আচ্ছা, ভাবুন তো, আপনার শরীরে যখন কোনো শত্রু ঢোকে, তখন কী হয়? একটা বিশাল যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়, তাই না? এই যুদ্ধের দুটো প্রধান অস্ত্র হল অ্যান্টিজেন (Antigen) ও অ্যান্টিবডি (Antibody)। কিন্তু এই দুটো জিনিস আসলে কী, কীভাবে কাজ করে, সেটাই আজ আমরা সহজ ভাষায় জেনে নেব। ভয় নেই, একদম কঠিন করে কিছু বলব না, বরং মজার ছলে ব্যাপারটা বুঝিয়ে দেব!
তাহলে চলুন, শুরু করা যাক!
শরীরের সৈনিক: অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি (Antigen o Antibody kake bole)
অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি – এই দুটো শব্দ শুনলেই কেমন যেন জটিল মনে হয়, তাই না? কিন্তু বিশ্বাস করুন, বিষয়টা মোটেও কঠিন নয়। বরং আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আসুন, ধাপে ধাপে জেনে নিই।
অ্যান্টিজেন কী? (Antigen ki)
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, অ্যান্টিজেন হল সেই বহিরাগত শত্রু, যা আমাদের শরীরে প্রবেশ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে (Immune System) জাগিয়ে তোলে। এরা শরীরের বন্ধু নয়, উল্টো ক্ষতিকর।
- ভাইরাস (Virus): যেমন ফ্লু বা সাধারণ ঠান্ডা লাগার ভাইরাস।
- ব্যাকটেরিয়া (Bacteria): যেমন স্ট্রেপ থ্রোট বা খাদ্য বিষক্রিয়ার ব্যাকটেরিয়া।
- ফাঙ্গাস (Fungus): কিছু ধরণের ছত্রাক সংক্রমণ।
- পরজীবী (Parasite): ম্যালেরিয়া বা কৃমির মতো পরজীবী।
- টক্সিন (Toxin): কিছু ব্যাকটেরিয়া বা উদ্ভিদের বিষ।
- ক্যান্সার কোষ (Cancer Cell): অস্বাভাবিক কোষ যা শরীরের স্বাভাবিক কার্যকারিতা নষ্ট করে।
এগুলো যখন শরীরে ঢোকে, তখন আমাদের ইমিউন সিস্টেম বুঝতে পারে যে কিছু একটা গণ্ডগোল হয়েছে।
অ্যান্টিজেনের প্রকারভেদ (Types of Antigen)
অ্যান্টিজেন বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, তাদের উৎস এবং শারীরিক কার্যকলাপের ওপর ভিত্তি করে। নিচে কয়েকটি প্রধান প্রকারভেদ আলোচনা করা হলো:
-
বহিরাগত অ্যান্টিজেন (Exogenous Antigens): এই অ্যান্টিজেনগুলো শরীরের বাইরে থেকে প্রবেশ করে, যেমন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, বা অন্যান্য জীবাণু। শ্বাস-প্রশ্বাস, খাদ্য, বা কোনো আঘাতের মাধ্যমে এগুলো শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
-
অন্তঃসত্ত্বা অ্যান্টিজেন (Endogenous Antigens): এই অ্যান্টিজেনগুলো শরীরের কোষের ভেতরে তৈরি হয়। যখন কোষগুলো ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় বা ক্যান্সারে পরিণত হয়, তখন তারা অস্বাভাবিক প্রোটিন তৈরি করে যা অ্যান্টিজেন হিসেবে কাজ করে।
-
অটোঅ্যান্টিজেন (Autoantigens): অটোঅ্যান্টিজেনগুলো শরীরের স্বাভাবিক উপাদান, কিন্তু রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এদেরকে ভুল করে আক্রমণ করে বসে। এই কারণে অটোইমিউন রোগ (Autoimmune Diseases) সৃষ্টি হয়, যেমন রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (Rheumatoid Arthritis)।
-
টিউমার অ্যান্টিজেন (Tumor Antigens): এই অ্যান্টিজেনগুলো ক্যান্সার কোষের পৃষ্ঠে পাওয়া যায়। এগুলো টিউমার-নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেন (Tumor-Specific Antigens) হতে পারে, যা শুধুমাত্র ক্যান্সার কোষেই থাকে, অথবা টিউমার-সংযুক্ত অ্যান্টিজেন (Tumor-Associated Antigens) হতে পারে, যা স্বাভাবিক কোষগুলোতেও অল্প পরিমাণে পাওয়া যায়।
-
অ্যালার্জেন (Allergens): অ্যালার্জেন হলো সেই সব অ্যান্টিজেন, যা সাধারণত ক্ষতিকর নয়, কিন্তু কিছু মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এদের প্রতি অতি সংবেদনশীল (Hypersensitive) হয়। এর ফলে অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, যেমন পরাগ রেণু বা কোনো বিশেষ খাবারের প্রতি অ্যালার্জি।
অ্যান্টিবডি কী? (Antibody ki)
অ্যান্টিবডি হল আমাদের শরীরের নিজস্ব তৈরি করা সৈনিক। এদের কাজ হল অ্যান্টিজেনকে খুঁজে বের করে ধ্বংস করা অথবা নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া। এদের ইমিউনোগ্লোবুলিনও (Immunoglobulin) বলা হয়।
অ্যান্টিবডিগুলো দেখতে অনেকটা ‘Y’ অক্ষরের মতো। এই ‘Y’-এর দুটি বাহু অ্যান্টিজেনের সঙ্গে আটকে যায় এবং গোড়ার অংশটি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সংকেত দেয়, যাতে তারা ওই অ্যান্টিজেনকে ধ্বংস করতে পারে।
অ্যান্টিবডির প্রকারভেদ (Types of Antibody)
অ্যান্টিবডি পাঁচ ধরনের হয়ে থাকে, এবং এদের প্রত্যেকটির আলাদা আলাদা কাজ আছে:
-
IgG (ইমিউনোগ্লোবুলিন জি): এটি সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় এবং দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা দেয়। আগে হওয়া কোনো ইনফেকশন থেকে এটি শরীরকে রক্ষা করে।
-
IgM (ইমিউনোগ্লোবুলিন এম): এটি প্রথম অ্যান্টিবডি যা সংক্রমণের শুরুতে তৈরি হয়। এটি খুব দ্রুত কাজ করে জীবাণু ধ্বংস করতে শুরু করে।
-
IgA (ইমিউনোগ্লোবুলিন এ): এটি সাধারণত শরীরের মিউকাস মেমব্রেনে (যেমন: নাক, মুখ, পরিপাকতন্ত্র) পাওয়া যায় এবং শরীরকে জীবাণুর আক্রমণ থেকে বাঁচায়।
-
IgE (ইমিউনোগ্লোবুলিন ই): এটি অ্যালার্জি এবং প্যারাসাইট (কৃমি) সংক্রমণের সময় বেড়ে যায়।
-
IgD (ইমিউনোগ্লোবুলিন ডি): এর কাজ এখনও ভালোভাবে জানা যায়নি, তবে মনে করা হয় এটি বি কোষের কার্যকারিতায় সাহায্য করে।
অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডির মধ্যে সম্পর্ক (Antigen and Antibody Relation)
অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডির সম্পর্ক অনেকটা চাবির সাথে তালার মতো। একটি বিশেষ অ্যান্টিবডি একটি নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেনের সঙ্গেই কেবল যুক্ত হতে পারে। যখন অ্যান্টিবডি অ্যান্টিজেনের সাথে যুক্ত হয়, তখন এটি অ্যান্টিজেনকে নিষ্ক্রিয় করে দেয় অথবা শরীরের অন্যান্য রোগপ্রতিরোধক কোষগুলোকে সংকেত দেয়, যাতে তারা অ্যান্টিজেনটিকে ধ্বংস করে ফেলে।
এই প্রক্রিয়াটি আমাদের শরীরকে সংক্রমণ এবং রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। একবার যদি কোনো অ্যান্টিবডি কোনো অ্যান্টিজেনকে চিনে ফেলে, তবে সেটি ভবিষ্যতে সেই অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে দ্রুত কাজ করতে পারে। একেই আমরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বলি।
অ্যান্টিজেন-অ্যান্টিবডি বিক্রিয়া (Antigen-Antibody Reaction)
অ্যান্টিজেন-অ্যান্টিবডি বিক্রিয়া (Antigen-antibody reaction) হলো একটি বিশেষ প্রক্রিয়া, যেখানে অ্যান্টিবডিগুলো অ্যান্টিজেনের সাথে যুক্ত হয়ে তাদের নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এই বিক্রিয়া আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নিচে এই বিক্রিয়াটির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক আলোচনা করা হলো:
-
認識করণ (Recognition):
- অ্যান্টিবডিগুলো অ্যান্টিজেনের নির্দিষ্ট অংশকে চিনে নিতে পারে, যাকে বলা হয় এপিটোপ (Epitope)। প্রতিটি অ্যান্টিবডির একটি বিশেষ অংশ থাকে যা এই এপিটোপের সাথে যুক্ত হতে পারে।
-
বন্ধন (Binding):
- অ্যান্টিবডি যখন অ্যান্টিজেনের সাথে যুক্ত হয়, তখন এটি একটি জটিল গঠন তৈরি করে, যাকে অ্যান্টিজেন-অ্যান্টিবডি কমপ্লেক্স (Antigen-Antibody Complex) বলা হয়। এই বন্ধন প্রক্রিয়াটি খুবই সুনির্দিষ্ট এবং শক্তিশালী হয়ে থাকে। অনেকটা যেন একটি বিশেষ তালার জন্য একটি বিশেষ চাবি।
-
निष्क्रियকরণ (Neutralization):
- অ্যান্টিবডিগুলো প্যাথোজেনকে (Pathogen) নিষ্ক্রিয় করতে পারে, যাতে তারা আর কোষকে সংক্রমিত করতে না পারে। অ্যান্টিবডিগুলো ভাইরাসের চারপাশে আবৃত হয়ে তাদের কোষের রিসেপ্টরের সাথে যুক্ত হতে বাধা দেয়।
-
অপসোনাইজেশন (Opsonization):
- অ্যান্টিবডিগুলো অ্যান্টিজেনের গায়ে লেগে থাকে এবং ম্যাক্রোফেজ (Macrophage) ও নিউট্রোফিল (Neutrophil)-এর মতো রোগ প্রতিরোধক কোষগুলোকে অ্যান্টিজেনকে গ্রাস করতে সাহায্য করে। এই প্রক্রিয়াকে অপসোনাইজেশন বলা হয়। এর মাধ্যমে অ্যান্টিজেন খুব সহজেই ধ্বংস হয়ে যায়। অনেকটা যেন খাবারে সস মেশালে সেটি আরও সহজে খাওয়া যায়, তেমনই অ্যান্টিবডি অ্যান্টিজেনকে কোষের কাছে আরও লোভনীয় করে তোলে।
-
কমপ্লিমেন্ট অ্যাক্টিভেশন (Complement Activation):
- অ্যান্টিজেন-অ্যান্টিবডি কমপ্লেক্স কমপ্লিমেন্ট সিস্টেমকে সক্রিয় করতে পারে। কমপ্লিমেন্ট সিস্টেম হলো রক্তের প্রোটিনের একটি সিরিজ, যা প্যাথোজেনকে ধ্বংস করতে এবং প্রদাহ (Inflammation) কমাতে সাহায্য করে।
-
কোষের মাধ্যমে বিষাক্ততা (Cell-mediated Toxicity):
- কিছু অ্যান্টিবডি রোগ প্রতিরোধক কোষগুলোকে (যেমন: ন্যাচারাল কিলার সেল বা NK cell) সংক্রমিত কোষগুলোকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে। এই প্রক্রিয়াকে অ্যান্টিবডি-নির্ভর কোষীয় বিষাক্ততা (Antibody-Dependent Cell-mediated Cytotoxicity বা ADCC) বলা হয়।
ভ্যাকসিন কিভাবে কাজ করে? (Vaccine kivabe kaj kore)
ভ্যাকসিন (Vaccine) আমাদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সাহায্য করে, যাতে ভবিষ্যতে কোনো রোগজীবাণু আক্রমণ করলে শরীর দ্রুত তার মোকাবিলা করতে পারে।
ভ্যাকসিনের মূল কৌশল হলো শরীরে দুর্বল বা মৃত রোগজীবাণু প্রবেশ করানো। এতে আমাদের ইমিউন সিস্টেম (Immune System) সেই জীবাণুকে চিনে তার বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করে ফেলে। যখন আসল রোগজীবাণু শরীরে প্রবেশ করে, তখন তৈরি থাকা অ্যান্টিবডিগুলো দ্রুত তাদের আক্রমণ করে এবং রোগ প্রতিরোধ করে।
ভ্যাকসিন দেওয়ার পরে, আপনার শরীরে কিছু হালকা লক্ষণ দেখা যেতে পারে, যেমন জ্বর বা সামান্য ব্যথা। এর কারণ হলো আপনার ইমিউন সিস্টেম কাজ করছে এবং অ্যান্টিবডি তৈরি করছে। এই লক্ষণগুলো সাধারণত কয়েক দিনের মধ্যেই সেরে যায়।
ভ্যাকসিনের প্রকারভেদ (Types of Vaccine)
ভ্যাকসিন বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, এবং এদের প্রত্যেকটির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিচে প্রধান কয়েকটি প্রকার আলোচনা করা হলো:
-
দুর্বল বা মৃত ভাইরাস ভ্যাকসিন (Live Attenuated Vaccines): এই ভ্যাকসিনগুলোতে দুর্বল বা মৃত ভাইরাস ব্যবহার করা হয়। এগুলো শরীরে প্রবেশ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে, কিন্তু রোগ সৃষ্টি করে না। উদাহরণ: হাম, মাম্পস ও রুবেলা (MMR) ভ্যাকসিন।
-
ইন্যাএকটিভেটেড ভ্যাকসিন (Inactivated Vaccines): এই ভ্যাকসিনগুলো মৃত ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। এগুলো লাইভ ভ্যাকসিনের চেয়ে কম শক্তিশালী হতে পারে, তাই বুস্টার ডোজের প্রয়োজন হয়। উদাহরণ: পোলিও ভ্যাকসিন ও ফ্লু ভ্যাকসিন।
-
টক্সয়েড ভ্যাকসিন (Toxoid Vaccines): এই ভ্যাকসিনগুলো ব্যাকটেরিয়া দ্বারা উৎপাদিত টক্সিন ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। টক্সিনগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে শরীরে প্রবেশ করানো হয়, যা অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সাহায্য করে। উদাহরণ: টিটেনাস ও ডিফথেরিয়া ভ্যাকসিন।
-
সাবইউনিট, রিকম্বিনেন্ট, পলিস্যাকারাইড ও কনজুগেট ভ্যাকসিন (Subunit, Recombinant, Polysaccharide, and Conjugate Vaccines): এই ভ্যাকসিনগুলো রোগজীবাণুর একটি অংশ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়, যেমন প্রোটিন বা শর্করা। এগুলো নিরাপদ এবং এদের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কম। উদাহরণ: হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন ও হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (HPV) ভ্যাকসিন।
-
এমআরএনএ ভ্যাকসিন (mRNA Vaccines): এই ভ্যাকসিনগুলো নতুন প্রযুক্তিতে তৈরি করা হয়। এগুলোতে মেসেঞ্জার আরএনএ (mRNA) ব্যবহার করা হয়, যা শরীরে প্রোটিন তৈরি করতে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। উদাহরণ: কোভিড-১৯ এর কিছু ভ্যাকসিন।
অটোইমিউন রোগ (Autoimmune Disease)
কখনও কখনও আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভুল করে নিজের কোষকেই শত্রু ভেবে আক্রমণ করে বসে। এই অবস্থাকে অটোইমিউন রোগ (Autoimmune Disease) বলা হয়।
অটোইমিউন রোগে, অ্যান্টিবডিগুলো শরীরের সুস্থ কোষ এবং টিস্যুকে আক্রমণ করে, যার ফলে প্রদাহ (Inflammation), ব্যথা এবং টিস্যুর ক্ষতি হতে পারে।
অটোইমিউন রোগের উদাহরণ (Examples of Autoimmune Diseases):
-
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (Rheumatoid Arthritis): এই রোগে শরীরের জয়েন্টগুলোতে প্রদাহ হয়, যার ফলে ব্যথা এবং ফোলাভাব দেখা যায়।
-
সিস্টেমিক লুপাস এরিথেমাটোসাস (Systemic Lupus Erythematosus – SLE): এই রোগে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ, যেমন ত্বক, কিডনি, এবং মস্তিষ্ক আক্রান্ত হতে পারে।
-
মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (Multiple Sclerosis – MS): এই রোগে মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের স্নায়ুর চারপাশে থাকা মায়েলিন শীথ (Myelin Sheath) ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার ফলে স্নায়ু সংকেত বাধাগ্রস্ত হয়।
-
টাইপ ১ ডায়াবেটিস (Type 1 Diabetes): এই রোগে অগ্ন্যাশয় (Pancreas)-এর ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলো ধ্বংস হয়ে যায়।
-
সোরিয়াসিস (Psoriasis): এই রোগে ত্বকের কোষ খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়, যার ফলে ত্বকে লালচে এবং আঁশযুক্ত দাগ দেখা যায়।
কিছু সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর (Some Common Questions and Answers)
এখানে অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি নিয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো, যা আপনাদের আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে:
অ্যান্টিজেন কত প্রকার?
অ্যান্টিজেন বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে, যেমন বহিরাগত অ্যান্টিজেন, অন্তঃসত্ত্বা অ্যান্টিজেন, অটোঅ্যান্টিজেন, টিউমার অ্যান্টিজেন এবং অ্যালার্জেন।
অ্যান্টিবডি কোথায় থাকে?
অ্যান্টিবডি রক্ত, লসিকা (Lymph), এবং শরীরের অন্যান্য তরলে পাওয়া যায়। এছাড়াও, এটি মিউকাস মেমব্রেনেও (যেমন: নাক, মুখ, পরিপাকতন্ত্র) থাকে।
অ্যান্টিবডি কি প্রোটিন?
হ্যাঁ, অ্যান্টিবডি হলো এক প্রকার প্রোটিন, যা ইমিউনোগ্লোবিউলিন নামেও পরিচিত।
অ্যান্টিবডি কিভাবে কাজ করে?
অ্যান্টিবডি অ্যান্টিজেনের সাথে যুক্ত হয়ে তাদের নিষ্ক্রিয় করে দেয় অথবা শরীরের অন্যান্য রোগপ্রতিরোধক কোষগুলোকে সংকেত দেয়, যাতে তারা অ্যান্টিজেনটিকে ধ্বংস করে ফেলে।।
অ্যান্টিজেন presentation কি?
অ্যান্টিজেন presentation হলো একটি প্রক্রিয়া, যেখানে অ্যান্টিজেন-উপস্থাপক কোষ (Antigen-Presenting Cells বা APCs), যেমন ম্যাক্রোফেজ এবং ডেনড্রাইটিক কোষ, অ্যান্টিজেনকে টি-কোষের কাছে উপস্থাপন করে। এর মাধ্যমে টি-কোষগুলো সক্রিয় হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
অ্যান্টিবডি তৈরি করে কে?
অ্যান্টিবডি তৈরি করে বি-কোষ (B-cells) নামক এক ধরনের শ্বেত রক্ত কণিকা (White Blood Cells)।
অ্যান্টিবডি কমে গেলে কি হয়?
অ্যান্টিবডি কমে গেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়, ফলে সংক্রমণ এবং রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
IgG অ্যান্টিবডি কি?
IgG (ইমিউনোগ্লোবুলিন জি) হলো সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পাওয়া যাওয়া অ্যান্টিবডি, যা দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা দেয় এবং আগে হওয়া কোনো ইনফেকশন থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
তো এই ছিল অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি নিয়ে একটি সহজ আলোচনা। আশা করি, এবার আপনারা এই বিষয়গুলো ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন।
উপসংহার (Conclusion)
অ্যান্টিজেন এবং অ্যান্টিবডি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অ্যান্টিজেন হলো সেই বহিরাগত শত্রু, যা শরীরে প্রবেশ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সক্রিয় করে, আর অ্যান্টিবডি হলো আমাদের শরীরের নিজস্ব তৈরি করা সৈনিক, যা অ্যান্টিজেনকে খুঁজে বের করে ধ্বংস করে। ভ্যাকসিন আমাদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সাহায্য করে এবং অটোইমিউন রোগ হলো সেই অবস্থা, যখন আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভুল করে নিজের কোষকেই আক্রমণ করে বসে।
নিজের শরীরকে ভালোবাসুন, সুস্থ থাকুন! আর হ্যাঁ, এই বিষয়ে যদি আরও কিছু জানতে চান, তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। আমি আপনাদের জন্য আরও নতুন কিছু নিয়ে আসার চেষ্টা করব।