আসসালামু আলাইকুম! নতুন অতিথি আসার আনন্দে পরিবার যখন আপ্লুত, তখন স্বাভাবিকভাবেই কিছু বিষয় নিয়ে মনে প্রশ্ন জাগে। বিশেষ করে, পুত্র সন্তানের জন্ম কখন শুভ, তা নিয়ে কৌতূহল থাকাটা স্বাভাবিক। আমাদের সমাজে প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, দিনের বিভিন্ন প্রহরের শুভাশুভ ফল ভিন্ন হয়। তাই, পুত্র সন্তানের জন্য চতুর্থ প্রহর বলতে আসলে কী বোঝায়, এর তাৎপর্য কী, এবং এই সময় নিয়ে প্রচলিত ধারণাগুলো নিয়েই আজ আমরা আলোচনা করব।
পুত্র সন্তানের জন্য চতুর্থ প্রহর: সময় ও গণনা
দিনের প্রহরগুলো কিভাবে গণনা করা হয়, সেটা প্রথমে জেনে নেওয়া যাক।
প্রহর কী এবং কিভাবে হিসাব করা হয়?
প্রাচীন ভারতীয় জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, একটি পূর্ণ দিনকে আটটি smaller অংশে ভাগ করা হয়, এদের প্রত্যেকটিকে ‘প্রহর’ বলা হয়। দিনের প্রতিটি প্রহর প্রায় তিন ঘণ্টা স্থায়ী হয়। এই প্রহরগুলো সূর্যোদয় থেকে শুরু করে পরদিন সূর্যোদয় পর্যন্ত গণনা করা হয়।
- প্রথম প্রহর: সূর্যোদয় থেকে শুরু।
- দ্বিতীয় প্রহর: প্রথম প্রহর শেষ হওয়ার পর থেকে শুরু।
- তৃতীয় প্রহর: দ্বিতীয় প্রহর শেষ হওয়ার পর থেকে শুরু।
- চতুর্থ প্রহর: তৃতীয় প্রহর শেষ হওয়ার পর থেকে শুরু।
সূর্যোদয়ের সময় পরিবর্তিত হওয়ার কারণে প্রতিটি প্রহরের সময়কাল সারা বছর একই থাকে না। সাধারণত, চতুর্থ প্রহর শুরু হয় বিকেল ৩টা থেকে এবং চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।
পুত্র সন্তানের জন্য চতুর্থ প্রহর বলতে কী বোঝায়?
পুত্র সন্তানের জন্য চতুর্থ প্রহর মানে হলো দিনের সেই বিশেষ সময়, যা সাধারণত বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ধরা হয়। সনাতন বিশ্বাস অনুযায়ী, এই সময়ে পুত্র সন্তান জন্ম নিলে তার উপর কিছু বিশেষ প্রভাব পড়তে পারে।
চতুর্থ প্রহর নিয়ে প্রচলিত বিশ্বাস
সমাজে এই প্রহর নিয়ে কিছু ধারণা প্রচলিত আছে। আসুন, সেগুলো একটু জেনে নেই:
প্রাচীন শাস্ত্র ও লোককথার আলোকে
প্রাচীন শাস্ত্র অনুযায়ী, দিনের বিভিন্ন প্রহরের আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কোনো প্রহর শুভ, আবার কোনো প্রহর অশুভ বলে ধরা হয়। লোককথায় প্রচলিত আছে, বিশেষ মুহূর্তে জন্ম নেওয়া সন্তানের জীবনে সেই সময়ের প্রভাব পরে।
বাস্তব জীবনে এই বিশ্বাসের প্রভাব
অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, চতুর্থ প্রহরে জন্ম নেওয়া পুত্র সন্তান ভাগ্যবান হয় এবং তাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হয়। কেউ কেউ আবার মনে করেন, এই সময়ে জন্ম হলে সন্তানের জীবনে কিছু চ্যালেঞ্জ আসতে পারে, তবে সেগুলো মোকাবিলা করার ক্ষমতাও তাদের থাকে।
চতুর্থ প্রহরের ভালো-মন্দ দিক
এই বিশেষ প্রহরে জন্মগ্রহণের কিছু সম্ভাব্য ভালো ও খারাপ দিক আলোচনা করা হলো:
সম্ভাব্য ভালো দিক
- ভাগ্যবান ও সমৃদ্ধশালী হওয়ার সম্ভাবনা।
- সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ।
- শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা।
সম্ভাব্য খারাপ দিক
- জীবনে কিছু কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা।
- মানসিক অস্থিরতা বা জেদি স্বভাবের প্রবণতা।
- শারীরিক দুর্বলতা দেখা যেতে পারে।
তবে, এগুলো শুধুমাত্র বিশ্বাস এবং এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
জ্যোতিষশাস্ত্রের ব্যাখ্যা
জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী, জন্মকালে গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান সন্তানের জীবনের উপর প্রভাব ফেলে।
বিভিন্ন রাশির উপর প্রভাব
চতুর্থ প্রহরে জন্ম নেওয়া সন্তানের রাশিতে গ্রহের অবস্থান কেমন, তার উপর নির্ভর করে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে শুভাশুভ ফল পাওয়া যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, শক্তিশালী গ্রহের প্রভাবে সন্তান সাহসী ও বুদ্ধিমান হতে পারে, আবার দুর্বল গ্রহের প্রভাবে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান ও তার ফলাফল
জ্যোতিষীরা বলেন, প্রতিটি গ্রহের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো বিভিন্ন রাশিতে বিভিন্নভাবে প্রকাশ পায়। তাই, কোন গ্রহ কোন রাশিতে অবস্থান করছে, তার উপর নির্ভর করে সন্তানের ভবিষ্যৎ জীবনে কী ঘটতে পারে, তা আঁচ করা যায়।
বিজ্ঞান কী বলে?
বিজ্ঞান এই ধরনের বিশ্বাসকে সমর্থন করে না। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, একজন মানুষের জীবন তার জিন, পরিবেশ এবং পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল।
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার
বিজ্ঞান অনুযায়ী, দিনের নির্দিষ্ট সময়ে জন্ম নেওয়ার সঙ্গে ভাগ্যের কোনো সম্পর্ক নেই। মানুষের জীবন সম্পূর্ণভাবে তার কর্ম ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর নির্ভরশীল।
চিকিৎসা বিজ্ঞান ও সময়ের প্রভাব
চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী, একটি শিশুর জন্ম যে কোনো সময় হতে পারে। সময়ের চেয়ে জরুরি হলো মায়ের স্বাস্থ্য এবং প্রসবকালীন পরিস্থিতি। সময়ের কারণে শিশুর উপর কোনো প্রকার প্রভাব পরে, এমন কোনো প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
বাস্তব অভিজ্ঞতা ও উদাহরণ
অনেকেই আছেন যারা চতুর্থ প্রহরে জন্মগ্রহণের সুফল পেয়েছেন, আবার কারও কারও জীবনে তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি।
চতুর্থ প্রহরে জন্ম নেওয়া কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তি
ইতিহাসে এমন অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি আছেন যারা দিনের বিভিন্ন প্রহরে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং নিজ নিজ ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছেন। তাদের উদাহরণ থেকে বোঝা যায়, সময় নয়, বরং কর্মই মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করে।
সাধারণ মানুষের মতামত
অনেকে বিশ্বাস করেন চতুর্থ প্রহরে জন্ম নেওয়া শিশুরা অন্যদের থেকে আলাদা হয়। কেউ বলেন তারা খুব সংবেদনশীল, আবার কেউ বলেন তারা খুবই জেদি। তবে, এসব কিছুই ব্যক্তিগত বিশ্বাস।
কীভাবে কুসংস্কার মোকাবেলা করবেন?
কুসংস্কার থেকে দূরে থাকতে হলে যুক্তিবাদী হওয়া জরুরি।
যুক্তি ও তথ্যের আলোকে চিন্তা করুন
যেকোনো বিষয় বিশ্বাস করার আগে তার পেছনের যুক্তি ও প্রমাণ যাচাই করুন। বিজ্ঞান ও বাস্তবতার নিরিখে বিচার করলে কুসংস্কার থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
সঠিক শিক্ষা ও সচেতনতা
সঠিক শিক্ষা এবং সচেতনতা মানুষকে কুসংস্কার থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে। কুসংস্কারের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে জানতে পারলে মানুষ সচেতন হতে পারে।
নবজাতকের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
নবজাতকের সুন্দর ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য কিছু বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো সঠিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা। একটি সুস্থ ও শিক্ষিত শিশু দেশের সম্পদ।
পরিবার ও সমাজের ভূমিকা
একটি শিশুর সঠিক বিকাশের জন্য পরিবারের পাশাপাশি সমাজেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। স্নেহ, ভালোবাসা ও সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে শিশুকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
উপসংহার
পুত্র সন্তানের জন্য চতুর্থ প্রহর নিয়ে অনেক ধরনের মতামত প্রচলিত আছে। তবে, বিজ্ঞান ও যুক্তির আলোকে বিচার করলে দেখা যায়, এগুলো শুধুমাত্র বিশ্বাস। সন্তানের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য কুসংস্কারের উপর নির্ভর না করে সঠিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং ভালোবাসার উপর জোর দেওয়া উচিত। আপনি কী ভাবছেন? আপনার মতামত আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন।