আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “একটি গ্রীষ্মের দুপুর“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।
একটি গ্রীষ্মের দুপুর
ভূমিকা : গ্রীষ্মের দুপুর ঝাঁঝালো, ঘামঝরা এবং ক্লান্তিকর। অন্যান্য ঋতুর দুপুরের মতো নয়। একেবারেই পৃথক এবং অসহনীয় । রোদের খর তাপ আর দাবদাহে মানুষ কেবলই খোঁজে ছায়া আর পিপাসা মেটানোর ঠান্ডা পানি। এ সময় প্রকৃতিও হয়ে ওঠে রুক্ষ।
বৈশিষ্ট্য : বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ দুমাস গ্রীষ্মকাল। বসন্তের পুষ্প পেলবতা তখন প্রকৃতি থেকে দূর হয়ে যায়। চৈত্রে দেখা দেয় গ্রীষ্মের প্রখর রোদের ইঙ্গিত । বৈশাখে তার প্রচণ্ড প্রকাশ কালবৈশাখী রূপে । রুদ্র বৈশাখ তার যে পিঙ্গল জটাজাল নিয়ে আসে তার স্বরূপটি দুপুর বেলাতেই যথার্থ অনুধাবন করা যায়। গ্রীষ্মের এ দাবদাহ প্রকাশ করার সময় দুপুর বেলা। গ্রীষ্মের দুপুরে মাটি হয়ে ওঠে তৃষ্ণার্ত। সমগ্র প্রকৃতি, গাছপালা, পশু-পাখি, মানুষ পানির অভাবে অতিষ্ঠ হয়ে আর্তনাদ করে। “আল্লাহ্ মেঘ দে, পানি দে, ছায়া দে রে তুই” বলে আকুল প্রার্থনা নিবেদিত হয় প্রকৃতির বুকে।
গ্রামের দুপুরে একা : গ্রীষ্মের দুপুরে একবার গ্রামের বাড়িতে এসে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করলাম। আমি সেদিন আবিষ্কার করলাম যে, আমি দগ্ধ প্রান্তরের মতো মুক্ত, পত্রশোভিত বৃক্ষের মতো সজীব, দমকা হাওয়ার মতো উদ্দাম; আমি রূপ-রস-গন্ধময় পৃথিবীর পরমাত্মীয় । শহরের পাগল করা কোলাহলের অনেক দূরে আমার সেই শান্তির নীড় গ্রাম । হরীতকীর স্নিগ্ধ ছায়ায় শয্যা রচনা করে বসে আছি। চারদিক নিস্তব্ধ নিঝুম। আকাশ থেকে যেন আগুন ঝরছে। নিজের উষ্ণতায় সূর্যের কিরণ পর্যন্ত যেন জ্বলে পুড়ে অস্থির হয়ে পড়েছে। সে দুঃসহ জ্বালা সহ্য করতে না পেরে সূর্যকিরণ যেন আমার বাড়ির সামনের পুকুরের শ্বেত পদ্মের মৃণাল বেয়ে অতল জলের আহ্বানে নিচে নেমে নিজেকে শীতল করছে। মাঝে মাঝে ক্ষুদ্রাকার ঘূর্ণি হাওয়া উঠে ঝরে পড়া আম-কাঁঠালের শুকনো পাতা কুড়িয়ে নিয়ে খেলা করছে। সুনীল আকাশের গা বেয়ে দু-এক খণ্ড সাদা মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। তারই ফাঁকে ফাঁকে ক্লান্ত চিল পাতার মতো উড়ছে । আর তৃষ্ণার্ত কাক ডাকছে কা-কা ।
নির্জন দুপুরের বর্ণনা : আমি একা বসেই আছি। পাশের গ্রামের কর্মকারের হাতুড়ির শব্দ শোনা যায় ঠুং ঠাং। সামনের আমবাগানে কানেটি পাড়ার ছেলেমেয়েদের বনভোজনের আয়োজন চলছে। বটবৃক্ষের ঘন পাতার আড়াল থেকে দুটি ক্লান্ত ঘুঘুর পিপাসাকাতর সুর মনকে উদাস করে দিল । দু-তিনটে বালক কচি আমের গুটি লক্ষ করে ঢিল ছুড়ছে। একটি বালক পাথরে ঝিনুক ঘষে তাকে ধারালো করে তুলছে। পুরনো কাগজের পোঁটলা করে লবণ আগেই এনে রেখেছে। অচিরেই শুরু হবে লবণ দিয়ে আম খাওয়া নদীর ঘাটে ছেলেদের অসম্ভব ভিড়। কেউ পাড় থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ছে নদীতে। কেউ গামছায় পানি ভরে ঢালার চেষ্টা করছে। কেউ বা গামছার সাহায্যে জাল তৈরি করে মাছ ধরার বৃথা চেষ্টা করছে।
পথে জনপ্রাণীর চলাচল নেই বললেই চলে। এ প্রচণ্ড রোদ মাথায় করে যারা পথ চলে স্বীকার করতেই হবে তাদের প্রয়োজন বিশ্রামের অপেক্ষা রাখে না। মাঠে কৃষকদের তেমন কোনো কাজকর্ম নেই। ধান-পাট নিড়িয়ে দেওয়ার কাজ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। এ অলস দুপুরে তাই তাদের কেউ গাছতলায় শুয়ে ঘুমোচ্ছে, কেউবা খোশগল্পে মেতেছে। কিন্তু এ দুপুরে কাঁঠালতলায় নিজেকে বড় একা এবং অসহায় মনে হলো ।
কালবৈশাখী : গ্রীষ্মকালই কালবৈশাখীর যথার্থ সময়। সাধারণত বিকেলের দিকে শুরু হয় কালবৈশাখী। আবার কখনো দুপুরেও এর | তাণ্ডবলীলা শুরু হয়। বিপর্যস্ত হয় জনজীবন । কালবৈশাখীর আশঙ্কা দেখা দিলে মানুষ দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায় ।
উপসংহার : অন্তত বছরে একবার হলেও প্রাকৃতিক ভারসাম্যের প্রয়োজনে প্রকৃতির রুদ্র রূপেরও দরকার আছে। গরম, ঝড় আর অগ্নিকাণ্ডের আতঙ্ক থাকে এ সময়। আবার পহেলা বৈশাখ আর রসাল ও ফলের আমেজ দেহ-মন ভরিয়ে তোলে।
সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করছি আমাদের এই পোস্ট থেকে রচনা যেটি তুমি চাচ্ছিলে সেটি পেয়ে গিয়েছ। যদি তুমি আমাদেরকে কোন কিছু জানতে চাও বা এই রচনা নিয়ে যদি তোমার কোনো মতামত থাকে, তাহলে সেটি আমাদের কমেন্টে জানাতে পারো। আজকের পোস্টে এই পর্যন্তই, তুমি আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করে আমাদের বাকি পোস্ট গুলো দেখতে পারো।