প্রিয় পাঠক আপনি যদি ইতিমধ্যে অনুসন্ধান করে থাকেন বিলাসী গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে তবে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানতে পারবেন। উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনায় সিলেবাস ভুক্ত এই কবিতাটি। চলুন তবে দেখে নেওয়া যাক।
বিলাসী গল্পের পাঠ পরিচিতি নোট
প্রথম প্রকাশিত হয় ভারতী পত্রিকায়, ১৩২৫ বঙ্গাব্দের (১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দ) বৈশাখ সংখ্যায়।
চরিত্রসমূহ:
বিলাসী: গল্পের নাম চরিত্র। কর্মনিপুণ, বুদ্ধিমতী, সেবাব্রতী মেয়ে। মালোপাড়ার বিলাসী সেবা করে অসুস্থ মৃত্যুঞ্জয়কে যমের মুখ থেকে ফিরিয়ে আনে। কায়স্থের ছেলে মৃত্যুঞ্জয়ের সাথেই তার বিয়ে হয়। তবে গ্রামের মানুষের অবজ্ঞা, অবহেলা, এবং নির্যাতনের শিকার হয় বিলাসী। তার নৈতিকতার পরিচয় পাওয়া যায়, যখন সে মানুষ ঠকানোর কাজে মৃত্যুঞ্জয়কে বাধা দেয়। প্রেমের জন্য সে নির্দ্বিধায় স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ বেছে নেয়।
মৃত্যুঞ্জয়: বয়সে বড় হলেও থার্ড ক্লাসে পড়ত মৃত্যুঞ্জয়। তার বাবা-মা, ভাই-বোন কেউ ছিল না; ছিল কেবল এক জ্ঞাতি খুড়া। প্রকাণ্ড আম-কাঁঠালের বাগান এবং পোড়োবাড়ি ছিল তার। মানুষকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করা ও ভালো-মন্দ খাওয়ানোর মানসিকতা ছিল তার। অসুস্থতার সময় তাকে সেবা করে বাঁচিয়ে তোলা বিলাসীকে সে বিয়ে করে, যার কারণে তাকে সমাজের বঞ্চনার শিকার হতে হয়। পরবর্তীতে সে সাপুড়ে পেশা বেছে নেয়। মৃত্যুঞ্জয়ের মৃত্যু হয় সাপের কামড়ে।
ন্যাড়া: গল্পটি ন্যাড়ার জবানিতেই বিবৃত হয়েছে। মৃত্যুঞ্জয় ও বিলাসীর প্রতি তার সহানুভূতি ছিল। তার শখ ছিল গোখরা সাপ ধরে পোষা এবং মন্ত্রসিদ্ধ হওয়া।
খুড়া: লোভী, সুযোগসন্ধানী এবং কূটকৌশলী চরিত্র। তার মূল লক্ষ্য ছিল মৃত্যুঞ্জয়ের সম্পদ আত্মসাৎ করা।
মূলভাব:
গল্পে বর্ণিত হয়েছে ব্যতিক্রমধর্মী দুই মানব-মানবীর অসাধারণ প্রেমের মহিমা, যা ছাপিয়ে উঠেছে জাতিগত বিভেদের সংকীর্ণ সীমা। তাদের প্রেমের মহিমার আলোয় ফুটে উঠেছে সমাজের অনুদারতা ও রক্ষণশীলতা এবং জীবনের নিষ্ঠুর ও অশুভ চেহারা।
গল্পকথকের (ন্যাড়া) চেয়ে বয়সে অনেক বড় হলেও মৃত্যুঞ্জয় থার্ড ক্লাসে পড়ত। মুমূর্ষু মৃত্যুঞ্জয়কে সেবা দিয়ে বাঁচিয়ে তোলা বিলাসী জয় করেছিল তার হৃদয়। কায়স্থের ছেলের সাথে সাপুড়ের মেয়ের বিয়ে এবং অন্নগ্রহণ জ্ঞাতি খুড়া ও গ্রামের সমাজ মেনে নেয়নি। গ্রামের মানুষেরা বিলাসীকে শারীরিক নির্যাতন করে এবং গ্রাম থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টা চালায়।
পরিণতি:
কায়স্থের ছেলে মৃত্যুঞ্জয় এক বছরের মধ্যেই জাত বিসর্জন দিয়ে একেবারে পুরোদস্তুর সাপুড়ে হয়ে ওঠে। এর পেছনে ছিল বিলাসীর প্রতি তার গভীর ভালোবাসা। মৃত্যুঞ্জয়কে ওস্তাদ হিসেবে গ্রহণ করে গল্পের কথক ন্যাড়া। তারা সাপুড়ের কাজে নিয়োজিত হয়। একদিন সাপ ধরতে গিয়ে সাপের দংশনে মৃত্যুবরণ করে মৃত্যুঞ্জয়। আর সাত দিন পর, প্রেমের জন্য নির্দ্বিধায় স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ বেছে নেয় বিলাসী।
বিলাসী গল্পের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি
- ন্যাড়া এবং আরও দশ-বারোজন পাকা দুই ক্রোশ পথ হেঁটে বিদ্যা অর্জন করতে যেত।
- সকাল আটটার মধ্যে বের হয়ে যাতায়াতে চার ক্রোশ পথ ভাঙতে হতো, যা আট মাইলের ঢের বেশি।
- ম্যালেরিয়া এবং চার ক্রোশ হাঁটার কষ্টে অনেক ভদ্রলোকই ছেলে-পুলে নিয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছিলেন।
লেখকের যেসব কাজে সময় চলে যেত:
- আম-কাঁঠাল পাকা,
- বঁইচি ফলের সন্ধান,
- মর্তমান রম্ভার কাঁদি,
- আনারসের গায়ে রং ধরা,
- পুকুরপাড়ের খেজুরমেতি কাটা।
পরীক্ষার সময় ছেলেরা এডেনকে পারশিয়ার বন্দর এবং হুমায়ূনের বাবার নাম তোগলক খাঁ লিখে আসত।
মৃত্যুঞ্জয়:
- থার্ড ক্লাসে পড়ত; প্রায় দেড় মাস শয্যাগত ছিল।
- নামজাদা সাপুড়ে শ্বশুরের শিষ্য।
- তার বাগানটি ছিল কুড়ি-পঁচিশ বিঘার।
প্রত্নতাত্ত্বিকদের গবেষণার বিষয় বলা হয়েছে: মৃত্যুঞ্জয় কবে প্রথম থার্ড ক্লাসে উঠেছিল।
- মৃত্যুঞ্জয়ের ছিল গ্রামে এক প্রান্তে বিশাল আম-কাঁঠালের বাগান, এক পোড়োবাড়ি এবং এক জ্ঞাতি খুড়া।
- জ্ঞাতি খুড়া বাগানের দখল পেয়েছিলেন ওপরের আদালতের হুকুমে।
- দোকানের খাবার কিনে ছেলেদের খাওয়াতে গ্রামের মধ্যে মৃত্যুঞ্জয়ের জোড়া ছিল না।
মালোপাড়ার এক বুড়ো মালো চিকিৎসা করে এবং তার মেয়ে বিলাসী সেবা করে মৃত্যুঞ্জয়কে যমের মুখ থেকে ফিরিয়ে আনে।
খুড়া:
- নালতের মিত্তির বংশের অভিভাবক।
- বিলাত প্রভৃতি ম্লেচ্ছদেশে, পুরুষদের মধ্যে একটা ‘কুসংস্কার’ ছিল—স্ত্রীলোক দুর্বল এবং নিরুপায় বলে তার গায়ে হাত তুলতে নেই।
অন্যান্য তথ্য:
- প্রাতঃস্মরণীয় স্বর্গীয় মুখোপাধ্যায় মহাশয়ের বিধবা পুত্রবধূ মনের বৈরাগ্যে বছর দুই কাশীবাস করে ফিরে আসেন।
- কায়স্থ মৃত্যুঞ্জয় এক বছরের মধ্যেই পুরোদস্তুর সাপুড়ে হয়ে যায়।
- সাপ ধরার জন্য চতুর্দিকে প্রসিদ্ধ হয়ে ওঠে ন্যাড়া।
সাপুড়েদের সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা ছিল শিকড় বিক্রি।
- ক্রোশ দেড়েক দূরে গোয়ালার বাড়িতে সাপ ধরতে যায় তারা।
- মিনিট দশেকের মধ্যে মৃত্যুঞ্জয় একটি প্রকাণ্ড খরিশ গোখরো ধরে ন্যাড়ার হাতে দেয়।
