আজকে আমরা কথা বলবো শেয়ার বাজার বা ক্রিপ্টোকারেন্সির জগতে বহুল ব্যবহৃত একটি শব্দ নিয়ে – ডাইভারজেন্স। শুনে হয়তো একটু কঠিন মনে হচ্ছে, কিন্তু আমি কথা দিচ্ছি, এই ব্লগপোস্টটি পড়ার পরে ডাইভারজেন্স আপনার কাছে জলের মতো সোজা হয়ে যাবে! তাহলে চলুন, শুরু করা যাক।
ডাইভারজেন্স: শেয়ার বাজারের লুকানো সংকেত, যা আপনাকে লাভের পথ দেখাতে পারে!
ডাইভারজেন্স (Divergence) শব্দটির বাংলা অর্থ হলো “বিচ্যুতি” বা “পার্থক্য”। কিন্তু ফিনান্সের ভাষায়, বিশেষ করে শেয়ার বাজার বা ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রে ডাইভারজেন্স একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। এটা আসলে দামের গতিবিধি (Price Movement) এবং টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটরের (Technical Indicator) মধ্যেকার অমিল বা বিপরীত অবস্থাকে বোঝায়।
ডাইভারজেন্স আসলে কী?
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ডাইভারজেন্স হল যখন কোনো শেয়ারের দাম যেদিকে যাচ্ছে, টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটরগুলো তার উল্টো দিকে যায়। মনে করুন, কোনো শেয়ারের দাম বাড়ছে, কিন্তু Relative Strength Index (RSI) বা Moving Average Convergence Divergence (MACD) এর মতো ইন্ডিকেটরগুলো বলছে যে দাম আর বাড়বে না, বরং কমতে পারে। এই অবস্থাকেই ডাইভারজেন্স বলা হয়।
ডাইভারজেন্স কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ডাইভারজেন্স আমাদের ভবিষ্যৎ বাজারের গতিবিধি সম্পর্কে একটা ধারণা দিতে পারে। এটা একটা সংকেত যে বর্তমান ট্রেন্ড (Trend) দুর্বল হয়ে আসছে এবং খুব শীঘ্রই বিপরীত দিকে মোড় নিতে পারে। তাই, ডাইভারজেন্স চিহ্নিত করতে পারলে আপনি আগে থেকেই সতর্ক হতে পারবেন এবং আপনার ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্তগুলো আরও ভালোভাবে নিতে পারবেন।
ডাইভারজেন্স কত প্রকার ও কী কী?
ডাইভারজেন্স সাধারণত দুই প্রকার:
- পজিটিভ ডাইভারজেন্স (Positive Divergence) বা বুলিশ ডাইভারজেন্স (Bullish Divergence):
- নেগেটিভ ডাইভারজেন্স (Negative Divergence) বা বিয়ারিশ ডাইভারজেন্স (Bearish Divergence):
চলুন, এই দুটি প্রকারভেদ একটু বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
পজিটিভ ডাইভারজেন্স (Positive Divergence) বা বুলিশ ডাইভারজেন্স (Bullish Divergence)
পজিটিভ ডাইভারজেন্স ঘটে যখন কোনো শেয়ারের দাম কমতে থাকে, কিন্তু একই সময়ে কোনো টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর (যেমন RSI, MACD) বাড়তে থাকে। এর মানে হল, দাম কমার গতি কমে আসছে এবং খুব শীঘ্রই দাম বাড়তে শুরু করতে পারে।
পজিটিভ ডাইভারজেন্স চেনার উপায়:
- শেয়ারের দামের চার্টে (Chart) লক্ষ করুন, দাম নিচের দিকে নতুন low তৈরি করছে কিনা।
- RSI বা MACD এর মতো ইন্ডিকেটরের চার্টে দেখুন, ইন্ডিকেটরটি উপরের দিকে higher low তৈরি করছে কিনা।
- যদি দামের চার্ট নিচের দিকে low দেখায় এবং ইন্ডিকেটর উপরের দিকে higher low দেখায়, তাহলে বুঝবেন এখানে পজিটিভ ডাইভারজেন্স তৈরি হয়েছে।
পজিটিভ ডাইভারজেন্সের উদাহরণ:
ধরা যাক, XYZ কোম্পানির শেয়ারের দাম গত কয়েকদিনে लगातार কমছে। দামের চার্টে দেখা যাচ্ছে, দাম নতুন low তৈরি করছে। কিন্তু RSI ইন্ডিকেটর বলছে ভিন্ন কথা। RSI এর চার্ট দেখাচ্ছে যে ইন্ডিকেটরটি higher low তৈরি করছে। তার মানে, দাম কমার প্রবণতা দুর্বল হয়ে আসছে এবং খুব শীঘ্রই দাম বাড়তে পারে। এই পরিস্থিতিতে, একজন ট্রেডার শেয়ারটি কেনার কথা ভাবতে পারেন।
নেগেটিভ ডাইভারজেন্স (Negative Divergence) বা বিয়ারিশ ডাইভারজেন্স (Bearish Divergence)
নেগেটিভ ডাইভারজেন্স ঘটে যখন কোনো শেয়ারের দাম বাড়তে থাকে, কিন্তু টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটরগুলো (যেমন RSI, MACD) কমতে থাকে। এর মানে হল, দাম বাড়ার গতি কমে আসছে এবং খুব শীঘ্রই দাম কমতে শুরু করতে পারে।
নেগেটিভ ডাইভারজেন্স চেনার উপায়:
- শেয়ারের দামের চার্টে লক্ষ করুন, দাম উপরের দিকে নতুন high তৈরি করছে কিনা।
- RSI বা MACD এর মতো ইন্ডিকেটরের চার্টে দেখুন, ইন্ডিকেটরটি নিচের দিকে lower high তৈরি করছে কিনা।
- যদি দামের চার্ট উপরের দিকে high দেখায় এবং ইন্ডিকেটর নিচের দিকে lower high দেখায়, তাহলে বুঝবেন এখানে নেগেটিভ ডাইভারজেন্স তৈরি হয়েছে।
নেগেটিভ ডাইভারজেন্সের উদাহরণ:
মনে করুন, ABC কোম্পানির শেয়ারের দাম लगातार বাড়ছে। দামের চার্টে দেখা যাচ্ছে, দাম নতুন high তৈরি করছে। কিন্তু MACD ইন্ডিকেটর বলছে ভিন্ন কথা। MACD এর চার্ট দেখাচ্ছে যে ইন্ডিকেটরটি lower high তৈরি করছে। তার মানে, দাম বাড়ার প্রবণতা দুর্বল হয়ে আসছে এবং শীঘ্রই দাম কমতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, একজন ট্রেডার শেয়ারটি বিক্রি করে দেওয়ার কথা ভাবতে পারেন।
অন্যান্য প্রকার ডাইভারজেন্স
উপরের দুইটি প্রধান প্রকার ছাড়াও, আরও কিছু প্রকার ডাইভারজেন্স দেখা যায়, যেমন:
- হিডেন বুলিশ ডাইভারজেন্স (Hidden Bullish Divergence): এক্ষেত্রে দাম higher low তৈরি করে, কিন্তু ইন্ডিকেটর lower low তৈরি করে। এটি একটি বুলিশ সংকেত এবং দাম বাড়ার সম্ভাবনা নির্দেশ করে।
- হিডেন বিয়ারিশ ডাইভারজেন্স (Hidden Bearish Divergence): এক্ষেত্রে দাম lower high তৈরি করে, কিন্তু ইন্ডিকেটর higher high তৈরি করে। এটি একটি বিয়ারিশ সংকেত এবং দাম কমার সম্ভাবনা নির্দেশ করে।
কীভাবে ডাইভারজেন্স ব্যবহার করে ট্রেডিং করবেন?
ডাইভারজেন্স একটি শক্তিশালী ট্রেডিং সংকেত হতে পারে, কিন্তু শুধুমাত্র এর ওপর নির্ভর করে ট্রেডিং করা উচিত নয়। অন্যান্য টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস টুলস এবং মার্কেট কনফার্মেশন ব্যবহার করে ডাইভারজেন্সের সংকেত নিশ্চিত করা উচিত। নিচে কিছু টিপস দেওয়া হলো:
- ডাইভারজেন্স চিহ্নিত করুন: প্রথমে দামের চার্ট এবং ইন্ডিকেটরের চার্ট ভালোভাবে দেখে ডাইভারজেন্স খুঁজে বের করুন।
- অন্যান্য সংকেতের সাথে মিলিয়ে নিন: শুধুমাত্র ডাইভারজেন্সের ওপর নির্ভর না করে অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর (যেমন সাপোর্ট এবং রেসিস্টেন্স লেভেল, ট্রেন্ডলাইন) ব্যবহার করে সংকেত নিশ্চিত করুন।
- স্টপ লস ব্যবহার করুন: ট্রেডিংয়ের সময় স্টপ লস ব্যবহার করা খুবই জরুরি। এতে আপনার লোকসানের পরিমাণ সীমিত থাকবে।
- মার্কেট কনফার্মেশন: ডাইভারজেন্সের সংকেত পাওয়ার পরে মার্কেটের কনফার্মেশন (Confirmation) এর জন্য অপেক্ষা করুন। মার্কেট যদি আপনার অনুকূলে যায়, তবেই ট্রেড করুন।
ডাইভারজেন্স ট্রেডিংয়ের কিছু উদাহরণ
- বুলিশ ডাইভারজেন্স ট্রেডিং: যদি আপনি কোনো শেয়ারে বুলিশ ডাইভারজেন্স দেখতে পান, তাহলে দাম আরও বাড়ার আগে শেয়ারটি কেনার কথা বিবেচনা করতে পারেন। স্টপ লস বসাতে পারেন ডাইভারজেন্সের low এর নিচে।
- বিয়ারিশ ডাইভারজেন্স ট্রেডিং: যদি আপনি কোনো শেয়ারে বিয়ারিশ ডাইভারজেন্স দেখতে পান, তাহলে দাম কমার আগে শেয়ারটি বিক্রি করে দেওয়ার কথা বিবেচনা করতে পারেন। এক্ষেত্রে স্টপ লস বসাতে পারেন ডাইভারজেন্সের high এর উপরে।
ডাইভারজেন্স ব্যবহারের সুবিধা এবং অসুবিধা
যেকোনো ট্রেডিং স্ট্র্যাটেজির মতো, ডাইভারজেন্স ব্যবহারেরও কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। নিচে সেগুলো আলোচনা করা হলো:
সুবিধা:
- সম্ভাব্য ট্রেন্ড রিভার্সাল (Trend Reversal) সম্পর্কে আগে থেকে ধারণা দেয়।
- এন্ট্রি এবং এক্সিট পয়েন্ট নির্ধারণে সাহায্য করে।
- অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটরের সাথে ব্যবহার করা যায়।
অসুবিধা:
- সব সময় সঠিক সংকেত দেয় না।
- ভুল সংকেত দিতে পারে, বিশেষ করে ভোলাটাইল (Volatile) মার্কেটে।
- নিশ্চিত হওয়ার জন্য অন্যান্য ইন্ডিকেটরের ওপর নির্ভর করতে হয়।
সেরা টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর যা ডাইভারজেন্স ট্রেডিংয়ে কাজে লাগে
ডাইভারজেন্স ট্রেডিংয়ের জন্য কিছু জনপ্রিয় টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর রয়েছে যেগুলো আপনি ব্যবহার করতে পারেন:
- Relative Strength Index (RSI): RSI একটি বহুল ব্যবহৃত ইন্ডিকেটর, যা শেয়ারের overbought (বেশি কেনা হয়েছে) এবং oversold (বেশি বিক্রি হয়েছে) অবস্থা নির্দেশ করে।
- Moving Average Convergence Divergence (MACD): MACD দুটি মুভিং এভারেজের মধ্যে সম্পর্ক দেখায় এবং ট্রেন্ডের দিক ও শক্তি নির্ধারণে সাহায্য করে।
- Stochastic Oscillator: স্টোকাস্টিক অসসিলেটর একটি শেয়ারের বর্তমান দাম এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তার দামের পরিসীমা তুলনা করে।
- Volume: ভলিউম হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি শেয়ারের কতগুলি শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে তার পরিমাণ। ডাইভারজেন্সের সাথে ভলিউম মিলিয়ে দেখলে আরও নিশ্চিত হওয়া যায়।
RSI ডাইভারজেন্স: একটি উদাহরণ
ধরা যাক, কোনো শেয়ারের দাম বাড়ছে, কিন্তু RSI কমছে। এর মানে হল, দাম বাড়ার গতি কমে যাচ্ছে এবং খুব শীঘ্রই দাম কমতে শুরু করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, আপনি শেয়ারটি বিক্রি করার কথা ভাবতে পারেন।
MACD ডাইভারজেন্স: একটি উদাহরণ
যদি কোনো শেয়ারের দাম কমছে, কিন্তু MACD বাড়ছে, তাহলে বুঝতে হবে দাম কমার গতি কমে আসছে এবং শীঘ্রই দাম বাড়তে পারে। এই অবস্থায় শেয়ারটি কেনার চিন্তা করা যেতে পারে।
ডাইভারজেন্স ট্রেডিংয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস এবং ট্রিক্স
- সবসময় মনে রাখবেন ডাইভারজেন্স একটি সম্ভাব্য সংকেত, নিশ্চিত সংকেত নয়। তাই, অন্যান্য ইন্ডিকেটর এবং মার্কেট কনফার্মেশন ব্যবহার করে ট্রেড করুন।
- ছোট টাইমফ্রেমে (যেমন ৫ মিনিট, ১৫ মিনিট) ডাইভারজেন্সের সংকেত বেশি নির্ভরযোগ্য হয় না। বড় টাইমফ্রেমে (যেমন দৈনিক, সাপ্তাহিক) ডাইভারজেন্সের সংকেত বেশি কার্যকর।
- মার্কেট নিউজ এবং ইভেন্টগুলোর দিকে নজর রাখুন। কোনো বড় খবর বা ঘটনার কারণে ডাইভারজেন্সের সংকেত পরিবর্তন হতে পারে।
- ধৈর্য ধরুন এবং সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করুন। তাড়াহুড়ো করে ট্রেড করলে লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ডাইভারজেন্স নিয়ে কিছু সাধারণ ভুল ধারণা
অনেক ট্রেডার ডাইভারজেন্স নিয়ে কিছু ভুল ধারণা পোষণ করেন। নিচে কয়েকটি সাধারণ ভুল ধারণা আলোচনা করা হলো:
- ডাইভারজেন্স সবসময় সঠিক সংকেত দেয়: এটা ভুল ধারণা। ডাইভারজেন্স একটি সম্ভাব্য সংকেত, কিন্তু সবসময় সঠিক হয় না।
- ডাইভারজেন্স দেখলেই ট্রেড করতে হবে: এটা ঠিক নয়। ডাইভারজেন্সের সংকেত পাওয়ার পরে অন্যান্য ইন্ডিকেটর এবং মার্কেট কনফার্মেশন দেখে নিশ্চিত হয়ে ট্রেড করা উচিত।
- ছোট টাইমফ্রেমে ডাইভারজেন্স বেশি কার্যকর: সাধারণত বড় টাইমফ্রেমে ডাইভারজেন্সের সংকেত বেশি নির্ভরযোগ্য।
ডাইভারজেন্স ট্রেডিংয়ের ঝুঁকি এবং সেগুলো মোকাবিলার উপায়
ডাইভারজেন্স ট্রেডিংয়ের কিছু ঝুঁকি রয়েছে, যেমন ভুল সংকেত এবং ভোলাটাইল মার্কেটে লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা। তবে, কিছু সতর্কতা অবলম্বন করে এই ঝুঁকিগুলো কমানো যায়:
- স্টপ লস ব্যবহার করুন: প্রতিটি ট্রেডে স্টপ লস ব্যবহার করলে লোকসানের পরিমাণ সীমিত থাকে।
- মার্কেট কনফার্মেশন: ডাইভারজেন্সের সংকেত পাওয়ার পরে মার্কেটের কনফার্মেশন এর জন্য অপেক্ষা করুন। মার্কেট আপনার অনুকূলে গেলে তবেই ট্রেড করুন।
- বিভিন্ন ইন্ডিকেটর ব্যবহার করুন: শুধুমাত্র ডাইভারজেন্সের ওপর নির্ভর না করে অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর ব্যবহার করে সংকেত নিশ্চিত করুন।
- ছোট পজিশন সাইজ: প্রথমে ছোট পজিশন সাইজ দিয়ে ট্রেডিং শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে অভিজ্ঞতা বাড়ার সাথে সাথে পজিশন সাইজ বাড়ান।
ডাইভারজেন্স নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ)
এখানে ডাইভারজেন্স নিয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো, যা আপনার ধারণা আরও স্পষ্ট করতে সাহায্য করবে:
ডাইভারজেন্স কিভাবে কাজ করে?
ডাইভারজেন্স মূলত দাম এবং টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটরের মধ্যেকার অমিলকে নির্দেশ করে। যখন দাম একটি নির্দিষ্ট দিকে যায়, কিন্তু ইন্ডিকেটর তার বিপরীত দিকে যায়, তখন ডাইভারজেন্স তৈরি হয়। এটি একটি সংকেত যে বর্তমান ট্রেন্ড দুর্বল হয়ে আসছে এবং খুব শীঘ্রই বিপরীত দিকে মোড় নিতে পারে।
ডাইভারজেন্স কি সবসময় সঠিক সংকেত দেয়?
না, ডাইভারজেন্স সবসময় সঠিক সংকেত দেয় না। এটি একটি সম্ভাব্য সংকেত, কিন্তু নিশ্চিত হওয়ার জন্য অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর এবং মার্কেট কনফার্মেশন ব্যবহার করা উচিত।
কোন ইন্ডিকেটরগুলো ডাইভারজেন্স ট্রেডিংয়ের জন্য ভালো?
RSI, MACD, এবং স্টোকাস্টিক অসসিলেটরের মতো ইন্ডিকেটরগুলো ডাইভারজেন্স ট্রেডিংয়ের জন্য ভালো। এছাড়াও, ভলিউমও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইন্ডিকেটর, যা ডাইভারজেন্সের সাথে মিলিয়ে দেখলে আরও নিশ্চিত হওয়া যায়।
ডাইভারজেন্স কত প্রকার?
ডাইভারজেন্স প্রধানত দুই প্রকার: পজিটিভ ডাইভারজেন্স (বুলিশ ডাইভারজেন্স) এবং নেগেটিভ ডাইভারজেন্স (বিয়ারিশ ডাইভারজেন্স)। এছাড়াও, হিডেন বুলিশ ডাইভারজেন্স এবং হিডেন বিয়ারিশ ডাইভারজেন্সও দেখা যায়।
ডাইভারজেন্স ট্রেডিংয়ের ঝুঁকি কী?
ডাইভারজেন্স ট্রেডিংয়ের প্রধান ঝুঁকি হলো ভুল সংকেত এবং ভোলাটাইল মার্কেটে লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা। তবে, স্টপ লস ব্যবহার এবং মার্কেট কনফার্মেশন এর মাধ্যমে এই ঝুঁকি কমানো যায়।
ডাইভারজেন্স কিভাবে খুঁজে বের করব? (How to find Divergence?)
ডাইভারজেন্স খুঁজে বের করার জন্য প্রথমে দামের চার্ট এবং ইন্ডিকেটরের চার্ট ভালোভাবে তুলনা করতে হবে। দেখতে হবে দাম এবং ইন্ডিকেটর একই দিকে যাচ্ছে কিনা, নাকি বিপরীত দিকে। যদি বিপরীত দিকে যায়, তাহলে ডাইভারজেন্স তৈরি হয়েছে।
ডাইভারজেন্স কি স্টক মার্কেটে কাজ করে? (Does Divergence work in Stock Market?)
হ্যাঁ, ডাইভারজেন্স স্টক মার্কেটে কাজ করে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস টুল, যা শেয়ারের দামের ভবিষ্যৎ গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে।
ডাইভারজেন্স প্যাটার্ন কিভাবে সনাক্ত করব? (How to Identify Divergence Pattern?)
ডাইভারজেন্স প্যাটার্ন সনাক্ত করার জন্য প্রথমে দামের চার্টে দেখতে হবে দাম নতুন high বা low তৈরি করছে কিনা। তারপর ইন্ডিকেটরের চার্টে দেখতে হবে ইন্ডিকেটরটি একই দিকে high বা low তৈরি করছে কিনা। যদি দাম এবং ইন্ডিকেটরের গতিবিধি বিপরীত দিকে হয়, তাহলে ডাইভারজেন্স প্যাটার্ন তৈরি হয়েছে।
বুলিশ ডাইভারজেন্স কখন ঘটে? (When does a bullish divergence occur?)
বুলিশ ডাইভারজেন্স ঘটে যখন শেয়ারের দাম কমতে থাকে, কিন্তু ইন্ডিকেটর বাড়তে থাকে। এর মানে হল, দাম কমার গতি কমে আসছে এবং খুব শীঘ্রই দাম বাড়তে শুরু করতে পারে।
বিয়ারিশ ডাইভারজেন্স কখন ঘটে? (When does a bearish divergence occur?)
বিয়ারিশ ডাইভারজেন্স ঘটে যখন শেয়ারের দাম বাড়তে থাকে, কিন্তু ইন্ডিকেটর কমতে থাকে। এর মানে হল, দাম বাড়ার গতি কমে আসছে এবং খুব শীঘ্রই দাম কমতে শুরু করতে পারে।
ডাইভারজেন্স এর সুবিধা কি?
ডাইভারজেন্স এর সুবিধা হল এটি সম্ভাব্য ট্রেন্ড রিভার্সাল সম্পর্কে আগে থেকে ধারণা দেয়, এন্ট্রি এবং এক্সিট পয়েন্ট নির্ধারণে সাহায্য করে এবং অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটরের সাথে ব্যবহার করা যায়।
উপসংহার
ডাইভারজেন্স একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস টুল, যা শেয়ার বাজার এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির ট্রেডিংয়ে আপনাকে সাহায্য করতে পারে। তবে, এটা মনে রাখা জরুরি যে ডাইভারজেন্স সবসময় সঠিক সংকেত দেয় না। তাই, অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর এবং মার্কেট কনফার্মেশন ব্যবহার করে ট্রেড করলে আপনার সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে।
আশা করি, এই ব্লগপোস্টটি আপনাকে ডাইভারজেন্স সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দিতে পেরেছে। আপনার যদি আরও কিছু জানার থাকে, তাহলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আর হ্যাঁ, শেয়ার বাজার এবং ক্রিপ্টোকারেন্সিতে ট্রেডিং করার সময় সবসময় সতর্ক থাকবেন এবং নিজের রিস্ক ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান অনুযায়ী ট্রেড করবেন। শুভ কামনা!