ডা হতে দিন।
সিঙ্গারার খাস্তা Dough তৈরির নিয়ম
সিঙ্গারার উপরের খোলসটা যদি খাস্তা না হয়, তাহলে সিঙ্গারা খেতে একদম ভালো লাগে না। পারফেক্ট খাস্তা dough তৈরির জন্য কিছু টিপস অনুসরণ করতে হবে।
Dough তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ:
- ময়দা – ২ কাপ
- জোয়ান – ১/২ চামচ
- কালো জিরা – ১/২ চামচ
- নুন – স্বাদমতো
- সর্ষের তেল অথবা ঘি – ২ টেবিল চামচ
- জল – পরিমাণ মতো
Dough তৈরির পদ্ধতি:
- একটি পাত্রে ময়দা, জোয়ান, কালো জিরা ও নুন মিশিয়ে নিন।
- তেল অথবা ঘি ময়দার সাথে ভালো করে মিশিয়ে নিন। মনে রাখবেন, তেল বা ঘিয়ের পরিমাণ সঠিক না হলে সিঙ্গারার খোলস খাস্তা হবে না।
- ধীরে ধীরে জল দিয়ে শক্ত করে dough তৈরি করুন।
- Dough -টি ভিজে কাপড় দিয়ে ঢেকে ৩০ মিনিটের জন্য রেখে দিন।
সিঙ্গারা তৈরির পদ্ধতি
Dough আর পুর তৈরি হয়ে গেলে, এবার সিঙ্গারা বানানোর পালা।
- Dough থেকে ছোট ছোট লেচি কেটে পুর ভরার জন্য তৈরি করুন।
- একটা লেচি নিয়ে লম্বা করে সামান্য বেলে নিন।
- মাঝখান থেকে ছুরি দিয়ে কেটে দু’ভাগ করুন।
- এক ভাগ নিয়ে কোন আকৃতির করে পুর ভরুন।
- পুর ভরা হয়ে গেলে মুখগুলো ভালো করে বন্ধ করুন, যাতে ভাজার সময় পুর বেরিয়ে না যায়।
- কড়াইতে তেল গরম করে মাঝারি আঁচে সিঙ্গারাগুলো সোনালী হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। খেয়াল রাখবেন, তেল যেন খুব বেশি গরম না হয়, তাহলে সিঙ্গারা পুড়ে যেতে পারে।
সিঙ্গারা ভাজার নিয়ম
সিঙ্গারা ভাজার সময় কিছু জিনিস মনে রাখতে হবে, যাতে সিঙ্গারা পারফেক্টলি ভাজা হয়:
- তেল মাঝারি গরম হতে হবে। খুব বেশি গরম তেলে সিঙ্গারা দিলে তাড়াতাড়ি লাল হয়ে যাবে, কিন্তু ভেতরটা কাঁচা থেকে যাবে।
- সিঙ্গারাগুলো একবারে বেশি না দিয়ে অল্প অল্প করে ভাজুন, যাতে তেল ঠান্ডা না হয়ে যায়।
- ভাজার সময় সিঙ্গারাগুলো উল্টে পাল্টে দিন, যাতে সব দিক সমানভাবে ভাজা হয়।
কিছু অতিরিক্ত টিপস
- পুর বানানোর সময় আপনি নিজের পছন্দমতো সবজি ব্যবহার করতে পারেন। গাজর, ক্যাপসিকাম, বা বাঁধাকপিও ব্যবহার করা যেতে পারে।
- Dough তৈরির সময় তেল বা ঘিয়ের বদলে ডালডা ব্যবহার করলে সিঙ্গারা আরও বেশি খাস্তা হবে।
- সিঙ্গারা ভাজার সময় সামান্য চিনি দিলে সিঙ্গারার রং সুন্দর হয়।
সিঙ্গারা বানানোর রেসিপি নিয়ে কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ):
সিঙ্গারা বানানো নিয়ে অনেকের মনে অনেক প্রশ্ন থাকে। তাই, কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর নিচে দেওয়া হল:
সিঙ্গারা কত প্রকার হয়?
সিঙ্গারা মূলত দুই প্রকার হয়ে থাকে – আলুর সিঙ্গারা এবং ফুলকপির সিঙ্গারা। তবে, आजकल বিভিন্ন ধরনের সিঙ্গারা পাওয়া যায়, যেমন – পনির সিঙ্গারা, চিকেন সিঙ্গারা, এবং মাটন সিঙ্গারা। এছাড়া, মিষ্টি সিঙ্গারাও পাওয়া যায়, যাতে ক্ষীর বা নারকেল ব্যবহার করা হয়।
সিঙ্গারা এবং সমুচার মধ্যে পার্থক্য কি?
সিঙ্গারা এবং সমুচার মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল এদের আকারে এবং পুরে। সিঙ্গারার আকার ত্রিকোণাকার হয়ে থাকে এবং এর পুর সাধারণত আলু, ফুলকপি ও মটরশুঁটি দিয়ে তৈরি হয়। অন্যদিকে, সমুচার আকার ত্রিকোণাকার বা শঙ্কু আকৃতির হতে পারে এবং এর পুর মাংস, সবজি বা ডাল দিয়ে তৈরি করা হয়। এছাড়া, সিঙ্গারার dough সাধারণত ময়দা দিয়ে তৈরি হয়, যাতে জোয়ান ও কালো জিরা দেওয়া হয়, কিন্তু সমুচার dough ময়দা বা আটা দিয়ে তৈরি হতে পারে এবং এতে অন্য মশলা ব্যবহার করা হয়।
সিঙ্গারা কি স্বাস্থ্যকর?
সিঙ্গারা সবসময় স্বাস্থ্যকর খাবার নয়, কারণ এটি তেলে ভাজা হয় এবং এতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে। তবে, আপনি যদি স্বাস্থ্যকর উপায়ে সিঙ্গারা বানাতে চান, তাহলে কম তেলে ভাজতে পারেন এবং ময়দার পরিবর্তে আটা ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া, পুরে বেশি করে সবজি ব্যবহার করলে এটি কিছুটা স্বাস্থ্যকর হতে পারে।
সিঙ্গারা কতদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়?
ভাজা সিঙ্গারা সাধারণত ২-৩ দিন পর্যন্ত ভালো থাকে, যদি এটি এয়ার টাইট পাত্রে সংরক্ষণ করা হয়। তবে, সিঙ্গারার স্বাদ এবং খাস্তাভাব বজায় রাখার জন্য এটি দ্রুত খেয়ে নেওয়াই ভালো। কাঁচা সিঙ্গারা ফ্রিজে সংরক্ষণ করা যায়, তবে ভাজার আগে কিছুক্ষণ স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখতে হবে।
সিঙ্গারা বানানোর জন্য কোন তেল ব্যবহার করা ভালো?
সিঙ্গারা ভাজার জন্য সাদা তেল অথবা সানফ্লাওয়ার তেল ব্যবহার করা ভালো। এই তেলগুলোর স্বাদ কম হওয়ায় সিঙ্গারার নিজস্ব স্বাদ বজায় থাকে। এছাড়া, আপনি সরষের তেলও ব্যবহার করতে পারেন, তবে সেক্ষেত্রে সিঙ্গারার স্বাদে কিছুটা ভিন্নতা আসবে।
সিঙ্গারা তৈরির সময় কী কী ভুল হতে পারে?
সিঙ্গারা তৈরির সময় কিছু সাধারণ ভুল হতে পারে, যেমন –
- Dough বেশি নরম হয়ে যাওয়া।
- পুর বেশি ভেজা হয়ে যাওয়া।
- সিঙ্গারা ভাজার সময় তেল বেশি গরম হয়ে যাওয়া।
- সিঙ্গারার মুখ ভালোভাবে বন্ধ না করা।
এই ভুলগুলো এড়িয়ে চললে আপনি অবশ্যই পারফেক্ট সিঙ্গারা বানাতে পারবেন।
সিঙ্গারার dough তৈরির সময় ময়ান হিসেবে কি ব্যবহার করা ভালো, তেল নাকি ঘি?
সিঙ্গারার dough তৈরির সময় ময়ান হিসেবে তেল ও ঘি দুটোই ব্যবহার করা যায়, তবে স্বাদের ভিন্নতার জন্য অনেকেই ভিন্ন পছন্দ করে থাকেন। তেল ব্যবহার করলে সিঙ্গারা বেশি খাস্তা হয় এবং এটি সহজে ভেঙে যায়। আবার, ঘি ব্যবহার করলে সিঙ্গারা নরম হয় এবং এর স্বাদ ভিন্ন হয়। আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী তেল বা ঘি ব্যবহার করতে পারেন।
সিঙ্গারাকে আরও সুস্বাদু করার উপায় কি?
সিঙ্গারাকে আরও সুস্বাদু করার জন্য আপনি কিছু জিনিস যোগ করতে পারেন। যেমন –
- পুরের মধ্যে সামান্য চাট মশলা যোগ করলে স্বাদ বাড়বে।
- Dough -এর মধ্যে সামান্য কসুরি মেথি যোগ করলে সিঙ্গারার গন্ধ আরও আকর্ষণীয় হবে।
- ভাজার আগে সিঙ্গারার উপরে সামান্য বিট নুন ছড়িয়ে দিলে স্বাদ আরও খুলবে।
সিঙ্গারা কি শুধু বিকেলের নাস্তা, নাকি অন্য সময়েও খাওয়া যায়?
সিঙ্গারা মূলত বিকেলের নাস্তা হিসেবে পরিচিত, তবে এটি দিনের যেকোনো সময়ে খাওয়া যায়। অনেকে সকালে বা দুপুরে ভাতের সাথে সিঙ্গারা খেতে পছন্দ করেন। এছাড়া, কোনো অনুষ্ঠানে বা দাওয়াতে সিঙ্গারা একটি জনপ্রিয় খাবার।
সিঙ্গারা বানানোর সময় খাস্তা করার জন্য কী মেশানো যায়?
সিঙ্গারা বানানোর সময় খাস্তা করার জন্য ময়দার সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণে তেল বা ঘি মেশাতে পারেন। প্রতি কাপ ময়দার জন্য প্রায় ২ টেবিল চামচ তেল বা ঘি মেশানো ভালো। এছাড়া, সামান্য বেকিং পাউডার মেশালে সিঙ্গারা আরও খাস্তা হবে।
শেষ কথা
তাহলে, দেখলেন তো, সিঙ্গারা বানানো কত সহজ? শুধু একটু মনোযোগ আর কিছু টিপস মনে রাখলেই আপনিও বানিয়ে ফেলতে পারবেন দোকানের মতো পারফেক্ট সিঙ্গারা। এবার তাহলে আর দেরি কেন? আজই ট্রাই করুন আর আমাকে জানাতে ভুলবেন না আপনার সিঙ্গারা কেমন হল! আর হ্যাঁ, আপনার বন্ধুদের সাথে এই রেসিপি শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু! হ্যাপি কুকিং!