আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “মিতব্যয়িতা“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।
মিতব্যয়িতা
ভূমিকা : জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষ সাধারণত সুখে-শান্তিতে জীবন অতিবাহিত করতে চায়। তবে এই সুখ-শান্তি কীভাবে পাওয়া যায় তা তারা জানে না। মানুষের জীবনের সুখের পূর্বশর্ত হলো আয় বুঝে ব্যয় করা। প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় ও অর্থ ব্যয় করলে জীবন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। এ জগতে সুখে-শান্তিতে থাকতে হলে প্রত্যেককে মিতব্যয়ী গুণ অর্জন করতে হয়। মিতব্যয়িতা মানে বেহিসাবি খরচ না করে প্রয়োজনমাফিক খরচ করা। বিনা প্রয়োজনে অপরিমিত ব্যয় করে এমন অনেক লোক সব সমাজেই দেখা যায়। তারা নিজেদের সবকিছু খুইয়ে ক্রমশ অন্যের অনুকম্পার পাত্র হয়।
বিশ্ব প্রকৃতি থেকে মিতব্যয়িতার শিক্ষা : বিশ্ব প্রকৃতিতে বিরাজমান নানা কিছু থেকে আমরা মিতব্যয়িতা ও পরিমিতিবোধের শিক্ষা পেতে পারি। পৃথিবীর তিন ভাগ জল আর এক ভাগ স্থল থাকার বিষয়টি সামঞ্জস্যবিধানেরই অংশ। পৃথিবীতে যেমন নদ-নদী, সমুদ্র প্রভৃতি আছে, তেমনি উঁচু পাহাড়-পর্বতও আছে। আছে দিন-রাত, আলো-অন্ধকার, উষ্ণতা-শীতলতা, ঝড়-বৃষ্টি কোনোকিছু মাত্রা অতিক্রম করে তখন প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে বিপর্যয় দেখা দেয়। সূর্যের তাপ আরও বেশি হলে শ্যামল নিসর্গ পুড়ে পৃথিবী মরুময় হয়ে যেত। বাতাসের প্রবাহ মাত্রাতিরিক্ত হলে ঝড়ে লোকালয় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে বন্যা হয়, তখন ঘর-বাড়ি, জিনিসপত্র ভেসে যায়। এভাবে বিশ্ব প্রকৃতি আমাদের পরিমিত ব্যয়ের শিক্ষা দেয়। প্রকৃতির রাজ্যে এক ধরনের মিতব্যয়িতার ধারা নিয়ত প্রবহমান ।
মিতব্যয়িতার গুরুত্ব : মিতব্যয়িতা মানুষের জীবনে সুখ-শান্তি বয়ে আনে। মানুষকে বিভিন্ন সমস্যা-সংকট থেকে মুক্ত রাখে। মিতব্যয়ী ব্যক্তি কখনো অভাবে পড়েন না এবং অশান্তিতে ভোগেন না। কারণ অতিরিক্ত কোনোকিছু পাওয়ার লোভে তিনি গা ভাসান না। তিনি আত্মবিশ্বাসী, পরিশ্রমী এবং কষ্টসহিষ্ণু হন। ফলে তিনি পরিবার, সমাজ ও দেশের কল্যাণে কাজ করতে পিছপা হন না। মিতব্যয়ী ব্যক্তি অতিরিক্ত ব্যয় পরিহার করে চলেন বলে সমাজের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অবদান রাখতে পারেন। মিতব্যয়িতা মানুষকে নৈতিকতা 9 আদর্শ অর্জনে সহায়তা করে। মিতব্যয়িতা দারিদ্র্য বিমোচনে, অর্থনৈতিক উন্নয়নে এবং জাতীয় সম্পদের সুপরিকল্পিত ও সুষ্ঠু ব্যবহারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
মিতব্যয়িতা ও কার্পণ্য সম্পর্কে ধারণা : মিতব্যয়িতা মানে কার্পণ্য নয় । মিতব্যয়ী ব্যক্তি কৃপণের মতো নিজের ধনসম্পদ আঁকড়ে ধরে রাখেন না। তিনি প্রয়োজন অনুসারে খরচ করেন। কৃপণের ধন সমাজের মানুষের কাজে লাগে না। মিতব্যয়ী ব্যক্তি তার সম্পদ যেমন নিজের প্রয়োজনে কাজে লাগান তেমনি অন্যের বিপদে সহযোগিতা হিসেবে ব্যয় করতেও দ্বিধা করেন না। মিতব্যয়ী ব্যক্তি অহেতুক ভোগ-বিলাস, অযথা অর্থ অপচয় এবং সম্পদের অপব্যবহার করেন না। এক কথায় কার্পণ্য এবং অপব্যয়ের মাঝামাঝি অবস্থাই মিতব্যয়িতা ।
মিতব্যয়িতা ও সঞ্চয় : পৃথিবীতে ভালোভাবে বেঁচে থাকার তাগিদে মানুষ অর্থ-সম্পদ অর্জনে মনোযোগী হয় । মানুষ ভবিষ্যতের জন্য যে অর্থ জমা করে সেটিই সঞ্চয়। মানুষের আপদকালে সঞ্চয় প্রকৃত বন্ধুর মতো পাশে দাঁড়ায়। সব ক্ষেত্রেই মানুষকে তাই অর্জিত আয় ও সঞ্জিত সম্পদের পরিমাণ বিবেচনায় নিয়ে ব্যয় করতে হয়। মিতব্যয়ী ব্যক্তি সবসময় তার আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ব্যয় করেন । অপরিমিত ব্যয় কিংবা অযথা অপচয় তার স্বভাবধর্ম নয়। মিতব্যয়ী ব্যক্তি ভোগবিলাসী জীবন পরিহার করে চলেন। তার ব্যয় করার পরিকল্পনায় ভবিষ্যতের নিশ্চয়তার দিকটি গুরুত্ব পায়। আর তা অতিরিক্ত ব্যয় সংকোচন করে উপযুক্ত সঞ্চয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত হয় ।
অমিতব্যয়িতার পরিণাম : অমিতব্যয়িতা হচ্ছে মিতব্যয়িতার বিপরীত। অমিতব্যয়িতার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। কারণ প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয় করে অমিতব্যয়ী ব্যক্তি তার জীবনে করুণ পরিণতি ডেকে আনে। কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত অপরিমিত ব্যয় করে শেষ জীবনে অন্যের অনুকম্পার শিকার হয়ে বলেছিলেন— ‘যৌবনে অন্যায় ব্যয়ে বয়সে কাঙালি।’ অমিতব্যয়ী ব্যক্তি ভোগবিলাসে জীবন ভাসিয়ে দিয়ে অনিশ্চিত জীবনের পথে অগ্রসর হয়। অসংযমী ও আরামপ্রিয় হওয়ায় অমিতব্যয়ীরা নৈতিকতা ও আদর্শ হারিয়ে ফেলে । এ জন্যই বলা হয়- অপচয়কারী শয়তানের ভাই। অমিতব্যয়িতার পরিণামের প্রতি ইঙ্গিত করে কবি বলেছেন :
“যে জন দিবসে মনের হরষে জ্বালায় মোমের বাতি
আশু গৃহে তার দেখিবে না আর নিশীথে প্রদীপ ভাতি ।”
উপসংহার : মিতব্যয়িতার সঙ্গে মানব চরিত্রের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। মিতব্যয়ী স্বভাব মানুষকে সৎ, সংযত ও উন্নত চরিত্রের অধিকারী করে। অন্যদিকে অপচয় ও অমিত ব্যয় মানুষকে উচ্ছৃঙ্খল করে তোলে । মিতব্যয়িতার ফলে মানুষের বিবেক-বুদ্ধির ঘটে এবং দেশ, সমাজ ও জাতির সার্বিক উন্নতি নিশ্চিত হয় । মিতব্যয়ী ব্যক্তি জাতির সংকট মুহূর্তে অর্থনৈতিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে স্বদেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারেন। অন্যদিকে অমিতব্যয়ী ব্যক্তি অতিরিক্ত ব্যয় করে স্বদেশের ক্ষতি করে ৷
সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করছি আমাদের এই পোস্ট থেকে রচনা যেটি তুমি চাচ্ছিলে সেটি পেয়ে গিয়েছ। যদি তুমি আমাদেরকে কোন কিছু জানতে চাও বা এই রচনা নিয়ে যদি তোমার কোনো মতামত থাকে, তাহলে সেটি আমাদের কমেন্টে জানাতে পারো। আজকের পোস্টে এই পর্যন্তই, তুমি আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করে আমাদের বাকি পোস্ট গুলো দেখতে পারো।