প্রিয় পাঠক আপনি যদি ইতিমধ্যে অনুসন্ধান করে থাকেন প্রতিদান কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে তবে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানতে পারবেন। উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনায় সিলেবাস ভুক্ত এই কবিতাটি। চলুন তবে দেখে নেওয়া যাক।
সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ১
আকাশ আমায় শিক্ষা দিল উদার হতে ভাই রে,
কর্মী হবার মন্ত্র আমি বায়ুর কাছে পাইরে।
মাটির কাছে সহিষ্ণুতা পেলাম আমি শিক্ষা।
ক. জসীমউদ্দীনের একটি কাব্যগ্রন্থের নাম লেখ।
খ. “তার লাগি আমি কাদি”- কবি কার জন্য কাঁদেন? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের শেষ দু চরণ প্রতিদান’ কবিতার কোন দিকটি নির্দেশ করে?
ঘ. উদ্দীপকের কবির চেতনা প্রতিদান’ কবিতার কবির চেতনার সমান্তরাল।”- মন্তব্যটি বিচার কর।।
সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ১ এর উত্তর সমূহ
ক উত্তরঃ ‘রঙিলা নায়ের মাঝি’ জসীমউদ্দীনের একটি কাব্যগ্রন্থ।
খ উত্তরঃ কবির বুকে যে আঘাত হেনেছে কবি তার জন্য কাঁদেন। সমাজে একশ্রেণির মানুষ আছে যারা কথা, আচরণ ও কাজ দিয়ে সবসময় অন্যকে আঘাত করে। তারা একবারও চিন্তা করে না যে, তাদের এমন আচরণের কারণে মানুষ কষ্ট পেতে পারে। কবিও এমন মানুষ দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হন।
কিন্তু ক্ষমাশীল ও ধৈর্যশীল কবি তাদের আঘাতের পরিবর্তে ভালােবাসা দান করেন। যারা কবিকে আঘাত করে, প্রতিদানে কবি তাদের মঙ্গলচিন্তা করে কাঁদেন। তিনি চান তাঁকে আঘাত করা ব্যক্তিটি ভালাে থাক।
সারকথা : যে ব্যক্তি সারা জীবন কবির বুকে আঘাত করেছে কবি তার জন্য কাঁদেন।
গ উত্তরঃ উদ্দীপকের শেষ দুই চরণ ‘প্রতিদান’ কবিতার কবির সহিষ্ণুতার দিকটি নির্দেশ করে। এই পৃথিবীতে মানুষ বিভিন্ন মানবিক গুণাবলি নিয়ে প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠে। তার মধ্যে অন্যতম হলাে সহ্য করার ক্ষমতা যার যত বেশি সহ্য করার ক্ষমতা থাকে সে তত বেশি সফল মানুষ হয়ে ওঠে। ধৈর্যহীন মানুষ জীবনে সাফল্য লাভ করতে পারে না।
উদ্দীপকের শেষ দুই চরণে প্রকাশ পেয়েছে সহিষ্ণুতার কথা। কবি মাটির কাছ থেকে সহিষ্ণুতা অর্থাৎ সহ্য করার ক্ষমতা অর্জন করেন। মাটি যেমন প্রতিনিয়ত মানুষের বিভিন্ন অত্যাচার সহ্য করে, কবিও ঠিক তেমনই সহ্য ক্ষমতার অধিকারী হতে চান।
‘প্রতিদান’ কবিতার কবিও ঠিক তেমনই একজন সহিষ্ণু মানুষ। তিনি তার সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করা মানুষদের ক্ষমা করেছেন। যারা তাঁর সঙ্গে অন্যায় করে তিনি তাদের জন্যও বুকভরা ভালােবাসা নিয়ে দাড়িয়ে থাকেন। যারা তাকে পর ভেবে দূরে সরিয়ে দেয় তিনি তাদের আপন করে নেওয়ার জন্য হাহাকার করেন। উভয় জায়গায় সহিষ্ণু হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। তাই আমরা বলতে পারি যে, উদ্দীপকের শেষ দুই চরণ প্রতিদান’ কবিতার কবির সহিষ্ণুতার দিকটি নির্দেশ করে।
সারকথা : উদ্দীপকের কবি মাটির কাছ থেকে যে সহিষ্ণুতার শিক্ষা পেয়েছেন তা ‘প্রতিদান’ কবিতার কবির সহিষ্ণু আচরণের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে।
ঘ উত্তরঃ “উদ্দীপকের কবির চেতনা প্রতিদান’ কবিতার কবির চেতনার সমান্তরাল।”- মন্তব্যটি যথার্থ। ন্যায় ও নিষ্ঠাবান মানুষদের জন্য জন্য পৃথিবী এখনও সুন্দর। তাদের কর্মকাণ্ডের ওপর ভিত্তি করে মানুষ সুশৃঙ্খল ও সুন্দরভাবে জীবনযাপন করছে। আমাদের সবার উচিত প্রকৃত শিক্ষা নিয়ে মানবিক ও সুন্দর মানুষ হয়ে ওঠার চেষ্টা করা।
উদ্দীপকের কবিতাংশে আমরা দেখি, কবি প্রকৃতির বিভিন্ন অনুষঙ্গ থেকে উদার, কর্মঠ ও সহিষ্ণু হওয়ার শিক্ষা লাভ করেন। তিনি আকাশের কাছ থেকে উদার হতে শেখেন। কর্মী হতে শেখেন বায়ুর কাছে। আর মাটির কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করেন সহিষ্ণু হওয়ার ।
উদার, কর্মঠ ও সহিষ্ণুতা এসব মানুষের মানবিক বৈশিষ্ট্য যা একজন মানুষকে প্রকৃত মানুষ হতে সাহায্য করে । কবি এসব শিক্ষার মধ্য দিয়ে নিজেকে মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছেন। অন্যদিকে প্রতিদান’ কবিতার কবিও এমন উদার, মানবিক ও মহৎ বৈশিষ্ট্যের মানুষ। যিনি নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে সবসময় অন্যের কথা চিন্তা করেন। তাঁর। কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মানবিকতা, ক্ষমাশীলতা ও পরার্থপরতা ফুটে উঠেছে।
উদ্দীপকের কবি ও প্রতিদান’ কবিতার কবি উভয়ের চেতনা একই। কারণ তারা পৃথিবীতে মানবিক মানুষ হতে চেয়েছেন। নিজেদের স্বার্থে নয়, পরার্থে কাজ করাই তাঁদের জীবনের লক্ষ্য। তাই তাদের চেতনাগত দিকও একই স্রোতধারায় প্রবাহিত। তাই আমরা বলতে পারি যে, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
সারকথা : চেতনাগত দিক থেকে উদ্দীপকের কবি ও প্রতিদান’ কবিতার কবি অভিন্ন। কারণ তারা উভয়েই মানবিক, উদার ও সহিষ্ণু।
সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ২
পরপীড়া পরিহার, পূর্ণ পরিতােষ। সদানন্দে পরিপূর্ণ স্বভাবের দোষ। নাহি চায় আপনার পরিবার সুখ। রাজ্যের কুশল কার্যে সদা হাস্যমুখ৷ কেবল পরের হিতে প্রেম লাভ যার মানুষ তারেই বলি, মানুষ কে আর?
ক. প্রতিদান’ কবিতায় কবি কার ঘর বাঁধেন?
খ. কবি কার কূল বাঁধেন? কেন বাঁধেন ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে ‘প্রতিদান’ কবিতার প্রতিফলিত দিক কোনটি?
ঘ. উদ্দীপকের কবির আকাঙ্ক্ষার মানুষই ‘প্রতিদান’ কবিতার কবি” মন্তব্যটি বিচার কর।
সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ২ এর উত্তর সমূহ
ক উত্তরঃ যে কবির ঘর ভেঙেছে ‘প্রতিদান’ কবিতায় কবি তার ঘর বাঁধেন।।
খ উত্তরঃ অন্যের প্রতিহিংসার প্রতিদানে কবি ভালােবাসা দিতে চান বলেই যে কবির কূল ভাঙে কবি তার কূল বাঁধেন। প্রতিহিংসা মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। আর ভালােবাসা মানুষকে গড়তে শেখায়। সমাজে বসবাসরত প্রতিহিংসাপরায়ণ মানুষ।
কবির কূল ভাঙেন, কবিকে আঘাত করেন। প্রতিদানে উদারচিত্তের কবি এসব মানুষকে ভালােবাসা দিয়ে তাদের কূল বাঁধেন। যাতে তারা সমাজে প্রতিহিংসা ছড়াতে না পারে। তাই অন্যের প্রতিহিংসার প্রতিদানে কবি ভালােবাসা দিতে চান যে তার কূল ভাঙে, ভালােবেসে তিনি তার কূল বেঁধে দেন।
সারকথা : কবি তার কূল বাঁধেন যে তার কূল ভাঙে। কারণ তিনি সমাজকে প্রতিহিংসার হাত থেকে রক্ষা করতে চান।
গ উত্তরঃ উদ্দীপকে ‘প্রতিদান’ কবিতার প্রতিফলিত দিকটি হলাে মানুষের কল্যাণচিন্তা। | মানুষ মহৎ হয় তার মানবিক গুণাবলির মধ্য দিয়ে। অন্যের জন্য শুভ চিন্তা করা মানুষের একটি অন্যতম মানবিক গুণ। এই | গুণের কারণেই সমাজ-সংসার শান্তিপূর্ণ থাকে। আমাদের সবার উচিত মানুষের কল্যাণচিন্তা করা।
উদ্দীপকের কবিতাংশে বলা হয়েছে নিজের পরিবারের সুখ না চেয়ে রাজ্যের ভালাে কাজে সদা হাসিমুখে থাকা উচিত। যে মানুষ অন্য মানুষের কল্যাণ চিন্তা করে সেই মানুষই প্রকৃত মানুষ। প্রতিদান’ কবিতায়ও এই দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।
কবি নিজের স্বার্থের কথা চিন্তা না করে সবসময় অন্যের কথা চিন্তা করেছেন। অন্যের সুখের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। যারাই তাঁকে আঘাত করেছে তাদেরই তিনি বুকে টেনে নিয়েছেন।
মূলত উদ্দীপক ও আলােচ্য কবিতায় অন্যের কল্যাণচিন্তা করে নিজের সুখ বিসর্জন দেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। তাই আমরা বলতে পারি যে, উদ্দীপকে ‘প্রতিদান’ কবিতার প্রতিফলিত দিকটি হলাে মানুষের কল্যাণ কামনা করা।
সারকথা : উদ্দীপকের কবিতাংশে সেই মানুষকেই মানুষ বলা হয়েছে যে মানুষের কল্যাণ চিন্তা করে। প্রতিদান’ কবিতায়ও কবি মানবকল্যাণের কথা বলেছেন।
ঘ উত্তরঃ “উদ্দীপকের কবির আকাঙ্ক্ষার মানুষই ‘প্রতিদান’ কবিতার কবি”- মন্তব্যটি যথার্থ। আমাদের সমাজে একশ্রেণির মানুষ আছে যারা সবসময় নিজ নিজ চিন্তায় মগ্ন থাকে। আর একশ্রেণির মানুষ আছে যারা অন্যের কল্যাণ কামনায় জীবন উৎসর্গ করেন। অন্যের কল্যাণচিন্তা করা ব্যক্তিই প্রকৃত মানুষ ।
উদ্দীপকের কবিতাংশে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি পরপীড়া দূর করে সে পূর্ণ আনন্দ লাভ করে। এমন মানুষ নিজের পরিবারের সুখ চায় না। অন্যের সুখেই সে সুখী হয়। রাজ্যের সব কাজ সে হাসিমুখে করে। পরের কল্যাণ করার মধ্য দিয়েই সে প্রেম লাভ করে। কবি এ ধরনের মানুষকেই প্রকৃত মানুষ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
কবির আকাঙ্ক্ষার এমন মানুষই ‘প্রতিদান’ কবিতার কবি। কারণ প্রতিদান’ কবিতায় কবি নিজের সুখ-শান্তি বিসর্জন দিয়ে সবসময় অন্যকে আগলে রেখেছেন। কারও প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ মনােভাব পােষণ করেননি। সবাইকে ক্ষমা করে বুকে টেনে নিয়েছেন। তাদের বুক ভরা ভালােবাসা দিয়েছেন।
উদ্দীপকের কবিতাংশে কবি প্রকৃত মানুষ হিসেবে যেমন মানুষের কথা বলেছেন আলােচ্য কবিতার কবি তেমনই একজন মানুষ। কারণ তারা উভয়ই নিজ স্বার্থ ত্যাগ করে অন্যের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। তাই আমরা বলতে পারি যে, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ। |
সারকথা : একজন প্রকৃত মানুষের বৈশিষ্ট্য উদ্দীপকে প্রকাশ পেয়েছে। উদ্দীপকের কবি এমন মানুষকেই প্রকৃত মানুষ বলেছেন অন্যের জন্য যার প্রাণ কাঁদে। কবির আকাঙ্ক্ষিত এমন মানুষই ‘প্রতিদান’ কবিতার কবি।