আজকে ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর তুলে ধরব। আশা করি, এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের খুব উপকার হবে। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক, ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের ২টি গুরুত্বপূর্ণ ও কমন উপযোগী সৃজনশীল ও উত্তর।
সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর-১:
লোকমান সাহেবের গাড়িচালক সালাম তার বাড়িতেই থাকেন। প্রয়োজনমতো সকলের নির্দেশ মেনে চলেন। তার জন্য আলাদা একটি কক্ষ দেওয়া হয়েছে। তার জন্য আলাদা করে কোনো রান্না হয় না। নিজেরা যা খান তাই তাকে দেওয়া হয়। লোকমান সাহেবের সন্তানরা তাকে ভাইয়া বলে ডাকে। সালামের পারিবারিক যেকোনো সমস্যা লোকমান সাহেব নিজের সমস্যা মনে করে সমাধান করেন। এভাবে সালাম যেন লোকমান সাহেবের পরিবারের সদস্য হয়ে যান।
ক. ওয়াটারলু কী?
খ. কেহ মরে বিল ছেঁচে, কেহ খায় কই।’- উক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের কোন দিক থেকে বৈসাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের মূল বক্তব্যকে উপস্থাপন করেছে।”— মন্তব্যটি যাচাই করো।
১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. ওয়াটারলু বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলস শহরের অদূরবর্তী ওয়ালোনিয়া অঞ্চলের অন্তর্গত একটি ছোট শহর ।
খ. কাজ করে একজন কিন্তু তার ফল ভোগ করে অন্যজন— এটি বোঝাতে প্রশ্নোত্ত উক্তিটি করা হয়েছে।
প্রসন্ন গোয়ালিনী কমলাকান্তের জন্য এক বাটি দুধ রেখে যায়। কিন্তু সে নেশার ঘোরে অন্যমনস্ক থাকার সুযোগে বিড়াল তার দুধটুকু খেয়ে নেয়। দুধ খাওয়ার পর পরিতৃপ্ত বিড়ালের আচরণ দেখে কমলাকান্তের মনে হয়, বিড়াল ভাবছে, কেহ মরে বিল ছেঁচে, কেহ খায় কই। অর্থাৎ কমলাকান্তের জন্য দুধ রাখা হলেও তা সে পান করতে পারল না, বিড়ালই করল।
গ. উদ্দীপকের লোকমান সাহেবের সঙ্গে ‘বিড়াল’ প্রবনে ধনিকশ্রেণির আচরণগত বৈসাদৃশ্য প্রকাশ পেয়েছে।
‘বিড়াল’ রচনায় একটি বিড়ালের জবানিতে লেখক ধনিকশ্রেণির নির্মম মানসিকতার স্বরূপ তুলে ধরেছেন। এ শ্রেণির মানুষেরা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি ধনসম্পদের অধিকারী। অথচ অসহায়, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য তাদের কোনো মায়া-মমতা নেই। দরিদ্রের ব্যথায় ব্যথিত হওয়া তাদের জন্য নিতান্তই লজ্জার ব্যাপার। অকারণে ভোগবিলাসে তারা মত্ত থাকে। অথচ ক্ষুধার জ্বালায় কষ্ট পাওয়া মানুষকে সাহায্য করতে এরা কুণ্ঠাবোধ করে।
উদ্দীপকে বর্ণিত লোকমান সাহেবের মাঝে আমরা দরিদ্রের প্রতি উদারতা ও সহমর্মিতার প্রকাশ দেখতে পাই। গাড়ির চালক সালামকে তিনি নিজের সন্তানের মতোই ভালোবাসেন। নিজেরা যা খান তাই তাকে খেতে দেন। পরিবারের একজন সদস্য বলে মনে করেন তাকে। ধনী হয়েও লোকমান সাহেবের মহৎ মানসিকতার ভিন্নরূপ দেখি ‘বিড়াল’ রচনায় বর্ণিত ধনিকশ্রেণির মাঝে। ধনী হয়ে অঢেল সম্পদের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও অসহায় লোকদের সাহায্য করার মানসিকতা নেই তাদের। তারা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকে সর্বদা, দরিদ্রের প্রতি গল্পের ধনিকশ্রেণির নির্লিপ্ত মানসিকতার বিপরীত চিত্র উদ্দীপকের লোকমান সাহেবের মাঝে দেখি। এ দিকটিই উদ্দীপকের সাথে ‘বিড়াল’ রচনার বৈসাদৃশ্য করে ।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত লোকমান সাহেব ধনী ও দরিদ্রের মধ্যকার ব্যবধানকে অস্বীকার করার মাধ্যমে যে মানবিকতা প্রদর্শন করেছেন, তাই ‘বিড়াল’ রচনার মূলসুর।
‘বিড়াল’ রচনায় কমলাকান্ত ও বিড়ালের মাঝে কাল্পনিক কথোপকথন তুলে ধরা হয়েছে। সে কথোপকথনে রয়েছে শ্রেণি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তোলার প্রচ্ছন্ন আহ্বান। ধনীদের উদ্বৃত্ত সম্পদে যে দরিদ্রের অধিকার রয়েছে, সে কথাই ‘বিড়াল’ রচনার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।
উদ্দীপকে বর্ণিত লোকমান সাহেব একজন মহানুভব মানুষ। নিজের সন্তান আর গাড়ির চালকের মাঝে কোনো পার্থক্য করেননি তিনি। দুজনকেই সমান চোখে দেখেছেন। নিজের সন্তানের মতোই ভালোবাসেন তাকে। সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য এ ধরনের মনোভাব পোষণ করা সবার দায়িত্ব। ‘বিড়াল’ রচনায় এ বিষয়টিই তুলে ধরা হয়েছে।
পৃথিবীতে ধনী ও দরিদ্রের ব্যবধান মানুষেরই সৃষ্টি। আবার মানুষ চাইলে এ ব্যবধান কমিয়ে আনতে পারে। এজন্য প্রয়োজন মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি। ধনী অকারণে বিলাসব্যসন পরিহার করে দরিদ্রের মৌলিক চাহিদা পূরণে সচেষ্ট হলে তৈরি হতে পারে স্নেহ-মমতা ও সহানুভূতিপূর্ণ চমৎকার এক সমাজ। ‘বিড়াল’ রচনায় প্রতীকী চরিত্র বিড়ালের সূক্ষ্ম যুক্তিতর্কে মূলত এ ভাবনাটিই ফুটে উঠেছে। উদ্দীপকের লোকমান সাহেবও এ বিষয়টি অনুভব করেছেন অন্তর থেকে। তাই গাড়ির চালক সালামকে নিজের সন্তানের মতোই দেখেছেন। তাই সবদিক বিবেচনায় বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের মূল বক্তব্যকে উপস্থাপন করেছে।
আরও পড়ুনঃ
- বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো রেজাল্ট করার উপায়
- সিজিপিএ ৪ পাওয়ার উপায়
- দ্রুত সিলেবাস শেষ করার উপায়
- না পড়ে পরীক্ষায় পাশ করার উপায়
- পড়ার প্রতি মনোযোগী হওয়ার উপায়
- পড়ায় মন বসানোর সহজ উপায়
- ইংরেজি শেখার গুরুত্ব
- ইংরেজি শেখার উপকারিতা
- ইংরেজি শেখার কৌশল
- পড়া মনে রাখার ১০টি সহজ কৌশল
- দ্রুত পড়া মনে রাখার কৌশল
সৃজনশীল প্রশ্ন নম্বর-২:
মদন সরকার নিজে অভাবগ্রস্ত থাকলেও অন্যের অভাব মেটানো এবং গরিবদের দুঃখ মোচনের ব্যাপারে তার ভূমিকা ছিল সব সময়ই প্রশংসনীয়। গ্রামের কৃপণ অথচ ধনীর মানসিকতা পরিবর্তনে সে গ্রামের তরুণদের নিয়ে একটি সমিতি গঠন করল। সমিতির মূল লক্ষ্য ছিল গ্রামের সচ্ছল ব্যক্তিদের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য নিয়ে গরিবদের স্বাবলম্বী করা। ধনী পরিবারগুলো এতে সাড়া না দেওয়ায় গ্রামে চুরির সংখ্যা বেড়ে গেল।
ক. ‘বিড়াল’ রচনায় প্রসন্ন গোয়ালিনীর গরুর নাম কী?
খ. ‘অধর্ম চোরের নহে— চোরে যে চুরি করে, সে অধর্ম কৃপণ ধনীর’— ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত মদন সরকারের কর্মপরিকল্পনা এবং ‘বিড়াল’ নিবন্ধের বিড়ালের বক্তব্য একই’— তুলনামূলক বিচার করো।
ঘ. ‘তেলা মাথায় তেল দেওয়া মনুষ্যজাতির রোগ-দরিদ্রের ক্ষুধা কেহ বুঝে না’, ‘বিড়াল’ নিবন্ধের এই বক্তব্য উদ্দীপকের আলোকে কতটুকু যুক্তিযুক্ত? ব্যাখ্যা করো।
২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘বিড়াল’ রচনায় প্রসন্ন গোয়ালিনীর গরুর নাম ‘মঙ্গলা’।
খ. সমাজের বিত্তবানদের কাছ থেকে সাহায্য না পেয়ে অন্নাভাবে, অর্থাভাবে অনেকে চুরি করতে বাধ্য হয়। চুরি করা নিঃসন্দেহে একটি অপরাধ। যার জন্য শাস্তির বিধানও রয়েছে। | কিন্তু চোরের এই চুরি করার দায় সমাজের কৃপণ ধনীর ওপরও অনেকখানি বর্তায়।
দরিদ্র শ্রেণির মানুষরা দিন অন্তে খাদ্যের কষ্টে ভোগে। অঢেল সম্পদ থাকা সত্ত্বেও কৃপণ ধনীরা তাদের অর্থ বা খাদ্য দিয়ে সহায়তা করে না বলে তাদের অনেকেই জীবন বাঁচাতে চুরির পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়। তাই এই চুরির দায়, চোরের সাথে সাথে কৃপণ ধনীর ওপরও বর্তায় বলে গল্পের বিড়ালের অভিমত।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত মদন সরকারের ব্যর্থ পরিকল্পনার সাথে ‘বিড়াল’ রচনার বিড়ালের বক্তব্যের সাদৃশ্য রয়েছে।
আলোচ্য রচনার বিড়ালের কণ্ঠে পৃথিবীর বঞ্চিত, নিষ্পেষিত মানুষের ক্ষোভ- প্রতিবাদ-মর্মবেদনা ব্যক্ত হয়েছে। দরিদ্র্যের দুরবস্থা ও কষ্টের কথা ব্যক্ত করেছে বিড়ালটি । এজন্য সে সমাজের বিত্তবান শ্রেণির মানুষের দায় থাকার কথাও বলেন। কৃপণ ধনী মানুষদের অসহযোগিতাই দরিদ্র শ্রেণির চৌর্যবৃত্তিতে জড়ানোর জন্য দায়ী বলে মনে করে বিড়ালটি।
উদ্দীপকের মদন সরকার নিজে অভাবগ্রস্ত থাকলেও দরিদ্রের দুঃখ মোচনে ভূমিকা রাখে। গ্রামের কৃপণ ধনীদের মানসিকতা পরিবর্তনে সে তরুণদের নিয়ে একটি সমিতি গঠন করে। গ্রামের বিত্তবান মানুষদের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য নিয়ে গরিবদের স্বাবলম্বী করাই ছিল তার উদ্দেশ্য। কিন্তু ধনী পরিবারগুলো এতে সাড়া না দিলে গ্রামের দরিদ্র, অভাবগ্রস্ত মানুষদের অনেকেই চুরি করতে শুরু করে। ধনীর আর্থিক অসহযোগিতার দরুন দরিদ্রের চুরির সাথে জড়িয়ে যাওয়ার ঘটনা বর্ণিত হয়েছে ‘বিড়াল’ প্রবন্ধে। দরিদ্র শ্রেণির প্রতিনিধি বিড়ালটি খাবারের অভাবেই কমলাকান্তের জন্য রাখা দুধ চুরি করে খেতে বাধ্য হয়েছিল। কৃপণ ধনিক শ্রেণির প্রতিনিধি কমলাকান্ত যদি বিড়ালের জন্য কিছু খাবার নিজে থেকেই বরাদ্দ রাখত তাহলে বিড়ালকে আর চুরি করতে হতো না। এভাবেই মদন সরকার ও বিড়ালের বক্তব্য সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ঘ. উদ্দীপকের বিষয়বস্তুতে আলোচ্য মন্তব্যের ভাবটি ফুটে ওঠেনি। ‘বিড়াল’ রচনার বিড়ালটি সমাজের দরিদ্র, শোষিত শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করেছে। তার কণ্ঠে বর্ণিত হয়েছে বঞ্চিত শ্রেণির দুর্দশার কথা। একইসাথে ফুটে উঠেছে এর পেছনে দায়ী থাকা সেই ধনী শ্রেণির অসহযোগিতার কথা।
উদ্দীপকের মদন সরকার গ্রামের ধনী ব্যক্তিদের আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে দরিদ্র শ্রেণিকে স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ হাতে নেয়। কিন্তু ধনী ব্যক্তিরা এই উদ্যোগে সাড়া দেয় না। ফলে একপর্যায়ে গ্রামে চুরির সংখ্যা বেড়ে যায়। এদিকে আলোচ্য রচনায়ও বলা হয়েছে ধনীর সাহায্যের অভাবে ক্ষুধার্ত, দরিদ্র শ্রেণির চৌর্যবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়ার ব্যাপারটি। একইসাথে বলা হয়েছে, যার আছে তাকে আরও বেশি দেয়ার প্রসঙ্গটি।
‘বিড়াল’ রচনায় বিড়াল মানুষের নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যকে রোগ বলে অভিহিত করেছে। আর তা হলো যার কিছু নেই তাকে সাহায্য না করে যার সবকিছু আছে তাকে আরও বেশি দেয়ার প্রবণতা। ক্ষুধার্ত, দরিদ্র মানুষকে কেউ খাদ্য দিয়ে অর্থ দিয়ে সাহায্য করতে আসে না। অথচ ব্যক্তিস্বার্থের আশায় ধনী, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জন্য মহাভোজের আয়োজন করতে কারও আপত্তি নেই। মানুষের এই আচরণই দরিদ্র শ্রেণির সীমাহীন দুর্ভোগের কারণ। উদ্দীপকে কৃপণ ধনীর দরিদ্রের প্রতি অসহযোগিতামূলক আচরণ ফুটে উঠলেও উপর্যুক্ত বিষয়টি তাতে আলোচিত হয়নি। তাই আলোচ্য মন্তব্যটি উদ্দীপকের আলোকে যুক্তিযুক্ত হয়নি।