মাফ করে দেওয়া: হৃদয়ের মুক্তি, জীবনের আলো
আচ্ছা, কখনো কি মনে হয়েছে বুকের ভেতর একটা পাথর চেপে বসে আছে? কোনো কষ্ট, অভিমান অথবা রাগ যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না? এই অনুভূতিগুলো আমাদের জীবনকে ভারী করে তোলে। কিন্তু এর থেকে মুক্তির একটা উপায় আছে, আর সেটা হলো ক্ষমা। ক্ষমা শুধু একটা শব্দ নয়, এটা একটা শক্তি, যা আমাদের মনকে হালকা করে, সম্পর্ককে নতুন করে সাজায় এবং জীবনকে আরও সুন্দর করে তোলে। তাহলে চলুন, আজ আমরা ক্ষমা কাকে বলে, কেন এটা জরুরি এবং কীভাবে আমরা ক্ষমা করতে শিখব, সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি।
ক্ষমা কী? (What is Forgiveness?)
ক্ষমা মানে দুর্বলতা নয়, ক্ষমা মানে নিজেকে শক্তিশালী করা। ক্ষমা মানে এই নয় যে, আপনি অন্যায়কে মেনে নিচ্ছেন বা ভুলে যাচ্ছেন। বরং এর মানে হলো, আপনি সেই অন্যায়ের কারণে যে কষ্ট পেয়েছেন, সেই কষ্টকে নিজের ভেতর বয়ে বেড়াতে চান না। ক্ষমা হলো নিজের ভেতরের শান্তিকে খুঁজে বের করার একটা পথ।
সহজ ভাষায় বললে, ক্ষমা হচ্ছে রাগ, ক্ষোভ বা প্রতিশোধের স্পৃহা ত্যাগ করে সেই ব্যক্তির প্রতি সহানুভূতি দেখানো, যে আপনাকে আঘাত করেছে। এটা হতে পারে কোনো বন্ধু, পরিবারের সদস্য, সহকর্মী অথবা অন্য কেউ। ক্ষমা একটি মানসিক প্রক্রিয়া, যা আপনাকে কষ্ট থেকে মুক্তি দেয় এবং ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে সাহায্য করে।
ক্ষমার সংজ্ঞা (Definition of Forgiveness)
বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ক্ষমার সংজ্ঞা ভিন্ন হতে পারে, তবে মূল ধারণা একই থাকে। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, ক্ষমা হলো ইচ্ছাকৃত এবং সচেতন সিদ্ধান্ত, যেখানে আপনি প্রতিশোধ না নিয়ে বরং আঘাতকারী ব্যক্তির প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। দার্শনিকদের মতে, ক্ষমা হলো ন্যায়বিচারের ঊর্ধ্বে গিয়ে মানবতাকে প্রাধান্য দেওয়া। আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে, ক্ষমা হলো সৃষ্টিকর্তার প্রতি আনুগত্য এবং নিজের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করার একটি উপায়।
কেন ক্ষমা করা প্রয়োজন? (Why is Forgiveness Important?)
ক্ষমা করাটা কঠিন, এটা আমি জানি। কিন্তু বিশ্বাস করুন, ক্ষমা না করার ফল আরও বেশি কঠিন। ক্ষমা না করতে পারলে, আপনি আসলে নিজেকেই বন্দী করে রাখেন। সেই পুরনো কষ্ট, রাগ আর অভিমানগুলো আপনার মনকে ধীরে ধীরে বিষিয়ে তোলে।
ক্ষমা করার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো:
- মানসিক শান্তি: ক্ষমা করলে মনের ভেতর জমে থাকা নেতিবাচক আবেগ দূর হয় এবং শান্তি ফিরে আসে।
- শারীরিক সুস্থতা: গবেষণায় দেখা গেছে, ক্ষমা করলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
- সম্পর্কের উন্নতি: ক্ষমা করার মাধ্যমে পুরনো সম্পর্কগুলো নতুন করে শুরু করা যায় এবং ভালোবাসার বন্ধন দৃঢ় হয়।
- ব্যক্তিগত বিকাশ: ক্ষমা নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে এবং একজন ভালো মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে।
- ভালো ঘুমের জন্য: ক্ষমা করলে দুশ্চিন্তা কমে যায় ফলে রাতে ভালো ঘুম হয়।
ক্ষমা না করার কুফল (Consequences of Not Forgiving)
ক্ষমা না করলে কী হয়, সেটা একটু ভেবে দেখুন তো!
- ক্রমাগত মানসিক চাপ: ক্ষমা না করলে মনের ভেতর রাগ, হতাশা এবং প্রতিশোধের চিন্তা ঘুরতে থাকে, যা মানসিক চাপ বাড়ায়।
- শারীরিক সমস্যা: দীর্ঘদিনের মানসিক চাপ থেকে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং হজমের সমস্যা হতে পারে।
- সম্পর্কের অবনতি: ক্ষমা না করলে কাছের মানুষজনের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয় এবং সম্পর্ক ভেঙে যেতে পারে।
- সামাজিক বিচ্ছিন্নতা: ক্ষমা করতে না পারার কারণে অনেকে সমাজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয় এবং একা হয়ে যায়।
ক্ষমা এবং ভুলে যাওয়া কি একই? (Is Forgiveness the Same as Forgetting?)
অনেকে মনে করেন ক্ষমা মানে সবকিছু ভুলে যাওয়া। কিন্তু সত্যিটা হলো, ক্ষমা এবং ভুলে যাওয়া এক নয়। ক্ষমা মানে আপনি ঘটনাটা মনে রেখেছেন, কিন্তু সেই ঘটনার কারণে যে কষ্ট পেয়েছিলেন, সেটাকে কাটিয়ে উঠেছেন। অন্যদিকে, ভুলে যাওয়া মানে ঘটনাটা আপনার স্মৃতি থেকে মুছে গেছে। ক্ষমা হলো একটি সক্রিয় প্রক্রিয়া, যেখানে আপনি সচেতনভাবে কষ্টকে অতিক্রম করেন। আর ভুলে যাওয়া একটি নিষ্ক্রিয় প্রক্রিয়া, যা সময়ের সাথে আপনাআপনি ঘটে।
ক্ষমা এবং মেনে নেওয়ার মধ্যে পার্থক্য (Difference Between Forgiveness and Acceptance)
ক্ষমা এবং মেনে নেওয়া—এই দুটো বিষয়ও অনেকে গুলিয়ে ফেলেন। মেনে নেওয়া মানে হলো আপনি কোনো কিছু পরিবর্তন করতে না পারলে সেটাকে বাধ্য হয়ে স্বীকার করে নেওয়া। কিন্তু ক্ষমা মানে হলো আপনি নিজের ইচ্ছায় কষ্টকে দূরে সরিয়ে শান্তি বেছে নিচ্ছেন। মেনে নেওয়া অনেকটা আপসের মতো, যেখানে আপনি পরিস্থিতির শিকার। আর ক্ষমা হলো নিজের জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেওয়া।
কীভাবে ক্ষমা করতে শিখবেন? (How to Learn to Forgive?)
ক্ষমা করা কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। কিছু কৌশল অবলম্বন করে আপনি ক্ষমা করতে শিখতে পারেন:
- অনুভূতির স্বীকৃতি: প্রথমে নিজের কষ্ট এবং রাগ অনুভব করুন। নিজের অনুভূতিকে অস্বীকার না করে স্বীকার করুন।
- দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন: যে ব্যক্তি আপনাকে আঘাত করেছে, তার জায়গায় নিজেকে বসিয়ে তার পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করুন। হয়তো তার উদ্দেশ্য খারাপ ছিল না।
- সহানুভূতি তৈরি: আঘাতকারী ব্যক্তির প্রতি সহানুভূতিশীল হোন। মনে রাখবেন, মানুষ হিসেবে সবাই ভুল করে।
- ক্ষমা করার সিদ্ধান্ত: একটি সচেতন সিদ্ধান্ত নিন যে আপনি ক্ষমা করবেন এবং অতীতের কষ্টকে আঁকড়ে ধরে রাখবেন না।
- ক্ষমা প্রার্থনা: যদি সম্ভব হয়, তাহলে সরাসরি সেই ব্যক্তির কাছে গিয়ে ক্ষমা চান। এতে আপনার মন হালকা হবে। যদি সরাসরি কথা বলা সম্ভব না হয়, তাহলে মনে মনে ক্ষমা করে দিন অথবা একটি চিঠি লিখে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করুন।
- নিজেকে ক্ষমা করুন: অনেক সময় আমরা নিজেদের ভুলগুলোর জন্য ক্ষমা করতে পারি না। মনে রাখবেন, কেউই ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। নিজেকে ক্ষমা করুন এবং সামনের দিকে এগিয়ে যান।
- সময় দিন: ক্ষমা একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। তাড়াহুড়ো করবেন না। ধীরে ধীরে নিজের ভেতরের ক্ষতগুলো সারিয়ে তুলুন।
ক্ষমা চাওয়ার সঠিক উপায় (The Right Way to Apologize)
ক্ষমা চাওয়া যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি সঠিকভাবে ক্ষমা চাওয়াটাও জরুরি। একটি আন্তরিক ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে আপনি অন্যের মনে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারেন এবং সম্পর্ককে আরও মজবুত করতে পারেন।
- নিজের ভুল স্বীকার করুন: প্রথমে নিজের ভুল স্বীকার করুন এবং বলুন যে আপনি যা করেছেন তা ঠিক ছিল না।
- দুঃখ প্রকাশ করুন: আপনার কাজের জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করুন। আপনার কথায় যেন sincerity থাকে।
- দায়িত্ব নিন: আপনার ভুলের জন্য সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিন এবং কোনো অজুহাত দেখাবেন না।
- সংশোধনের প্রস্তাব দিন: যদি সম্ভব হয়, তাহলে আপনার ভুল সংশোধনের জন্য প্রস্তাব দিন।
- ভবিষ্যতে সতর্ক থাকার প্রতিশ্রুতি দিন: ভবিষ্যতে যাতে এমন ভুল আর না হয়, সেই বিষয়ে সতর্ক থাকার প্রতিশ্রুতি দিন।
ক্ষমা নিয়ে কিছু ভুল ধারণা (Common Misconceptions About Forgiveness)
ক্ষমা নিয়ে আমাদের সমাজে অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। এই ভুল ধারণাগুলো ক্ষমা করার পথে বাধা সৃষ্টি করে। নিচে কয়েকটি সাধারণ ভুল ধারণা আলোচনা করা হলো:
- ক্ষমা মানে দুর্বলতা: অনেকে মনে করেন ক্ষমা করা দুর্বলতার লক্ষণ। আসলে ক্ষমা একটি শক্তিশালী সিদ্ধান্ত, যা নিজের ভেতরের শান্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- ক্ষমা মানে সবকিছু ভুলে যাওয়া: ক্ষমা মানে অতীতের ঘটনা ভুলে যাওয়া নয়, বরং সেই ঘটনার কষ্টকে কাটিয়ে ওঠা এবং ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়া।
- ক্ষমা মানে অন্যায়কে সমর্থন করা: ক্ষমা মানে এই নয় যে আপনি অন্যায়কে সমর্থন করছেন। ক্ষমা মানে আপনি নিজের মনকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছেন।
- ক্ষমা শুধু অন্যের জন্য: অনেকে মনে করেন ক্ষমা শুধু অন্যের জন্য প্রয়োজন। কিন্তু সত্যিটা হলো, ক্ষমা নিজের মানসিক শান্তির জন্য আরও বেশি প্রয়োজন।
- ক্ষমা সঙ্গে সঙ্গে হয়ে যায়: ক্ষমা একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। এটি ধীরে ধীরে নিজের ভেতরের ক্ষতগুলো সারিয়ে তোলে। তাড়াহুড়ো করে ক্ষমা করা যায় না।
ক্ষমা বিষয়ক কিছু অনুপ্রেরণামূলক উক্তি (Inspirational Quotes About Forgiveness)
ক্ষমা করার গুরুত্ব বোঝাতে কিছু বিখ্যাত উক্তি নিচে দেওয়া হলো:
- “ক্ষমা হলো সেই সুগন্ধী যা বেগুনি ফুল ফেলে আসা গোড়ালির উপর ছড়িয়ে দেয়।” – মার্ক টোয়েন
- “দুর্বলরা ক্ষমা করতে পারে না। ক্ষমা হল সবলের বৈশিষ্ট্য।” – মহাত্মা গান্ধী
- “ক্ষমা অতীত পরিবর্তন করে না, তবে এটি ভবিষ্যতের পথ প্রশস্ত করে।” – পল বোয়েস
- “যে ভালোবাসে সে ক্ষমা করতে পারে।” – জন রে
- “ক্ষমা একটি মুক্ত করা কাজ। প্রথমত এবং সর্বাগ্রে, আপনি যখন ক্ষমা করেন, আপনি নিজেকে মুক্ত করেন।” – অ্যালান লোকহার্ট
ধর্ম এবং ক্ষমার ধারণা (Religion and the Concept of Forgiveness)
বিশ্বের প্রায় সব ধর্মেই ক্ষমার কথা বলা হয়েছে। ইসলামে ক্ষমা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কুরআনে বলা হয়েছে, “যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে এবং মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে, আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন।” (সূরা আল-ইমরান, ৩:১৩৪)
হিন্দুধর্মে ক্ষমাকে ‘ত্যাগ’ এবং ‘অহিংসা’ হিসেবে দেখা হয়। বৌদ্ধধর্মে ক্ষমাকে ‘করুণা’ এবং ‘মৈত্রী’র অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। খ্রিস্টধর্মে যিশু খ্রিস্ট ক্ষমা করার কথা বলেছেন এবং ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা চাওয়ার কথা বলেছেন।
বিভিন্ন ধর্মে ক্ষমার গুরুত্ব (Importance of Forgiveness in Different Religions)
- ইসলাম: ইসলামে ক্ষমা একটি অত্যাবশ্যকীয় গুণ। আল্লাহ ক্ষমাশীল এবং তিনি বান্দাদেরকেও ক্ষমা করার নির্দেশ দিয়েছেন।
- হিন্দুধর্ম: হিন্দুধর্মে ক্ষমাকে আত্মশুদ্ধির উপায় হিসেবে গণ্য করা হয়। ক্ষমা মানুষকে অহংকার এবং ক্রোধ থেকে মুক্তি দেয়।
- বৌদ্ধধর্ম: বৌদ্ধধর্মে ক্ষমা হলো ‘করুণা’ এবং ‘মৈত্রী’র অংশ। ক্ষমা নিজের এবং অন্যের দুঃখ দূর করতে সাহায্য করে।
- খ্রিস্টধর্ম: খ্রিস্টধর্মে ক্ষমা হলো ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। যিশু খ্রিস্ট ক্রুশবিদ্ধ হয়েও তাঁর শত্রুদের ক্ষমা করে গেছেন।
বাস্তব জীবনে ক্ষমার উদাহরণ (Examples of Forgiveness in Real Life)
বাস্তব জীবনে ক্ষমা করার অনেক উদাহরণ রয়েছে, যা আমাদের অনুপ্রাণিত করে। নেলসন ম্যান্ডেলা ২৭ বছর কারাভোগের পর তাঁর অত্যাচারীদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। মহাত্মা গান্ধী অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করে তাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। এই উদাহরণগুলো প্রমাণ করে যে, ক্ষমা শুধু কথার কথা নয়, এটা জীবন পরিবর্তনের শক্তি।
ক্ষমা বিষয়ক কিছু বাস্তব ঘটনা (Real-Life Stories About Forgiveness)
- ইভা কোরো: ইভা কোরো একজন হলোকাস্ট সারভাইভার, যিনি নাৎসি ক্যাম্পে তাঁর পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছেন। যুদ্ধের পর তিনি নাৎসিদের ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন।
- শার্লি রুবি: শার্লি রুবি ১৯৯৫ সালে ওকলাহোমা সিটি বোম্বিং হামলায় তাঁর নাতনিকে হারিয়েছেন। তিনি বোম্বিংয়ের অপরাধী টিমোথি ম্যাকভেইকে ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং ঘৃণা দূর করার আহ্বান জানিয়েছেন।
- অ্যাঞ্জেলিনা জোলি: বিখ্যাত অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি তাঁর বাবার সঙ্গে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বের পর তাঁকে ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছেন।
ক্ষমা এবং মানসিক স্বাস্থ্য (Forgiveness and Mental Health)
মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষমা অত্যন্ত জরুরি। ক্ষমা করলে দুশ্চিন্তা, হতাশা এবং রাগ কমে যায়। এটি মানসিক চাপ কমায় এবং সুস্থ জীবন ধারণে সাহায্য করে। ক্ষমা নিজের প্রতি সদয় হতে এবং ইতিবাচক চিন্তা করতে উৎসাহিত করে।
মানসিক শান্তির জন্য ক্ষমার ভূমিকা (The Role of Forgiveness in Mental Peace)
- দুশ্চিন্তা হ্রাস: ক্ষমা করলে অতীতের কষ্টগুলো মন থেকে ধীরে ধীরে সরে যায়, যা দুশ্চিন্তা কমাতে সাহায্য করে।
- হতাশা থেকে মুক্তি: ক্ষমা হতাশার অনুভূতি কমিয়ে জীবনে নতুন আশা জাগায়।
- রাগ নিয়ন্ত্রণ: ক্ষমা করার মাধ্যমে রাগের তীব্রতা কমে আসে এবং মানসিক শান্তি বজায় থাকে।
- মানসিক স্থিতিশীলতা: ক্ষমা মানসিক স্থিতিশীলতা বাড়ায় এবং জীবনের কঠিন পরিস্থিতিতে শান্ত থাকতে সাহায্য করে।
ক্ষমা চাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু টিপস (Some Tips for Asking for Forgiveness)
ক্ষমা চাওয়া একটি শিল্প। নিচে কিছু টিপস দেওয়া হলো, যা আপনাকে সঠিকভাবে ক্ষমা চাইতে সাহায্য করবে:
- সঠিক সময় নির্বাচন করুন: ক্ষমা চাওয়ার জন্য সঠিক সময় এবং স্থান নির্বাচন করা জরুরি। যখন উভয়পক্ষ শান্ত এবং কথা বলার জন্য প্রস্তুত থাকবে, তখনই ক্ষমা চাওয়া উচিত।
- চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন: যখন আপনি ক্ষমা চাইবেন, তখন সরাসরি চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন। এটি আপনার আন্তরিকতা প্রকাশ করবে।
- স্পষ্ট ভাষায় ক্ষমা চান: আপনার ভুল স্বীকার করে স্পষ্টভাবে ক্ষমা চান। কোনো প্রকার দ্বিধা বা অজুহাত দেখাবেন না।
- ধৈর্য ধরুন: ক্ষমা চাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমা না পেলে ধৈর্য ধরুন। সময় দিন এবং আঘাতকারী ব্যক্তিকে তার নিজের মতো করে বিষয়টি ভাবতে দিন।
- পুনরায় ভুল না করার চেষ্টা করুন: আপনার কাজের জন্য ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে যাতে এমন ভুল আর না হয়, সেই বিষয়ে সতর্ক থাকুন।
ক্ষমা না করতে পারলে কী করবেন? (What to Do If You Can’t Forgive?)
সব সময় ক্ষমা করা সহজ হয় না। যদি আপনি ক্ষমা করতে না পারেন, তাহলে হতাশ হবেন না। কিছু বিকল্প উপায় অবলম্বন করে আপনি নিজের কষ্ট কমাতে পারেন:
- থেরাপিস্টের সাহায্য নিন: একজন থেরাপিস্ট আপনাকে আপনার অনুভূতিগুলো বুঝতে এবং ক্ষমা করার পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করতে পারেন।
- জার্নাল লিখুন: নিজের অনুভূতিগুলো একটি জার্নালে লিখুন। এটি আপনাকে আপনার চিন্তাগুলো গুছিয়ে আনতে সাহায্য করবে।
- মেডিটেশন করুন: মেডিটেশন বা ধ্যান করার মাধ্যমে আপনি নিজের মনকে শান্ত করতে পারেন এবং ক্ষমা করার শক্তি খুঁজে পেতে পারেন।
- সময় নিন: ক্ষমা একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। নিজেকে সময় দিন এবং ধীরে ধীরে নিজের ভেতরের ক্ষতগুলো সারিয়ে তুলুন।
- ছোট পদক্ষেপ নিন: প্রথমে ছোটখাটো বিষয়গুলো ক্ষমা করা শুরু করুন। ধীরে ধীরে বড় কষ্টগুলো ক্ষমা করার চেষ্টা করুন।
উপসংহার (Conclusion)
ক্ষমা একটি মহৎ গুণ। ক্ষমা করার মাধ্যমে আপনি শুধু অন্যকে নয়, নিজেকেও মুক্তি দেন। ক্ষমা আপনার মনকে হালকা করে, সম্পর্ককে উন্নত করে এবং জীবনকে আরও সুন্দর করে তোলে। তাই, আজ থেকে ক্ষমা করার অভ্যাস করুন এবং একটি সুখী ও শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করুন।
ক্ষমা চাওয়া এবং ক্ষমা করা—দুটোই কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। আপনার জীবনে ঘটে যাওয়া কষ্টকর ঘটনাগুলোকে পেছনে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে যান। মনে রাখবেন, ক্ষমা হলো ভালোবাসার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। আপনি যদি কাউকে ভালোবাসেন, তাহলে তাকে ক্ষমা করতে শিখুন। আর যদি নিজেকে ভালোবাসেন, তাহলে নিজের ভুলগুলো ক্ষমা করে দিন।
সবাইকে ক্ষমা করে দিতে পারলেই জীবন সুন্দর হয়ে উঠবে, তাই না? আপনি কী ভাবছেন? নিচে কমেন্ট করে জানান!