মৃত্যুঞ্জয়ের মৃত্যুর পর বিলাসী সাত দিনের বেশি বাঁচেনি।
- গ্রামের লোক একবাক্যে বলতে থাকে যে অন্নপাপের কি আর প্রায়শ্চিত্ত আছে।
“অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই চরম সার্থকতা নয়, অতিকায় হস্তী বিলুপ্ত হয়ে গেছে, কিন্তু তেলাপোকা টিকে আছে।”
মা সরস্বতী:
- হিন্দু পুরাণ অনুসারে বিদ্যা ও কলার অধিষ্ঠাত্রী দেবী; বীণাপাণি, বাগদেবী।
ভূগোল:
- কামচাটকা: রাশিয়ার সাইবেরিয়ার উপদ্বীপ।
- সতেরোটি জীবন্ত আগ্নেয়গিরি রয়েছে।
- স্যামন মাছের দেশ নামে পরিচিত।
- রাজধানী: পেত্রোপাভলোভস্ক।
- সাইবেরিয়া: এশিয়ার উত্তরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ ভূভাগ।
- পৃথিবীর গভীরতম হ্রদ ‘বৈকাল’ এখানে অবস্থিত।
- পৃথিবীর দীর্ঘতম রেলপথ ট্রান্স-সাইবেরিয়ান এখানে চালু হয়।
- এডেন: আরব দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত বিখ্যাত বন্দর।
- সামুদ্রিক লবণ তৈরির জন্য বিখ্যাত।
শব্দার্থ:
- থার্ড ক্লাস: বর্তমান অষ্টম শ্রেণি।
- মালো: সাপের ওঝা অর্থে ব্যবহৃত।
- কাশী: ভারতের উত্তর প্রদেশে অবস্থিত বিখ্যাত তীর্থক্ষেত্র।
- বারওয়ারি: সর্বজনীন।
ভূদেবচন্দ্র মুখোপাধ্যায়:
- হিন্দু সমাজের নানা কুসংস্কারের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেন।
- বিখ্যাত গ্রন্থ: ‘পারিবারিক প্রবন্ধ,’ ‘সামাজিক প্রবন্ধ,’ ‘আচার প্রবন্ধ।’
- শিব বা মহেশ্বরের অন্য নাম মৃত্যুঞ্জয়।
জ্ঞানমূলক সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর:
বিগত বছরের বোর্ড পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তর:
১. ‘বিলাসী’ গল্পের গল্প কথকের নাম কী?
উত্তর: ‘বিলাসী’ গল্পের গল্প কথকের নাম ন্যাড়া।
২. ‘বিলাসী’ গল্পটি প্রথম কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়?
উত্তর: ‘বিলাসী’ গল্পটি প্রথম ‘ভারতী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
৩. ‘বিলাসী’ গল্পে কোন মোগল সম্রাটের নাম উল্লেখ আছে?
উত্তর: ‘বিলাসী’ গল্পে মোগল সম্রাট হুমায়ূনের নাম উল্লেখ আছে।
৪. ন্যাড়ার মাদুলি-কবচ কবরে দেওয়ার পরে তার কাছে আর কী অবশিষ্ট রইল?
উত্তর: ন্যাড়ার মাদুলি-কবচ কবরে দেওয়ার পরে তার কাছে বিষহরির আজ্ঞা অবশিষ্ট রইল।
সম্ভাব্য জ্ঞানমূলক প্রশ্ন:
১. খুড়া কোন বংশের লোক ছিল?
উত্তর: খুড়া ছিল নালতের মিত্তির বংশের লোক।
২. মৃত্যুঞ্জয়কে চিকিৎসা করে কে?
উত্তর: মৃত্যুঞ্জয়কে চিকিৎসা করে মালোপাড়ার এক বুড়া মালো।
৩. পারশিয়া বলতে কোন দেশ বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: পারশিয়া বলতে বর্তমান ইরান দেশকে বোঝানো হয়েছে।
৪. এডেন কী?
উত্তর: এডেন আরব দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত একটি বিখ্যাত বন্দর, যা সামুদ্রিক লবণ তৈরির জন্য প্রসিদ্ধ।
৫. কার গোখরা সাপ ধরে পোষার শখ ছিল?
উত্তর: ন্যাড়ার গোখরা সাপ ধরে পোষার শখ ছিল।
অনুধাবনমূলক সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
বিগত বছরের বোর্ড পরীক্ষার প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর:
১. “ওরে বাপরে। আমি একলা থাকতে পারব না।”-উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর:
উক্তিটি ন্যাড়ার এক মৃত আত্মীয়ের স্ত্রীর মুখ থেকে উচ্চারিত। ন্যাড়ার আত্মীয় মারা যাওয়ার পর বাড়িতে শুধুমাত্র ন্যাড়া এবং সেই আত্মীয়ের স্ত্রী ছিল। মৃত্যুর খবর পাড়া-প্রতিবেশীকে জানাতে ন্যাড়া যখন বাড়ি থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নেয়, তখন আত্মীয়ের স্ত্রী ভয়ে চিৎকার দিয়ে বলে যে সে একলা মৃত লাশের সাথে থাকতে পারবে না। উক্তিটি তার ভয়ের মানসিক অবস্থা এবং একাকিত্বের অনুভূতিকে তুলে ধরে।
২. “গ্রামের মধ্যে মৃত্যুঞ্জয়ের ছিল এমনি সুনাম”-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর:
মৃত্যুঞ্জয় ছিল একজন নিঃসঙ্গ যুবক। তার বিশাল আম-কাঁঠালের বাগান থাকায় আর্থিক সচ্ছলতা ছিল। গ্রামের লোকেরা প্রয়োজনে তার কাছ থেকে সাহায্য নিত। কিন্তু তথাকথিত সভ্য সমাজে তাকে মেনে নেওয়া হতো না। আলোচ্য উক্তিটি গ্রামবাসীর সুবিধাবাদী আচরণ এবং তথাকথিত ভদ্র সমাজে মৃত্যুঞ্জয়ের অগ্রহণযোগ্যতাকে বোঝায়।
৩. “একলা যেতে ভয় করবে না তো?”-কে, কাকে এবং কেন এই উক্তিটি করেছিল?
উত্তর:
বিলাসী ন্যাড়াকে এই উক্তিটি করেছিল। মৃত্যুঞ্জয় অসুস্থ থাকায় ন্যাড়া তাকে দেখতে গিয়েছিল। রাত হয়ে যাওয়ায় ফেরার সময় আম বাগানের অন্ধকার পথে ন্যাড়ার ভয় করবে কি-না তা জানতে বিলাসী এই প্রশ্ন করে। আম বাগানটি ছিল বিশাল এবং জঙ্গলের পথে নানা বিপদ থাকার আশঙ্কা ছিল, যা এই প্রশ্নের কারণ।
৪. “ঠিক যেন ফুলদানিতে জল দিয়া ভিজাইয়া রাখা বাসি ফুলের মত।”-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর:
উক্তিটি বিলাসীর শারীরিক অবস্থার বর্ণনা দিতে বলা হয়েছে। মৃত্যুঞ্জয়ের সেবা করতে গিয়ে বিলাসীর শরীর রুগ্ন ও ভগ্ন হয়ে পড়েছিল। তার অবস্থা এমন ছিল যেন ফুলদানিতে রাখা বাসি ফুল, যা হাতের সামান্য স্পর্শেই ঝরে পড়তে পারে।
সম্ভাব্য অনুধাবনমূলক প্রশ্ন:
১. “ইহা আর একটি শক্তি”-বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর:
এখানে “ইহা” বলতে বোঝানো হয়েছে মানুষের ধৈর্য, আত্মবিশ্বাস, বা নিরবচ্ছিন্ন ভালোবাসার শক্তি। এটি এমন একটি শক্তি যা সংকটের সময় মানুষকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে।
২. “অতিকায় হস্তী লোপ পাইয়াছে, কিন্তু তেলাপোকা টিকিয়া আছে।”-উক্তিটির তাৎপর্য লেখ।
উত্তর:
উক্তিটি জীবনের বাস্তবতা তুলে ধরে। এতে বোঝানো হয়েছে যে বিশাল এবং শক্তিশালী জিনিসও কখনো বিলুপ্ত হতে পারে, কিন্তু ছোট এবং তুচ্ছ বলে বিবেচিত জিনিস টিকে থাকতে পারে। এটি প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রক্রিয়া এবং পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতার দিকটি তুলে ধরে।
৩. “নারায়ণের কর্তৃপক্ষেরও চক্ষুলজ্জা হইবে”-এ কথা কেন বলা হয়েছে?
উত্তর:
এখানে “নারায়ণের কর্তৃপক্ষ” বলতে ঈশ্বর বা সর্বোচ্চ শক্তিকে বোঝানো হয়েছে। গ্রামবাসীর অমানবিক আচরণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে তা ঈশ্বরকেও লজ্জিত করতে পারে। এটি সমাজের নিষ্ঠুরতা এবং মানবিকতার অভাব তুলে ধরতে বলা হয়েছে।
৪. খুড়া মৃত্যুঞ্জয়ের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে কেন?
উত্তর:
খুড়া মৃত্যুঞ্জয়ের বিশাল সম্পত্তি দখল করতে চেয়েছিল। তাই সে মৃত্যুঞ্জয়ের বিরুদ্ধে নানা মিথ্যা কুৎসা রটিয়ে তাকে সমাজচ্যুত করার চেষ্টা করত। তার লোভী এবং সুযোগসন্ধানী চরিত্র এই আচরণের মূল কারণ।
৫. “সাপের বিষ যে বাঙালির বিষ নয়, তাহা আমিও বুঝিয়াছিলাম”-উক্তিটি বুঝিয়ে লিখ।
উত্তর:
এখানে “সাপের বিষ” বলতে সমাজের রক্ষণশীলতা, কুসংস্কার এবং ভণ্ডামিকে বোঝানো হয়েছে। গল্পের ন্যারেটর বুঝতে পেরেছিল যে মৃত্যুঞ্জয় এবং বিলাসীর প্রতি গ্রামবাসীর আচরণ প্রকৃতপক্ষে তাদেরই দুর্বল মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। এটি সমাজের ভণ্ডামি ও অবিচারের প্রতি একটি তীব্র প্রতিবাদ।
বিলাসী গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ১
গাহি সাম্যের গানমানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই,
নহে কিছু মহীয়ান নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ,
অভেদ ধর্মজাতি,
সব দেশে সব কালে ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।।
ক. বাংলা সাহিত্যের অপরাজেয় কথাশিল্পীর নাম কী?
খ. “আমরা বলি, যাহারই গায়ে জোর নাই, তাহারই গায়ে হাত তুলিতে পারা যায়।”- ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকটি ‘বিলাসী’ গল্পের কোন বিষয়টির সঙ্গে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. বিষয়গত বৈসাদৃশ্য থাকলেও উদ্দীপকটি বিলাসী’ গল্পের লেখকের মানসচেতনার প্রতিনিধিত্ব করে।- মন্তব্যটি বিশ্লেণ কর।
সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ১ এর উত্তর সমূহ
ক উত্তরঃ বাংলা সাহিত্যের অপরাজেয় কথাশিল্পীর নাম শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
খ উত্তরঃ তকালীন সমাজে দুর্বলের ওপর নির্যাতনের যে প্রবণতা ছিল সেই বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করেই উক্তিটি করা হয়েছে।
মৃত্যুঞ্জয় যে সমাজে বসবাস করত সেখানকার মানুষ ছিল স্বার্থান্ধ ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন। সমাজের মানুষ জোটবদ্ধ হয়েছিল বিলাসী মৃত্যুঞ্জয়ের প্রেমের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, পােড়ােবাড়ির কক্ষে মৃত্যুঞ্জয়কে আটকে রেখে তারা সাপুড়েকন্যা বিলাসীর ওপরও চড়াও হয়েছিল। তাদের অপরাধ একটাই— অসম বর্ণের প্রেম। সমাজের এরূপ আচরণের কারণেই গল্পের কথক ন্যাড়া উদ্ধত শ্লেষাত্মক উক্তিটি করেছে। কারণ তারা ছিল দুর্বল ও অসহায়।
সারকথা : সমাজ তার ওপরই সব সময় অত্যাচার চালায় যে দুর্বল ও অসহায়।
গ উত্তরঃ উদ্দীপকটি বিলাসী’ গল্পের বর্ণবৈষম্য এবং মানুষকে ঘৃণা করার বিষয়টির সঙ্গে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।
সব মানুষ একই স্রষ্টার সৃষ্টি। স্রষ্টার কাছে সব মানুষই সমান। তাই পৃথিবীতে স্বার্থের কারণে জাতিভেদ করে বৈষম্য সৃষ্টি করার কোনাে অর্থ হয় না ।
উদ্দীপকে সাম্যের কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে মানুষের চেয়ে বড় কিছু নেই পৃথিবীতে। দেশ-কাল-পাত্র ও ধর্মভেদে সব মানুষই সমান। তাই শুধু শুধু নিজেদের মধ্যে জাতিভেদ করা উচিত নয়। অন্যদিকে বিলাসী’ গল্পে জাত-পাত ও সামাজিক বিভেদের দিকটি প্রকাশ পেয়েছে।
বিলাসী নিম্নবর্ণের মেয়ে। মৃত্যুঞ্জয়ের সেবা করতে করতে তার প্রতি অনুরাগ জন্মে এবং তাকে বিয়ে করে। নিচু জাতের মেয়ে বলে সমাজ এই বিয়ে মেনে নেয় না। অন্নপাপের অজুহাতে বিলাসীকে নির্যাতন করে। মৃত্যুঞ্জয়ের অসুস্থতার কথা না ভেবেই অন্যায়ভাবে তার কাছ থেকে বিলাসীকে আলাদা করা হয়। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকটি ‘বিলাসী’ গল্পের জাতিভেদের দিক দিয়ে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।
সারকথা : উদ্দীপকে সাম্যচেতনার প্রকাশ ঘটেছে। অন্যদিকে ‘বিলাসী’ গল্পে সমাজের জাতিগত বিভেদ ও নিপীড়ন তুলে ধরা হয়েছে। এখানেই দুটি ক্ষেত্রের বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।
ঘ উত্তরঃ বিষয়গত বৈসাদৃশ্য থাকলেও উদ্দীপকটি “বিলাসী’ গল্পের লেখকের মানসচেতনার প্রতিনিধিত্ব করে।- মন্তব্যটি যথার্থ । আমাদের চারপাশ তখনই সুন্দর হবে যখন আমরা সব ভেদাভেদ ভুলে একসঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করতে শুরু করব। সবাই এক হয়ে সবার জন্য বাঁচব, শুধু নিজের স্বার্থে বাঁচব না।।
উদ্দীপকে মানুষে মানুষে সাম্যের দিকটি তুলে ধরা হয়েছে। দেশ-কাল-পাত্র ও ধর্মভেদে সবাই মানুষ, সবাই সৃষ্টিকর্তার আপন। তাই মিথ্যা বৈষম্য সৃষ্টি করা উচিত নয়। বিলাসী’ গল্পের মূল উপজীব্য বিষয় হচ্ছে জাতিভেদের অসারতা। গল্পে বিলাসী ও মৃত্যুঞ্জয়ের মধ্যকার সবচেয়ে বড় সমস্যা ও বাধা হলাে সমাজের তৈরি জাতিভেদ।
বিলাসী নিম্নবর্ণের মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও মৃত্যুঞ্জয় তাকে বিয়ে করে। এ অপরাধেই বিলাসীকে নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হয়। এই বিষয়গত বৈসাদৃশ্য সত্ত্বেও উদ্দীপকটি ‘বিলাসী’ গল্পের লেখকের মানসচেতনার প্রতিনিধিত্ব করে।
উদ্দীপকে জাতি-ধর্মের ঊর্ধ্বে সব মানুষের মধ্যে সাম্যের কথা বলা হয়েছে। বিলাসী’ গল্পে লেখক তকালীন সমাজে এই সাম্যের অভাবই লক্ষ করেছেন। এ গল্পের মাধ্যমে তিনি মানুষকে মানবিক, উদার ও সহনশীল হতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তাই বলা যায়, বিষয়গত বৈসাদৃশ্য থাকলেও উদ্দীপকটি বিলাসী’ গল্পের লেখকের মানসচেতনার প্রতিনিধিত্ব করে।
সারকথা : উদ্দীপকে সাম্যের কথা বলা হয়েছে যা বিলাসী’ গল্পে বর্ণিত বিষয়ের সঙ্গে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ। কিন্তু গল্পের লেখকের উদ্দেশ্য ছিল এর মাধ্যমে সাম্যবাদিতা ও মানবিকতার প্রয়ােজনীয়তা তুলে ধরা। এ দিক থেকে মন্তব্যটি যথার্থ।
সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ২
মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না ও বন্ধু….।
ক. শরশ্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কত খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন?
খ. বুক যদি কিছুতে ফাটে তাে সে এই মৃত স্বামীর কাছে একলা থাকিলে। বিষয়টি বুঝিয়ে বল
গ. উদ্দীপকের ভাবের সঙ্গে বিলাসী’ গল্পের কোন দিকটির সাদৃশ্য রয়েছে? নির্ণয় কর।
ঘ. উদ্দীপকটি বিলাসী’ গল্পের আংশিক ভাবের প্রতিনিধিত্বকারী।”- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ২ এর উত্তর সমূহ
ক উত্তরঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।
খ উত্তরঃ স্বামীর প্রতি অপরিসীম ভক্তি থাকলেও মৃত স্বামীর সঙ্গে একা রাত কাটানাে যে দুঃসাধ্য তার বাস্তবিক প্রমাণ দিতে গিয়ে শরৎচন্দ্র বিলাসী’ গল্পে তা তুলে ধরেছেন।
‘বিলাসী’ গল্পের কথক ন্যাড়া এক আত্মীয়ের মৃত্যুকালে সেখানে উপস্থিত ছিল। সতীসাধ্বী স্ত্রীটি তার স্বামীর শােকে বিহ্বল হয়ে পাগলের মতাে কান্নাকাটি করে। এমনকি স্বামীর সঙ্গে সহমরণে যেতে ন্যাড়াকে কাকুতি-মিনতি জানায়। অথচ ন্যাড়া যখন মৃতদেহের সৎকারের জন্য তােক জোগাড় করতে বাইরে যেতে চায় তখন মহিলা তাতে বাদ সাধে।
ভয়ার্ত ও শঙ্কিত কণ্ঠে বলে, ‘ভাই, যা হবার সে তাে হয়েছে, আর বাইরে গিয়ে কী হবে? রাতটা কাটুক না। ন্যাড়া বাইরে পা বাড়ানাে মাত্রই সেই নারী চিৎকার করে বলে ওঠে- “ওরে বাপরে! আমি একলা থাকতে পারব না।’ একলা থাকতে ভয় পাওয়ার বিষয়টি বােঝাতেই শরৎচন্দ্র আলােচ্য উক্তিটি করেছেন।
সারকথা : প্রশ্নোক্ত উক্তিটিতে মৃত স্বামীর কাছে একলা থাকতে না পারার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে।
গ উত্তরঃ উদ্দীপকের ভাবের সঙ্গে ‘বিলাসী’ গল্পের মৃত্যুঞ্জয়ের অসুখে বিলাসীর সেবা-যত্ন করার দিকটির সাদৃশ্য রয়েছে। মানুষের প্রতি মানুষের আন্তরিকতা ও ভালােবাসা মানুষকে মানবিক করে তােলে। মানুষ হিসেবে একজনের বিপদে অন্যজনের এগিয়ে আসা এবং সাহায্য করার মাঝেই মনুষ্যত্ব বেঁচে থাকে।
উদ্দীপকে মনুষ্যত্ববােধ ও মানবতার কথা বলা হয়েছে। মানুষের প্রয়ােজনে এবং বেঁচে থাকার জন্য মানুষ হিসেবে একে অন্যের প্রতি কিছু দায়দায়িত্ব রয়েছে। একজনের বিপদে-আপদে অন্যজন পাশে দাড়াবে এটাই মানুষের ধর্ম, সমাজের নিয়ম হওয়া উচিত।
বিলাসী’ গল্পে যখন অসুস্থ মৃত্যুঞ্জয়ের কেউ কোনাে খোঁজখবরই রাখে না, তখন বিলাসী ও তার বাবা মানুষের সমালােচনা ও সমাজের ভয়কে উপেক্ষা করে মৃত্যুঞ্জয়ের পাশে এসে দাঁড়ায়। বিলাসী রাত-দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে মৃত্যুঞ্জয়কে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরিয়ে আনে। এই উদার মানবিকতার দিক দিয়ে উদ্দীপকের ভাবের সঙ্গে ‘বিলাসী’ গল্পের সাদৃশ্য রয়েছে ।
সারকথা : উদ্দীপকের ভাবের সঙ্গে বিলাসী’ গল্পের মৃত্যুঞ্জয়ের অসুখে বিলাসীর সেবা-যত্ন করার দিকটির সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ উত্তরঃ “উদ্দীপকটি বিলাসী’ গল্পের আংশিক ভাবের প্রতিনিধিত্বকারী।”- মন্তব্যটি যথার্থ। পৃথিবীতে বিচিত্র রকমের মানুষ রয়েছে। তাদের মধ্যে কিছু মানুষ নিজেদের স্বার্থে বিচিত্র সব নিয়ম তৈরি করে মানুষ হিসেবে।
মানুষের পাশে দাঁড়াতে মাঝে মাঝে সেসব নিয়ম উপেক্ষা করে যেতে হয়। তা না হলে মানবিকতা ও মনুষ্যত্ব পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে। উদ্দীপকে মানুষের প্রতি মানুষের মানবিক আচরণ ও দায়িত্ববােধের কথা বলা হয়েছে। মানুষ হিসেবে একজনের প্রতি অন্যজনের সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে।
বিলাসী’ গল্পে মৃত্যুঞ্জয়ের পাশে থেকে বিলাসীর সেবাদানের দিকটির মধ্য দিয়ে মানবতার উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত উপস্থাপিত হলেও গল্পটিতে বর্ণবৈষম্যের কথাও রয়েছে। সেখানে শুধু নিম্নবর্ণের বলে বিলাসীকে হতে হয়েছে নির্যাতিত। এ ছাড়াও গল্পে মানবপ্রেমের চিরন্তন সত্য ফুটে উঠেছে । সেই সঙ্গে প্রকাশ পেয়েছে বিলাসী ও মৃত্যুঞ্জয়ের পরিণতির কথাও। অন্যদিকে উদ্দীপকে কেবল মানবিকতার কথাই প্রকাশ পেয়েছে।
উদ্দীপকে মানবতার দিকটি প্রকাশিত হয়েছে। অপরদিকে বিলাসী’ গল্পে এ বিষয়টি ছাড়াও তৎকালীন সমাজের বর্ণবৈষম্য, স্বার্থপরতা, সামাজিক নানা অসংগতি ইত্যাদি উঠে এসেছে। এসব বিষয় উদ্দীপকে অনুপস্থিত। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘বিলাসী’ গল্পের আংশিক ভাবের প্রতিনিধিত্বকারী ।
সারকথা : উদ্দীপকে মানবতার দিকটি প্রকাশিত হলেও ‘বিলাসী’ গল্পে এ বিষয়টি ছাড়াও অন্যান্য বিষয় রয়েছে। তাই মন্তব্যটি যথার্থ ।
আমি এই website থেকে সৃজনশীল প্রশ্ন পড়ে অনেক উপকৃত হয়েছি । যে বা যারা এই website তৈরি করেছে তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ ❤️
আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ! আমরা চেষ্টা করব আরও সৃজনশীলের প্রশ্ন দেয়ার।
আমি এই website থেকে সৃজনশীল প্রশ্ন পড়ে অনেক উপকৃত হয়েছি । যে বা যারা এই website তৈরি করেছে তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ ❤️