আজকে ফেব্রুয়ারী ১৯৬৯ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর তুলে ধরব। আশা করি, এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের খুব উপকার হবে। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক, ফেব্রুয়ারী ১৯৬৯ কবিতার ২টি গুরুত্বপূর্ণ ও কমন উপযোগী সৃজনশীল ও উত্তর।
সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর-১
আমাদের পূর্বপুরুষরা ভীরু-কাপুরুষ ছিল না। কালে কালে তার প্রমাণ আমরা পেয়েছি। তাদের পথ ধরেই ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে রক্ত দিতে পেরেছিল ভাষা সৈনিকরা। তারপর ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০-এর নির্বাচন, ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং অবশেষে আসে আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। উত্তরসূরিরা পূর্বসূরিদের আদর্শ ধারণ করে, তাই দেশ যখনই কোনো বিপদে পড়ে তখনই তরুণ সমাজ সোচ্চার হয়ে ওঠে।
ক. কে বুক পাতে ঘাতকের থাবার সম্মুখে?
খ.“একুশের–কৃষ্ণচূড়া–আমাদের–চেতনারই–রং”- ব্যাখ্যা করো।
গ. “আবার সালাম নামে রাজপথে, শূন্যে তোলে ফ্ল্যাগ”- পভুক্তিটির মধ্য দিয়ে উদ্দীপকে ফুটে ওঠা দিকটি চিহ্নিত করো।
ঘ. উদ্দীপকের মূলভাব এবং ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার মূলভাব একসূত্রে গাঁথা — মন্তব্যটির যথার্থতা প্রমাণ করো।
১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. বরকত বুক পাতে ঘাতকের থাবার সম্মুখে।
খ. ‘একুশের কৃষ্ণচূড়া আমাদের চেতনারই রং’— লাইনটি দ্বারা একুশের তাৎপর্যকে বোঝানো হয়েছে।
১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাঙালি জাতি ভাষার জন্য বুকের রক্ত দিয়েছিল। এ আন্দোলনের সময় ঢাকা শহরে ফুটেছিল রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া। টকটকে লাল রঙের এ ফুল কবির কাছে শহিদের রক্তের রং বলে মনে হয়। এজন্যই কবি একুশের কৃষ্ণচূড়াকে আমাদের চেতনার রং বলেছেন ।
গ. ভাষা আন্দোলনের চেতনায় বাঙালিরা পরবর্তীতে স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ হয়েছে এ বিষয়টিতেই উদ্দীপকের সঙ্গে প্রশ্নোত্ত কথাটির সাদৃশ্য রচিত হয়েছে।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে শহিদ হন সালাম। তিনি শূন্যে পতাকা তুলেছিলেন রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে। তাকে ঘাতকের বুলেটের আঘাতে জীবন দিতে হয়েছিল। কিন্তু এ জীবনদানের মাধ্যমেই তিনি বাঙালির অন্তরে স্বাধীন- সার্বভৌম দেশ গড়ার চেতনা জাগ্রত করেছিলেন। এ চেত চেতনার হাত ধরেই পরবর্তীতে বারবার বাংলার মানুষ কখনো গণঅভ্যুত্থা খান, কখনো স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছে।
উদ্দীপকে অনেকগুলো ঘটনার উল্লেখ করে মূলত এ বিষয়টিকে নির্দেশ করা হয়েছে। ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পরে আসে সত্তরের নির্বাচন। পরবর্তীতে শুরু হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ। অর্থাৎ যখনই দেশ বিপদে পড়েছে তখনই এ দেশের মানুষ শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে। আর এ সংগ্রাম করতে গিয়ে তারা ধারণ করেছে পূর্বসূরিদের আদর্শ। এই আদর্শই হলো ভাষা আন্দোলনের চেতনা। সালামের শূন্যে পতাকা তোলার বিষয়টি এখানে ইঙ্গিতবহ হয়েছে। কেননা সালাম এক্ষেত্রে একুশের চেতনার প্রতীক হয়ে আছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের স্বাধীনতা আন্দোলনে যে একুশের চেতনা কাজ করেছিল তা উল্লিখিত পভুক্তির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।
ঘ. উদ্দীপক ও ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার মূলভাব হলো বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন।
বাংলার মানুষ স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘদিন সংগ্রাম করেছে। কখনো সে আন্দোলন ভাষার দাবিতে আবার কখনো গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিয়েছে। ঘাতকের আস্তানায় মানুষ কখনো আধমরা কখনো ভীষণ জেদি। এত কষ্টের ভেতরেও তারা অবিরত স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে গেছে।
উদ্দীপকে মূলভাব হিসেবে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে বাংলার মানুষের স্বাধীনতার সংগ্রামের দিকটিই তুলে ধরা হয়েছে।
ভাষা আন্দোলন, ৭০- এর নির্বাচন এবং ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এ দেশের মানুষ যে অভিন্ন চেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছে, তা হলো স্বাধীনতা। আর এ চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে গিয়ে বাংলার মানুষ সব সময় পূর্বসূরিদের পথ অনুসরণ করেছে। বুকের তাজা রক্ত দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছে। উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, পাকিস্তানিরা এ দেশের মানুষকে শাসন করতে চেয়েছিল গায়ের জোরে। তারা বাঙালির কোনো দাবিই মানতে চাইত না। এর প্রতিবাদে বাংলার মানুষ ভাষা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান ও স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছে।
উদ্দীপকে ও আলোচ্য কবিতায় এসব সংগ্রামকে তুলে ধরা হয়েছে। তবে যেভাবেই বর্ণনা করা হোক না কেন, এসব আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে স্বাধীন করা। এই মৌলিক চেতনাটিই উদ্দীপক ও ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতাটিকে একসূত্রে গেঁথেছে।
সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর-২:
বাঙালি বীরের জাতি। কোনো অন্যায়ের কাছে বাঙালি কখনো মাথা নত করেনি। ১৯৫২ সালে বীর বাঙালি নিজেদের জীবন দিয়ে মায়ের ভাষাকে রক্ষা করেছে। এরই সূত্র ধরে নানা সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে তারা ছিনিয়ে আনে লাল সূর্যকে।
ক. কৃষ্ণচূড়া আমাদের কীসের রং?
খ. “চতুর্দিকে–মানবিক–বাগান,–কমলবন–হচ্ছে—তছনছ”— উক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপক এবং ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার আলোকে বীর বাঙালির সাহসিকতার পরিচয় দাও।
ঘ. “জীবনের চেয়ে দামি বাংলার মাটি”— উদ্দীপক ও ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার সংগ্রামের মূলে রয়েছে একই উদ্দেশ্য, আলোচনা করো।
২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. একুশের কৃষ্ণচূড়া আমাদের চেতনার রং।
খ. প্রশ্নোক্ত উত্তিটি দ্বারা ঘাতকের অশুভ তৎপরতায় মানবিকতা ও সৌন্দর্যের বিনাশ হওয়ার প্রক্রিয়াকে বোঝানো হয়েছে।
ভাষা আন্দোলনের চেতনাবিরোধী ঘাতক দল সারাদেশে অন্ধকারের রাজত্ব কায়েম করতে চায়। এদের দৌরাত্ম্যে দেশের মানুষ হারিয়ে ফেলছে তাদের মৌলিক অধিকার। ফলে মানবিকতারও চরম বিপর্যয় ঘটে যাচ্ছে। মানুষের সুন্দর ও মহৎ চিন্তা-চেতনার বিকাশ দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এ বিষয়টিকেই কবি মানবিক বাগান ও কমলবন তছনছ হওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন।
গ. বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন আর উনসত্তরের গণআন্দোলনে বীর বাঙালির সাহসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়।
বাঙালি চিরস্বাধীনচেতা জাতি। ভাষার অধিকার ও বাঁচার অধিকার আদায়ে বাঙালি চিরকাল লড়াই চালিয়ে গিয়েছে। কোনো রাজভয় ও মৃত্যুভয় বাঙালিকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। অকুতোভয় বাঙালি অন্যায় ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে বিজয় লাভ করেছে। এমন প্রেক্ষাপট উন্মোচিত হয়েছে উদ্দীপক ও ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায়।
উদ্দীপকে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বীর বাঙালির সাহসী ভূমিকার পরিচয় বিধৃত হয়েছে। পাকিস্তান সরকারের ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বাঙালি ছাত্র-জনতা বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারিতে মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়ে। নিজ জীবনের বিনিময়ে তারা মায়ের ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করে। এরই ধারাবাহিকতায় সশস্ত্র সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে তারা ১৯৭১ সালে ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতার লাল সূর্যকে। বীর বাঙালির এমন অসম সাহসিকতার পরিচয় ফুটে উঠেছে ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায়ও। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্যনীতি ও শোষণের বিরুদ্ধে বীর বাঙালি উনসত্তরের গণআন্দোলনের সূচনা করে। তখন গ্রামগঞ্জ, হাটবাজার, কলকারখানা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অসংখ্য মানুষ জড়ো হয় ঢাকার রাজপথে। তাদের এ গণআন্দোলন একাত্তরে স্বাধীনতা সংগ্রামের রূপ নেয়। লাখো বাঙালির সাহসী সংগ্রামে অবশেষে পাক হানাদাররা পরাজিত হয় এবং বাঙালিরা স্বাধীনতা লাভ করে। এভাবেই উদ্দীপক ও আলোচ্য কবিতায় বীর বাঙালির সাহসিকতার বাস্তব পরিচয় ফুটে ওঠে।
ঘ. বাঙালির দেশপ্রেম তাদের জীবনের চেয়েও দামি ছিল— এর বাস্তবতা প্রতিফলিত হয়েছে উদ্দীপক ও ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় ।
চিরস্বাধীনচেতা বাঙালি তাদের অধিকার ও দেশরক্ষায় চিরকাল লড়াই- সংগ্রাম চালিয়ে এসেছে। সেই ব্রিটিশ আমল থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে তারা অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়েছে। তাদের কাছে জীবনের চেয়ে স্বদেশের মাটি দামি ছিল। এমন প্রেরণাই প্রকাশ পেয়েছে উদ্দীপক ও ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায়। দেশের মাটি আর মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় বাঙালির জীবনদানের চিত্র উদ্দীপকে অঙ্কিত হয়েছে।
বীর বাঙালি কোনোদিন অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেনি। ১৯৫২ সালে তারা জীবন বিলিয়ে দিয়ে মায়ের ভাষাকে রক্ষা করেছে। নানা সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে একাত্তরে লড়াই করে জীবন দিয়ে ছিনিয়ে এনেছে স্বাধীনতার লাল সূর্যকে। এ সংগ্রামের মূলে ছিল ‘জীবনের চেয়ে দামি বাংলার মাটি’। এমন বাস্তব প্রেরণা ফুটে উঠেছে ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায়ও । পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে তৎকালীন দেশপ্রেমিক বাঙালিরা গণআন্দোলনের সূচনা করেছে উনসত্তর সালে। প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জ, হাটবাজার, কলকারখানা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অসংখ্য মানুষ জড়ো হয় ঢাকার রাজপথে। এ গণআন্দোলন গণবিপ্লবের রূপ নিয়ে ১৯৭১ সালে লাখো প্রাণের বিনিময়ে স্বদেশের স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনে।
উদ্দীপকে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, পরবর্তীতে স্বাধীনতা আন্দোলন এবং ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় গণআন্দোলন, পরবর্তীতে গণবিপ্লবে লাখো বাঙালির প্রাণদানে এ কথা প্রমাণিত হয় যে বাঙালির কাছে ‘জীবনের চেয়ে দামি বাঙালির মাটি’। জীবনের বিনিময়ে বাংলার মাটি তথা স্বাধীনতা রক্ষার উদ্দেশ্যেই বাঙালি চিরকাল সংগ্রাম করে এসেছে। এমন বাস্তবতার প্রেক্ষিতে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি যৌক্তিক ও যথার্থ।
আশা করি, আজকের আর্টিকেল ফেব্রুয়ারী ১৯৬৯ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর ভালো লেগেছে।