আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “পলিথিন ও পরিবেশ দূষণ“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।
পলিথিন ও পরিবেশ দূষণ
ভূমিকা : পলিথিন এক প্রকার জৈব রাসায়নিক বস্তু। পলিথিন নানা কাজে ব্যবহৃত হয়। এটি পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বর্তমানে পলিথিন মানবজীবনের জন্য একটি বিপজ্জনক বস্তুতে পরিণত হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের সূত্রমতে, ১৯৮২ সাল থেকে এ দেশে পলিথিন বাজারজাত ও ব্যবহার শুরু হয় । পলিথিন নমনীয় পদার্থ। নমনীয় হলেও এটি এক ধরনের শক্ত প্লাস্টিক । বহুসংখ্যক ইথিন অণুর রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় পলিথিন উৎপন্ন হয় ।
পলিথিনের বৈশিষ্ট্য : পলিথিনের রাসায়নিক বন্ধন অত্যন্ত দৃঢ়। ফলে এ বন্ধন বাতাসে ও জলীয় আবহাওয়ায় ভাঙে না। এমনকি এটি মাটিতেও পচে না। কারণ এটি পানি ও বায়ুনিরোধক এবং মাটিতে মেশে না। পলিথিন সহজে বহন ও ব্যবহারযোগ্য হলেও অত্যন্ত ক্ষতিকর । এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, নগরীর মোট বর্জ্যের ৭০-৭৫ শতাংশ হচ্ছে পলিথিন । পলিথিন বা প্লাস্টিকের ব্যাগ পচে মাটির সঙ্গে মিশতে কমপক্ষে ৪০০ বছর সময় লাগে । মেশার পরও তা মাটির উর্বরতা নষ্ট করে থাকে ।
পলিথিনের ব্যবহার ও ক্ষতিকর দিক : হাট-বাজার করতে পলিথিন ব্যাগ মানুষের নিত্যসঙ্গী। তরিতরকারি, মাছ, মাংস, ডিম, চাল ডাল ইত্যাদি বাড়িতে নিয়ে আসার কাজে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। এছাড়া কসমেটিক, ইলেকট্রিক, ইলেকট্রনিক্স, কাপড় চোপড় ইত্যাদি পণ্য বহনেও পলিথিন ব্যাগ ব্যবহৃত হয়। পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারের পর সেগুলো মাঠে-ময়দানে, পুকুরে, নদীতে যত্রতত্র ফেলে দেওয়া হয়। এর ফলে পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দেয়। পলিথিন পানি নিরোধক বলে পানির স্বাভাবিক নিঃসরণে বাধা দেয়। তাই পানি জমে রাস্তা-ঘাট ও নদী-নালায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। পলিথিন শহরের নর্দমা ও পয়ঃনিষ্কাশন প্রণালিকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। পলিথিন মাটির উর্বরতাশক্তি নষ্ট করে, ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ করে, নদ-নদী, পুকুর ও জলাশয়ে মাছের উৎপাদন হ্রাস করে। এভাবে পলিথিন পরিবেশের জন্য বিরাট ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই যেকোনো মূল্যে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
পলিথিন ব্যবহার বন্ধে আমাদের করণীয় : সহজলভ্য ও সস্তা হলেও পলিথিন ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। কারণ এটি পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতির মাধ্যমে আমাদের জীবনযাপনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পলিথিনের ক্ষতিকারক দিকগুলো সম্পর্কে গণ- সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। পলিথিনকে কঠোরভাবে ‘না’ বলতে হবে। পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার না করে কাগজ, কাপড় ও চটের ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে। পলিথিন উৎপাদনকারীকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের পরিবেশ মন্ত্রণালয় কর্তৃক পলিথিন ব্যবহারবিরোধী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে এর ব্যবহাকারীদের সজাগ এবং এর উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
পলিথিন ব্যবহারবিরোধী আইন : ২০০২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে সরকারিভাবে ঢাকা শহরে এবং ১ মার্চ থেকে সারা দেশে পলিখিন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ম্যান্ডেটরি প্যাকেজিং অ্যাক্ট ২০১০ আইন অনুযায়ী পাটের বস্তা ব্যবহার না করার অভিযোগে ২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে ৬ ডিসেম্বর রাত ১০টা পর্যন্ত সাত দিনে সারা দেশে ১৬০টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ১,৬৯৪টি মামলা করে ৭১ লাখ ৯১ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনি— এই ৬টি পণ্য মোড়কীকরণে পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক আইনে বলা হয়েছে— এ আইন অমান্য করলে এক বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। এসব আইন সংস্কার করে অর্থদণ্ড আরও বৃদ্ধি করা উচিত ।
উপসংহার : আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানা রকম রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বায়ু, পানি, মাটি, খাদ্যদ্রব্য প্রভৃতিতে দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করছে। এগুলোর মধ্যে পলিথিন ব্যবহার অন্যতম। পলিথিন ব্যবহারে জলাবদ্ধতা, পানিদূষণ এবং নদীগর্ভের ইকো সিস্টেম ধ্বংস হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি পলিথিন ব্যবহৃত হচ্ছে। বুড়িগঙ্গা নদীতে ৮ ফুট উচ্চতার পলিথিনের আস্তরণ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উজ্জ্বল রঙিন পলিথিনের সিসা ও ক্যাডমিয়ামের সংস্পর্শে শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং চর্মরোগ দেখা দেয়। কাজেই পলিথিন ব্যবহার বন্ধে সকলে সচেতন হতে হবে।
সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করছি আমাদের এই পোস্ট থেকে রচনা যেটি তুমি চাচ্ছিলে সেটি পেয়ে গিয়েছ। যদি তুমি আমাদেরকে কোন কিছু জানতে চাও বা এই রচনা নিয়ে যদি তোমার কোনো মতামত থাকে, তাহলে সেটি আমাদের কমেন্টে জানাতে পারো। আজকের পোস্টে এই পর্যন্তই, তুমি আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করে আমাদের বাকি পোস্ট গুলো দেখতে পারো।