আচ্ছালামু আলাইকুম, কেমন আছেন সবাই? আজকের লেখাটি একটু অন্যরকম। আমরা সবাই তো কম বেশি ব্যাকরণ পড়েছি, কিন্তু অনেক সময় কিছু জিনিস গুলিয়ে যায়, তাই না? বিশেষ করে বিশেষ্য পদ বা noun নিয়ে অনেকের মনে কিছু প্রশ্ন থেকেই যায়। তাহলে চলুন, দেরি না করে আজকের আলোচনা শুরু করা যাক – “Common Noun কাকে বলে এবং এর কিছু উদাহরণ”।
কাজের খাতিরে, পড়াশোনার জন্য অথবা এমনিতেই বাংলা ব্যাকরণের খুঁটিনাটি জানাটা বেশ দরকারি। তাই, সহজ ভাষায় আমরা আজকে Common Noun বা জাতিবাচক বিশেষ্য নিয়ে আলোচনা করব। আশা করি, এই লেখাটি পড়ার পর আপনার মনে আর কোনো প্রশ্ন থাকবে না।
Common Noun (জাতিবাচক বিশেষ্য) কী? উদাহরণসহ বুঝুন
ব্যাকরণের জগতে বিশেষ্য পদের গুরুত্ব অনেক। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাগ হলো Common Noun বা জাতিবাচক বিশেষ্য। এই বিশেষ্য পদ কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি, বস্তু বা স্থানকে না বুঝিয়ে সেই শ্রেণীর সকলকে বোঝায়। ব্যাপারটা একটু কঠিন লাগছে, তাই তো? আসুন, সহজ করে কয়েকটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি বুঝে নেওয়া যাক।
জাতিবাচক বিশেষ্য হলো সেই শব্দ, যা একই ধরণের সকল ব্যক্তি, বস্তু বা প্রাণীকে বোঝায়। এখানে কোনো নির্দিষ্ট নাম ব্যবহার করা হয় না, বরং একটি সাধারণ শ্রেণীকে নির্দেশ করা হয়।
জাতিবাচক বিশেষ্যের কয়েকটি উদাহরণ
- মানুষ: “মানুষ” শব্দটি দিয়ে পৃথিবীর সকল মানুষকে বোঝানো হয়। এখানে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়নি।
- নদী: “নদী” শব্দটি যেকোনো নদীকে বোঝাতে পারে – পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, যেকোনো কিছুই হতে পারে।
- বই: “বই” শব্দটি যেকোনো ধরনের বইকে বোঝায় – গল্প, কবিতা, উপন্যাস, বিজ্ঞান, ইত্যাদি।
- শহর: “শহর” শব্দটি দিয়ে ঢাকা, কলকাতা, লন্ডন, নিউইয়র্ক – যেকোনো শহরকেই বোঝানো যেতে পারে।
- পশু: “পশু” শব্দটি দিয়ে গরু, ছাগল, কুকুর, বিড়াল – যেকোনো প্রাণীকেই বোঝানো যায়।
আশা করি, উদাহরণগুলো থেকে জাতিবাচক বিশেষ্য কী, তা কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছেন। এবার আমরা জাতিবাচক বিশেষ্যের আরও কিছু বৈশিষ্ট্য এবং ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করব।
জাতিবাচক বিশেষ্যের বৈশিষ্ট্য
জাতিবাচক বিশেষ্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি কোনো নির্দিষ্ট সত্তাকে না বুঝিয়ে সেই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত সকলকে বোঝায়। এর আরও কিছু বৈশিষ্ট্য নিচে উল্লেখ করা হলো:
- শ্রেণী বা জাতিকে নির্দেশ করে: জাতিবাচক বিশেষ্য একটি বিশেষ শ্রেণী বা জাতিকে বোঝায়। যেমন, “শিক্ষক” শব্দটি সকল শিক্ষককে বোঝায়।
- সাধারণ নাম: এটি কোনো সাধারণ নাম, যা বিশেষ কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে না বুঝিয়ে সকলের জন্য প্রযোজ্য।
- গণনাযোগ্য: জাতিবাচক বিশেষ্য সাধারণত গণনাযোগ্য হয়। যেমন, আপনি বলতে পারেন “পাঁচটি বই” বা “দশজন মানুষ”।
- রূপ পরিবর্তন: এই বিশেষ্য পদের রূপ পরিবর্তন হতে পারে, যেমন – একবচন থেকে বহুবচন। উদাহরণস্বরূপ, “নদী” থেকে “নদীগুলো”।
জাতিবাচক বিশেষ্যের ব্যবহার
জাতিবাচক বিশেষ্য বাক্যে বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হতে পারে। নিচে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো:
- কর্তা হিসেবে: “ছাত্ররা” পড়াশোনা করছে।
- কর্ম হিসেবে: শিক্ষক “ছাত্রদের” পড়াচ্ছেন।
- করণ হিসেবে: “কলম” দিয়ে লেখা হয়।
- সম্বন্ধ হিসেবে: “দেশের” মানুষ ভালো আছে।
- অधिकरण হিসেবে: “বনে” বাঘ থাকে।
Common Noun এবং Proper Noun-এর মধ্যে পার্থক্য
অনেকেই জাতিবাচক বিশেষ্য (Common Noun) এবং নামবাচক বিশেষ্য (Proper Noun)-এর মধ্যে গুলিয়ে ফেলেন। এদের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। চলুন, সেই পার্থক্যগুলো দেখে নেওয়া যাক:
বৈশিষ্ট্য | জাতিবাচক বিশেষ্য (Common Noun) | নামবাচক বিশেষ্য (Proper Noun) |
---|---|---|
সংজ্ঞা | কোনো শ্রেণির সকলকে বোঝায় | কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি, বস্তু বা স্থানকে বোঝায় |
উদাহরণ | মানুষ, নদী, শহর, বই | ঢাকা, পদ্মা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কুতুব মিনার |
বড় হাতের অক্ষর (Capital Letter) | সাধারণত ছোট অক্ষর দিয়ে শুরু হয় | সবসময় বড় হাতের অক্ষর দিয়ে শুরু হয় |
ব্যাপকতা | ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয় | সীমিত অর্থে ব্যবহৃত হয় |
নামবাচক বিশেষ্য সবসময় নির্দিষ্ট এবং স্বতন্ত্র। “মানুষ” একটি জাতিবাচক বিশেষ্য, কিন্তু “শেখ হাসিনা” একটি নামবাচক বিশেষ্য। কারণ, “শেখ হাসিনা” একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে বোঝাচ্ছে।”
জাতিবাচক বিশেষ্যের তালিকা
এখানে কিছু সাধারণ জাতিবাচক বিশেষ্যের তালিকা দেওয়া হলো:
- পিতা, মাতা, ভাই, বোন
- শিক্ষক, ডাক্তার, প্রকৌশলী
- দেশ, গ্রাম, শহর, বন্দর
- নদী, পাহাড়, সমুদ্র, বন
- বই, খাতা, কলম, টেবিল, চেয়ার
- পাখি, মাছ, পশু, গাছ
এই তালিকাটি কেবল কয়েকটি উদাহরণ। এর বাইরেও অসংখ্য জাতিবাচক বিশেষ্য রয়েছে।
জাতিবাচক বিশেষ্য চেনার সহজ উপায়
জাতিবাচক বিশেষ্য চেনা খুব কঠিন নয়। কয়েকটি বিষয় মনে রাখলেই আপনি সহজেই এই বিশেষ্য পদটি চিনতে পারবেন:
- শব্দটি কোনো বিশেষ ব্যক্তি, বস্তু বা স্থানকে না বুঝিয়ে যদি সেই শ্রেণীর সকলকে বোঝায়, তাহলে সেটি জাতিবাচক বিশেষ্য।
- শব্দটি দিয়ে যদি কোনো সাধারণ ধারণা বা শ্রেণী তৈরি হয়, তাহলে সেটি জাতিবাচক বিশেষ্য।
- এই বিশেষ্য পদ সাধারণত গণনাযোগ্য হয়।
দৈনন্দিন জীবনে জাতিবাচক বিশেষ্যের ব্যবহার
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে জাতিবাচক বিশেষ্যের ব্যবহার অনেক বেশি। আমরা প্রায় প্রতি মুহূর্তে এই বিশেষ্য পদ ব্যবহার করে থাকি। নিচে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো:
- “আমি একটি “বই” পড়ছি।” – এখানে “বই” শব্দটি একটি জাতিবাচক বিশেষ্য।
- “আমাদের “দেশ” অনেক সুন্দর।” – এখানে “দেশ” শব্দটি একটি জাতিবাচক বিশেষ্য।
- “আমার “বাবা” একজন শিক্ষক।” – এখানে “বাবা” শব্দটি একটি জাতিবাচক বিশেষ্য।
- “শহরে” অনেক গাড়ি।” – এখানে “শহরে” শব্দটি একটি জাতিবাচক বিশেষ্য।
লক্ষ্য করুন, এই উদাহরণগুলোতে কোনো নির্দিষ্ট বই, দেশ বা বাবার কথা বলা হয়নি। বরং, সাধারণভাবে বই, দেশ বা বাবার কথা বলা হয়েছে।
কিছু ব্যতিক্রমী উদাহরণ
কিছু কিছু ক্ষেত্রে জাতিবাচক বিশেষ্য চেনা একটু কঠিন হতে পারে। নিচে কয়েকটি ব্যতিক্রমী উদাহরণ দেওয়া হলো, যা আপনাকে বিষয়টি আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে:
- “পৃথিবী”: “পৃথিবী” শব্দটি আপাতদৃষ্টিতে একটি নামবাচক বিশেষ্য মনে হতে পারে, কিন্তু এটি আসলে একটি জাতিবাচক বিশেষ্য। কারণ, “পৃথিবী” শব্দটি দিয়ে গ্রহের শ্রেণীকে বোঝানো হয়।
- “সরকার”: “সরকার” শব্দটি কোনো নির্দিষ্ট সরকারকে না বুঝিয়ে সরকারের শ্রেণীকে বোঝায়। তাই, এটি একটি জাতিবাচক বিশেষ্য।
- “সেনাবাহিনী”: “সেনাবাহিনী” শব্দটি কোনো নির্দিষ্ট দেশের সেনাবাহিনীকে না বুঝিয়ে সেনাবাহিনীর শ্রেণীকে বোঝায়। তাই, এটিও একটি জাতিবাচক বিশেষ্য।
Common Noun নিয়ে কিছু সাধারণ ভুল ধারণা
জাতিবাচক বিশেষ্য নিয়ে অনেকের মনে কিছু ভুল ধারণা থাকতে পারে। নিচে কয়েকটি সাধারণ ভুল ধারণা এবং তার সঠিক ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:
-
ভুল ধারণা: জাতিবাচক বিশেষ্য সবসময় ছোট হাতের অক্ষর দিয়ে শুরু হয়।
- সঠিক ব্যাখ্যা: জাতিবাচক বিশেষ্য বাক্যের শুরুতে থাকলে বড় হাতের অক্ষর দিয়ে শুরু হতে পারে, কিন্তু সাধারণভাবে এটি ছোট হাতের অক্ষর দিয়ে শুরু হয়। যেমন, “মানুষ মরণশীল।” এখানে “মানুষ” শব্দটি বাক্যের শুরুতে থাকার কারণে বড় হাতের অক্ষর দিয়ে শুরু হয়েছে।
-
ভুল ধারণা: জাতিবাচক বিশেষ্য শুধুমাত্র বস্তুবাচক হয়।
- সঠিক ব্যাখ্যা: জাতিবাচক বিশেষ্য ব্যক্তি, বস্তু, স্থান – সবকিছুই হতে পারে। যেমন, “শিক্ষক”, “নদী”, “শহর” – এগুলো সবই জাতিবাচক বিশেষ্য।
Common Noun এর প্রকারভেদ
জাতিবাচক বিশেষ্যকে আরও বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। এই প্রকারভেদগুলো আমাদের ব্যাকরণ বুঝতে আরও সাহায্য করে। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকারভেদ আলোচনা করা হলো:
১. বস্তুবাচক জাতিবাচক বিশেষ্য (Material Common Noun ):
যে জাতিবাচক বিশেষ্য কোনো বস্তুকে বোঝায় এবং যা গণনা করা যায় না, তাকে বস্তুবাচক জাতিবাচক বিশেষ্য বলে।
- উদাহরণ: চাল, ডাল, তেল, লবণ, পানি, চিনি ইত্যাদি।
২. সমষ্টিবাচক জাতিবাচক বিশেষ্য (Collective Common Noun ):
যে জাতিবাচক বিশেষ্য কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর সমষ্টিকে বোঝায়, তাকে সমষ্টিবাচক জাতিবাচক বিশেষ্য বলে।
- উদাহরণ: দল, সমিতি, কমিটি, পরিবার, পঞ্চায়েত, জনতা, ক্লাস ইত্যাদি।
৩. গুণবাচক জাতিবাচক বিশেষ্য (Abstract Common Noun ):
যে জাতিবাচক বিশেষ্য কোনো গুণ, অবস্থা বা ধারণাকে বোঝায়, তাকে গুণবাচক জাতিবাচক বিশেষ্য বলে।
- উদাহরণ: শৈশব, তারুণ্য, যৌবন, বার্ধক্য, সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বেদনা, দয়া, মায়া, মমতা, ভালোবাসা ইত্যাদি।”
জাতিবাচক বিশেষ্য শেখার কিছু টিপস
জাতিবাচক বিশেষ্য ভালোভাবে শেখার জন্য আপনি কিছু সহজ টিপস অনুসরণ করতে পারেন:
- বেশি করে উদাহরণ পড়ুন এবং বোঝার চেষ্টা করুন।
- বিভিন্ন ধরনের বাক্য তৈরি করে জাতিবাচক বিশেষ্য ব্যবহার করুন।
- ব্যাকরণের বই থেকে জাতিবাচক বিশেষ্যের সংজ্ঞা এবং উদাহরণগুলো ভালোভাবে মুখস্থ করুন।
- বন্ধুদের সাথে আলোচনা করে নিজের ধারণা স্পষ্ট করুন।
- অনলাইনে জাতিবাচক বিশেষ্যের উপর কুইজ এবং অনুশীলন করতে পারেন।
Common Noun নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ)
এখানে জাতিবাচক বিশেষ্য নিয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্ন এবং তার উত্তর দেওয়া হলো:
-
প্রশ্ন: জাতিবাচক বিশেষ্য এবং বিশেষণের মধ্যে পার্থক্য কী?
- উত্তর: জাতিবাচক বিশেষ্য একটি বিশেষ্য পদ, যা কোনো শ্রেণীর সকলকে বোঝায়। বিশেষণ হলো সেই পদ, যা বিশেষ্য পদের গুণাগুণ বর্ণনা করে। যেমন, “ভালো ছাত্র” – এখানে “ছাত্র” হলো জাতিবাচক বিশেষ্য এবং “ভালো” হলো বিশেষণ।
-
প্রশ্ন: জাতিবাচক বিশেষ্য কি সবসময় একবচন হয়?
- উত্তর: না, জাতিবাচক বিশেষ্য একবচন এবং বহুবচন উভয়ই হতে পারে। যেমন, “ছেলে” (একবচন) এবং “ছেলেগুলো” (বহুবচন)।
-
প্রশ্ন: Common Noun এর বিপরীত কি Proper Noun?
- উত্তর: হ্যাঁ, Common Noun এর বিপরীত হচ্ছে Proper Noun।
শেষ কথা
আশা করি, এই বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে জাতিবাচক বিশেষ্য (Common Noun) সম্পর্কে আপনার ধারণা স্পষ্ট হয়েছে। ব্যাকরণের অন্যান্য বিষয়গুলোও ভালোভাবে জানার জন্য নিয়মিত চর্চা করুন। ব্যাকরণ ভীতি দূর করতে হলে, বিষয়গুলো সহজভাবে বোঝার চেষ্টা করতে হবে।
যদি এই লেখাটি আপনার ভালো লাগে, তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।