ধরুন, আপনার বুকের ভেতরটা কেমন যেন করছে। হয়তো একটু চাপ লাগছে, অথবা ধড়ফড় করছে। ডাক্তারবাবু বললেন, “একটা ইসিজি করিয়ে নিন।” শুনে একটু ঘাবড়ে গেলেন, তাই না? “ইসিজি আবার কী?” – এই প্রশ্নটা মনে আসা স্বাভাবিক। আজকের ব্লগ পোস্টে আমরা ইসিজি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। একদম সহজ ভাষায়, যাতে আপনি সবকিছু ভালোভাবে বুঝতে পারেন।
আপনার মনে নিশ্চয়ই অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, যেমন –
- ইসিজি কেন করা হয়?
- ইসিজি করার নিয়ম কী?
- ইসিজি রিপোর্টে কী লেখা থাকে?
- ইসিজি কি খুব দরকারি?
এই সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব আমরা। তাহলে চলুন, শুরু করা যাক!
ইসিজি কী? (ECG Explained in Bangla)
ইসিজি-র পুরো নাম হল ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম (Electrocardiogram)। এটা একটা পরীক্ষার নাম, যার মাধ্যমে আপনার হৃদপিণ্ডের (heart) বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ মাপা হয়। মানে, আপনার হৃদপিণ্ড কিভাবে কাজ করছে, সেটা একটা গ্রাফের মাধ্যমে দেখা যায়।
ভাবুন তো, আপনার বাড়ির ইলেক্ট্রিক লাইন কেমন? ইলেক্ট্রিক তারের মধ্যে দিয়ে যেমন কারেন্ট চলাচল করে, তেমনি আমাদের হৃদপিণ্ডের মধ্যেও কিছু ইলেক্ট্রিক সিগন্যাল চলাচল করে। এই সিগন্যালগুলোই হৃদপিণ্ডকে সংকুচিত (contract) হতে এবং রক্ত পাম্প করতে সাহায্য করে।
ইসিজি এই ইলেক্ট্রিক সিগন্যালগুলোকে ধরে ফেলে এবং একটা কাগজের ওপর গ্রাফ আকারে দেখায়। এই গ্রাফ দেখেই ডাক্তার বুঝতে পারেন আপনার হৃদপিণ্ড ঠিকমতো কাজ করছে কিনা। এটা অনেকটা হৃদপিণ্ডের একটা ইলেক্ট্রিক্যাল ছবি তোলার মতো।
ইসিজি কেন করা হয়? (Why is ECG Done?)
ইসিজি বিভিন্ন কারণে করা হতে পারে। হৃদপিণ্ডের সমস্যা সন্দেহ হলে, অথবা অন্য কোনো শারীরিক পরীক্ষার অংশ হিসেবেও ইসিজি করা হয়। নিচে কয়েকটি সাধারণ কারণ উল্লেখ করা হলো:
- বুকে ব্যথা: বুকে ব্যথা হলে ইসিজি করে দেখা হয় যে হৃদপিণ্ডের কোনো সমস্যা আছে কিনা।
- শ্বাসকষ্ট: শ্বাসকষ্টের কারণ নির্ণয় করার জন্যও ইসিজি করা যেতে পারে।
- অনিয়মিত হৃদস্পন্দন: হৃদস্পন্দন যদি খুব দ্রুত বা খুব ধীরে হয়, অথবা মাঝে মাঝে irregular মনে হয়, তাহলে ইসিজি করা দরকার।
- হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা: হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা থাকলে দ্রুত ইসিজি করে নিশ্চিত হওয়া যায়।
- অন্যান্য রোগের কারণে: উচ্চ রক্তচাপ (high blood pressure), ডায়াবেটিস (diabetes), বা কোলেস্টেরলের (cholesterol) সমস্যা থাকলে হৃদপিণ্ডের অবস্থা জানার জন্য ইসিজি করা হয়।
- অপারেশনের আগে: অনেক সময় বড় অপারেশনের আগে রোগীর হৃদপিণ্ড কতটা সুস্থ আছে, তা জানার জন্য ইসিজি করা হয়।
- কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ঔষধ আছে যেগুলো হৃদপিণ্ডের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এই ঔষধ শুরু করার আগে বা চলাকালীন সময়ে ইসিজি করা দরকার হতে পারে।
ইসিজি একটি খুব দরকারি পরীক্ষা, যা আপনার হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য সম্পর্কে অনেক তথ্য দিতে পারে।
ইসিজি কিভাবে করা হয়? (How ECG is Done?)
ইসিজি করা খুবই সহজ এবং এটি একটি ব্যথাহীন পরীক্ষা। সাধারণত, এটি করতে ৫-১০ মিনিটের বেশি সময় লাগে না। নিচে পুরো প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে আলোচনা করা হলো:
১. প্রস্তুতি (Preparation)
- আপনাকে একটি টেবিলে বা বেডে শুতে বলা হবে।
- আপনার বুকের জামাকাপড় খুলতে হতে পারে, তবে privacy বজায় রাখার জন্য সাধারণত একটি কাপড় দিয়ে শরীর ঢেকে দেওয়া হয়।
- মহিলাদের ক্ষেত্রে ব্রা খুলতে হতে পারে, কারণ ইলেক্ট্রোডগুলো সঠিকভাবে লাগানোর জন্য বুকের চামড়া পরিষ্কারভাবে দেখতে হয়।
২. ইলেক্ট্রোড স্থাপন (Electrode Placement)
- আপনার বুকে, হাতে এবং পায়ে ছোট ছোট ইলেক্ট্রোড লাগানো হবে। ইলেক্ট্রোডগুলো হল ছোট স্টিকারের মতো, যেগুলো তারের মাধ্যমে ইসিজি মেশিনের সাথে যুক্ত থাকে।
- ত্বকের সাথে ইলেক্ট্রোডের ভালো সংযোগ স্থাপনের জন্য, যেখানে ইলেক্ট্রোড লাগানো হবে, সেখানকার চামড়া সামান্য পরিষ্কার করে নেওয়া হয়। ক্ষেত্রবিশেষে, হালকা করে শেভও করা হতে পারে।
- মোট ১০টি ইলেক্ট্রোড ব্যবহার করা হয়: ৬টি বুকে এবং ৪টি হাত ও পায়ে।
৩. ইসিজি রেকর্ড করা (Recording the ECG)
- একবার ইলেক্ট্রোড লাগানো হয়ে গেলে, ইসিজি মেশিন আপনার হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ রেকর্ড করতে শুরু করবে।
- এই সময় আপনাকে একদম চুপ করে শুয়ে থাকতে হবে এবং স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে হবে। নড়াচড়া করলে বা কথা বললে রেকর্ডিং-এ সমস্যা হতে পারে।
- রেকর্ডিং শেষ হতে কয়েক মিনিট সময় লাগে।
৪. ইলেক্ট্রোড অপসারণ (Removing the Electrodes)
- রেকর্ডিং হয়ে গেলে ইলেক্ট্রোডগুলো খুলে নেওয়া হয়।
- সাধারণত, ইলেক্ট্রোড লাগানোর জায়গায় কোনো অস্বস্তি হয় না। তবে কারও ত্বক খুব সংবেদনশীল হলে সামান্য লালচে হতে পারে, যা কিছুক্ষণের মধ্যেই সেরে যায়।
পুরো প্রক্রিয়াটি খুবই সহজ এবং নিরাপদ। ইসিজি করার সময় কোনো রকম কারেন্ট আপনার শরীরে প্রবেশ করে না, তাই ভয়ের কোনো কারণ নেই।
ইসিজি রিপোর্ট দেখলে কি কি বোঝা যায়? (Understanding the ECG Report)
ইসিজি রিপোর্টটি একটি গ্রাফের মতো, যেখানে অনেকগুলো ঢেউ (waves) থাকে। এই ঢেউগুলো দেখেই ডাক্তার আপনার হৃদপিণ্ডের অবস্থা বুঝতে পারেন। ইসিজি রিপোর্টে সাধারণত যা যা দেখা হয়, তা নিচে উল্লেখ করা হলো:
- হৃদস্পন্দনের হার (Heart Rate): আপনার হৃদপিণ্ড প্রতি মিনিটে কতবার স্পন্দিত হচ্ছে, তা জানা যায়। স্বাভাবিক হৃদস্পন্দনের হার সাধারণত ৬০ থেকে ১০০ বিট প্রতি মিনিটে (BPM) হয়।
- হৃদস্পন্দনের ছন্দ (Heart Rhythm): হৃদস্পন্দন নিয়মিত (regular) নাকি অনিয়মিত (irregular), তা দেখা হয়। অনিয়মিত হৃদস্পন্দনকে অ্যারিথমিয়া (arrhythmia) বলা হয়।
- পি তরঙ্গ (P Wave): এই তরঙ্গটি অ্যাট্রিয়া (Atria) নামক হৃদপিণ্ডের উপরের অংশের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ নির্দেশ করে। পি তরঙ্গের অস্বাভাবিকতা অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন (atrial fibrillation) বা অ্যাট্রিয়াল flutter-এর মতো সমস্যা নির্দেশ করতে পারে।
- কিউআরএস কমপ্লেক্স (QRS Complex): এটি ভেন্ট্রিকল (Ventricle) নামক হৃদপিণ্ডের নিচের অংশের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ নির্দেশ করে। QRS কমপ্লেক্সের আকার এবং আকৃতির পরিবর্তন ভেন্ট্রিকুলার হাইপারট্রফি (ventricular hypertrophy) বা ব্লকের (block) মতো সমস্যা নির্দেশ করতে পারে।
- টি তরঙ্গ (T Wave): এই তরঙ্গটি ভেন্ট্রিকলের পুনরায় সক্রিয় (repolarization) হওয়ার সময় নির্দেশ করে। টি তরঙ্গের পরিবর্তন ইস্কেমিয়া (ischemia) বা ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা (electrolyte imbalance) নির্দেশ করতে পারে।
- এসটি সেগমেন্ট (ST Segment): এটি ভেন্ট্রিকলের সংকোচন (contraction) শেষ হওয়ার পর থেকে পরবর্তী স্পন্দনের শুরু পর্যন্ত সময় নির্দেশ করে। এসটি সেগমেন্টের elevation বা depression হার্ট অ্যাটাকের (heart attack) ইঙ্গিত দিতে পারে।
ইসিজি রিপোর্ট দেখে ডাক্তার বুঝতে পারেন যে আপনার হৃদপিণ্ডে কোনো সমস্যা আছে কিনা। যদি রিপোর্টে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা যায়, তাহলে ডাক্তার আপনাকে আরও কিছু পরীক্ষা করাতে বলতে পারেন, যেমন – ইকোকার্ডিওগ্রাম (echocardiogram) বা হল্টার মনিটর (Holter monitor)।
ইসিজি করার আগে ও পরে কি কি নিয়ম মানতে হয়? (Rules Before and After ECG)
ইসিজি করার আগে এবং পরে কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে পরীক্ষার ফলাফল আরও নির্ভুল হতে পারে। নিচে এই নিয়মগুলো উল্লেখ করা হলো:
ইসিজি করার আগে (Before ECG)
- ধূমপান পরিহার: পরীক্ষার আগে অন্তত ৩০ মিনিট ধূমপান করা থেকে বিরত থাকুন, কারণ এটি হৃদস্পন্দনের হারকে প্রভাবিত করতে পারে।
- ক্যাফেইন পরিহার: চা, কফি বা অন্যান্য ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকুন, কারণ এটি হৃদস্পন্দন বাড়াতে পারে।
- ভারী ব্যায়াম পরিহার: পরীক্ষার আগে ভারী ব্যায়াম বা শারীরিক কার্যকলাপ করা উচিত না।
- ঔষধের তালিকা: আপনি যদি কোনো ঔষধ গ্রহণ করেন, তবে অবশ্যই ডাক্তারকে জানান। কিছু ঔষধ ইসিজি ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে।
- আরামদায়ক পোশাক: আরামদায়ক পোশাক পরুন যা সহজে খোলা যায়, কারণ পরীক্ষার সময় বুকের কাপড় সরানোর প্রয়োজন হতে পারে।
- ত্বক পরিষ্কার রাখা: পরীক্ষার আগে নিশ্চিত করুন আপনার বুকে, হাতে এবং পায়ের ত্বক পরিষ্কার আছে। কোনো তেল বা লোশন ব্যবহার করবেন না।
ইসিজি করার পরে (After ECG)
- ইসিজি করার পর আপনি স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারেন। এই পরীক্ষার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
- যদি ইলেক্ট্রোড লাগানোর জায়গায় কোনো লালচে ভাব বা অস্বস্তি থাকে, তবে তা সাধারণত কিছুক্ষণের মধ্যেই সেরে যায়।
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী, যদি আরও কোনো পরীক্ষা বা ফলো-আপের প্রয়োজন হয়, তবে তা অবশ্যই করুন।
এই সাধারণ নিয়মগুলো মেনে চললে আপনি একটি সঠিক এবং নির্ভুল ইসিজি ফলাফল পেতে পারেন।
ইসিজি কত প্রকার? (Types of ECG)
ইসিজি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যা আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ডাক্তার নির্বাচন করে থাকেন। নিচে কয়েকটি প্রধান প্রকার আলোচনা করা হলো:
- স্ট্যান্ডার্ড ইসিজি (Standard ECG): এটি সবচেয়ে সাধারণ এবং বহুল ব্যবহৃত ইসিজি। সাধারণত, বুকে, হাতে ও পায়ে ইলেক্ট্রোড লাগিয়ে এই পরীক্ষা করা হয়। এটি হৃদপিণ্ডের তাৎক্ষণিক অবস্থা জানতে সাহায্য করে।
- স্ট্রেস ইসিজি বা ট্রেডমিল ইসিজি (Stress ECG/Treadmill ECG): এই পরীক্ষাটি করার সময় আপনাকে ট্রেডমিলে হাঁটতে বা দৌড়াতে বলা হয়, অথবা সাইকেল এর্গোমিটারে সাইকেল চালাতে বলা হয়। ব্যায়াম করার সময় আপনার হৃদপিণ্ডের কার্যকলাপ রেকর্ড করা হয়। এটি হৃদপিণ্ডের ওপর চাপের সময় কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা, তা জানতে সাহায্য করে।
- হল্টার মনিটর (Holter Monitor): এটি একটি পোর্টেবল ইসিজি ডিভাইস, যা ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত আপনার হৃদপিণ্ডের কার্যকলাপ ক্রমাগত রেকর্ড করতে থাকে। irregular হৃদস্পন্দন বা অন্য কোনো সমস্যা, যা অল্প সময়ের জন্য হয়, তা নির্ণয় করার জন্য এই পরীক্ষাটি করা হয়।
- ইভেন্ট মনিটর (Event Monitor): এটি হল্টার মনিটরের মতো, কিন্তু এটি আরও বেশি সময় ধরে (সাধারণত ৩০ দিন) ব্যবহার করা যায়। যখন আপনি কোনো উপসর্গ অনুভব করেন, তখন একটি বোতাম টিপে সেই সময়ের হৃদপিণ্ডের কার্যকলাপ রেকর্ড করতে পারেন।
- টেলিমেট্রি (Telemetry): এটি সাধারণত হাসপাতালে ব্যবহার করা হয়, যেখানে রোগীর হৃদপিণ্ডের কার্যকলাপ সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হয়।
ডাক্তার আপনার লক্ষণ ও প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক ধরনের ইসিজি নির্বাচন করবেন।
ইসিজি করার খরচ কেমন? (ECG Cost in Bangladesh)
বাংলাদেশে ইসিজি করার খরচ বিভিন্ন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভিন্ন হতে পারে। সরকারি হাসপাতালে ইসিজি করাতে তুলনামূলকভাবে কম খরচ লাগে, তবে প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে খরচ কিছুটা বেশি হতে পারে।
সাধারণভাবে, একটি স্ট্যান্ডার্ড ইসিজি করাতে খরচ সাধারণত ৩০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে। হল্টার মনিটর বা স্ট্রেস ইসিজি-র মতো বিশেষ ধরনের ইসিজি করাতে খরচ আরও বেশি হতে পারে, যা ২০০০ থেকে ৫০০০ টাকা বা তারও বেশি হতে পারে।
খরচ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানার জন্য, আপনার নিকটস্থ হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যোগাযোগ করে জেনে নিতে পারেন।
জরুরী অবস্থায় ইসিজি কতটা গুরুত্বপূর্ণ? (Importance of ECG in Emergency)
জরুরী অবস্থায় ইসিজি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে যখন কোনো রোগী বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা নিয়ে আসে, তখন দ্রুত ইসিজি করে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। নিচে এর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক আলোচনা করা হলো:
- হার্ট অ্যাটাক নির্ণয়: ইসিজি দ্রুত হার্ট অ্যাটাক (Heart attack) নির্ণয় করতে সাহায্য করে। ST segment elevation বা depression-এর মতো পরিবর্তনগুলো দেখে বোঝা যায় যে হৃদপিণ্ডের পেশীতে রক্ত সরবরাহ কমে গেছে। দ্রুত রোগ নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা শুরু করা গেলে রোগীর জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়।
- অ্যারিথমিয়া নির্ণয়: অনিয়মিত হৃদস্পন্দন (Arrhythmia), যেমন – অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন (Atrial fibrillation), ভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া (Ventricular tachycardia) ইত্যাদি ইসিজি-র মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়। এই অ্যারিথমিয়াগুলো জীবন-হুমকি হতে পারে, তাই দ্রুত নির্ণয় করে চিকিৎসা শুরু করা জরুরি।
- অন্যান্য হৃদরোগ নির্ণয়: ইসিজি অন্যান্য হৃদরোগ, যেমন – পেরিকার্ডাইটিস (Pericarditis), মায়োকার্ডাইটিস (Myocarditis), এবং পালমোনারি embolism (Pulmonary embolism) নির্ণয় করতেও সাহায্য করতে পারে।
- দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ: ইসিজি রিপোর্ট পাওয়ার পর ডাক্তার দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে রোগীকে কী ধরনের চিকিৎসা দিতে হবে। যেমন – thrombolysis (রক্ত জমাট বাঁধা দূর করার চিকিৎসা), এনজিওপ্লাস্টি (Angioplasty), বা ঔষধের মাধ্যমে চিকিৎসা।
জরুরী অবস্থায় দ্রুত ইসিজি করার মাধ্যমে রোগীর জীবন বাঁচানো এবং জটিলতা কমানো সম্ভব হয়।
ইসিজি নিয়ে কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQs about ECG)
এখানে ইসিজি নিয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো, যা আপনাদের মনে প্রায়ই জাগে:
-
প্রশ্ন: ইসিজি কি ক্ষতিকর?
উত্তর: না, ইসিজি একটি সম্পূর্ণ নিরাপদ পরীক্ষা। এতে কোনো প্রকার রেডিয়েশন (radiation) ব্যবহার করা হয় না এবং শরীরে কোনো কারেন্টও (current) দেওয়া হয় না।
-
প্রশ্ন: ইসিজি করার সময় কি ব্যথা লাগে?
উত্তর: না, ইসিজি করার সময় কোনো ব্যথা লাগে না। ইলেক্ট্রোড লাগানোর সময় সামান্য অস্বস্তি হতে পারে, তবে তা খুবই সামান্য।
-
প্রশ্ন: ইসিজি রিপোর্টে অস্বাভাবিক কিছু দেখা গেলে কি করতে হবে?
উত্তর: যদি ইসিজি রিপোর্টে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা যায়, তাহলে আপনার ডাক্তার আপনাকে আরও কিছু পরীক্ষা করাতে বলতে পারেন। তিনি আপনার সমস্যার কারণ নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা প্রদান করবেন।
-
প্রশ্ন: বছরে কতবার ইসিজি করা উচিত?
উত্তর: যাদের হৃদরোগের কোনো ঝুঁকি নেই, তাদের বছরে একবার ইসিজি করার প্রয়োজন নেই। তবে, যাদের হৃদরোগের ঝুঁকি আছে বা যাদের বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের মতো লক্ষণ আছে, তাদের ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ইসিজি করা উচিত।
-
প্রশ্ন: ইসিজি কি খালি পেটে করতে হয়?
উত্তর: সাধারণত ইসিজি করার জন্য খালি পেটে থাকার প্রয়োজন নেই। তবে, কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে, যেমন স্ট্রেস ইসিজি করার সময় ডাক্তার আপনাকে কিছু নির্দেশ দিতে পারেন।
আশা করি, এই FAQগুলো আপনার ইসিজি নিয়ে অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছে। যদি আপনার আরও কোনো প্রশ্ন থাকে, তবে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের সাথে আলোচনা করুন।
উপসংহার (Conclusion)
তাহলে, ইসিজি (ECG) কী, কেন করা হয়, কিভাবে করা হয় এবং এর ফলাফলগুলো কীভাবে বোঝা যায় – এই সবকিছু নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করলাম। ইসিজি একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা, যা আপনার হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য সম্পর্কে অনেক তথ্য দিতে পারে।
যদি আপনার বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, বা অন্য কোনো হৃদরোগের লক্ষণ থাকে, তাহলে দ্রুত আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন এবং ইসিজি করান। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা আপনার হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।
আপনার হৃদয়ের যত্ন নিন, সুস্থ থাকুন!
যদি এই ব্লগ পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন এবং আপনার মতামত কমেন্ট সেকশনে জানান। আপনার একটি শেয়ার হয়তো অনেকের জীবন বাঁচাতে পারে।