বৃষ্টিপাত কাকে বলে? মেঘ থেকে ঝরে পড়া জলের আসল রহস্য!
বৃষ্টি! এই শব্দটা শুনলেই মনটা কেমন যেন আনন্দে ভরে ওঠে, তাই না? বিশেষ করে যখন গ্রীষ্মের দাবদাহের পর এক পশলা বৃষ্টি নামে, তখন তো আর কথাই নেই! কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন, এই বৃষ্টিটা আসলে কী? কীভাবেই বা মেঘের ভেতর জল জমে, আর তারপর তা ফোঁটা ফোঁটা হয়ে আমাদের धरती তে নেমে আসে? আসুন, আজ আমরা বৃষ্টির পেছনের সেই গল্পটাই জেনে নেই!
বৃষ্টির সংজ্ঞা: সহজ ভাষায় বৃষ্টিপাত
বৃষ্টি হলো জলীয় বাষ্প থেকে তরল অবস্থায় পৃথিবীর বুকে নেমে আসা জলের কণা। মানে, সোজা ভাষায় বলতে গেলে, মেঘ যখন আর জল ধরে রাখতে পারে না, তখন সেই জল ফোঁটা ফোঁটা হয়ে নিচে পড়ে। এই জলের ফোঁটাগুলোই হলো বৃষ্টি।
বৃষ্টির প্রকারভেদ: কত রকমের বৃষ্টি হয় জানেন?
বৃষ্টি কিন্তু সবসময় একই রকম হয় না। কোনোটা ঝিরঝিরে, কোনোটা যেমন মুষলধারে। আবার কোনো কোনো বৃষ্টিতে বরফের কণাও থাকে। তাই বৃষ্টির প্রকারভেদ জানাটা বেশ মজার।
বৃষ্টি কত প্রকার?
বৃষ্টি মূলত চার প্রকার:
- পরিচলন বৃষ্টি (Convectional Rainfall)
- ফ্রন্টাল বৃষ্টি (Frontal Rainfall)
- শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টি (Orographic Rainfall)
- ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টি (Cyclonic Rainfall)
পরিচলন বৃষ্টি (Convectional Rainfall):
এই ধরনের বৃষ্টি সাধারণত গরমকালে বা উষ্ণ অঞ্চলে বেশি দেখা যায়। সূর্যের তাপে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হলে বাতাস হালকা হয়ে উপরের দিকে ওঠে। উপরে উঠার সময় সেই বাতাস ঠান্ডা হয় এবং জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে মেঘ তৈরি করে। এই মেঘ থেকেই বৃষ্টি হয়।
ফ্রন্টাল বৃষ্টি (Frontal Rainfall):
যখন উষ্ণ এবং শীতল বাতাস একে অপরের সাথে মিলিত হয়, তখন ফ্রন্টাল বৃষ্টি হয়। উষ্ণ বাতাস শীতল বাতাসের উপর দিয়ে উঠে যায়, ফলে জলীয় বাষ্প ঠান্ডা হয়ে বৃষ্টি রূপে ঝরে পড়ে।
শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টি (Orographic Rainfall):
পাহাড় বা পর্বত এলাকায় এই ধরনের বৃষ্টি বেশি দেখা যায়। জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস যখন পাহাড়ের ঢালে বাধা পায়, তখন সেটি উপরে উঠতে বাধ্য হয়। উপরে উঠার সময় ঠান্ডা হয়ে মেঘ তৈরি হয় এবং বৃষ্টি হয়। পাহাড়ের যে পাশে বাতাস প্রথমে ধাক্কা দেয়, সেখানে বেশি বৃষ্টি হয়।
ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টি (Cyclonic Rainfall):
ঘূর্ণবাতের কারণে যে বৃষ্টি হয়, তাকে ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টি বলে। ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়, যার ফলে आसपासের বাতাস तेजी এর সাথে ছুটে আসে এবং উপরে উঠে মেঘ তৈরি করে। এই মেঘ থেকে প্রচুর বৃষ্টি হয়, যা সাধারণত কয়েকদিন ধরে চলতে থাকে।
বৃষ্টির জলের উৎস: কোথা থেকে আসে এত জল?
বৃষ্টির জলের প্রধান উৎস হলো সমুদ্র, নদী, পুকুর, হ্রদ এবং অন্যান্য জলাশয়। সূর্যের তাপে এই জলাশয়গুলোর জল বাষ্প হয়ে উপরে উঠে যায়। এই বাষ্প ঠান্ডা হয়ে মেঘ তৈরি করে, আর সেই মেঘ থেকেই বৃষ্টি হয়।
বৃষ্টির জল কোথা থেকে আসে?
বৃষ্টির জল মূলত তিনটি উৎস থেকে আসে:
- সমুদ্র এবং মহাসাগর (Oceans and Seas)
- নদী এবং হ্রদ (Rivers and Lakes)
- উদ্ভিদ (Plants)
সমুদ্র এবং মহাসাগর (Oceans and Seas):
পৃথিবীর প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকা জল দ্বারা আবৃত, যার মধ্যে সমুদ্র এবং মহাসাগরের অবদান সবচেয়ে বেশি। সূর্যের তাপে সমুদ্রের জল বাষ্পীভূত হয়ে উপরে উঠে যায় এবং মেঘ তৈরি করে। এই মেঘ থেকেই পৃথিবীর অধিকাংশ বৃষ্টি হয়ে থাকে।
নদী এবং হ্রদ (Rivers and Lakes):
নদী এবং হ্রদের জলও সূর্যের তাপে বাষ্পীভূত হয় এবং মেঘ তৈরিতে সাহায্য করে। তবে সমুদ্রের তুলনায় এদের অবদান কিছুটা কম।
উদ্ভিদ (Plants):
গাছপালা সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাটি থেকে জল শোষণ করে এবং পাতার মাধ্যমে বাষ্প আকারে বাতাসে ছাড়ে। এই প্রক্রিয়াকে প্রস্বেদন (Transpiration) বলে। প্রস্বেদনের মাধ্যমে নির্গত জলীয় বাষ্পও মেঘ তৈরিতে সাহায্য করে।
বৃষ্টির পরিমাপ: কীভাবে মাপা হয় বৃষ্টির পরিমাণ?
বৃষ্টির পরিমাণ মাপা হয় রেইন গেজ (Rain Gauge) নামক একটি যন্ত্রের সাহায্যে। এই যন্ত্রটি একটি চোঙের মতো, যা একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে পড়া বৃষ্টির জল জমা করে। তারপর সেই জলের উচ্চতা মেপে বৃষ্টির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। বৃষ্টির পরিমাণ সাধারণত মিলিমিটারে মাপা হয়।
বৃষ্টির পরিমাপ কিভাবে করা হয় পদ্ধতি আলোচনা
বৃষ্টির পরিমাপ করার জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়:
- রেইন গেজ স্থাপন (Installation of Rain Gauge)
- নিয়মিত পর্যবেক্ষণ (Regular Observation)
- ডেটা সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ (Data Collection and Analysis)
রেইন গেজ স্থাপন (Installation of Rain Gauge):
রেইন গেজ এমন একটি স্থানে স্থাপন করতে হয়, যেখানে কোনো গাছপালা বা উঁচু বিল্ডিং নেই, যা বৃষ্টির জল সংগ্রহে বাধা দিতে পারে। এটি সাধারণত খোলা জায়গায় স্থাপন করা হয়, যাতে সরাসরি বৃষ্টির জল সংগ্রহ করা যায়।
নিয়মিত পর্যবেক্ষণ (Regular Observation):
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে রেইন গেজে জমা হওয়া জলের পরিমাণ মাপা হয়। এই সময় সাধারণত সকাল ৯টা অথবা স্থানীয় আবহাওয়া অফিসের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত হয়।
ডেটা সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ (Data Collection and Analysis):
সংগৃহীত ডেটা একটি রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করা হয়। এই ডেটা বিশ্লেষণ করে কোনো অঞ্চলের দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক ও বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ নির্ণয় করা যায়।
বৃষ্টির গুরুত্ব: কেন এত দরকারি এই বৃষ্টি?
বৃষ্টি আমাদের জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বৃষ্টি না হলে গাছপালা বাঁচবে না, ফসল ফলবে না, আর আমরা খাবার পাবো না। এছাড়াও, বৃষ্টির জল আমাদের পানীয় জলের উৎস হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
বৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা
বৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক আলোচনা করা হলো:
- কৃষিকাজে অপরিহার্য (Essential for Agriculture)
- পানীয় জলের উৎস (Source of Drinking Water)
- পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা (Maintaining Environmental Balance)
- বিদ্যুৎ উৎপাদন (Electricity Generation)
কৃষিকাজে অপরিহার্য (Essential for Agriculture):
বৃষ্টি কৃষিকাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ কৃষিকাজ বৃষ্টির জলের উপর নির্ভরশীল। ধান, গম, পাট, শাকসবজি সহ প্রায় সকল প্রকার ফসল উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত বৃষ্টি প্রয়োজন। সময়মতো বৃষ্টি না হলে খরা দেখা দিতে পারে, যা ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে।
পানীয় জলের উৎস (Source of Drinking Water):
বৃষ্টির জল আমাদের পানীয় জলের প্রধান উৎস। নদী, পুকুর, খাল, বিল সবকিছু বৃষ্টির জলে পরিপূর্ণ হয়। এই জল পরিশোধন করে আমরা পান করি এবং আমাদের দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করি।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা (Maintaining Environmental Balance):
বৃষ্টি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। খরা এবং উষ্ণতা কমিয়ে পরিবেশকে সতেজ রাখে। গাছপালা এবং জীবজন্তুর জীবনধারণের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে।
বিদ্যুৎ উৎপাদন (Electricity Generation):
নদীর জল ব্যবহার করে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। বৃষ্টির জল নদীর জলস্তর বৃদ্ধি করে, যা জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য অপরিহার্য।
বৃষ্টির প্রভাব: ভালো এবং খারাপ দুটো দিকই আছে
বৃষ্টি একদিকে যেমন আশীর্বাদ, তেমনই অন্যদিকে মাঝে মাঝে অভিশাপও হয়ে দাঁড়ায়। অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে বন্যা হয়, রাস্তাঘাট ডুবে যায়, ঘরবাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। আবার কম বৃষ্টি হলে খরা হয়, ফসল নষ্ট হয়, দেখা দেয় খাদ্য সংকট।
বৃষ্টির ভালো দিক
বৃষ্টি প্রকৃতির এক আশীর্বাদ। এর অসংখ্য ভালো দিক রয়েছে, যা আমাদের জীবন ও পরিবেশের জন্য খুবই জরুরি। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ভালো দিক আলোচনা করা হলো:
- কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি (Increased Agricultural Production)
- ভূগর্ভস্থ জলের স্তর বৃদ্ধি (Increased Groundwater Level)
- নদ-নদীর নাব্যতা রক্ষা (Maintaining Navigability of Rivers)
- পরিবেশের তাপমাত্রা হ্রাস (Decreased Environmental Temperature)
কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি (Increased Agricultural Production):
বৃষ্টি কৃষিকাজের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলে ফসল ভালো হয় এবং কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। আমাদের দেশের অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর, তাই সময়মতো বৃষ্টি হলে কৃষকরা উপকৃত হন এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।
ভূগর্ভস্থ জলের স্তর বৃদ্ধি (Increased Groundwater Level):
বৃষ্টির জল মাটির নিচে চুঁইয়ে ভূগর্ভস্থ জলের স্তর বৃদ্ধি করে। এই জল আমরা নলকূপ এবং কূপের মাধ্যমে ব্যবহার করি। গ্রীষ্মকালে যখন পুকুর ও নদীর জল শুকিয়ে যায়, তখন ভূগর্ভস্থ জলই আমাদের ভরসা।
নদ-নদীর নাব্যতা রক্ষা (Maintaining Navigability of Rivers):
বৃষ্টির জল নদ-নদীর নাব্যতা রক্ষা করে। বর্ষাকালে নদীর জল বৃদ্ধি পেলে নৌ চলাচল সহজ হয় এবং বাণিজ্য সুবিধা বাড়ে। এছাড়া, নদীর জল ব্যবহার করে সেচকার্য চালানো যায়, যা কৃষি উৎপাদনে সহায়ক।
পরিবেশের তাপমাত্রা হ্রাস (Decreased Environmental Temperature):
বৃষ্টির পর পরিবেশের তাপমাত্রা কমে যায় এবং চারদিকে শীতল অনুভূতি হয়। এটি মানুষের শরীর ও মনের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়া, বৃষ্টির জল ধুলাবালি দূর করে পরিবেশকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখে।
বৃষ্টির খারাপ দিক
বৃষ্টির খারাপ দিকও কিছু আছে। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য খারাপ দিক আলোচনা করা হলো:
- বন্যা (Flood)
- ভূমিধস (Landslide)
- রোগ ছড়ানো (Spreading Diseases)
- যাতায়াত সমস্যা (Transportation Problems)
বন্যা (Flood):
অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে নদীর জল বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করে এবং বন্যার সৃষ্টি হয়। বন্যার কারণে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ফসলের জমি ডুবে যায়, যা ব্যাপক ক্ষতি করে।
ভূমিধস (Landslide):
পাহাড়ি অঞ্চলে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে ভূমিধস হতে পারে। ভূমিধসের ফলে ঘরবাড়ি এবং রাস্তাঘাট ভেঙে যায় এবং অনেক মানুষ আহত বা নিহত হন।
রোগ ছড়ানো (Spreading Diseases):
বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন ধরনের রোগ ছড়াতে পারে। বন্যার জল দূষিত হয়ে কলেরা, টাইফয়েড, ডায়েরিয়া ইত্যাদি রোগের বিস্তার ঘটায়। এছাড়া, বৃষ্টির জমা জলে মশা ডিম পাড়ে, যা ডেঙ্গু এবং ম্যালেরিয়া রোগের কারণ হতে পারে।
যাতায়াত সমস্যা (Transportation Problems):
বৃষ্টির কারণে রাস্তাঘাটে জল জমে যায় এবং যান চলাচল ব্যাহত হয়। অনেক সময় ট্রেন ও ফ্লাইট বাতিল করতে হয়, যার ফলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
বৃষ্টি নিয়ে কিছু মজার তথ্য
- পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয় ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে।
- বৃষ্টির ফোঁটার গতি ঘণ্টায় প্রায় ৩২ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
- বৃষ্টির গন্ধকে পেট্রিকোর (Petrichor) বলা হয়।
বৃষ্টির পূর্বাভাস: কী বলছে আবহাওয়া অফিস?
বৃষ্টি কখন হবে, সেটা জানার জন্য আমরা সাধারণত আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসের দিকে তাকিয়ে থাকি। আবহাওয়া অফিস বিভিন্ন সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে বৃষ্টির সম্ভাবনা সম্পর্কে ধারণা দেয়।
বৃষ্টির পূর্বাভাস কিভাবে দেয়?
আবহাওয়া অফিস বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি এবং মডেল ব্যবহার করে বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়ে থাকে। নিচে কয়েকটি প্রধান পদ্ধতি আলোচনা করা হলো:
- স্যাটেলাইট চিত্র (Satellite Imagery)
- রাডার (Radar)
- কম্পিউটার মডেল (Computer Models)
- আবহাওয়া স্টেশন (Weather Stations)
স্যাটেলাইট চিত্র (Satellite Imagery):
আবহাওয়া স্যাটেলাইট মেঘের ছবি তুলে আবহাওয়া অফিসে পাঠায়। এই ছবি দেখে আবহাওয়াবিদরা মেঘের গতিবিধি এবং ঘনত্ব পর্যবেক্ষণ করে বৃষ্টির সম্ভাবনা সম্পর্কে ধারণা পান।
রাডার (Radar):
রাডার হলো এমন একটি যন্ত্র, যা বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে মেঘ এবং বৃষ্টির কণা সনাক্ত করতে পারে। রাডারের মাধ্যমে মেঘের অবস্থান, গতি এবং তীব্রতা সম্পর্কে জানা যায়, যা বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কম্পিউটার মডেল (Computer Models):
আবহাওয়া অফিস অত্যাধুনিক কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়। এই মডেলগুলো বিভিন্ন ডেটা, যেমন তাপমাত্রা, বাতাস, আর্দ্রতা ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে বৃষ্টির সম্ভাবনা নির্ণয় করে।
আবহাওয়া স্টেশন (Weather Stations):
দেশের বিভিন্ন স্থানে আবহাওয়া স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। এই স্টেশনগুলো থেকে নিয়মিত আবহাওয়ার তথ্য সংগ্রহ করা হয়, যা পূর্বাভাসের কাজে ব্যবহৃত হয়।
বৃষ্টির বিকল্প নাম: আর কী নামে ডাকা যায় বৃষ্টিকে?
বৃষ্টিকে আমরা বিভিন্ন নামে ডেকে থাকি, যেমন বর্ষা, বাদল, শাওন ইত্যাদি। একেক অঞ্চলে বৃষ্টির একেক নাম প্রচলিত আছে।
বৃষ্টির কিছু সুন্দর প্রতিশব্দ
বৃষ্টির কিছু সুন্দর প্রতিশব্দ নিচে দেওয়া হলো:
- বর্ষা
- বাদল
- শাওন
- বৃষ্টিধারা
- বর্ষণ
- মেঘাঞ্জন
- বরখা
- প্রাচুর্য
বৃষ্টির গান: বৃষ্টির সুরে মন মাতানো কিছু গান
বাংলা সাহিত্যে বৃষ্টির গান একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে আধুনিক কালের অনেক কবি-সাহিত্যিক বৃষ্টির সুরে মন মাতানো গান লিখেছেন।
বৃষ্টি বিষয়ক কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ):
আচ্ছা, বৃষ্টি নিয়ে তো অনেক কথা হলো। এবার কিছু সাধারণ প্রশ্ন এবং তার উত্তর জেনে নেওয়া যাক, যা হয়তো আপনার মনেও উঁকি দেয়!
- বৃষ্টি কেন হয়?
- এসিড বৃষ্টি কি?
- বৃষ্টির জলের PH মাত্রা কত?
- বৃষ্টির জলের রাসায়নিক নাম কি?
- বৃষ্টির সময় বিদ্যুৎ চমকায় কেন?
বৃষ্টি কেন হয়?
বৃষ্টি হওয়ার মূল কারণ হলো জলীয় বাষ্পের ঘনীভবন। সূর্যের তাপে নদ-নদী, সাগর- মহাসাগর থেকে জল বাষ্পীভূত হয়ে উপরে ওঠে। উপরে ঠান্ডা বাতাস সংস্পর্শে এসে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ছোট ছোট জলকণায় পরিণত হয়। এই জলকণাগুলো একত্রিত হয়ে মেঘ তৈরি করে। যখন মেঘের জলকণাগুলো আকারে বড় হয়ে যায় এবং বাতাস সেগুলি ধরে রাখতে পারে না, তখন সেগুলি বৃষ্টির রূপে ঝরে পড়ে।
এসিড বৃষ্টি কি?
যখন বৃষ্টির জলের সাথে বিভিন্ন ক্ষতিকর গ্যাস, যেমন সালফার ডাই অক্সাইড (Sulfur Dioxide) এবং নাইট্রোজেন অক্সাইড (Nitrogen Oxide) মিশে যায়, তখন তাকে অ্যাসিড বৃষ্টি বলে। এই গ্যাসগুলো কলকারখানা এবং যানবাহনের ধোঁয়া থেকে নির্গত হয়। অ্যাসিড বৃষ্টি পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর, কারণ এটি মাটি, জল এবং উদ্ভিদের ক্ষতি করে।
বৃষ্টির জলের PH মাত্রা কত?
স্বাভাবিক বৃষ্টির জলের PH মাত্রা ৫.৬ এর কাছাকাছি থাকে। PH মাত্রা ৭ এর কম হলে সেটি অ্যাসিডিক হিসেবে ধরা হয়। অ্যাসিড বৃষ্টির ক্ষেত্রে PH মাত্রা আরও কম হতে পারে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
বৃষ্টির জলের রাসায়নিক নাম কি?
বৃষ্টির জলের রাসায়নিক নাম হল ডাইহাইড্রোজেন মনোক্সাইড (Dihydrogen Monoxide), তবে সাধারণভাবে একে জল (Water) বলা হয়। জলের রাসায়নিক সংকেত হলো H₂O, অর্থাৎ দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু এবং একটি অক্সিজেন পরমাণু মিলে একটি জলের অণু তৈরি হয়।
বৃষ্টির সময় বিদ্যুৎ চমকায় কেন?
বৃষ্টির সময় মেঘে মেঘে ঘর্ষণের ফলে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। মেঘের মধ্যে থাকা বরফের কণা এবং জলীয় বাষ্পের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে স্ট্যাটিক ইলেক্ট্রিসিটি (Static Electricity) তৈরি হয়। এই ইলেক্ট্রিসিটি যখন খুব বেশি পরিমাণে জমা হয়, তখন তা আলোর ঝলকানির মাধ্যমে মেঘ থেকে धरती তে নেমে আসে। একে আমরা বাজ পড়া বা বিদ্যুৎ চমকানো বলি।
বৃষ্টি: প্রকৃতির এক অপূর্ব দান
বৃষ্টি শুধু জল নয়, এটা প্রকৃতির এক অপূর্ব দান। এর মাধ্যমে প্রকৃতি নিজেকে পরিষ্কার করে, পরিবেশকে সতেজ করে তোলে, আর আমাদের মনকে শান্তি এনে দেয়। তাই বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটাকে ভালোবাসুন, প্রকৃতির এই অমূল্য দানকে সম্মান করুন।
তাহলে, বৃষ্টি নিয়ে এত কিছু জানার পর আপনার কেমন লাগছে? বৃষ্টির দিনে গরম চা আর খিচুড়ি খেতে খেতে এই ব্লগটি কেমন লাগলো, জানাতে ভুলবেন না! আর হ্যাঁ, বৃষ্টি নিয়ে আপনার কোনো মজার অভিজ্ঞতা থাকলে, সেটাও আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন!