গণিত নিয়ে ভয়? গুণিতক আর গুণনীয়ক শব্দগুলো শুনে মনে হয় যেন জটিল কিছু? আরে বাবা, ভয় পাওয়ার কিছু নেই! এইগুলো আসলে খুবই সোজা জিনিস। আমি আজ তোমাদেরকে গুণিতক আর গুণনীয়কের সহজপাঠ দেবো, একদম পানির মতো বুঝিয়ে দেবো!
আজকে আমরা যা যা শিখবো:
- গুণিতক (Multiple) কী এবং কিভাবে বের করতে হয়।
- গুণনীয়ক (Factor) কী এবং কিভাবে চিনতে হয়।
- গুণিতক ও গুণনীয়কের মধ্যেকার সম্পর্ক।
- এগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কিভাবে কাজে লাগে।
তো, চলো শুরু করা যাক!
গুণিতক (Multiple) কী?
গুণিতক হলো কোনো একটি সংখ্যাকে অন্য যেকোনো সংখ্যা দিয়ে গুণ করে যে ফল পাওয়া যায়। ব্যাপারটা একটু কঠিন লাগছে, তাই তো? ধরো, তোমার কাছে ৫টা চকলেট আছে। এখন তোমার বন্ধু যদি তোমাকে আরও ৫টা চকলেট দেয়, তাহলে তোমার কাছে মোট কটা চকলেট হলো? ৫ + ৫ = ১০টা। এই ১০ হলো ৫ এর একটি গুণিতক।
গুণিতক বের করার নিয়ম
গুণিতক বের করা খুবই সহজ। নামতা জানলেই কেল্লা ফতে! নিচে একটা তালিকা দেওয়া হলো, দেখো তো বুঝতে পারো কিনা:
সংখ্যা | গুণিতক (১ম ৫টি) |
---|---|
২ | ২, ৪, ৬, ৮, ১০ |
৩ | ৩, ৬, ৯, ১২, ১৫ |
৫ | ৫, ১০, ১৫, ২০, ২৫ |
১০ | ১০, ২০, ৩০, ৪০, ৫০ |
তাহলে, গুণিতক মানে হলো একটি সংখ্যাকে পর পর অন্য সংখ্যা দিয়ে গুণ করে যাওয়া। এটা চলতেই থাকবে, এর কোনো শেষ নেই।
গুণিতকের বৈশিষ্ট্য
- গুণিতকের সংখ্যা অসীম। মানে, তুমি গুণ করে যেতেই পারো, এটা কখনো শেষ হবে না।
- প্রত্যেকটি সংখ্যা নিজেই নিজের গুণিতক। যেমন: ৫, ৫-এর গুণিতক।
- ০ (শূন্য) হলো সকল সংখ্যার একটি গুণিতক। কারণ, যেকোনো সংখ্যাকে ০ দিয়ে গুণ করলে ফল ০ হয়।
গুণনীয়ক (Factor) কী?
গুণনীয়ক হলো সেই সংখ্যাগুলো, যেগুলো দিয়ে অন্য কোনো সংখ্যাকে ভাগ করলে কোনো ভাগশেষ থাকে না। মানে, মিলেমিশে ভাগ হয়ে যায়।
ধরো, তোমার কাছে ১২টা আপেল আছে। এখন তুমি এগুলো বন্ধুদের মধ্যে ভাগ করে দিতে চাও। তুমি কিভাবে ভাগ করতে পারো যাতে কোনো আপেল অবশিষ্ট না থাকে?
- তুমি ১ জনকে ১২টা আপেল দিতে পারো। (১২ ÷ ১ = ১২)
- তুমি ২ জনকে ৬টা করে আপেল দিতে পারো। (১২ ÷ ২ = ৬)
- তুমি ৩ জনকে ৪টা করে আপেল দিতে পারো। (১২ ÷ ৩ = ৪)
- তুমি ৪ জনকে ৩টা করে আপেল দিতে পারো। (১২ ÷ ৪ = ৩)
- তুমি ৬ জনকে ২টা করে আপেল দিতে পারো। (১২ ÷ ৬ = ২)
- আর তুমি ১২ জনকে ১টা করে আপেল দিতে পারো। (১২ ÷ ১২ = ১)
এখানে ১, ২, ৩, ৪, ৬ এবং ১২ হলো ১২-এর গুণনীয়ক।
গুণনীয়ক বের করার নিয়ম
গুণনীয়ক বের করার জন্য তোমাকে দেখতে হবে কোন কোন সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে ভাগশেষ থাকে না।
উদাহরণ: ১৮-এর গুণনীয়কগুলো কী কী?
- ১৮ ÷ ১ = ১৮ (কোনো ভাগশেষ নেই)
- ১৮ ÷ ২ = ৯ (কোনো ভাগশেষ নেই)
- ১৮ ÷ ৩ = ৬ (কোনো ভাগশেষ নেই)
- ১৮ ÷ ৬ = ৩ (কোনো ভাগশেষ নেই)
- ১৮ ÷ ৯ = ২ (কোনো ভাগশেষ নেই)
- ১৮ ÷ ১৮ = ১ (কোনো ভাগশেষ নেই)
সুতরাং, ১৮-এর গুণনীয়কগুলো হলো: ১, ২, ৩, ৬, ৯ এবং ১৮।
গুণনীয়কের বৈশিষ্ট্য
- গুণনীয়কের সংখ্যা সসীম। মানে, এদের গোণা যায়, এটা অসীম নয়।
- ১ হলো সকল সংখ্যার একটি গুণনীয়ক। কারণ, ১ দিয়ে যেকোনো সংখ্যাকে ভাগ করা যায়।
- প্রত্যেকটি সংখ্যা নিজেই নিজের একটি গুণনীয়ক। যেমন: ১৫, ১৫-এর একটি গুণনীয়ক।
গুণিতক ও গুণনীয়কের মধ্যে সম্পর্ক
গুণিতক ও গুণনীয়কের মধ্যে একটা মজার সম্পর্ক আছে। গুণনীয়ক দিয়ে কোনো সংখ্যাকে ভাগ করলে গুণিতক পাওয়া যায়, আবার গুণিতককে তার গুণনীয়ক দিয়ে ভাগ করলে সেই সংখ্যাটি পাওয়া যায়। বিষয়টা একটু ঘুরিয়ে বলা হলো, তাই না? চলো একটা উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিই।
ধরো, সংখ্যাটা হলো ২০।
- ২০-এর গুণনীয়কগুলো হলো: ১, ২, ৪, ৫, ১০ এবং ২০।
- ২০-এর গুণিতকগুলো হলো: ২০, ৪০, ৬০, ৮০, ১০০… (চলতেই থাকবে)
এখন, ২০-এর একটি গুণনীয়ক ৫। যদি আমরা ২০ কে ৫ দিয়ে ভাগ করি, তাহলে পাবো ৪। আবার, ২০ হলো ৫-এর একটি গুণিতক।
বিষয়টা অনেকটা এরকম: গুণনীয়ক হলো “কারণ”, আর গুণিতক হলো “ফল”।
বাস্তব জীবনে গুণিতক ও গুণনীয়কের ব্যবহার
গণিত শুধু পরীক্ষার খাতায় আটকে থাকার জিনিস নয়। এর ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও অনেক। গুণিতক আর গুণনীয়কও তার মধ্যে পড়ে।
১. হিসাব মেলানো: ধরো, তুমি দোকানে কিছু জিনিস কিনতে গেছো। প্রত্যেকটি জিনিসের দাম যদি একই হয়, তবে মোট কত খরচ হবে, সেটা গুণিতকের সাহায্যে সহজেই বের করতে পারবে।
২. ভাগাভাগি: বন্ধুদের মধ্যে কিছু ভাগ করে দেওয়ার সময় গুণনীয়কের ধারণা কাজে লাগে। যেমন, তুমি যদি চাও তোমার কাছে থাকা বিস্কুটগুলো বন্ধুদের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দেবে, তাহলে গুণনীয়ক বের করে দেখতে পারো কতভাবে ভাগ করা যায়।
৩. সমস্যা সমাধান: অনেক গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে গুণিতক এবং গুণনীয়ক দরকার হয়। ল.সা.গু (লসাগু) এবং গ.সা.গু (গসাগু) নির্ণয় করার সময় এগুলো কাজে লাগে।
৪. পরিকল্পনা: কোনো কাজের পরিকল্পনা করার সময়, যেমন – কত দিনে কাজটি শেষ হবে বা কতজন লোক লাগবে, সেগুলোর হিসাব করার জন্য গুণিতক ও গুণনীয়কের ধারণা কাজে লাগে।
ল.সা.গু (LCM) এবং গ.সা.গু (HCF)
গুণিতক আর গুণনীয়ক যখন আমরা শিখেছি, তখন ল.সা.গু (লসাগু) আর গ.সা.গু (গসাগু)-র কথা একটু আলোচনা না করলেই নয়।
ল.সা.গু (LCM) :
ল.সা.গু মানে হলো লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণিতক। কয়েকটি সংখ্যার মধ্যে সবচেয়ে ছোট গুণিতক যা সব সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা যায়, সেটাই হলো ল.সা.গু।
উদাহরণ: ৪ এবং ৬ এর ল.সা.গু কত?
- ৪ এর গুণিতকগুলো: ৪, ৮, ১২, ১৬, ২০, ২৪…
- ৬ এর গুণিতকগুলো: ৬, ১২, ১৮, ২৪, ৩০…
এখানে, ১২ হলো সবচেয়ে ছোট সংখ্যা যা ৪ এবং ৬ উভয় সংখ্যা দিয়েই ভাগ করা যায়। সুতরাং, ৪ এবং ৬ এর ল.সা.গু হলো ১২।
গ.সা.গু (HCF) :
গ.সা.গু মানে হলো গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক। কয়েকটি সংখ্যার মধ্যে সবচেয়ে বড় গুণনীয়ক যা সব সংখ্যাকে ভাগ করতে পারে, সেটাই হলো গ.সা.গু।
উদাহরণ: ১২ এবং ১৮ এর গ.সা.গু কত?
- ১২ এর গুণনীয়কগুলো: ১, ২, ৩, ৪, ৬, ১২
- ১৮ এর গুণনীয়কগুলো: ১, ২, ৩, ৬, ৯, ১৮
এখানে, ৬ হলো সবচেয়ে বড় সংখ্যা যা ১২ এবং ১৮ উভয় সংখ্যাকেই ভাগ করতে পারে। সুতরাং, ১২ এবং ১৮ এর গ.সা.গু হলো ৬।
কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)
এখানে কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর দেওয়া হলো, যেগুলো সাধারণত গুণিতক ও গুণনীয়ক নিয়ে মানুষের মনে আসে:
-
প্রশ্ন: ১ কি একটি মৌলিক সংখ্যা(Prime Number)?
উত্তর: না, ১ মৌলিক সংখ্যা নয়। মৌলিক সংখ্যা হতে হলে সংখ্যাটিকে ১ এবং সেই সংখ্যাটি ছাড়া অন্য কোনো সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা যায় না। ১-কে শুধুমাত্র ১ দিয়েই ভাগ করা যায়, তাই এটি মৌলিক সংখ্যা নয়।
-
প্রশ্ন: ০ কি কোনো সংখ্যার গুণনীয়ক হতে পারে?
উত্তর: না, ০ কোনো সংখ্যার গুণনীয়ক হতে পারে না। কারণ, কোনো সংখ্যাকে ০ দিয়ে ভাগ করা যায় না।
-
প্রশ্ন: সবচেয়ে ছোট মৌলিক সংখ্যা কোনটি?
**উত্তর:** সবচেয়ে ছোট মৌলিক সংখ্যা হলো ২।
-
প্রশ্ন: সকল জোড় সংখ্যা কি ২ এর গুণিতক?
উত্তর: হ্যাঁ, সকল জোড় সংখ্যা ২ এর গুণিতক। কারণ, জোড় সংখ্যা মানেই হলো সেই সংখ্যাকে ২ দিয়ে ভাগ করা যায়।
-
প্রশ্ন: গুণিতক এবং গুণনীয়কের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: গুণিতক হলো কোনো সংখ্যাকে অন্য সংখ্যা দিয়ে গুণ করে যা পাওয়া যায়। আর গুণনীয়ক হলো কোনো সংখ্যাকে যে সংখ্যাগুলো দিয়ে ভাগ করলে কোনো ভাগশেষ থাকে না।
গুণিতক ও গুণনীয়ক চেনার সহজ উপায়
গুণিতক ও গুণনীয়ককে সহজে চেনার জন্য কিছু টিপস নিচে দেওয়া হলো:
-
গুণিতক চেনার উপায়: কোনো সংখ্যাকে অন্য যেকোনো সংখ্যা দিয়ে গুণ করে দেখো। যদি মিলে যায়, তাহলে বুঝবে সেটি গুণিতক। যেমন, ৭ এর গুণিতক বের করতে ৭ এর নামতা পড়ো: ৭, ১৪, ২১, ২৮…।
-
গুণনীয়ক চেনার উপায়: কোনো সংখ্যাকে অন্য সংখ্যা দিয়ে ভাগ করে দেখো। যদি ভাগশেষ না থাকে, তাহলে বুঝবে সেটি গুণনীয়ক। যেমন, ২৪ এর গুণনীয়ক বের করতে দেখো কোন কোন সংখ্যা দিয়ে ২৪ কে ভাগ করা যায়: ১, ২, ৩, ৪, ৬, ৮, ১২, ২৪।
গুণিতক এবং গুণনীয়কের মধ্যে পার্থক্য (Difference Between Multiple and Factor)
বৈশিষ্ট্য | গুণিতক (Multiple) | গুণনীয়ক (Factor) |
---|---|---|
সংজ্ঞা | একটি সংখ্যাকে অন্য সংখ্যা দিয়ে গুণ করে প্রাপ্ত ফল। | একটি সংখ্যাকে যে সকল সংখ্যা দিয়ে নিঃশেষে ভাগ করা যায়। |
সংখ্যা | অসীম সংখ্যক হতে পারে। | সসীম সংখ্যক থাকে। |
সর্বনিম্ন মান | সংখ্যাটি নিজেই সর্বনিম্ন গুণিতক। | ১ হলো সর্বনিম্ন গুণনীয়ক। |
সর্বোচ্চ মান | অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত। | সংখ্যাটি নিজেই সর্বোচ্চ গুণনীয়ক। |
উদাহরণ | ৫ এর গুণিতক: ৫, ১০, ১৫, ২০… | ১২ এর গুণনীয়ক: ১, ২, ৩, ৪, ৬, ১২ |
শেষ কথা
গুণিতক আর গুণনীয়ক নিয়ে এতক্ষণ ধরে যা আলোচনা করলাম, আশা করি তোমরা সবাই বুঝতে পেরেছ। গণিতকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। একটু মনোযোগ দিয়ে দেখলে সবকিছুই সহজ হয়ে যায়।
তাহলে, আজ এই পর্যন্তই। তোমরা সবাই ভালো থেকো, আর মন দিয়ে অঙ্ক করো! আর হ্যাঁ, যদি কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানিও। আমি চেষ্টা করব উত্তর দিতে।
গণিতের আরও মজার বিষয় নিয়ে খুব শীঘ্রই আবার দেখা হবে! ততক্ষণের জন্য টা টা!