আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীর ভূমিকা“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীর ভূমিকা
ভূমিকা : আমাদের সমাজের অর্ধাংশ হলো নারী। তাই নারীকে বাদ দিয়ে কোনো উন্নয়ন সম্ভব নয়। সভ্যতার বিকাশের ধারাবাহিকতায় বর্তমানে নারীরা শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-বুদ্ধি, সৃজনশীলতায় পুরুষের পাশাপাশি অগ্রসর হয়ে চলছে। জাতীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে নারীরা অংশগ্রহণ করছে এবং দায়িত্ব পালন করছে। তাই জাতীয় জীবনের উন্নয়নে নারীর ভূমিকা কোনোভাবেই পুরুষের চেয়ে কম নয়। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ এবং তার অবদান পুরুষকে ছাপিয়ে গিয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে নারী ।
বিশ্ব প্রেক্ষাপট ও নারী : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক সমাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই নারী উৎপাদন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত । কোনো বিশেষ জাতি বা সমাজ নয়, গোটা বিশ্বের উন্নয়নের জন্যই উৎপাদন প্রক্রিয়ার সাথে নারীর সম্পৃক্ততার বিষয়টি বিবেচনায় আনতে হবে। এক্ষেত্রে নারীর মৌলিক অধিকার লাভের বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে সর্বাগ্রে। ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং ১৯৭৫-১৯৮৫ সালকে বিশ্ব নারী দশক হিসেবে ঘোষণা দেয় । বিশ্ব নারী দশক পালনের উদ্দেশ্য ছিল নারীর উন্নয়ন, পরিবার ও সমাজে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতা ও মর্যাদা বৃদ্ধি ।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারী : আমাদের দেশে প্রায় ১৬ কোটি মানুষের বাস। এর প্রায় অর্ধেকের মতো নারী । কিন্তু বিভিন্ন সামাজিক কারণে এদেশে নারীর প্রতি বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়। এ বৈষম্য মানবাধিকার এবং যেকোনো মৌলিক স্বাধীনতার ক্ষেত্রে নারীর স্বীকৃতি বা প্রয়োগকে অকার্যকর করে। বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে। সংবিধানের ২৭, ২৮ (১), ২৮ (২), ২৮(৩), ২৮ (৪), ২৯ (১), ২৯ (২), ৬৫ (৩) ধারায় নারীর বিভিন্ন অধিকারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ১৯৭২ সালে গঠন করা হয় নারী পুনর্বাসন বোর্ড। মুক্তিযুদ্ধে যেসব নারী অবদান রেখেছে ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের পুনর্বাসন ও ক্ষমতায়নই এ হয় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় বোর্ডের লক্ষ্য। ১৯৭৮ সালে গঠন করা হয় মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীসমাজের ভূমিকা : একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারী-পুরুষ উভয়ের অংশগ্রহণই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রভৃতি ক্ষেত্রে নারীরা বিশেষ অবদান রাখছে। অর্থনীতির দিকে লক্ষ করলে দেখা যায় যে, এদেশের অর্থনীতিতে নারীর যথেষ্ট অবদান রয়েছে। আমাদের কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর আদমশুমারি ও গৃহগণনা ২০১১-এর ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি প্রকাশিত আর্থসামাজিক ও জনমিতি প্রতিবেদন অনুযায়ী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ গত সাত বছরে দ্বিগুণ হয়ে ৯.৮ শতাংশে পৌঁছেছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১০ সালে শ্রমশক্তি জরিপ বলছে, গৃহস্থালি কর্মকাণ্ড ছাড়া বর্তমানে দেশে ১ কোটি ৬২ লাখ নারী কর্মক্ষেত্রে রয়েছে। নিচে আমাদের অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
কৃষিক্ষেত্রে : বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এ দেশের অর্থনীতি কৃষির ওপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে। কৃষিক্ষেত্রে নারীর অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বামী-সন্তানের কৃষিকাজে সমতালে সাহায্য করে যাচ্ছে গ্রামবাংলার কৃষকবধূরা। ফসল উৎপাদন প্রক্রিয়ার জমিতে শাকসবজি চাষ করে তারা পরিবারের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা পালন করছে। সাথে পুরুষ বেশি জড়িত। কিন্তু প্রক্রিয়াজাতকরণের বিশাল অংশটি নারীই সম্পাদন করে। তাছাড়া বাড়ির আশেপাশে পতিত
পোশাক শিল্পে নারী : বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সবচেয়ে বড় খাত হলো পোশাক শিল্প । বিদেশে পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রতি বছর অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। এই পোশাক শিল্পের প্রধান চালিকাশক্তি হলো নারী। ভাগই হলো নারী শ্রমিক। বর্তমানে পোশাক শিল্পে প্রায় ৩০ লাখ শ্রমিক কাজ করে যার শতকরা ৮৫ ভাগই হলো নারী । উৎপাদন শাখায় প্রায় শতকরা ৯০
ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পে নারী : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের আরও গুরুত্বপূর্ণ একটি শাখা হলো ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প। ক্ষুদ্র ও তৈরি করছে নারীরা। কুটিরশিল্পের মধ্যে রয়েছে তাঁতশিল্প, কারুশিল্প, বয়নশিল্প প্রভৃতি। তাঁতশিল্পে নারীরাই প্রধান ভূমিকা পালন করে। নারীরা ঘরে বসে তৈরি করে বাঁশ-বেতের বিভিন্ন আসবাব ও খেলনা। এছাড়া নকশিকাঁথা, শীতলপাটি প্রভৃতি ঐতিহ্যবাহী জিনিসগুলোও
ব্যবসায়ক্ষেত্রে : আমাদের দেশের নারীরা চাকরির পাশাপাশি ব্যবসায়ের সাথেও নিজেদের যুক্ত করছে। ইতোমধ্যে অনেক নারীই সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ৩৫ শতাংশই নারী উদ্যোক্তা।
চা-শিল্পে : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হলো চা-শিল্প। বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে চা উৎপন্ন হয় এবং চা থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয় । বাংলাদেশের চা-শিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিকদের অধিকাংশই হলো নারী ।
চিকিৎসাক্ষেত্রে : বাংলাদেশের অনেক নারীই এখন চিকিৎসা পেশায় আসছে। তাদের পছন্দের তালিকায় প্রথম অবস্থানেই রয়েছে চিকিৎসক পেশা। চিকিৎসা পেশায় নারীর অংশগ্রহণে একদিকে যেমন দেশীয় অর্থনীতিতে নতুন সূচক যুক্ত হয়েছে, অন্যদিকে চিকিৎসাক্ষেত্রও অনেক উন্নত হয়েছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে : শিক্ষাক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের বিষয়টি আমাদের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আজ তারা শিক্ষিত হয়ে শিক্ষকতা পেশাকে গ্রহণ করছে। প্রতি বছরই বিপুলসংখ্যক নারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতার সাথে যুক্ত হয়। এছাড়া মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশায় নারীরা বেশ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই অংশগ্রহণ করছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং শিক্ষা উভয়ক্ষেত্রেই নারীর এ ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ।
প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে : প্রবাসী আয় বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সুদৃঢ় করেছে এবং অর্থনীতিতে যোগ করেছে এক নতুন মাত্রা। আমাদের দেশের অনেক নারী দেশের বাইরে কাজ করে। বর্তমানে দুই লাখেরও বেশি নারী শ্রমিক বিদেশে কাজ করছে। সরকারের হিসাব অনুযায়ী মোট অভিবাসী শ্রমিকের ১৩ শতাংশেরও বেশি নারী। নারী শ্রমিকরা আয়ের ৭০ শতাংশেরও বেশি দেশে পাঠায়।
অন্যান্য : এসব ক্ষেত্র ছাড়াও হিমায়িত চিংড়ি, চামড়া প্রভৃতি পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে নারী সরাসরি জড়িত। এসব শিল্পের প্রধান কাজগুলো করে নারী।
ফলাফল : বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ একদিকে যেমন দেশীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে অন্যদিকে তেমনি নারীকেও সাবলম্বী করে গড়ে তুলেছে। আমাদের দেশের অনেক নারীই এখন পুরুষের আয়ের ওপর নির্ভরশীল নয় । তাই অর্থনীতিতে নারীর ভূমিকা কেবল অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, এর ফলাফল আরও সুদূরপ্রসারী ।
অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীসমাজের ভূমিকা বৃদ্ধি করার উপায় : নারীর অংশগ্রহণ ব্যতীত আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন যে কখনোই সম্ভব নয় তা আমরা উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে খুব সহজেই অনুধাবন করতে পারি। তাই এ ক্ষেত্রে নারীর ভূমিকাকে বাড়িয়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত উপায়সমূহ অবলম্বন করা যেতে পারে—
১. নারীসমাজকে শিক্ষিত করে তুলতে হবে এবং কুসংস্কারমুক্ত করতে হবে।
২. ধর্মীয় গোঁড়ামি থেকে মুক্ত করতে হবে।
৩. কর্মমুখী শিক্ষা দিয়ে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে ।
৪. অর্থনৈতিক উন্নয়নমূলক প্রতিটি শাখায় উৎপাদনকার্যে নিয়োগ করতে হবে ।
৫. সঠিকভাবে নিরাপত্তা দিতে হবে।
৬. শ্রমের সঠিক মূল্য দিতে হবে।
উপসংহার : কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সে দেশের প্রতিটি নাগরিকের অংশগ্রহণ একান্ত প্রয়োজন। সবার মিলিত শক্তিই দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে। আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই হলো নারী। তাই দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে নারীর অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের নারীরা এখন অতীতের তুলনায় নানামুখী কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করছে। ফলে আমাদের অর্থনীতি অনেকাংশে সমৃদ্ধ হয়েছে। এ দেশের অর্থনীতি সেদিনই পুরোপুরি সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে যেদিন নারী-পুরুষ সমানতালে দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাবে। তাই নারীদের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি তাদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশের ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করছি আমাদের এই পোস্ট থেকে রচনা যেটি তুমি চাচ্ছিলে সেটি পেয়ে গিয়েছ। যদি তুমি আমাদেরকে কোন কিছু জানতে চাও বা এই রচনা নিয়ে যদি তোমার কোনো মতামত থাকে, তাহলে সেটি আমাদের কমেন্টে জানাতে পারো। আজকের পোস্টে এই পর্যন্তই, তুমি আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করে আমাদের বাকি পোস্ট গুলো দেখতে পারো।