আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “সৎসঙ্গ“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।
সৎসঙ্গ
ভূমিকা : মানুষ সামাজিক জীব। সে একা বাস করতে পারে না। তার সঙ্গ চাই। অন্যের সঙ্গে মেলামেশা চাই। মানুষের জীবন সুন্দরভাবে গঠনের জন্য সৎসঙ্গের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। সঙ্গীসাথী ও পরিচিত জনদের কাছ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখা যায় না । তাদের প্রভাব থেকেও মুক্ত রাখা যায় না নিজেকে। তাই জীবনে সঙ্গী বা বন্ধু নির্বাচনে অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের যে বৈশিষ্ট্য তাতে লক্ষ করা যায় যে, পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর নির্ভর করে পৃথিবীর মানবজীবন বিকশিত হয়ে ওঠে। যে যেমন সঙ্গ পায় সেভাবেই গড়ে ওঠে তার জীবন ।
সৎসঙ্গের গুরুত্ব : সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ একাকী বসবাস করতে পারে না। সমাজের অপর মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস তাকে আনন্দ দান করে; অপরের সাহায্য-সহানুভূতিতে তার জীবন আবর্তিত হয়; অন্যের চিন্তাভাবনা, বুদ্ধি-বিবেচনা তাকে জীবনের পথে চলতে সহায়তা করে। তাই মানুষ সৃষ্টির আদিকাল থেকেই যৌথ জীবনকে পছন্দ করেছে। সামাজিক জীবনযাপন প্রণালি মানুষের জীবনের ধারাকে সুষ্ঠু ও সুন্দর করে রেখেছে। জীবনযাপনের এ পদ্ধতির মধ্যে সঙ্গী নির্বাচনে মানুষকে বিশেষ সচেতনতার পরিচয় দিতে হয়। কারণ যথার্থ ভালো সঙ্গীর কাছ থেকে প্রকৃত উপকার পাওয়া যায়। বলা হয়ে থাকে, একজন সৎলোকই অন্য একজনকে সৎলোক হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। তাই জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে এবং জীবনে সফলতা লাভ করতে হলে সৎসঙ্গের গুরুত্ব অনেক বেশি।
সৎসঙ্গের বৈশিষ্ট্য : সৎসঙ্গ একটি বিশেষ গুণ। এর মাধ্যমে জীবন সুন্দর হয়। সৎসঙ্গ বলতে এমন সঙ্গীর সান্নিধ্য বোঝায় যার সব কাজেকর্মে কল্যাণধর্মী বৈশিষ্ট্য নিহিত রয়েছে। যে বন্ধুর আচার-আচরণে থাকবে অনুসরণযোগ্য আদর্শ, যার চিন্তাভাবনা এবং বুদ্ধিপরামর্শে থাকবে মঙ্গলাকাঙ্ক্ষা, যার বক্তব্যে থাকবে আনন্দ ও কল্যাণের উৎস, তাকেই যথার্থ ভালো বন্ধু বা সৎসঙ্গী বলে অভিহিত করা যায়। মানুষের জীবনে এ ধরনের সঙ্গীর প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। কিন্তু জীবনপথে চলতে গিয়ে মানুষ প্রায় সময়ই অসচেতন হয়ে পড়ে। তাই ভালোমন্দ মিলে মানুষের যে জীবন তাতে নানা ধরনের সঙ্গী জুটে যায়। সেসব সঙ্গী একদিকে যেমন ভালো মানুষ হতে পারে, অন্যদিকে তেমনই মন্দ মানুষ হতে পারে। ভালো মানুষ বন্ধু হিসেবে যেমন ভালো করে, তেমনই মন্দ লোক যদি বন্ধু হয় তবে তার কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না । ভালো সঙ্গীর উদ্দেশ্য থাকে চারদিকে ভালো কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করা । কিন্তু মন্দ বা অসৎ সঙ্গীর উদ্দেশ্য থাকে নিজের দুষ্ট প্রকৃতির প্রভাব অন্যের ওপর ছড়িয়ে দেওয়া। মানুষ পরিবেশের ভালোমন্দের প্রভাব থেকে মুক্ত নয় বলে ভালো বা মন্দ সঙ্গীর প্রভাব মেনে চলতে হয়। এজন্য সঙ্গী নির্বাচনের সময় অনেক ভেবেচিন্তে দেখতে হয় এবং সৎসঙ্গী নির্বাচন করতে হয়।
সৎসঙ্গের প্রয়োজনীয়তা : মানবজীবনে সৎসঙ্গের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কারণ মানুষ কোনো আদর্শ সামনে না রেখে সুন্দরভাবে। মানুষের সমস্যার শেষ থাকে না। সেজন্য সৎসঙ্গীর পরামর্শ গ্রহণ করতে হয় এবং তার কাজকর্মে অনুপ্রেরণা লাভ করতে হয়। নিজে নিজে কোনো কাজ যে সুষ্ঠভাবে সম্পাদন করা যায় না তা নয়, তবে অন্যের কল্যাণকর সহযোগিতা জীবনের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে সহায়তা করে। উত্তম বন্ধুর বুদ্ধি ও পরামর্শ মানুষের উপকারে আসে, তার সুচিন্তিত নির্দেশনা জীবনের অনেক সংকট থেকে মুক্তি আনে। সেজন্য যুগ যুগ ধরে মানুষ সৎসঙ্গের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এসেছে এবং মানবজীবন বিকাশে তার ভূমিকার গুরুত্ব প্রমাণিত হয়েছে । অন্যদিক থেকেও সৎসঙ্গের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সেটা হলো পরিবেশ। মানুষের জীবনে পরিবেশের প্রভাব অনেক বেশি । মানুষ যে ভৌগোলিক ও সামাজিক পরিবেশে ভূমিষ্ঠ হয়, তার ব্যাপ্তি এবং গভীরতা সুদূরপ্রসারী। বাইরের আকাশ বাতাস, সমুদ্র, পর্বত, নদী, অরণ্য, শ্যামল শস্যক্ষেত কিংবা ঊষর মরুপ্রান্তর সামগ্রিক পরিবেশের একটি অংশমাত্র। মানুষের নিজস্ব জনগোষ্ঠীর ইতিহাস, সংস্কৃতি, এমনকি বংশানুক্রমিকতা জীবনচর্যা ও জীবনচর্চা রচনা করে দেয় মানুষের প্রতিবেশ বা পরিবেশ। মাতাপিতার ঐতিহ্য ও ভাইবোনের ভালোবাসায়, সঙ্গী সাথীদের সাহচর্যে এবং সৌহার্দ্যে ও আত্মীয়স্বজন এবং প্রতিবেশীদের স্নেহ সুকোমল স্বীকৃতিতে পরিবেশ জীবন্ত হয়ে ওঠে। একটি তরুশিশুর বৃদ্ধি ও পুষ্টির জন্য যেমন প্রয়োজন মৃত্তিকার নির্ভরযোগ্য আশ্বাস, বাতাসের হিন্দোল এবং শীতল মেঘধারাবর্ষণ, মানবশিশুর শারীরিক ও মানসিক পুষ্টির জন্য তেমনই প্রয়োজন নিরাপত্তার আশ্বাস, খেলাধুলা ও আমোদ- প্রমোদের আয়োজন এবং স্নেহযত্ন ও ভালোবাসার স্নিগ্ধ রসধারা । কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য বলেছেন-
“চলে যাব—তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল
এ বিশ্বকে এ- শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।”
কিন্তু বর্তমান বিশ্বে এই পরিবেশ জীবনের জন্য যথেষ্ট অনুকূল নয়। বিরূপ পরিবেশের প্রভাবে জীবনে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়। অসৎ সঙ্গী জুটে জীবনকে নিয়ে যায় নানা সমস্যার দিকে। বিশেষত কিশোর বয়সে এ ধরনের প্রভাব পড়লে তার পরিণতি খুবই ভয়াবহ হয়ে থাকে । তাই অসৎ সঙ্গীর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার জন্য মানুষকে অতি সাবধানে চলতে হয়। অসৎকে পরিহার করে সৎসঙ্গী বাছাই করার বিশেষ ক্ষমতা থাকতে হয়। তবেই অশুভ পরিবেশের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকা যায়।
সৎসঙ্গের উপকারিতা : সৎসঙ্গের প্রভাবে মানবজীবন সুন্দর হয়। প্রবাদে আছে, “সৎসঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎসঙ্গে সর্বনাশ।” সৎসঙ্গের প্রভাবে জীবনের অপূর্ণতা ও ত্রুটি দূর হয়। অপরদিকে অসৎসঙ্গের সান্নিধ্যে জীবনের ত্রুটি বৃদ্ধি পায় এবং পরিণামে জীবনে আসে অধঃপতন। সৎসঙ্গী তার বন্ধুর দুর্বলতা ঢেকে রাখে এবং গুণের বিকাশে সহায়তা দান করে। আর অসৎ সঙ্গী তার বন্ধুকে নিয়ে যায় সর্বনাশের দিকে। সচ্চরিত্রের বন্ধুর সান্নিধ্যে নিজের চরিত্রও সুন্দর হয়, সৎ বন্ধুর আদর্শ জীবনকে পরিচালিত করে সম্ভাবনার দিকে । অন্যদিকে অসৎ স্বভাবের বন্ধু অন্যের ওপর মন্দ প্রভাব সৃষ্টি করে। চরিত্রবান লোকের মন্দ স্বভাবের বন্ধু জুটলেও পরিণতি খারাপ হয়ে থাকে । পবিত্র হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, “সৎসঙ্গের তুলনা আতর বিক্রেতার তুল্য। সে তোমাকে দিক বা না দিক, তুমি তার সুগন্ধি পাবেই।”
উপসংহার : অসৎসঙ্গ সব সময়ই অপকার করে আর সৎসঙ্গ করে উপকার। সৎসঙ্গের এই উপকার এবং অসৎসঙ্গের অপকারের কথা বিবেচনা করে মানবজীবনের শুরু থেকেই সৎসঙ্গী নির্বাচন করা প্রয়োজন। ভালোমন্দ উত্তমরূপে যাচাইয়ের পর ভালো বন্ধু নির্বাচন করে নিয়ে চলতে হবে। অশিক্ষা এবং কুশিক্ষা আজ সামাজিক পরিবেশকে বিষাক্ত করে তুলছে। এক্ষেত্রে শুধু উত্তম বন্ধুর কাছ থেকেই যথার্থ কল্যাণকর সহায়তা আশা করা যায়। তাই ছোটকাল থেকেই সতর্কতার সঙ্গে অসৎসঙ্গ পরিহার করে সৎসঙ্গের সান্নিধ্য গ্রহণ করতে হবে, তবেই জীবন হবে সুন্দর ও মধুময় ।
সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করছি আমাদের এই পোস্ট থেকে রচনা যেটি তুমি চাচ্ছিলে সেটি পেয়ে গিয়েছ। যদি তুমি আমাদেরকে কোন কিছু জানতে চাও বা এই রচনা নিয়ে যদি তোমার কোনো মতামত থাকে, তাহলে সেটি আমাদের কমেন্টে জানাতে পারো। আজকের পোস্টে এই পর্যন্তই, তুমি আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করে আমাদের বাকি পোস্ট গুলো দেখতে পারো।