আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “একটি পূর্ণিমা রাত“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।
একটি পূর্ণিমা রাত
ভূমিকা : আলো-আঁধারের বিরোধ চিরকালের। তাই যেখানে আলো সেখানে আধারের ঠাঁই হয় না। আঁধার পালিয়ে বেড়ায় আলোর দৃষ্টির বাইরে । জ্যোৎস্না আলোর পশরা নিয়ে আঁধারের বুক বিদীর্ণ করে রাতের পৃথিবীতে এলেও দিনের স্পষ্টতা তার নেই। রাতের আঁধার বাস্তব জগতের রেখা মুছে দিয়ে দিনের পৃথিবীকে কালোর ছোপে দৃষ্টির আড়াল করে দেয়। জ্যোৎস্না এসে যেন তাকে মুক্তিদান করে। অবশ্য জ্যোৎস্না রাতের মায়া চিরকাল সৌন্দর্য পিপাসু মানুষের মনকে আকর্ষণ করেছে। কবির গানে শুনেছি চকোর চাঁদের সুধা পান করে চেয়েছে চকোরীর নিবিড় সান্নিধ্য। স্নিগ্ধ চাঁদের আলোতে বসে শিশু মায়ের কাছে ছড়া শোনার বায়না ধরে, ছোটরা বুড়ো দাদির কাছে রূপকথার কাহিনী শুনতে ভালোবাসে। জ্যোৎস্না একটা অস্পষ্ট মায়ালোকের আমেজ ছড়িয়ে দেয় । আধো আলো, আধো আঁধারে ভরে দেয় রাতের কালো পৃথিবীকে। তাই চাঁদনী বা জ্যোৎস্না রাত এমন মাধুর্যমণ্ডিত ।
রাতের অবস্থা : রাত কথাটাই কেমন যেন অসুন্দরের আগমনী ঘোষণা করে। রাত্রি তার কালো আঁধারের যবনিকা টেনে পৃথিবীর সুন্দর মুখকে ঢেকে দেয়। জ্যোৎস্না সেই কালো আঁধারের পর্দা সম্পূর্ণ সরিয়ে দিতে না পারলেও অনেকটা সফল হয়। সে পৃথিবীকে স্পষ্টতা যদিও দিতে পারে না, তবুও রাতের সম্পূর্ণ অস্পষ্টতা থেকে তাকে মুক্তি দিতে স্বপ্নময় করে তোলে । চাঁদনী রাতে পৃথিবীর চেহারা অন্ধকারে বিলীন হয়ে যায় না, অথচ প্রত্যক্ষ স্পষ্টতাও প্রাপ্ত হয় না। এ যেন অনেকটা সুন্দরী তন্বী দেহের পাতলা আবরণের মতো দেখা যায়, অথচ স্পষ্ট হয়ে ওঠে না। দৃষ্টিকে কেমন যেন অতৃপ্ত আগ্রহে ভরে তোলে। জ্যোৎস্না রাত তাই কবির রহস্যঘন কবিতার মতো শিল্পীর দক্ষ হাতের শিল্পকর্মের মতো। তাই তার তুলনা হয় না ।
রূপসৌন্দর্য : পল্লিগ্রামে বাড়ি। প্রায় উঠানের ধার দিয়ে ছোট নদী বয়ে গেছে। বাড়ির পেছনে অনেক কলাগাছের সারি। দক্ষিণে এবং বামে আম, জাম, সুপারি ও নারকেল বৃক্ষের সমারোহ। হাতে কোনো জরুরি কাজ ছিল না। মনে স্বস্তি ছিল। দহলিজ ঘরে বসে ছিলাম নিরিবিলি। ছোটরা সুর করে পড়া মুখস্থ করছিল, কামলারা বসে বসে পাটের দড়ি বানাচ্ছিল, শিকা তৈরি করছিল, ডালি ডালা মেরামত করছিল, বয়স্ক কেউ কেউ হুঁকো টানছিল। আমার মা পাশের ঘরে কাজের শেষে একা বসে মিষ্টি সুরে পবিত্র কুরআন পাঠ করছিলেন। কুরআনের সুমধুর আয়াত ও ধ্বনিতরঙ্গ আমার সমগ্র মনকে কোন এক অজানালোকে টেনে নিয়ে গেল। সামনে তাকিয়ে দেখতে পেলাম শান্তি নদীর রুপালি বিস্তার। আকাশ মেঘমুক্ত ছিল। পূর্ণিমার পূর্ণশশীর স্নিগ্ধ জ্যোৎস্নাধারা সুদূর অন্তরীক্ষ থেকে নদী বুকে আনন্দে লুটিয়ে পড়ছে। ছোট ছোট নদীর ঢেউ; স্রোতের আবর্ত; ভাসমান কচুরিপানা চাঁদের অমিয় ধারায় সিক্ত হয়ে এক মায়াবীলোকের স্বপ্ন রচনা করল। দহলিজ থেকে নেমে নদীর তীরে গেলাম। আকাশ থেকে ঝরে ঝরে নেমে আসছে জোছনা ধারা। নদীর ছোট ছোট ঢেউ জোছনার সোনালি রেণু মেখে খিল্ খিল করে হেসে উঠছে। মনে হচ্ছে ঢেউ না; সোনালি ইলিশ খেলা করছে আলতো নদীর বুকে। নদীর বাঁকে বাঁকে ঘুমন্ত বৃক্ষপুঞ্জে চাঁদের আলো লুটিয়ে পড়েছে। মনে হচ্ছে লতা, পাতা, ফুল, পাখির বাসা স্নিগ্ধ জ্যোৎস্নায় সিক্ত হয়ে স্বর্গীয় শোভা ধারণ করেছে। দূরে এ নিঝুম জ্যোৎস্না-রাতে কটি জেলে নৌকা চাঁদের মদিরা পান করে দুলছে মৃদু মৃদু। উপরে তাকিয়ে দেখি, জলহারা মেঘ আলস্যে ভাসছে। তাদের সাদা সাদা শরীরের প্রান্ত ছুঁয়ে জ্যোৎস্না সোনালি পাড় বুনে দিয়েছে । জ্যোৎস্না মোড়ানো মেঘপুঞ্জ, নদীর তরঙ্গমালা, নিঝুম কুঞ্জছায়া আমার চেতনার জগতে স্বর্গীয় পুলক বইয়ে দিল ।
কলা বাগান : কিছুক্ষণ আনমনে হাঁটাহাঁটি করলাম বাড়ির পেছনের কলাবাগানের ভেতর দিয়ে। কচি কলাপাতায় জ্যোৎস্না এঁকে দিয়েছে অনন্য আল্পনা। কলাবাগানের প্রান্ত ছুঁয়ে যে সরু রাস্তাটি এঁকেবেঁকে সামনের কাঁঠাল বাগানের ভেতর দিয়ে দূর গাঁয়ে মিশে গেছে— সেখানে এ জ্যোৎস্না রাতে আলো-ছায়ার এক গহিন রহস্য খেলা শুরু হয়ে গেছে। কিছুদূর হাঁটলাম সেই পথ ধরে; আবার ফিরে এলাম নদীর তীরে ।
নারিকেল গাছ : সহসা দৃষ্টি পড়ল নারিকেল গাছের উপর। মৃদুমন্দ সমীরণে নারিকেল গাছের ঝিরিঝিরি সবুজ পত্রপুঞ্জ চঞল কিশোরীর মতো নেচে চলেছে। যেন তাদের নাচে উল্লসিত হয়ে, আকাশ থেকে ফুলপরিরা মুঠোমুঠো জ্যোৎস্না ছড়িয়ে দিচ্ছে চারদিকে। ফুলপরিদের ছড়ানো জ্যোৎস্নার রেণু মেখে নারিকেল পত্রগুচ্ছ গরবিনী বাঁকা চোখে চেয়ে আছে। জ্যোৎস্না রাতের গুবাক তরুর সারি কবিতার পঙ্ক্তি হয়ে ধরা পড়ে আমার কল্পনা জগতে ।
কাশবন : দূরে কাশবনে ডেকে উঠল রাতের শিয়াল। তাদের হুক্কাহুয়া ডাকে একসাথে গুঞ্জন করে উঠল রাতজাগা পাখির ঝাঁক। দেখতে পেলাম নদী-তীরের কাশবন জুড়ে জ্যোৎস্না যেন নদীর স্রোতের মতো উছলে পড়েছে। জ্যোৎস্না-প্লাবিত এ কাশবন; কল- কাকলি মুখরিত ঐ রেণু কুঞ্জ; আম কাঁঠালের নিকুঞ্জ শোভিত পল্লি কুটির সৌন্দর্যের মূর্ত প্রতীক হয়ে ধরা পড়ে আমার চেতনার জগতে । জ্যোৎস্না রাতে একটা স্নিগ্ধ চেতনায় সারা দেহ মন আচ্ছন্ন হয়ে গেল ।
উপসংহার : চাঁদনী রাতের এ সৌন্দর্য ভোলার মতো নয়। তাইতো কবি যথার্থই বলেছেন—”A thing of beauty is a joy forever.” বিশুদ্ধ সৌন্দর্য চেতনায় মানবচিত্ত কামনা-বাসনার ঊর্ধ্বে এক অমিয় জগতে আরোহণ করে। জ্যোৎস্না রাত আমার চোখে বুলিয়ে দেয় রূপের অঞ্জন । সুন্দরের কাছে নত মানবচিত্তই বিশ্ব স্রষ্টার শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশে পরিপূর্ণ সক্ষম।
সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করছি আমাদের এই পোস্ট থেকে রচনা যেটি তুমি চাচ্ছিলে সেটি পেয়ে গিয়েছ। যদি তুমি আমাদেরকে কোন কিছু জানতে চাও বা এই রচনা নিয়ে যদি তোমার কোনো মতামত থাকে, তাহলে সেটি আমাদের কমেন্টে জানাতে পারো। আজকের পোস্টে এই পর্যন্তই, তুমি আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করে আমাদের বাকি পোস্ট গুলো দেখতে পারো।