গণতন্ত্রের মানসপুত্র: কে তিনি এবং কেন তিনি এত গুরুত্বপূর্ণ?
গণতন্ত্রের পথে আমাদের যাত্রা মসৃণ ছিল না। অনেক ত্যাগ, সংগ্রাম আর রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আজকের এই স্বাধীন বাংলাদেশ। আর এই পথ দেখিয়েছেন যে কয়েকজন মহান নেতা, তাঁদের মধ্যে একজন ‘গণতন্ত্রের মানসপুত্র’। কিন্তু, গণতন্ত্রের মানসপুত্র আসলে কাকে বলা হয়? কেনই বা তিনি এই বিশেষণে ভূষিত? চলুন, আজ সেই ইতিহাস আর মানুষটিকে জেনে নিই।
কে এই গণতন্ত্রের মানসপুত্র?
গণতন্ত্রের মানসপুত্র বলা হয় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে। হ্যাঁ, সেই প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ, যিনি ছিলেন একাধারে আইনজ্ঞ, জননেতা এবং দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক। তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রভাবশালী বাঙালি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
- জন্ম: ১৮৯২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের (তৎকালীন ব্রিটিশ ভারত) মেদিনীপুরে তাঁর জন্ম।
- রাজনৈতিক জীবন: ছাত্রজীবন থেকেই তিনি அரசியগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯২০ এর দশকে তিনি কলকাতা কর্পোরেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এরপর থেকে তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু।
- অবদান: হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সবচেয়ে বড় অবদান হল ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পূর্বে মুসলিম লীগকে সংগঠিত করা এবং পাকিস্তানের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বাধীন জোট বিপুল জয় লাভ করে।
কেন তাঁকে গণতন্ত্রের মানসপুত্র বলা হয়?
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে গণতন্ত্রের মানসপুত্র বলার কারণগুলো আলোচনা করা যাক:
গণতান্ত্রিক আদর্শের প্রতি অবিচল আস্থা
সোহরাওয়ার্দী ছিলেন গণতন্ত্রের একনিষ্ঠ ধারক ও বাহক। তিনি বিশ্বাস করতেন জনগণের ক্ষমতা আর মত প্রকাশের স্বাধীনতাই একটি জাতির উন্নতির মূল ভিত্তি। তাঁর রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে তিনি গণতন্ত্রের আদর্শকে সমুন্নত রেখেছেন।
গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম
ব্রিটিশ শাসনের সময় থেকে শুরু করে পাকিস্তান আমল পর্যন্ত, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলস সংগ্রাম করেছেন। তিনি জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য বিভিন্ন আন্দোলন ও সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচন
১৯৫৪ সালের নির্বাচনে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে গঠিত যুক্তফ্রন্ট সরকারের কথা আমরা সবাই জানি। এই নির্বাচনে মুসলিম লীগের ভরাডুবি হয়েছিল। যুক্তফ্রন্ট ছিল মূলত কয়েকটি বিরোধী দলের সমন্বিত একটি জোট, যা জনগণের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছিল। এই নির্বাচন প্রমাণ করে যে জনগণ পরিবর্তন চায় এবং গণতন্ত্রের প্রতি তাদের আস্থা রয়েছে।
সংবিধান প্রণয়নে ভূমিকা
পাকিস্তানের সংবিধান প্রণয়নে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তিনি এমন একটি সংবিধানের পক্ষে ছিলেন, যা দেশের সকল নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করবে এবং একটি গণতান্ত্রিক কাঠামো তৈরি করবে।
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর রাজনৈতিক জীবন
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর রাজনৈতিক জীবন ছিল বর্ণাঢ্য। নিচে তাঁর উল্লেখযোগ্য কিছু দিক তুলে ধরা হলো:
শুরুর দিকের রাজনৈতিক জীবন
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি খিলাফত আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং এরপর থেকে জাতীয় রাজনীতিতে তাঁর যাত্রা শুরু হয়।
কলকাতা কর্পোরেশনের কাউন্সিলর
১৯২০-এর দশকে তিনি কলকাতা কর্পোরেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন এবং জনগণের কল্যাণে কাজ করেন।
মুসলিম লীগে যোগদান
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মুসলিম লীগে যোগদান করেন এবং দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হন। তিনি মুসলিম লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
দেশভাগের পূর্বে সোহরাওয়ার্দীর ভূমিকা
দেশভাগের পূর্বে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি মুসলিম লীগকে সংগঠিত করতে এবং মুসলিমদের অধিকার আদায়ে নেতৃত্ব দেন।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সোহরাওয়ার্দী
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি পাকিস্তানের রাজনীতিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তাঁর সময়কাল ছিল সংক্ষিপ্ত এবং নানা রাজনৈতিক জটিলতায় পূর্ণ।
গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃত্ব
পাকিস্তানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সাহসী ভূমিকা রাখেন। তিনি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য বিভিন্ন আন্দোলন সংগঠিত করেন এবং জনগণের অধিকারের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন।
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর কিছু উল্লেখযোগ্য কাজ
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী তাঁর রাজনৈতিক জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। তার মধ্যে কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলো:
- ১৯৩৭ সাল থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত তিনি অবিভক্ত বাংলার শ্রমমন্ত্রী ছিলেন এবং শ্রমিকদের কল্যাণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
- ১৯৪৬ সালে তিনি অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হন এবং জনকল্যাণমূলক কাজ করেন।
-
১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে নেতৃত্ব দিয়ে মুসলিম লীগকে পরাজিত করেন।
-
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি দেশের অর্থনীতি ও উন্নয়নে মনোযোগ দেন।
গণতন্ত্রের বিকাশে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অবদান
গণতন্ত্রের বিকাশে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অবদান অনস্বীকার্য। তিনি ছিলেন গণতন্ত্রের একজন বলিষ্ঠ প্রবক্তা এবং জনগণের অধিকার আদায়ে সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন।
রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান তৈরি
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগ (পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ) গঠনে সহায়তা করেন, যা পরবর্তীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়।
গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি তৈরি
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করেন এবং তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করেন।
রাজনৈতিক শিক্ষা
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে রাজনৈতিক শিক্ষা দেন। তিনি বুঝিয়েছিলেন যে জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া গণতন্ত্র সফল হতে পারে না।
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর দর্শন
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর রাজনৈতিক দর্শন ছিল গণতন্ত্র, জনকল্যাণ ও ন্যায়বিচারের উপর ভিত্তি করে তৈরি। তিনি বিশ্বাস করতেন যে একটি দেশের উন্নতি তখনই সম্ভব, যখন দেশের প্রতিটি নাগরিক সমান সুযোগ পাবে এবং তাদের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে।
জনগণের ক্ষমতা
সোহরাওয়ার্দী জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করতেন। তিনি মনে করতেন, জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস এবং তাদের মতামতের ভিত্তিতেই দেশ পরিচালিত হওয়া উচিত।
ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন
ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন আপসহীন। তিনি বিশ্বাস করতেন, আইনের চোখে সবাই সমান এবং কোনো প্রকার বৈষম্য করা উচিত নয়।
তরুণ প্রজন্মের জন্য হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর শিক্ষা
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর জীবন ও কর্ম তরুণ প্রজন্মের জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাঁর আদর্শ ও শিক্ষা অনুসরণ করে তরুণরা দেশের কল্যাণে কাজ করতে পারে।
দেশপ্রেম
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক। তাঁর দেশপ্রেম থেকে তরুণ প্রজন্ম দেশের জন্য আত্মত্যাগের শিক্ষা নিতে পারে।
সাহস ও দৃঢ়তা
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন সাহসী ও দৃঢ়চেতা। তিনি প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নিজের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। তরুণ প্রজন্ম তাঁর কাছ থেকে সাহস ও দৃঢ়তার শিক্ষা নিতে পারে।
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তরুণ প্রজন্ম তাঁর কাছ থেকে গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা ও আনুগত্যের শিক্ষা নিতে পারে।
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সমালোচিত দিক
এতকিছুর পরেও, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর কিছু সমালোচিত দিকও রয়েছে।
কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত
রাজনৈতিক জীবনে কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত সমালোচিত হয়েছে। যেমন, কলকাতা দাঙ্গার সময়ে তাঁর ভূমিকা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।
সীমাবদ্ধতা
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর সময়কাল ছিল সংক্ষিপ্ত, যার কারণে অনেক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এছাড়াও, কিছু রাজনৈতিক জটিলতা তাঁর কাজকে কঠিন করে তুলেছিল।
গণতন্ত্রের মানসপুত্র হিসেবে সোহরাওয়ার্দীর প্রাসঙ্গিকতা
আজও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গণতন্ত্রের মানসপুত্র হিসেবে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। তাঁর জীবন ও কর্ম থেকে আমরা গণতন্ত্রের গুরুত্ব, জনগণের অধিকার এবং ন্যায়বিচারের শিক্ষা পাই।
বর্তমান রাজনীতিতে সোহরাওয়ার্দীর আদর্শ
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর আদর্শ অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি। তাঁর দেখানো পথে হেঁটে একটি সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণ করা সম্ভব।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তরুণদের ভূমিকা
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তরুণদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তরুণরা গণতন্ত্রের জন্য কাজ করতে পারে।
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে নিয়ে কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে নিয়ে কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। এই ভুল ধারণাগুলো তার অবদানকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে। নিচে কয়েকটি প্রচলিত ভুল ধারণা এবং তার সঠিক ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:
১. ভুল ধারণা: সোহরাওয়ার্দী শুধু মুসলিম লীগের নেতা ছিলেন।
* সঠিক ব্যাখ্যা: সোহরাওয়ার্দী মুসলিম লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন, কিন্তু তিনি পরবর্তীতে আওয়ামী মুসলিম লীগ (যা পরে আওয়ামী লীগ নামে পরিচিত হয়) গঠনে সহায়তা করেন এবং গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেন।
২. ভুল ধারণা: তিনি শুধু দেশভাগের জন্য কাজ করেছেন।
* সঠিক ব্যাখ্যা: সোহরাওয়ার্দী দেশভাগের পূর্বে মুসলিমদের অধিকারের জন্য কাজ করেছেন, কিন্তু দেশভাগের পর তিনি পাকিস্তানের রাজনীতিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করেন।
৩. ভুল ধারণা: তিনি শুধু ক্ষমতার রাজনীতি করেছেন।
* সঠিক ব্যাখ্যা: সোহরাওয়ার্দী ক্ষমতার রাজনীতি করেছেন ঠিকই, তবে তিনি জনগণের কল্যাণ এবং গণতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন। তিনি সবসময় চেয়েছেন জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক।
৪. ভুল ধারণা: তিনি সবসময় বিতর্কিত ছিলেন।
* সঠিক ব্যাখ্যা: সোহরাওয়ার্দীর জীবনে কিছু বিতর্ক থাকলেও, তিনি একজন জনপ্রিয় নেতা ছিলেন এবং তার অবদানের কারণে মানুষ তাকে সম্মান করে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য।
৫. ভুল ধারণা: তিনি শুধু শহুরে নেতা ছিলেন।
* সঠিক ব্যাখ্যা: সোহরাওয়ার্দী শহুরে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও, তিনি গ্রাম বাংলার মানুষের কাছেও জনপ্রিয় ছিলেন। যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে তার প্রমাণ পাওয়া যায়।
এই ভুল ধারণাগুলো সংশোধন করা জরুরি, যাতে নতুন প্রজন্ম হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঠিক অবদান সম্পর্কে জানতে পারে এবং তার আদর্শ অনুসরণ করতে পারে।
সারণী: হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জি
বছর | ঘটনা |
---|---|
১৮৯২ | জন্ম |
১৯২০-এর দশক | কলকাতা কর্পোরেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত |
১৯৩৭-১৯৪৩ | অবিভক্ত বাংলার শ্রমমন্ত্রী |
১৯৪৬ | অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী |
১৯৫৪ | যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে নেতৃত্ব |
১৯৫৬ | পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী |
১৯৬৩ | লেবাননে মৃত্যু |
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর কিছু উক্তি
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী তার রাজনৈতিক জীবনে বিভিন্ন সময়ে কিছু উল্লেখযোগ্য উক্তি করেছেন যা আজও স্মরণীয়। তার কিছু উক্তি নিচে তুলে ধরা হলো:
১. “গণতন্ত্রই আমাদের মুক্তির পথ।”
২. “জনগণের অধিকার রক্ষা করাই আমার প্রথম কাজ।”
3. “আইনের শাসন ছাড়া কোনো সমাজ উন্নতি লাভ করতে পারে না।”
4. “আমরা চাই এমন একটি সমাজ, যেখানে মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না।”
5. “শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, তাই শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে হবে।”
এই উক্তিগুলো হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর রাজনৈতিক দর্শন এবং জনগণের প্রতি তার অঙ্গীকারের পরিচয় বহন করে।
গণতন্ত্রের মানসপুত্র : কিছু প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ)
-
প্রশ্ন: গণতন্ত্রের মানসপুত্র কাকে বলা হয়?
- উত্তর: হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে গণতন্ত্রের মানসপুত্র বলা হয়।
-
প্রশ্ন: হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কে ছিলেন?
- উত্তর: হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রভাবশালী বাঙালি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যিনি একাধারে আইনজ্ঞ, জননেতা এবং রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন।
-
প্রশ্ন: যুক্তফ্রন্ট কী?
* উত্তর: ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে গঠিত বিরোধী দলগুলোর সমন্বিত জোট ছিল যুক্তফ্রন্ট।
-
প্রশ্ন: হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন?
- উত্তর: হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
-
প্রশ্ন: হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর উল্লেখযোগ্য কাজ কী ছিল?
- উত্তর: হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে নেতৃত্ব দেওয়া এবং মুসলিম লীগকে পরাজিত করা।
-
প্রশ্ন: হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর কয়েকটি উক্তি কি কি?
* উত্তর: "গণতন্ত্রই আমাদের মুক্তির পথ", "জনগণের অধিকার রক্ষা করাই আমার প্রথম কাজ" তাঁর উল্লেখযোগ্য উক্তি।
-
প্রশ্ন: হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কেন বিখ্যাত?
- উত্তর: হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গণতন্ত্রের প্রতি তাঁর অবিচল আস্থা, জনগণের অধিকারের জন্য সংগ্রাম এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার জন্য বিখ্যাত।
-
প্রশ্ন: গণতন্ত্রের মানসপুত্র হিসেবে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর প্রাসঙ্গিকতা কী?
- উত্তর: গণতন্ত্রের মানসপুত্র হিসেবে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর প্রাসঙ্গিকতা আজও বিদ্যমান। তাঁর জীবন ও কর্ম থেকে আমরা গণতন্ত্রের গুরুত্ব, জনগণের অধিকার এবং ন্যায়বিচারের শিক্ষা পাই, যা একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে সহায়ক।
উপসংহার
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শুধু একটি নাম নয়, তিনি একটি আদর্শ। গণতন্ত্রের প্রতি তাঁর অবিচল আস্থা, জনগণের প্রতি ভালোবাসা এবং দেশের জন্য তাঁর অবদান চিরস্মরণীয়। গণতন্ত্রের মানসপুত্র হিসেবে তিনি সবসময় আমাদের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন। আসুন, আমরা তাঁর আদর্শ অনুসরণ করে একটি সুন্দর ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ি। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি যদি গণতন্ত্রের মানসপুত্র সম্পর্কে নতুন কিছু জেনে থাকেন, তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। আপনার মতামত আমাদের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান।