আসসালামু আলাইকুম, বন্ধুরা! কেমন আছেন সবাই?
আশা করি ভালো আছেন। আজ আমরা কথা বলব আমাদের চারপাশের পরিবেশের একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে – ইকোসিস্টেম। হয়ত নামটা শুনে একটু কঠিন লাগছে, কিন্তু বিশ্বাস করুন, জিনিসটা খুবই মজার আর আমাদের জীবনের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। তাহলে চলুন, দেরি না করে শুরু করা যাক!
যদি সহজ ভাষায় বলি, ইকোসিস্টেম মানে হল একটা নির্দিষ্ট জায়গায় জীবন্ত (যেমন গাছপালা, পশু পাখি, পোকামাকড়, মানুষ) আর জড় (যেমন মাটি, জল, বাতাস, সূর্যের আলো) উপাদানগুলো একসাথে মিলেমিশে কিভাবে থাকে এবং একে অপরের উপর কিভাবে নির্ভর করে, সেটাই।
ইকোসিস্টেম কী? (What is Ecosystem?)
ইকোসিস্টেম বা বাস্তুতন্ত্র হলো জীব সম্প্রদায় (Biotic Community) এবং তাদের ভৌত পরিবেশের (Abiotic Environment) মধ্যেকার পারস্পরিক সম্পর্ক। একটি ইকোসিস্টেমে বিভিন্ন জীব (উদ্ভিদ, প্রাণী, অণুজীব) এবং তাদের পরিবেশ (আলো, বাতাস, পানি, মাটি) একটি জটিল জালে আবদ্ধ থাকে। তারা একে অপরের উপর নির্ভরশীল এবং একে অপরের দ্বারা প্রভাবিত হয়।
ইকোসিস্টেমের সংজ্ঞা
বিভিন্ন বিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে ইকোসিস্টেমের সংজ্ঞা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সংজ্ঞা নিচে উল্লেখ করা হলো:
- বিজ্ঞানী ট্যান্সলি (Tansley) বলেছেন, “বাস্তুতন্ত্র হলো পরিবেশের জীব ও জড় উপাদানের মধ্যেকার পারস্পরিক ক্রিয়া এবং এদের সম্মিলিত রূপ।”
- ওডাম (Odum) এর মতে, “একটি নির্দিষ্ট এলাকায় বসবাসকারী জীব সম্প্রদায় এবং তাদের জড় পরিবেশ সম্মিলিতভাবে যে কার্যকরী একক গঠন করে, তাকে বাস্তুতন্ত্র বলে।”
ইকোসিস্টেম কিভাবে কাজ করে?
একটা ইকোসিস্টেম কিভাবে কাজ করে, সেটা বুঝতে হলে এর কিছু মূল বিষয় জানা দরকার। নিচে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো:
খাদ্য শৃঙ্খল (Food Chain) ও খাদ্য জাল (Food Web)
ইকোসিস্টেমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো খাদ্য শৃঙ্খল। এখানে, ছোট প্রাণী বড় প্রাণীকে খায়, বড় প্রাণী আরও বড় প্রাণীকে খায় – এইভাবেই শক্তি (energy) এক জীব থেকে অন্য জীবে যায়। একাধিক খাদ্য শৃঙ্খল মিলে তৈরি হয় খাদ্য জাল।
producer বা উৎপাদক : সবুজ উদ্ভিদ সূর্যের আলো ব্যবহার করে নিজেদের খাদ্য নিজেরা তৈরি করে। এরা খাদ্য শৃঙ্খলের একদম শুরুতে থাকে।
consumer বা খাদক : যারা উৎপাদকদের খায়, তারা হল খাদক। যেমন, তৃণভোজী প্রাণী (গরু, ছাগল) সরাসরি ঘাস খায়। আবার মাংসাশী প্রাণী (বাঘ, সিংহ) তৃণভোজীদের খায়।
decomposer বা বিয়োজক : এরা মৃত জীবজন্তু ও উদ্ভিদকে ভেঙে সরল পদার্থে পরিণত করে। এই পদার্থগুলো আবার প্রকৃতিতে মিশে যায় এবং উৎপাদকরা সেগুলো ব্যবহার করে। যেমন – ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক।
শক্তি প্রবাহ (Energy Flow)
সূর্যের আলো থেকে শুরু করে কিভাবে শক্তি বিভিন্ন জীবের মধ্যে প্রবাহিত হয়, সেটা বোঝা দরকার। সাধারণত, যখন এক প্রাণী অন্য প্রাণীকে খায়, তখন শক্তির কিছুটা অংশ পরিবেশে হারিয়ে যায়।
উপাদান চক্র (Nutrient Cycling)
ইকোসিস্টেমে বিভিন্ন উপাদান, যেমন কার্বন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস – এগুলো কিভাবে চক্রাকারে ঘোরে, সেটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই চক্রগুলো উপাদানগুলোকে পরিবেশে সহজলভ্য রাখতে সাহায্য করে।।
ইকোসিস্টেমের প্রকারভেদ (Types of Ecosystem)
ইকোসিস্টেম বিভিন্ন রকমের হতে পারে। এদেরকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়:
- স্থলজ ইকোসিস্টেম (Terrestrial Ecosystem): যা ভূমিতে গঠিত। যেমন: বনভূমি, তৃণভূমি, মরুভূমি।
- জলজ ইকোসিস্টেম (Aquatic Ecosystem): যা পানিতে গঠিত। যেমন: পুকুর, নদী, হ্রদ, সাগর।
স্থলজ ইকোসিস্টেম (Terrestrial Ecosystem):
- বনভূমি (Forest): গাছে পরিপূর্ণ এলাকা, যেখানে বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ ও প্রাণী বাস করে।
- তৃণভূমি (Grassland): ঘাস আচ্ছাদিত এলাকা, যেখানে তৃণভোজী প্রাণী ও পাখি দেখা যায়।
- মরুভূমি (Desert): শুষ্ক ও উষ্ণ এলাকা, যেখানে ক্যাকটাস ও কিছু বিশেষ প্রাণী টিকে থাকতে পারে।
জলজ ইকোসিস্টেম (Aquatic Ecosystem):
- পুকুর (Pond): ছোট আবদ্ধ জলাশয়, যেখানে মাছ, ব্যাঙ ও জলজ উদ্ভিদ থাকে।
- নদী (River): প্রবহমান জলের ধারা, যেখানে বিভিন্ন প্রকার মাছ ও জলজ প্রাণী বাস করে।
- হ্রদ (Lake): বিশাল আবদ্ধ জলাশয়, যেখানে মাছ, পাখি ও জলজ উদ্ভিদের সমাহার দেখা যায়।
- সাগর (Ocean): লবণাক্ত বিশাল জলরাশি, যেখানে বিভিন্ন প্রকার সামুদ্রিক মাছ, উদ্ভিদ ও প্রাণী বাস করে।
বাংলাদেশের ইকোসিস্টেম (Ecosystem of Bangladesh)
বাংলাদেশ বিভিন্ন ধরনের ইকোসিস্টেমে সমৃদ্ধ। এর মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য হলো:
- সুন্দরবন: পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন, যা রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদের আবাসস্থল।
- হাওর অঞ্চল: বর্ষাকালে প্লাবিত বিশাল এলাকা, যা মাছ ও জলজ উদ্ভিদের জন্য বিখ্যাত।
- পাহাড়ি অঞ্চল: উঁচু পাহাড় ও সবুজ বনানী সমৃদ্ধ এলাকা, যা বিভিন্ন প্রকার বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদের আবাসস্থল।
- নদী ও মোহনা: অসংখ্য নদী ও তাদের মোহনা, যা মাছ ও জলজ প্রাণীর জীবনধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
কেন ইকোসিস্টেম গুরুত্বপূর্ণ? (Importance of Ecosystem)
ইকোসিস্টেম আমাদের জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিচে এর কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হলো:
- জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ: ইকোসিস্টেম বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল, যা জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সাহায্য করে।
- প্রাকৃতিক সম্পদ সরবরাহ: ইকোসিস্টেম থেকে আমরা খাদ্য, পানি, কাঠ, ওষুধসহ অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ পেয়ে থাকি।
- পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা: ইকোসিস্টেম পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান, যেমন বায়ু, পানি ও মাটির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে।
- দুর্যোগ মোকাবেলা: বনভূমি ও ম্যানগ্রোভ বন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় থেকে আমাদের রক্ষা করে।
ইকোসিস্টেমের উপাদান (Components of Ecosystem)
একটা ইকোসিস্টেমকে ভালোভাবে বুঝতে হলে, এর উপাদানগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। মূলত, ইকোসিস্টেমের দুটো প্রধান উপাদান আছে:
- জীবজ উপাদান (Biotic Components)
- অজীবজ উপাদান (Abiotic Components)
জীবজ উপাদান (Biotic Components)
ইকোসিস্টেমের জীবন্ত অংশগুলোই হলো জীবজ উপাদান। এদের মধ্যে রয়েছে:
- উৎপাদক (Producers) : সবুজ উদ্ভিদ, যারা সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিজেদের খাদ্য তৈরি করে।
- খাদক (Consumers) : যারা উৎপাদক বা অন্য কোনো প্রাণীকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। যেমন: তৃণভোজী, মাংসাশী, সর্বভুক।
- বিয়োজক (Decomposers) : ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক, যারা মৃত জীবজন্তু ও উদ্ভিদকে পচিয়ে সরল পদার্থে পরিণত করে।
অজীবজ উপাদান (Abiotic Components)
ইকোসিস্টেমের জড় বা অজীবন্ত অংশগুলো হলো অজীবজ উপাদান। এদের মধ্যে রয়েছে:
- সূর্যালোক (Sunlight) : যা উদ্ভিদের খাদ্য তৈরির জন্য অপরিহার্য।
- তাপমাত্রা (Temperature) : যা জীবের জীবনধারণের জন্য অনুকূল হওয়া প্রয়োজন।
- বৃষ্টিপাত (Rainfall) : যা উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও প্রাণীদের পানির চাহিদা মেটায়।
- মাটি (Soil) : যা উদ্ভিদের ভিত্তি এবং বিভিন্ন খনিজ পদার্থ সরবরাহ করে।
- পানি (Water) : যা জীবনের জন্য অত্যাবশ্যকীয়।
- বায়ু (Air) : যা জীবের শ্বাস-প্রশ্বাস ও উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজন।
ইকোসিস্টেমের উপর মানুষের প্রভাব (Human Impact on Ecosystem)
মানুষের বিভিন্ন কাজকর্মের মাধ্যমে ইকোসিস্টেমের উপর খারাপ প্রভাব পড়ছে। নিচে কয়েকটি প্রধান প্রভাব আলোচনা করা হলো:
- বনভূমি ধ্বংস (Deforestation): গাছপালা কেটে ফেলার কারণে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল নষ্ট হচ্ছে এবং মাটি ক্ষয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।
- দূষণ (Pollution): কলকারখানা ও যানবাহনের ধোঁয়া এবং রাসায়নিক বর্জ্য মাটি ও পানি দূষিত করছে, যা জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর।
- জলবায়ু পরিবর্তন (Climate Change): গ্রিনহাউস গ্যাসের কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে, যা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ হচ্ছে।
- অপরিকল্পিত নগরায়ন (Unplanned Urbanization): শহরের বিস্তার লাভের জন্য জলাভূমি ভরাট করা হচ্ছে, যা জলজ প্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস করছে।
ইকোসিস্টেম সংরক্ষণে আমাদের ভূমিকা (Our Role in Ecosystem Conservation)
ইকোসিস্টেমকে রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। কিছু সহজ উপায় অবলম্বন করে আমরা আমাদের পরিবেশকে বাঁচাতে পারি:
- গাছ লাগানো (Planting Trees)
- প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো (Reduce Plastic Use)
- পানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা (Save Water and Electricity)
- পরিবেশবান্ধব পণ্য ব্যবহার করা (Use Eco-Friendly Products)
- জনসচেতনতা তৈরি করা (Create Public Awareness)
- বর্জ্য পুনর্ব্যবহার করা (Recycle Waste)
কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ):
- প্রশ্ন: খাদ্য শৃঙ্খল কিভাবে কাজ করে?
- উত্তর: খাদ্য শৃঙ্খলে একটি জীব অন্য জীবকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। এইভাবে শক্তি উৎপাদক থেকে খাদকের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়।
- প্রশ্ন: ইকোসিস্টেমের ভারসাম্য কিভাবে রক্ষা করা যায়?
- উত্তর: পরিবেশ দূষণ কমিয়ে, বনভূমি রক্ষা করে এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের মাধ্যমে ইকোসিস্টেমের ভারসাম্য রক্ষা করা যায়।
- প্রশ্ন: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইকোসিস্টেমের উপর কি প্রভাব পড়ে?
- উত্তর: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বাড়ে, যা অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবনধারণের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেও ইকোসিস্টেমের ক্ষতি হয়।
এই ছিলো ইকোসিস্টেম নিয়ে কিছু কথা। আশা করি, আপনারা সবাই বুঝতে পেরেছেন ইকোসিস্টেম কী, কত প্রকার, এবং আমাদের জীবনে এর গুরুত্ব কতটুকু।
মনে রাখবেন, আমাদের এই পৃথিবী একটাই, আর এর পরিবেশকে বাঁচানো আমাদের সকলের দায়িত্ব।
ইকোসিস্টেম নিয়ে আরও কিছু দরকারি তথ্য
ইকোসিস্টেমকে বুঝতে হলে আরও কিছু বিষয় জানতে হবে। আসুন, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করি।
ইকোসিস্টেমের স্থিতিশীলতা (Ecosystem Stability)
একটা ইকোসিস্টেম কতটা স্থিতিশীল, সেটা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। স্থিতিশীলতা মানে হলো, কোনো একটা ইকোসিস্টেম কত সহজে বাইরের কোনো পরিবর্তনে ভেঙে না পড়ে টিকে থাকতে পারে।
- জীববৈচিত্র্য (Biodiversity): একটি ইকোসিস্টেমে যত বেশি প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী থাকবে, সেটি তত বেশি স্থিতিশীল হবে। কারণ, কোনো একটি প্রজাতি ক্ষতিগ্রস্ত হলে অন্য প্রজাতিগুলো সেই অভাব পূরণ করতে পারে।
- জলবায়ু (Climate): জলবায়ু স্থিতিশীল না থাকলে ইকোসিস্টেমের উপর খারাপ প্রভাব পড়ে। যেমন, অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা আবহাওয়া অনেক জীবের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
- মানুষের হস্তক্ষেপ (Human Intervention): মানুষের বিভিন্ন কার্যকলাপ, যেমন বনভূমি ধ্বংস বা দূষণ, ইকোসিস্টেমের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে পারে।
কী-স্টোন প্রজাতি (Keystone Species)
কিছু প্রজাতি আছে, যারা ইকোসিস্টেমের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এদেরকে কী-স্টোন প্রজাতি বলা হয়। এরা সংখ্যায় কম হলেও, পুরো ইকোসিস্টেমের ওপর এদের বিশাল প্রভাব থাকে।
- বাঘ (Tiger): বাঘ বনভূমির খাদ্য শৃঙ্খলের শীর্ষে থাকে এবং হরিণ ও অন্যান্য তৃণভোজী প্রাণীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে। যদি বাঘের সংখ্যা কমে যায়, তাহলে তৃণভোজীর সংখ্যা বেড়ে গিয়ে গাছপালা খেয়ে ফেলবে, যা বনভূমির ভারসাম্য নষ্ট করবে।
- হাতি (Elephant): হাতি বনভূমিতে হাঁটার সময় ছোট গাছপালা ভেঙে ফেলে, যা নতুন গাছের চারা জন্মানোর সুযোগ করে দেয়। এছাড়া, হাতির বিষ্ঠা অনেক উদ্ভিদের বীজ ছড়াতে সাহায্য করে।
- শামুক (Seashell): এরা সমুদ্রের তলদেশে থাকে এবং শৈবাল খেয়ে পরিষ্কার রাখে। যদি শামুকের সংখ্যা কমে যায়, তাহলে শৈবালের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে অন্যান্য জীবের জন্য সমস্যা তৈরি করবে।
ইকোসিস্টেম পরিষেবা (Ecosystem Services)
ইকোসিস্টেম আমাদের অনেক ধরনের সুবিধা দিয়ে থাকে, যেগুলোকে ইকোসিস্টেম পরিষেবা বলা হয়। এই পরিষেবাগুলো আমাদের জীবনযাত্রার জন্য খুবই দরকারি।
- বিশুদ্ধ বাতাস ও পানি (Clean Air and Water): গাছপালা বাতাস থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে অক্সিজেন দেয় এবং পানি পরিশোধন করে।
- খাদ্য ও ঔষধ (Food and Medicine): আমরা ইকোসিস্টেম থেকে অনেক ধরনের খাদ্য ও ঔষধ পেয়ে থাকি। যেমন, মাছ, ফল, সবজি, এবং বিভিন্ন ঔষধি গাছ।
- পরাগায়ন (Pollination) : মৌমাছি ও অন্যান্য কীটপতঙ্গ ফুল থেকে পরাগরেণু বয়ে নিয়ে যায়, যা ফল ও বীজ উৎপাদনে সাহায্য করে।
- পর্যটন ও বিনোদন (Tourism and Recreation) : অনেক ইকোসিস্টেম, যেমন বনভূমি ও সমুদ্র সৈকত, পর্যটনের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।
ইকোসিস্টেমের প্রকারভেদ: আরও গভীরে
আমরা আগেই জেনেছি ইকোসিস্টেম প্রধানত দুই প্রকার- স্থলজ এবং জলজ। এবার এদের আরও কিছু প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করি।
আরও কিছু স্থলজ ইকোসিস্টেম (More Terrestrial Ecosystems)
- তুন্দ্রা (Tundra): এটি উত্তর মেরুর কাছাকাছি অবস্থিত। এখানে মাটি বরফে ঢাকা থাকে এবং খুব অল্প কিছু গাছপালা জন্মায়।
- তাইগা (Taiga): এটি উত্তর আমেরিকার উত্তরে এবং ইউরোপের কিছু অংশে দেখা যায়। এখানে সরলবর্গীয় গাছের বন রয়েছে।
- ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্য (Tropical Rainforest): এটি নিরক্ষীয় অঞ্চলের কাছাকাছি অবস্থিত। এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এবং জীববৈচিত্র্য খুব বেশি।
আরও কিছু জলজ ইকোসিস্টেম (More Aquatic Ecosystems)
- প্রবাল প্রাচীর (Coral Reef): এটি সমুদ্রের তলদেশে গঠিত হয় এবং বিভিন্ন প্রকার সামুদ্রিক জীবের আবাসস্থল।
- ম্যানগ্রোভ বন (Mangrove Forest): এটি উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ত পানিতে জন্মায় এবং ঝড়-ঝঞ্ঝা থেকে উপকূল রক্ষা করে।
- মোহনা (Estuary): এটি নদীর মোহনায় অবস্থিত, যেখানে নদীর মিঠা পানি ও সমুদ্রের লবণাক্ত পানি মেশে।
ইকোসিস্টেমের সংকট ও সমাধান
আমাদের চারপাশে ইকোসিস্টেম নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই সংকটগুলো মোকাবিলা করতে না পারলে আমাদের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়বে।
সংকটগুলো কী কী?
- দূষণ (খাদ্য, বায়ু, পানি): কলকারখানা ও যানবাহনের কারণে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
- ভূমিক্ষয় : নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে ভূমিক্ষয় বাড়ছে, যা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে।
- জলাভূমি হ্রাস : শহর তৈরি ও চাষের জমির জন্য জলাভূমি ভরাট করা হচ্ছে, যা জলজ প্রাণীদের আবাসস্থল ধ্বংস করছে।
- অতি শিকার : অতিরিক্ত মাছ ধরা ও বন্যপ্রাণী শিকার করার ফলে অনেক প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
সমাধানের উপায়
- টেকসই উন্নয়ন : পরিবেশের ক্ষতি না করে উন্নয়নমূলক কাজ করা।
- পুনর্ব্যবহার ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা : রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে বর্জ্য কমিয়ে পরিবেশবান্ধব অভ্যাস তৈরি করা।
- জৈব চাষ : রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে জৈব সার ব্যবহার করা।
- ইকো-ট্যুরিজম : পরিবেশের ক্ষতি না করে পর্যটন কেন্দ্রগুলো পরিচালনা করা এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে সাহায্য করা।
- আইন ও নীতি তৈরি : পরিবেশ রক্ষার জন্য কঠোর আইন তৈরি করা ও তার সঠিক প্রয়োগ করা।
ইকোসিস্টেম আমাদের জীবনের ভিত্তি। একে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। আসুন, আমরা সবাই মিলে আমাদের পরিবেশকে বাঁচাই এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলি।