তাহলে শুরু করা যাক!
আচ্ছা, আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন, কোনো ব্যক্তি, বস্তু বা স্থানের বিশেষত্ব বোঝানোর জন্য আমরা যে শব্দগুলো ব্যবহার করি, সেগুলো আসলে কী? হ্যাঁ, আমি সেই বিশেষণ বা adjective-এর কথাই বলছি! চলুন, আজ আমরা বিশেষণ নিয়ে একটু বিস্তারিত আলোচনা করি – adjective কাকে বলে, কত প্রকার ও কী কী, সেই সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণা তৈরি করি।
কথায় আছে, “যা দেখায় ভালো, লাগেও ভালো!” – তেমনি, ভাষার সৌন্দর্য বাড়াতে, শব্দের মাধুর্য যোগ করতে বিশেষণের জুড়ি নেই।
বিশেষণ (Adjective) কাকে বলে?
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, বিশেষণ হলো সেই শব্দ, যা বিশেষ্য (noun) বা সর্বনাম (pronoun)-এর দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ ইত্যাদি প্রকাশ করে। অনেকটা যেন একটা ছবিকে আরও রঙিন করে তোলে!
ব্যাকরণের ভাষায়: যে পদ বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের গুণ, দোষ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ, ক্রমবাচকতা, নির্দিষ্টতা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে, তাকে বিশেষণ পদ বলে।
উদাহরণ:
-
ভালো ছেলে (গুণ)
-
দুষ্ট মেয়ে (দোষ)
-
ঠান্ডা আবহাওয়া (অবস্থা)
-
পাঁচটি কলম (সংখ্যা)
-
অল্প চিনি (পরিমাণ)
বিশেষণ চেনার সহজ উপায়: বিশেষ্য বা সর্বনামকে “কেমন/কী রকম” দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, সেটাই বিশেষণ।
যেমন: “ফুলটি সুন্দর”। এখানে “ফুলটি কেমন?” – উত্তর “সুন্দর”। সুতরাং, “সুন্দর” একটি বিশেষণ।
বিশেষণের প্রকারভেদ
বাংলা ব্যাকরণে বিশেষণকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়:
- নাম বিশেষণ (Attributive Adjective)
- ভাব বিশেষণ (Predicate Adjective)
নাম বিশেষণ (Attributive Adjective)
যে বিশেষণ বিশেষ্য পদের পূর্বে বসে সেই বিশেষ্যের গুণ, দোষ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ ইত্যাদি প্রকাশ করে, তাকে নাম বিশেষণ বলে। এটি বিশেষ্যের বৈশিষ্ট্য সরাসরি বর্ণনা করে।
নাম বিশেষণের প্রকারভেদ
নাম বিশেষণকে আবার কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়:
- গুণবাচক বিশেষণ
- অবস্থাবাচক বিশেষণ
- সংখ্যাবাচক বিশেষণ
- পরিমাণবাচক বিশেষণ
- ক্রমবাচক বিশেষণ
- স্থানবাচক বিশেষণ
- কালবাচক বিশেষণ
- interrogative বিশেষণ
গুণবাচক বিশেষণ
যে বিশেষণ বিশেষ্য পদের গুণ বা বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে, তাকে গুণবাচক বিশেষণ বলে।
উদাহরণ:
- সুন্দর ফুল
- মিষ্টি ফল
- সৎ মানুষ
- দক্ষ খেলোয়াড়
অবস্থাবাচক বিশেষণ
যে বিশেষণ বিশেষ্য পদের অবস্থা বা দশাকে নির্দেশ করে, তাকে অবস্থাবাচক বিশেষণ বলে।
উদাহরণ:
- রোগা শরীর
- পুরোনো বাড়ি
- ভাঙা চেয়ার
- কাঁচা আম
সংখ্যাবাচক বিশেষণ
যে বিশেষণ বিশেষ্য পদের সংখ্যা নির্দেশ করে, তাকে সংখ্যাবাচক বিশেষণ বলে।
উদাহরণ:
- একটি কলম
- দশ জন লোক
- প্রথম শ্রেণী
- শত টাকা
সংখ্যাবাচক বিশেষণ আবার কয়েক প্রকার হতে পারে:
- সংখ্যাবাচক: এক, দুই, তিন,…
- গণনাবাচক: প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়,…
- পরিমাণবাচক: কয়েক, কিছু, অনেক,…
পরিমাণবাচক বিশেষণ
যে বিশেষণ বিশেষ্য পদের পরিমাণ বা পরিমাণ নির্দেশ করে, তাকে পরিমাণবাচক বিশেষণ বলে।
উদাহরণ:
- অল্প জল
- বেশি চিনি
- কিছু চাল
- যথেষ্ট খাবার
ক্রমবাচক বিশেষণ
যা ধারাবাহিকতা বোঝায়।
উদাহরণ:
- পঞ্চম শ্রেণি
- দশম পাতা
স্থানবাচক বিশেষণ
যা স্থানের ধারণা দেয়।
উদাহরণ:
- ঢাকাই মসলিন
- ভারতীয় সংস্কৃতি
কালবাচক বিশেষণ
যা সময় নির্দেশ করে।
উদাহরণ:
- গত বছর
- শীতের সকাল
Interrogative বিশেষণ
এই বিশেষণগুলো প্রশ্ন করতে ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণ:
- কোন বইটা তোমার?
- কী পরিমাণ চিনি লাগবে?
ভাব বিশেষণ (Predicate Adjective)
যে বিশেষণ বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের পরে বসে ক্রিয়া পদের মাধ্যমে তাদের গুণ, অবস্থা ইত্যাদি প্রকাশ করে, তাকে ভাব বিশেষণ বলে। এটি সাধারণত বাক্যের বিধেয় অংশে বসে।
ভাব বিশেষণের উদাহরণ
- ছেলেটি ভালো।
- ফলটি মিষ্টি।
- আকাশটা নীল।
ভাব বিশেষণ চেনার উপায়: এখানে বিশেষণগুলো বিশেষ্য পদের পরে বসেছে এবং ক্রিয়া পদের মাধ্যমে তাদের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করছে।
তুলনা :
বৈশিষ্ট্য | নাম বিশেষণ | ভাব বিশেষণ |
---|---|---|
অবস্থান | বিশেষ্যের আগে বসে | বিশেষ্যের পরে বসে |
কার্যকারিতা | সরাসরি বিশেষ্যের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে | ক্রিয়া পদের মাধ্যমে বিশেষ্যের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে |
উদাহরণ | সুন্দর ফুল | ফুলটি সুন্দর |
কিছু অতিরিক্ত বিষয়
বিশেষণ রূপে ব্যবহৃত শব্দ কখনো কখনো বিশেষ্য রূপে ব্যবহৃত হতে পারে। তেমনি, বিশেষ্য রূপে ব্যবহৃত শব্দও বিশেষণের মতো কাজ করতে পারে। একটু উদাহরণ দিলে বিষয়টা পরিষ্কার হবে।
-
বিশেষণ রূপে বিশেষ্য: এটি একটি পাথরবাটি। (এখানে ‘পাথর’ শব্দটি বাটির একটি বৈশিষ্ট্য বোঝাচ্ছে।)
-
বিশেষ্য রূপে বিশেষণ: সব ভালোর শেষ ভালো। (এখানে ‘ভালো’ শব্দটি একটি বিশেষ্য, যা ভালো বিষয়গুলোকে বোঝাচ্ছে।)
বিশেষণ চেনার সহজ টিপস
-
বিশেষ্য বা সর্বনামের আগে শব্দ বসিয়ে “কেমন/কী রকম” প্রশ্ন করুন। যদি উত্তর পাওয়া যায়, তবে সেটি বিশেষণ।
-
লক্ষ্য করুন, শব্দটি কোনো গুণ, দোষ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ বোঝাচ্ছে কিনা।
-
বাক্যের গঠন এবং শব্দের অবস্থান দেখে নাম বিশেষণ ও ভাব বিশেষণ আলাদা করতে শিখুন।
বাস্তব জীবনে বিশেষণের ব্যবহার
আমরা প্রতিদিনের জীবনে অসংখ্যবার বিশেষণ ব্যবহার করি। পোশাক, খাবার, মানুষ, জায়গা – সবকিছু বর্ণনার ক্ষেত্রেই বিশেষণ অপরিহার্য।
-
“আজ আকাশটা খুব সুন্দর লাগছে।”
-
“আমার লাল জামাটা কোথায়?”
-
“আমি গরম কফি খেতে চাই।”
এই উদাহরণগুলোতে “সুন্দর”, “লাল”, “গরম” – এগুলো সবই বিশেষণ, যা যথাক্রমে আকাশ, জামা ও কফির বৈশিষ্ট্য বোঝাচ্ছে।
বিশেষণ নিয়ে কিছু মজার তথ্য
-
বাংলা ভাষায় কিছু শব্দ আছে, যেগুলো একই সাথে বিশেষণ ও ক্রিয়া হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। যেমন: “চলন্ত” (চলন্ত গাড়ি – বিশেষণ; লোকটি চলছে – ক্রিয়া)।
-
বিশেষণ পদটির ইংরেজি প্রতিশব্দ Adjective, যা ল্যাটিন শব্দ Adjectīvus থেকে এসেছে।
-
সংস্কৃত ব্যাকরণে বিশেষণের ব্যবহার আরও ব্যাপক ও বিভিন্ন।
বিশেষণ: কিছু উদাহরণ
শ্রেণী | উদাহরণ |
---|---|
গুণবাচক বিশেষণ | ভালো, মন্দ, সুন্দর, খারাপ, সৎ, সাহসী, ইত্যাদি |
অবস্থাবাচক বিশেষণ | রোগা, মোটা, তাজা, বাসি, শুকনো, ভেজা, ইত্যাদি |
সংখ্যাবাচক বিশেষণ | এক, দুই, তিন, প্রথম, দ্বিতীয়, দশম, ইত্যাদি |
পরিমাণবাচক বিশেষণ | অল্প, বেশি, কিছু, অনেক, সমস্ত, ইত্যাদি |
স্থানবাচক বিশেষণ | ঢাকাই, ভারতীয়, গ্রামীণ, শহুরে, ইত্যাদি |
কালবাচক বিশেষণ | আজকের, গতকালকের, দৈনিক, বার্ষিক, শতাব্দী, ইত্যাদি |
interrogative বিশেষণ | কোন, কি, কত, কেমন, ইত্যাদি |
বিশেষণ ব্যবহারের গুরুত্ব
বিশেষণ ভাষার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং বক্তব্যকে সুস্পষ্ট করে তোলে। একটি সাধারণ বাক্যকে বিশেষণের মাধ্যমে আরও আকর্ষণীয় এবং জীবন্ত করে তোলা যায়।
উদাহরণস্বরূপ:
-
সাধারণ বাক্য: “একটি পাখি উড়ছে।”
-
বিশেষণ যুক্ত বাক্য: “একটি সুন্দর পাখি আকাশে উড়ছে।”
দ্বিতীয় বাক্যটি প্রথম বাক্যের চেয়ে বেশি স্পষ্ট এবং হৃদয়গ্রাহী।
বিশেষণ নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ)
এখানে কিছু সাধারণ প্রশ্ন এবং তাদের উত্তর দেওয়া হলো, যা বিশেষণ সম্পর্কে আপনার ধারণা আরও স্পষ্ট করতে সাহায্য করবে:
-
প্রশ্ন: বিশেষণ পদ চেনার সহজ উপায় কী?
উত্তর: বিশেষ্য বা সর্বনামকে “কেমন/কী রকম” দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, সেটাই বিশেষণ। -
প্রশ্ন: নাম বিশেষণ ও ভাব বিশেষণের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: নাম বিশেষণ বিশেষ্যের আগে বসে, আর ভাব বিশেষণ বিশেষ্যের পরে বসে ক্রিয়া পদের মাধ্যমে সম্পর্ক স্থাপন করে। -
প্রশ্ন: একটি শব্দ কি একই সাথে বিশেষণ ও অন্য কোনো পদ হতে পারে?
**উত্তর:** হ্যাঁ, কিছু শব্দ বাক্যের ব্যবহার অনুযায়ী বিশেষণ এবং অন্য পদ হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে।
-
প্রশ্ন: সংখ্যাবাচক বিশেষণ কত প্রকার?
উত্তর: সংখ্যাবাচক বিশেষণ বিভিন্ন প্রকার হতে পারে, যেমন: সংখ্যাবাচক, গণনাবাচক, পরিমাণবাচক ইত্যাদি। -
প্রশ্ন: interrogative বিশেষণ এর কাজ কী?
উত্তর: interrogative বিশেষণগুলো প্রশ্ন করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
উপসংহার
আশা করি, এই আলোচনার পর বিশেষণ সম্পর্কে আপনার মনে আর কোনো ধোঁয়াশা নেই। বিশেষণ শুধু ব্যাকরণের একটি অংশ নয়, এটি আমাদের ভাষার অলঙ্কার। তাই, বিশেষণ ব্যবহার করে আপনার লেখাকে আরও সুন্দর ও প্রাণবন্ত করে তুলুন।
যদি আপনার মনে এখনও কোনো প্রশ্ন থাকে, তবে নির্দ্বিধায় নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আর হ্যাঁ, লেখাটি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না! আজকের মতো বিদায়। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন!