প্রিয় পাঠক আপনি যদি ইতিমধ্যে অনুসন্ধান করে থাকেন মাসি পিসি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে তবে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানতে পারবেন। উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনায় সিলেবাস ভুক্ত এই কবিতাটি। চলুন তবে দেখে নেওয়া যাক।
সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ১
শৈশবে বাবা-মাকে হারিয়ে এক চাচার আশ্রয়ে থাকা আসমার জীবনে ঘটে যায় বাল্যবিবাহ। স্বামীর ঘরে অত্যাচার-নির্যাতন, পরে তালাক। চাচার সহযােগিতা না পেলেও দমে যায়নি সে। টিউশন করে লেখাপড়া চালিয়ে যায় সে। অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে মাধ্যমিক | ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় লাভ করে ভালাে ফল। আসমা এখন মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের ছাত্রী।
ক. ‘মাসি-পিসি’ গল্পে চৌকিদারের নাম কী?
খ. আহ্লাদিকে দেখে বুড়াে রহমানের চোখ ছলছল করে ওঠে কেন?
গ. উদ্দীপকের চাচা ও মাসি-পিসি’ গল্পের মাসি-পিসি চরিত্রের তুলনামূলক চিত্র উপস্থাপন কর।
ঘ. উদ্দীপকের আসমা এবং মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদি উভয়েই নির্যাতিত নারী সমাজের প্রতিনিধি।”- আলােচনা কর।
সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ১ এর উত্তর সমূহ
ক উত্তরঃ ‘মাসি-পিসি’ গল্পে চৌকিদারের নাম কানাই।
খ উত্তরঃ বুড়াে রহমান ছলছল চোখে তাকায় আহ্লাদির দিকে। কারণ আহ্লাদিকে দেখে তার অল্পদিন আগে মরে যাওয়া মেয়ের কথা মনে হয়। বুড়াে রহমানের মেয়ে আহ্লাদির চেয়ে বয়সে ছােট এবং রােগাটে। অবুঝ ছােট মেয়েটি শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারের ভয়ে সেখানে যেতে চাইত না; কান্নাকাটি করত।
তবু মেয়ের ভালাের কথা ভেবে বুড়াে রহমান তাকে জোর করে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে দিলে মেয়েটি সেখানে মারা যায়। স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আহ্লাদিও শ্বশুরবাড়ি থেকে মাসি-পিসির কাছে চলে আসে। তাই আহ্লাদিকে দেখে বুড়াে রহমানের নিজের মেয়ের কথা মনে পড়ে এবং সে ছলছল চোখে আহ্লাদির দিকে তাকায়।
সারকথা : নিজের সন্তানের প্রতি গভীর স্নেহ-মমতার কথা মনে করে বুড়াে রহমান আহ্লাদিকে দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ে।
গ উত্তরঃ উদ্দীপকের চাচা নিজের দায়িত্বশীলতার পরিচয় না দিলেও মাসি-পিসি’ গল্পের মাসি-পিসি দায়িত্বশীলতা ও নিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছেন। পুরুষ শাসিত সমাজে নারীরা সবসময় বৈষম্য ও নিযাতনের শিকার হয়। অনেক সময় তারা পরিবারের সাহায্য পায়, আবার কেউ নিদারুণ কষ্টে পতিত হয়।
মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদি স্বামীর দ্বারা নির্যাতিত হলে মাসি-পিসি তাকে আশ্রয় দেয়। মাসি-পিসি তাকে ভরণপােষণ ও | নিরাপত্তা দিতে জীবন সংগ্রামে লিপ্ত হয়। তারা আহ্লাদিকে সমাজের লালসা-উন্মত্ত মানুষদের কাছ থেকে রক্ষা করে। উদ্দীপকের পিতৃমাতৃহীন আসমাও চাচার আশ্রয়ে লালিত-পালিত হয়। তাকে বিয়ে দেওয়া হলে যে শ্বশুর বাড়িতে নির্যাতনের শিকার হয়।
চাচার দায়িত্বহীনতার কারণে তাকে বাল্যবিবাহের বলি হতে হয়। তালাকপ্রাপ্ত আসমা পরবর্তীতে চাচার কাছ থেকে কোনাে সহযােগিতাও পায়নি। এমনিক আসমাকে নিরাপত্তাও দেয়নি তার চাচা। কিন্তু মাসি-পিসি’ গল্পে মাসি-পিসি তাদের দায়িত্ব সম্পূর্ণ পালন করেছেন। তাই বলা যায়, কর্তব্য পালন ও দায়িত্বশীল আচরণের দিক থেকে উদ্দীপকের চাচা এবং আলােচ্য গল্পের মাসি-পিসির মাঝে বৈসাদৃশ্য রয়েছে।
সারকথা : মাসি-পিসি’ গল্পে মাসি-পিসি আহ্লাদিকে আশ্রয়, ভরণপােষণ ও নিরাপত্তা দিতে জীবনসংগ্রামে লিপ্ত হয়েছে। উদ্দীপকের চাচা ভাইঝি আসমার প্রতি সেই দায়িত্ব পালন করেনি।
ঘ উত্তরঃ “উদ্দীপকের আসমা এবং মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদি উভয়েই নির্যাতিত নারী সমাজের প্রতিনিধি।”- মন্তব্যটি যথার্থ। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়। এই নির্দয় সমাজ-সংসারে তাদের সংগ্রাম করে বাঁচতে হয়। তবে অনেকেই এখন সাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে।
মাসি-পিসি’ গল্পে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ঘৃণ্য মানসিকতার প্রতিফলন ঘটেছে আহ্লাদির নির্যাতিত ও মাসি-পিসিকে হয়রানি করার মধ্য দিয়ে। আলােচ্য গল্পে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নির্যাতিত নারীর প্রতিনিধিত্ব করেছে আহ্লাদি। উদ্দীপকেও নারীদের ওপর অত্যাচারে বিষয়টি লক্ষ করা যায়। পিতামাতাহারা আসমাকে শৈশবেই বিয়ে দেয় তার চাচা।
বাল্যবিবাহের বলি হওয়া আসমা স্বামীগৃহে নির্মম নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়। স্বামী তালাক দিলে এই অসহায় নারী চাচার কাছ থেকে কোনাে সহযােগিতা পায়নি। জীবনসংগ্রামে একাকী লড়াই করতে হয়েছে তাকে। উদ্দীপকের আসমা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নেতিবাচক মানসিকতার শিকার।
‘মাসি-পিসি’ গল্পে আদি পুরুষতান্ত্রিক সমাসের কাছে বার বার হয়রানি হয়েছে, অত্যাচারিত হয়েছে। পিতৃমাতৃহীন আহ্লাদিকে স্বামী উঠতে বসতে নির্যাতন করে। তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেই কেবল থামে না, পেটপুরে খেতেও পর্যন্ত দেয় না। বাঁচার তাগিদে বিধবা মাসি ও পিসির কাছে সে আশ্রয় নেয়। কিন্তু সেখানেও দারােগা, জোতদার গুন্ডা-বদমাশদের লােলুপ দৃষ্টি পড়ে আহ্লাদির ওপর। উদ্দীপকের আসমাও স্বামীর নির্যাতনের শিকার। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের আসমা এবং আলােচ্য গল্পের আহ্লাদি উভয়ই নির্যাতিত নারী সমাজের প্রতিনিধি।
সারকথা : মাসি-পিসি’ গল্পে আহ্লাদি স্বামী দ্বারা নির্যাতিত। উদ্দীপকের আসমাও অনুরূপ নির্যাতনের শিকার হয়েছে। পুরুষ শাসিত সমাজে তারা উভয়েই অমানবিক নির্যাতনের শিকার।
সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ২
মীনার বাবা হঠাৎ মারা যাওয়ায় তার মা রানু তাকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়ে। সে তার স্বামীর রেখে যাওয়া সামান্য কৃষিজমিতে উৎপন্ন ফসল বিক্রি করে যা আয় করে তাতে মীনার লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারে না। তাই অন্যের বাড়িতে ধানভানা, মাড়াই দেওয়া ও গৃহপরিচারিকার কাজ করে মীনার লেখাপড়া ও সংসারের খরচ চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ বাধা হয়ে দাঁড়াল মীনার বয়স। ষােড়শী মীনাকে গ্রাম্য মােড়লের কুদৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য সে তাকে বিয়ে দিল। কিন্তু অর্থলােভী ও স্বার্থান্ধ পরিবারে মীনার ঠাই হলাে না। সে মায়ের কাছে চলে আসল। শুরু হলাে মা-মেয়ের নতুন করে বেঁচে থাকার লড়াই।
ক. পাতাশূন্য শুকনাে গাছটায় কারা বসেছে?
খ. “ছেলের মুখ দেখে পাষাণ নরম হয়” – এখানে ‘পাষাণ’ কথাটি দ্বারা কী বুঝানাে হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের সমাজচিত্রের সাথে মাসি-পিসি’ গল্পের সমাজচিত্রের সাদৃশ্য কতটুকু? আলােচনা কর ।
ঘ. ‘বেঁচে থাকার লড়াই’ – কথাটি উদ্দীপক ও মাসি-পিসি’ গল্পের আঙ্গিকে ব্যাখ্যা কর।
সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর ২ এর উত্তর সমূহ
ক উত্তরঃ পাতাশূন্য শুকনাে গাছটায় শকুনেরা উড়ে এসে বসেছে।
খ উত্তরঃ “ছেলের মুখ দেখে পাষাণ নরম হয়”– এখানে ‘পাষাণ’ কথাটি দ্বারা কঠিন হৃদয়ের মানুষকে বােঝানাে হয়েছে। মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদি গর্ভবতী। তার স্বামী জগু খুব নিষ্ঠুর প্রকৃতির মানুষ। সে আহ্লাদিকে নানা রকম শারীরিক নির্যাতন করে।
অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আহ্লাদি মাসি-পিসির কাছে বাবার বাড়ি চলে আসে। তখন পিসি আহ্লাদিকে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলে। কারণ সাধারণত সন্তানের মুখ দেখলে কঠিন হৃদয়ের মানুষও নরম হয়ে যায়। এখানে ‘পাষাণ’ কথাটি দ্বারা কঠিন হৃদয়ের মানুষকে বােঝানাে হয়েছে।
সারকথা : ‘পাষাণ’ শব্দের অর্থ কঠিন; গল্পের ‘পাষাণ’ বলতে কঠিন হৃদয়ের মানুষকে বােঝানাে হয়েছে।
গ উত্তরঃ উদ্দীপকের সমাজচিত্রের সাথে মাসি-পিসি’ গল্পে সমাজচিত্র অনেকাংশেই সাদৃশ্যপূর্ণ। পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নারীরা নানাভাবে নিগৃহীত হয়। তারা সমাজ ও সংসারে পুরুষদের দ্বারা মানসিক ও শারীরিক উভয় প্রকার নির্যাতনের শিকার হয়।
সমাজপতিরাও নিজেদের হীন স্বার্থের জন্য অসহায় ও দুর্বল সাধারণ মানুষকে অত্যাচার করে। উদ্দীপকের সমাজচিত্রে এক অসহায় বিধবা নারীর লড়াই করে বেঁচে থাকার কথা বর্ণিত হয়েছে। দরিদ্র মা রানু কৃষিজমিতে ফসল উৎপন্ন করে মেয়েকে নিয়ে বাঁচতে চায়। কিন্তু পুরুষশাসিত সমাজে সে ষােড়শী মীনাকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়ে। তাই গ্রাম্য মােড়লের কুদৃষ্টি থেকে মীনাকে রক্ষা করতে মা রানু মেয়েকে বিয়ে দেয়। সেখানেও অর্থলােভী ও স্বার্থান্ধ পরিবারে মীনার ঠাই হয় না। সে মায়ের কাছে চলে আসতে বাধ্য হয়।
মাসি-পিসি’ গল্পেও এ ধরনের সমাজব্যবস্থার পরিচয় পাওয়া যায়। যেখানে পুরুষশাষিত সমাজব্যবস্থায় বেঁচে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত মাসি-পিসিকে লড়াই করতে হয়। অর্থলােভী স্বামী জগুর অত্যাচারে আহ্লাদি শ্বশুরবাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়ে আশ্রয় নেয় মাসি-পিসির কাছে। আহ্লাদিকে গ্রামের বদলােকদের হাত থেকে বাঁচতে মাসি-পিসিকে নিতে হয় বিভিন্ন সাহসী পদক্ষেপ।
মূলত উভয় জায়গায় পুরুষশাসিত সমাজে নারীর অবমাননা, নারীর ওপর নির্যাতন, অর্থলােভ, হীন মানসিকতা ইত্যাদি প্রকাশ পেয়েছে। তাই আমরা বলতে পারি যে, উদ্দীপকের সমাজচিত্রের সঙ্গে আলােচ্য গল্পের সমাজচিত্র অনেকাংশেই সাদৃশ্যপূর্ণ।
সারকথা : ‘মাসি-পিসি’ গল্পের সমাজচিত্রে ও উদ্দীপকের সমাজচিত্রে পুরুষশাসিত সমাজের শত অন্যায়-অত্যাচার ফুটে উঠেছে। ফুটে উঠেছে। এসব সমাজে নারীর করুণ অবস্থার কথাও।
ঘ উত্তরঃ ‘বেঁচে থাকার লড়াই’- কথাটি উদ্দীপক ও মাসি-পিসি’ গল্পের আলােকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সমাজে নারীরা চরম বৈষম্যের শিকার। সমাজে কিছু স্বার্থান্ধ ও লােভী মানুষ সবসময় অসহায় নারীদের ক্ষতি করার চিন্তায় ব্যস্ত থাকে। ফলে নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভােগে। তাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হয়।
‘মাসি-পিসি’ গল্পে মাসি ও পিসির জীবনসংগ্রামের দিকটি তুলে ধরা হয়েছে। আহ্লাদিকে অবলম্বন করে তারা জীবনযুদ্ধ শুরু করে। তারা গ্রাম থেকে শাকসবজি নিয়ে সালতি বেয়ে শহরে গিয়ে বিক্রি করে সংসার চালায়। গ্রামের বিকৃত রুচির মানুষের হাত থেকে আহ্লাদিকে বাঁচাতে তারা হাতে অস্ত্র তুলে নেয়।
ভবিষ্যতের বিপদের কথা ভেবে তা থেকে বাঁচার জন্য পূর্বপ্রস্তুতি নেয়। বেঁচে থাকার জন্য তারা প্রতিনিয়ত লড়াই করে চলে। একইভাবে উদ্দীপকেও দেখা যায় স্বামীর মৃত্যুর পর রানু নিজে কৃষিজমিতে ফসল ফলিয়ে আয় করে। মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাতে অন্যের বাড়িতে বিভিন্ন কাজ করে। একমাত্র মেয়ে মীনাকে গ্রাম্য মােড়লের কুদৃষ্টি থেকে বাঁচাতে তার বিয়ে দেয়। শ্বশুরবাড়িতেও মেয়ের ঠাই না হলে মেয়েকে নিয়ে শুরু হয় তার নতুন করে বাঁচার লড়াই।
উদ্দীপক ও আলােচ্য গল্প উভয় জায়গায় বর্ণিত হয়েছে মাসি-পিসি ও রানুর জীবনসংগ্রামের বাস্তবচিত্র। তারা সাহস, পরিশ্রম ও সততা দিয়ে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে। বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করে। এ কারণেই বলা যায়, ‘বেঁচে থাকার লড়াই’- কথাটি উদ্দীপক ও মাসি-পিসি’ গল্পের নিরিখে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সারকথা : উদ্দীপক ও ‘মাসি-পিসি’ গল্প উভয় জায়গায় বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করার কথা প্রকাশ পেয়েছে। মূলত সংগ্রাম করে টিকে থাকাই আলােচ্য গল্প ও উদ্দীপকের মূল বিষয়। এ বিচারে বলা যায় যে, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ ।