আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন আপনারা? আজকে আমরা কথা বলব বিজ্ঞানের খুব মজার একটা বিষয় নিয়ে – ধাতব ধর্ম (Metallic Properties)। ধাতু! নামটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে চকচকে, শক্তপোক্ত কিছু একটা, তাই না? কিন্তু এই ধাতুগুলোর বিশেষত্ব আসলে কী? এদের ধর্মগুলোই বা কেমন? চলুন, আজ আমরা এই সবকিছু সহজ ভাষায় জেনে নেই!
ধাতব ধর্ম কাকে বলে?
ধাতু চেনার কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। এই বৈশিষ্ট্যগুলোই আসলে ধাতব ধর্ম। এখন প্রশ্ন হল, কী সেই বৈশিষ্ট্যগুলো?
- উজ্জ্বলতা: ধাতু মাত্রই চকচক করবে, সাধারণত এদের পৃষ্ঠ বেশ উজ্জ্বল হয়।
- নমনীয়তা ও প্রসারণশীলতা: আঘাত করলে এরা ভাঙে না, বরং বেঁকে যায় এবং এদের টেনে লম্বা তার বানানো যায়।
- বিদ্যুৎ পরিবাহিতা: ধাতু বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে।
- তাপ পরিবাহিতা: ধাতু তাপ পরিবহন করতে পারে।
এই বৈশিষ্ট্যগুলোই মূলত ধাতব ধর্ম।
ধাতুর প্রকারভেদ ও বৈশিষ্ট্য (Types and Properties of Metals)
ধাতু নানা রকমের হয় এবং এদের প্রত্যেকের কিছু আলাদা বৈশিষ্ট্য থাকে। আসুন, কয়েকটি প্রধান প্রকারভেদ এবং তাদের বৈশিষ্ট্যগুলো জেনে নেই:
- ক্ষার ধাতু (Alkali Metals): এইগুলো নরম এবং খুব reactive হয়। যেমন: সোডিয়াম (Sodium), পটাশিয়াম (Potassium)।
- ক্ষারীয় মৃত্তিকা ধাতু (Alkaline Earth Metals): এগুলো ক্ষার ধাতুর চেয়ে কম reactive কিন্তু তবুও বেশ সক্রিয়। যেমন: ক্যালসিয়াম (Calcium), ম্যাগনেসিয়াম (Magnesium)।
- transition ধাতু (Transition Metals): এইগুলো কঠিন, এদের গলনাঙ্ক (Melting Point) অনেক বেশি এবং এরা ভালো conductor। যেমন: লোহা (Iron), তামা (Copper), সোনা (Gold)।
- অন্যান্য ধাতু (Other Metals): এই শ্রেণীতে থাকা ধাতুগুলোর বৈশিষ্ট্য অনেক রকম হতে পারে। যেমন: অ্যালুমিনিয়াম (Aluminium), টিন (Tin), সীসা (Lead)।
ধাতুর প্রকারভেদ | বৈশিষ্ট্য | উদাহরণ |
---|---|---|
ক্ষার ধাতু | নরম, খুব reactive | সোডিয়াম, পটাশিয়াম |
ক্ষারীয় মৃত্তিকা ধাতু | কম reactive কিন্তু সক্রিয় | ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম |
transition ধাতু | কঠিন, উচ্চ গলনাঙ্ক, ভালো conductor | লোহা, তামা, সোনা |
অন্যান্য ধাতু | বৈশিষ্ট্য ভিন্ন | অ্যালুমিনিয়াম, টিন, সীসা |
ধাতুর ভৌত ধর্ম (Physical properties of metals)
ধাতুর কিছু ভৌত ধর্ম আছে, যা এদের ব্যবহার এবং প্রকৃতি বুঝতে সাহায্য করে। এর মধ্যে কয়েকটা হল:
- গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক (Melting and Boiling Points): সাধারণত ধাতুর গলনাঙ্ক এবং স্ফুটনাঙ্ক অনেক বেশি হয়।
- ঘনত্ব (Density): ধাতুর ঘনত্ব বেশি হওয়ার কারণে এরা ভারী হয়।
- কঠিনতা (Hardness): অধিকাংশ ধাতুই খুব কঠিন হয়, তবে ক্ষার ধাতুগুলো নরম হয়।
- বর্ণ (Color): বেশিরভাগ ধাতু ধূসর বা সাদা রঙের হয়, তবে তামা (Copper) সোনালী-লাল রঙের হয়ে থাকে।
ধাতুর রাসায়নিক ধর্ম (Chemical Properties of Metals)
ভৌত ধর্মের পাশাপাশি ধাতুর রাসায়নিক ধর্মও গুরুত্বপূর্ণ। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য রাসায়নিক ধর্ম নিচে উল্লেখ করা হলো:
- ইলেকট্রন ত্যাগ করার প্রবণতা: ধাতুর পরমাণুগুলো সাধারণত রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ইলেকট্রন ত্যাগ করে ক্যাটায়নে (positive ion) পরিণত হতে চায়। এই কারণে ধাতুগুলো বিজারক (reducing agent) হিসেবে কাজ করে।
- অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া: প্রায় সব ধাতুই অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে অক্সাইড তৈরি করে। এই অক্সাইডগুলো ক্ষারীয় (basic) প্রকৃতির হয়। উদাহরণস্বরূপ, সোডিয়াম অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে সোডিয়াম অক্সাইড (Na₂O) তৈরি করে।
- জলের সাথে বিক্রিয়া: কিছু ধাতু ঠাণ্ডা জলের সাথে বিক্রিয়া করে হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন করে, আবার কিছু ধাতু গরম জল বা স্টিমের সাথে বিক্রিয়া করে। উদাহরণস্বরূপ, সোডিয়াম ঠাণ্ডা জলের সাথে দ্রুত বিক্রিয়া করে সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড (NaOH) এবং হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন করে।
- মিশ্রণ তৈরির ক্ষমতা: একাধিক ধাতু একসাথে মিশে নতুন বৈশিষ্ট্য তৈরি করতে পারে। এই প্রক্রিয়াকে সংকর ধাতু তৈরি বলা হয়। স্টেইনলেস স্টিল (stainless steel) একটি সাধারণ উদাহরণ, যা লোহা, কার্বন ও ক্রোমিয়ামের মিশ্রণে তৈরি হয়।
ধাতুর ব্যবহার (Uses of Metals)
দৈনন্দিন জীবনে ধাতুর ব্যবহার ব্যাপক। কয়েকটা উদাহরণ দেওয়া হলো:
- নির্মাণ শিল্প: লোহা, ইস্পাত (steel) এবং অ্যালুমিনিয়াম নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত হয়। এগুলো ঘরবাড়ি, সেতু (bridge) এবং অন্যান্য কাঠামো তৈরিতে অপরিহার্য।
- পরিবহন: গাড়ি, বাস (bus), ট্রেন (train) এবং প্লেন (plane) তৈরিতে বিভিন্ন ধাতু ব্যবহার করা হয়। অ্যালুমিনিয়াম হালকা ও শক্তিশালী হওয়ায় এটি প্লেনের কাঠামো তৈরিতে খুব জনপ্রিয়।
- বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম: তামা (copper) এবং অ্যালুমিনিয়াম বিদ্যুতের সুপরিবাহী হওয়ায় তার (wire) এবং অন্যান্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
- গহনা: সোনা (gold), রূপা (silver) এবং প্ল্যাটিনাম (platinum) মূল্যবান ধাতু হিসেবে গহনা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
সংকর ধাতু (Alloys)
সংকর ধাতু হলো দুই বা ততোধিক ধাতুর মিশ্রণ, যা নতুন বৈশিষ্ট্য তৈরি করে। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংকর ধাতু এবং তাদের ব্যবহার নিচে উল্লেখ করা হলো:
- ইস্পাত (Steel): লোহা ও কার্বনের মিশ্রণে তৈরি ইস্পাত খুব শক্তিশালী এবং টেকসই। এটি নির্মাণ শিল্প, গাড়ি এবং যন্ত্রপাতি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
- ব্রোঞ্জ (Bronze): তামা ও টিনের (tin) মিশ্রণে তৈরি ব্রোঞ্জ প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি মূর্তি (sculpture), মুদ্রা (coin) এবং অলঙ্কার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
- পিতল (Brass): তামা ও দস্তার (zinc) মিশ্রণে তৈরি পিতল সাধারণত তালা, চাবি (key) এবং বাদ্যযন্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
ধাতু এবং অধাতুর মধ্যে পার্থক্য (Difference Between Metals and Non-metals)
ধাতু এবং অধাতুর মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। নিচে একটি তুলনামূলক আলোচনা দেওয়া হলো:
বৈশিষ্ট্য | ধাতু | অধাতু |
---|---|---|
উজ্জ্বলতা | উজ্জ্বল এবং চকচকে | সাধারণত অনুজ্জ্বল |
পরিবাহিতা | তাপ ও বিদ্যুতের সুপরিবাহী | তাপ ও বিদ্যুতের কুপরিবাহী (গ্রাফাইট ব্যতিক্রম) |
নমনীয়তা ও প্রসারণশীলতা | নমনীয় ও প্রসারণশীল | ভঙ্গুর (bittle), আঘাত করলে ভেঙে যায় |
অবস্থা | সাধারণত কঠিন (মার্কারি ব্যতিক্রম) | কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় হতে পারে |
ঘনত্ব | সাধারণত বেশি | সাধারণত কম |
ধাতু চেনার উপায় (How to Recognize Metals)
ধাতু চেনার জন্য কিছু সহজ উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে:
- উজ্জ্বলতা: ধাতুর উপরিভাগ চকচকে হয়।
- কঠিনতা: ধাতু সাধারণত কঠিন হয়।
- শব্দ: ধাতুকে আঘাত করলে ঝনঝন শব্দ হয়।
- পরিবাহিতা: ধাতু বিদ্যুৎ ও তাপ পরিবহন করতে পারে।
ধাতু নিষ্কাশন (Extraction of Metals)
ধাতু নিষ্কাশন একটি জটিল প্রক্রিয়া, যা খনি থেকে আকরিক (ore) উত্তোলনের মাধ্যমে শুরু হয়। এরপর আকরিক থেকে কাঙ্ক্ষিত ধাতুটিকে আলাদা করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। নিচে কয়েকটি প্রধান পদ্ধতি আলোচনা করা হলো:
- ভূগর্ভস্থ খনন (Underground Mining): এই পদ্ধতিতে মাটির নিচে সুড়ঙ্গ তৈরি করে আকরিক সংগ্রহ করা হয়। এটি সাধারণত গভীর খনি থেকে ধাতু উত্তোলনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
- উন্মুক্ত খনন (Open-Pit Mining): এই পদ্ধতিতে বিশাল আকারের গর্ত করে আকরিক সংগ্রহ করা হয়। এটি অগভীর খনি থেকে ধাতু উত্তোলনের জন্য উপযুক্ত।
- ধাতুবিদ্যা (Metallurgy): এই প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন রাসায়নিক ও ভৌত পদ্ধতি ব্যবহার করে আকরিক থেকে ধাতু নিষ্কাশন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ভস্মীকরণ (smelting), বিজারণ (reduction) এবং পরিশোধন (refining)।
ধাতুর ক্ষয় (Corrosion of Metals)
ধাতুর ক্ষয় একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে ধাতু তার পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে বিক্রিয়া করে ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়। এই ক্ষয় সাধারণত অক্সিজেন, জল এবং অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থের কারণে হয়ে থাকে। লোহার ক্ষেত্রে এই ক্ষয়কে মরিচা (rust) ধরা বলা হয়।
ক্ষয় প্রতিরোধের উপায়:
- আবরণ (Coating): ধাতুর উপর অন্য কোনো ধাতু বা রাসায়নিক পদার্থের প্রলেপ দেওয়া হলে ক্ষয় প্রতিরোধ করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, লোহার উপর দস্তার (zinc) প্রলেপ দিয়ে গ্যালভানাইজিং (galvanizing) করা হয়।
- সংকর ধাতু ব্যবহার (Using Alloys): এমন সংকর ধাতু ব্যবহার করা যা ক্ষয় প্রতিরোধী। স্টেইনলেস স্টিল (stainless steel) একটি ভালো উদাহরণ, যা ক্ষয় প্রতিরোধী।
- রঙ করা (Painting): ধাতুর উপর রং করলে তা সরাসরি পরিবেশের সংস্পর্শে আসা থেকে রক্ষা পায়, যা ক্ষয় প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ধাতু দূষণ (Metal Pollution)
ধাতু দূষণ একটি গুরুতর পরিবেশগত সমস্যা। খনি থেকে ধাতু নিষ্কাশন, শিল্পকারখানা এবং অন্যান্য উৎস থেকে নির্গত ধাতব পদার্থ মাটি, জল এবং বাতাসে মিশে দূষণ ঘটায়। এই দূষণ মানব স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
ধাতু দূষণের উৎস:
- শিল্প কারখানা: শিল্প কারখানা থেকে নির্গত বর্জ্য পদার্থে ভারী ধাতু থাকতে পারে।
- খনি: খনি থেকে ধাতু উত্তোলনের সময় মাটি ও জল দূষিত হতে পারে।
- কৃষি: কীটনাশক ও সার ব্যবহারের মাধ্যমে মাটি দূষিত হতে পারে।
ধাতু দূষণের প্রভাব:
- মানব স্বাস্থ্য: দূষিত জল ও খাবার গ্রহণের মাধ্যমে শরীরে বিষাক্ত ধাতু প্রবেশ করতে পারে, যা স্নায়ুতন্ত্র, কিডনি (kidney) এবং অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতি করতে পারে।
- পরিবেশ: ধাতু দূষণের কারণে মাটি ও জলের উর্বরতা কমে যায়, যা উদ্ভিদ ও জলজ প্রাণীর জীবনধারণের জন্য হুমকি স্বরূপ।
ধাতু দূষণ প্রতিরোধের উপায়:
- বর্জ্য পরিশোধন: শিল্প কারখানা থেকে নির্গত বর্জ্য পরিশোধন করে ক্ষতিকর ধাতু অপসারণ করতে হবে।
- পুনর্ব্যবহার (Recycling): ধাতব পদার্থ পুনর্ব্যবহার করার মাধ্যমে খনির উপর চাপ কমানো যায়, যা দূষণ কমাতে সাহায্য করে।
- পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার: এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করা উচিত যা কম দূষণ সৃষ্টি করে।
ধাতু পুনর্ব্যবহার (Metal Recycling)
ধাতু পুনর্ব্যবহার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, যা পরিবেশ রক্ষায় সহায়ক। পুরনো এবং ব্যবহার অযোগ্য ধাতু গলিয়ে নতুন পণ্য তৈরি করা হলে প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার কমে যায় এবং দূষণ হ্রাস পায়।
পুনর্ব্যবহারের সুবিধা:
- প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ: নতুন ধাতু উত্তোলনের প্রয়োজন কমে যায়।
- শক্তি সাশ্রয়: পুনর্ব্যবহার প্রক্রিয়ায় নতুন ধাতু তৈরির তুলনায় কম শক্তি লাগে।
- দূষণ হ্রাস: খনি এবং শিল্প কারখানার দূষণ কমে যায়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধাতু এবং তাদের পুনর্ব্যবহার প্রক্রিয়া:
- লোহা: পুরনো লোহার জিনিসপত্র গলিয়ে নতুন ইস্পাত তৈরি করা হয়।
- অ্যালুমিনিয়াম: অ্যালুমিনিয়াম ক্যান (can) এবং অন্যান্য অ্যালুমিনিয়ামের জিনিসপত্র পুনর্ব্যবহার করা হয়।
- তামা: তামার তার (wire) এবং অন্যান্য তামার জিনিসপত্র পুনর্ব্যবহার করা হয়।
ধাতুবিদ্যা (Metallurgy)
ধাতুবিদ্যা হলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির একটি শাখা, যেখানে ধাতু এবং তাদের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করা হয়। এই শাখায় ধাতু নিষ্কাশন, পরিশোধন (purification), সংকর ধাতু তৈরি এবং ধাতুর ব্যবহার ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত।
ধাতুবিদ্যার গুরুত্ব:
- নতুন ধাতুর আবিষ্কার: ধাতুবিদ্যার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন ধাতু এবং সংকর ধাতু আবিষ্কার করছেন, যা বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহৃত হচ্ছে।
- গুণগত মান উন্নয়ন: ধাতুবিদ্যার মাধ্যমে ধাতুর গুণগত মান উন্নত করা সম্ভব, যা তাদের কার্যকারিতা বাড়ায়।
- প্রযুক্তিগত উন্নয়ন: এই শাখা বিভিন্ন প্রযুক্তিগত উন্নয়ন যেমন – নতুন উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং ধাতুর ব্যবহার কৌশল উদ্ভাবনে সাহায্য করে।
ধাতুর ভবিষ্যৎ (Future of Metals)
ধাতুর ব্যবহার ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নতুন প্রযুক্তি, যেমন – ইলেকট্রিক গাড়ি (electric car), সৌর প্যানেল (solar panel) এবং উইন্ড টারবাইন (wind turbine) তৈরিতে ধাতুর চাহিদা বাড়ছে। এছাড়াও, পরিবেশ বান্ধব ধাতু এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য ধাতুর ব্যবহার বাড়ানোর জন্য বিজ্ঞানীরা কাজ করছেন।
কিছু সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ প্রবণতা:
- হালকা ধাতু: অ্যালুমিনিয়াম, টাইটানিয়াম (titanium) এবং ম্যাগনেসিয়ামের (magnesium) মতো হালকা ধাতুর ব্যবহার বাড়বে, যা পরিবহন এবং অন্যান্য শিল্পে জ্বালানি সাশ্রয় করবে।
- স্মার্ট ধাতু: এমন ধাতু ব্যবহার করা হবে যা পরিবেশের পরিবর্তন অনুযায়ী নিজেদের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করতে পারে।
- 3D প্রিন্টিং: 3D প্রিন্টিং প্রযুক্তির মাধ্যমে জটিল আকারের ধাতব বস্তু তৈরি করা সম্ভব হবে, যা উৎপাদন প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করবে।
আশা করি, আজকের আলোচনা থেকে ধাতব ধর্ম সম্পর্কে আপনারা একটা স্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন। ধাতু আমাদের জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন।
কিছু জিজ্ঞাসু প্রশ্ন (FAQs):
-
ধাতু কিভাবে বিদ্যুৎ পরিবহন করে? (How do metals conduct electricity?)
ধাতুর মধ্যে মুক্ত ইলেকট্রন থাকে। এই ইলেকট্রনগুলো সহজেই চলাচল করতে পারে, তাই যখন ভোল্টেজ প্রয়োগ করা হয়, তখন এই ইলেকট্রনগুলো দ্রুত প্রবাহিত হয়ে বিদ্যুৎ পরিবহন করে। -
কোন ধাতু সবচেয়ে ভালো বিদ্যুৎ পরিবাহী? (Which metal is the best conductor of electricity?)
রূপা (Silver) সবচেয়ে ভালো বিদ্যুৎ পরিবাহী, তবে দাম বেশি হওয়ার কারণে তামা (Copper) বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়। -
সবচেয়ে নরম ধাতু কোনটি? (Which is the softest metal?)
সিজিয়াম (Caesium) হলো সবচেয়ে নরম ধাতু।
-
ধাতু কেন চকচক করে? (Why do metals shine?)
ধাতুর মধ্যে মুক্ত ইলেকট্রন থাকে। যখন আলো এসে এই ইলেকট্রনগুলোর উপর পড়ে, তখন তারা আলোকরশ্মি প্রতিফলিত করে। এই কারণেই ধাতু চকচক করে। -
ধাতু গলানোর তাপমাত্রা কত? (What is the melting point of metals?)
বিভিন্ন ধাতুর গলনাঙ্ক বিভিন্ন হয়। যেমন, লোহার গলনাঙ্ক ১৫৩৫° সেলসিয়াস, অন্যদিকে পারদের গলনাঙ্ক -৩৮.৮৩° সেলসিয়াস। -
ধাতু কিভাবে তৈরি হয়? (How are metals made?)
ধাতুগুলো মূলত পৃথিবীর ভূত্বকের নিচে বিভিন্ন খনিজ আকারে পাওয়া যায়। এগুলোকে উত্তোলন করে পরিশোধন করার মাধ্যমেই ব্যবহার উপযোগী ধাতুতে পরিণত করা হয়।
-
ধাতুর বৈশিষ্ট্য কি কি? (What are the characteristics of metals?)
ধাতুর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হল – উজ্জ্বলতা, নমনীয়তা, প্রসারণশীলতা, বিদ্যুৎ পরিবাহিতা এবং তাপ পরিবাহিতা। -
ধাতু সংকটের কারণ কি? (What are the causes of metal scarcity?)
অতিরিক্ত ব্যবহার, অপচয় এবং নতুন খনি অনুসন্ধানে সমস্যা হওয়ার কারণে ধাতু সংকট দেখা দিতে পারে। -
ধাতু চেনার উপায় কি? (What are the ways to identify metals?)
ধাতু চেনার সহজ উপায় হলো এর উজ্জ্বলতা, কঠিনতা, আঘাত করলে শব্দ এবং বিদ্যুৎ পরিবাহী ক্ষমতা পরীক্ষা করা।
- ধাতুবিদ্যা কি? (What is metallurgy?)
ধাতুবিদ্যা হলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির একটি শাখা, যেখানে ধাতু এবং তাদের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করা হয়।
আশা করি, আজকের আলোচনাটি আপনাদের ভালো লেগেছে। যদি এখনো কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। নতুন কোনো বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে সেটাও জানাতে পারেন। ভালো থাকবেন, আল্লাহ হাফেজ!