আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “ঈদ উৎসব“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।
ঈদ উৎসব
ভূমিকা : বিশ্বের মুসলমানরা প্রতিবছর দুটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব পালন করে থাকে। বাঙালি মুসলমানরা তাদের অন্যান্য সাংস্কৃতিক উৎসবগুলো বছরের নির্দিষ্ট সময়ে পালন করে থাকে। কিন্তু ইসলাম ধর্মের দুটি প্রধান উৎসব বিশ্বের অন্যান্য মুসলমানদের মতোই আনন্দ আর ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে উদযাপন করেন। ঈদ হলো খুশি। মহানবি (স) বলেছেন- “প্রত্যেক জাতির উৎসব আছে। আমাদের উৎসব হলো ঈদ।” ঈদ আমাদের জাতীয় উৎসব। ঈদ ইসলামের বার্ষিক সামাজিক পবিত্র ইবাদত অনুষ্ঠানও বটে ।
দুই ঈদ : মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসবগুলো সমগ্র মুসলিম বিশ্বে অত্যন্ত মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয়। তার মধ্যে ঈদ সবচেয়ে বড় আনন্দ উৎসব । মুসলমানরা ধর্মীয় নির্দেশনা অনুসারে প্রতিবছর দুটি ঈদ উৎসব পালন করে। প্রথমটি হল ঈদুল ফিতর এবং দ্বিতীয়টি হলো ঈদুল আজহা ।
ঈদুল ফিতর : ঈদ অর্থ আনন্দ বা খুশি। আর ফিতর অর্থ হল ভঙ্গ করা। অতএব ঈদুল ফিতর অর্থ হলো সাওম ভঙ্গ করার আনন্দ । পুরো রমজান মাস রোজা পালনের পর শাওয়াল মাসের প্রথম তারিখে উদযাপিত হয় ঈদুল ফিতর। এদিন আমরা রোজা ভঙ্গ করি। কাজেই এ দিনটি হলো মহা আনন্দের । এদিন ধনী-গরিব সকলেই সমানভাবে আনন্দ উপভোগ করে। তাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকে না। ধর্মীয় দিক থেকেও দিনটির অনেক তাৎপর্য আছে। এ সম্পর্কে মহানবি (স) বলেন— “ঈদুল ফিতরের দিন আল্লাহ রোজাদার বান্দাদের সব গুণাহ মাফ করে দেন । শুধু তাই নয় । আল্লাহ তাদের গুণাহগুলো বদলিয়ে নেকিতে পরিণত করেন।’
ঈদুল আজহা : ঈদ মানে আনন্দ। আর আজহা মানে কোরবানি। কাজেই ঈদুল আজহার অর্থ হলো কোরবানির আনন্দ। মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আ) ও তাঁর পুত্র হযরত ইসমাইল (আ)-এর আত্মনিবেদন করার ঐতিহাসিক স্মৃতি স্মরণে প্রতিবছর মুসলমানরা পশু কোরবানি ও দুরাকাত নামাজ আদায় করেন। এ কোরবানি উপলক্ষে যে আনন্দ তা হলো ঈদুল আজহা। জিলহজ মাসের ১০ তারিখে সকল মুসলমান সমবেত হয়ে ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করেন অতঃপর সাধ্যমতো সকলেই গরু, ছাগল, ভেড়া, উট প্রভৃতি কোরবানি দেন। এদিন ত্যাগের নিদর্শনস্বরূপ যেমন কোরবানি দেওয়া হয় তেমনি গরিব লোক ও আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে কোরবানির মাংস বিতরণের মাধ্যমে ঈদের আনন্দকে পরিপূর্ণ করে তোলা হয় ।
ঈদের পূর্বপ্রস্তুতি : ঈদের দিনটির জন্য আমরা ছোটবড় সকলেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি। ঈদের প্রস্তুতি হিসেবে আমরা সকলেই ঘর সুন্দর করে সাজানোর জন্যও অনেক কেনাকাটা করা হয়। বাড়ি-ঘর ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা হয়। যাদের সাধ্য থাকে নতুন জামা-কাপড় কিনে থাকি। এ ব্যাপারে বড়দের অপেক্ষা ছোটদের আগ্রহ বেশি থাকে। নিজের জামা-কাপড়ের পাশাপাশি বাড়ি তারা জাকাত হিসেবে টাকা-পয়সার পাশাপাশি জামা-কাপড়ও দিয়ে থাকে। আবার ঈদুল আজহার পূর্বেই কোরবানির পশু কিনে রাখা হয় । এছাড়া ঈদের দিন অথবা ঈদের পরের দিন লোকজন যে যেখানে বেড়াতে যাবে তার প্রস্তুতি পূর্বেই নিয়ে রাখে।
ঈদের দিনের আনন্দ : ঈদ বিশ্ব মুসলিম জাহানের সবচেয়ে বড় আনন্দ উৎসব। প্রত্যেক মুসলমানের কাছে ঈদের আগমনটি অনেক আনন্দের, অনেক প্রত্যাশার। বহু প্রতীক্ষার পর যখন আকাশে ঈদের চাঁদ ওঠে, তখন মনপ্রাণ উল্লসিত হয়ে ওঠে। ঈদের দিন সকলেই খুব সকালে ওঠে এবং গোসল করে নতুন জামাকাপড় পরিধান করে। ছোটরা তাদের নতুন জামা-কাপড় পরে বড়দের সালাম করে এবং সালামি নেয় । এ ব্যাপারটি ছোটদের কাছে অনেক আনন্দের। বাড়িতে অনেক প্রকারের রান্না-বান্না করা হয়। ঈদের দিন সেমাই, ফিরনি, পোলাও প্রভৃতি বিভিন্ন প্রকার ঝালমিষ্টি খাবারের আয়োজন করা হয়। সকালবেলা একটু খেয়ে সকলে ঈদের মাঠে যায় নামাজ পড়তে। ঈদগাহে সকলেই শুভেচ্ছা বিনিময় করে এবং পূর্বের শত্রুতা ভুলে একে অপরকে বুকে জড়িয়ে নেয় ও কোলাকুলি করে। এদিন সকলেই বাড়িতে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের আপ্যায়ন করায়। এতিম গরিব-দুঃখীদের খাওয়ায় ও দান খয়রাত করে। সরকারিভাবে জেলখানায় ও দুঃস্থদের জন্য ভালো খাবারের আয়োজন করা হয়। অনেকেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিভিন্ন স্থানে বেড়াতে যায়। সরকারি বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। পত্র-পত্রিকাগুলোও এদিন বিশেষ সংখ্যা বের করে। ঈদের দিনগুলো ধর্মীয় চেতনার সঙ্গে আনন্দের সংযোগে হয়ে ওঠে পবিত্রতম অনুভূতিতে আনন্দমুখর। ধর্মীয় পবিত্রতার সঙ্গে আনন্দ সম্পর্কিত হওয়ায় যে অনুভূতির সঞ্চার হয় তার তুলনা নেই। এ আনন্দ মানুষের সকল দুঃখ, যন্ত্রণা, হিংসা, বিদ্বেষ, ছোটবড় ভেদাভেদ ভুলিয়ে দিয়ে সৃষ্টি করে সম্প্রীতির বন্ধন ।
উপসংহার : ঈদ উৎসব আনন্দের, সাম্যের, পুণ্যের এবং সহানুভূতির বার্তা নিয়ে আসে। কিন্তু আমাদের সমাজব্যবস্থায় সে আদর্শের সার্থকতা খুঁজে পাওয়া যায় না। বিত্তবানরা ঈদের আনন্দ করতে গিয়ে গরিব-দুঃখীদের কথা মনে রাখে না। সমাজ জীবন থেকে এ বৈষম্য দূর করতে ইসলাম নির্দেশিত পথে ঈদ উৎসব উদযাপন করতে হবে। ঈদের অনুশাসনের মধ্য দিয়ে মানুষে মানুষে যে সম্প্রীতির কথা বলা হয়েছে সেদিকে মনোযোগ রেখেই ঈদ উৎসব পালন করতে হবে। ঈদের আনন্দ গরিব-দুঃখী সকলে ভাগাভাগি করে নিতে পারলেই ঈদকে সার্থক করে তোলা যায় ।
সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করছি আমাদের এই পোস্ট থেকে রচনা যেটি তুমি চাচ্ছিলে সেটি পেয়ে গিয়েছ। যদি তুমি আমাদেরকে কোন কিছু জানতে চাও বা এই রচনা নিয়ে যদি তোমার কোনো মতামত থাকে, তাহলে সেটি আমাদের কমেন্টে জানাতে পারো। আজকের পোস্টে এই পর্যন্তই, তুমি আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করে আমাদের বাকি পোস্ট গুলো দেখতে পারো।