কৃষি বিপ্লব: বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তার পথে নতুন দিগন্ত
আচ্ছা, ধরুন তো, একদিন সকালে উঠে শুনলেন, আপনার পরিচিত কৃষকরা আগের চেয়ে অনেক বেশি ফসল ফলাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, চাষের পদ্ধতিও গেছে বদলে। অনেকটা যেন জাদু! এই জাদুটিই হলো কৃষি বিপ্লব। কিন্তু কৃষি বিপ্লব (Krishi Biplob) আসলে কী, কেন এটা এত গুরুত্বপূর্ণ, আর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেই বা এর ভবিষ্যৎ কী—চলুন, সেই আলোচনাতেই ডুব দেই।
কৃষি বিপ্লব কী? (What is Agricultural Revolution?)
সহজ ভাষায়, কৃষি বিপ্লব (Krishi Biplob) হলো কৃষিক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার, নতুন আবিষ্কার, এবং চাষাবাদের উন্নত পদ্ধতির মাধ্যমে অল্প সময়ে বেশি উৎপাদন করা। এটা অনেকটা transform করে দেওয়া, যেখানে পুরনো ধ্যান-ধারণা ভেঙে নতুন কিছু যুক্ত হয়।
কৃষি বিপ্লবের মূল উপাদান
- প্রযুক্তি: আধুনিক যন্ত্রপাতি, উন্নত বীজ, সার, কীটনাশক ব্যবহার।
- নতুন পদ্ধতি: শস্য পর্যায়, সমন্বিত চাষ, জৈব চাষ।
- গবেষণা: নতুন জাতের উদ্ভাবন, রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি।
- নীতি ও সহায়তা: সরকারি প্রণোদনা, ঋণ, প্রশিক্ষণ।
কেন কৃষি বিপ্লব প্রয়োজন? (Why is Agricultural Revolution Necessary?)
কৃষি বিপ্লব কেন দরকার, তা বুঝতে হলে আমাদের কয়েকটি বিষয় দেখতে হবে।
- জনসংখ্যার চাপ: বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। এই বিপুল জনসংখ্যার খাদ্যের চাহিদা মেটাতে উৎপাদন বাড়াতেই হবে।
- জলবায়ু পরিবর্তন: বন্যা, খরা, লবণাক্ততা—এগুলো এখন নিত্যসঙ্গী। এদের সঙ্গে লড়ে টিকে থাকতে হলে দরকার নতুন কৌশল।
- অর্থনৈতিক উন্নয়ন: কৃষি শুধু খাদ্য নয়, অর্থনীতিরও একটা বড় অংশ। তাই কৃষির উন্নতি মানে দেশের উন্নতি।
- দারিদ্র্য বিমোচন: গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করতে হলে কৃষির আধুনিকায়ন জরুরি।
কৃষি বিপ্লবের পর্যায় (Stages of Agricultural Revolution)
কৃষি বিপ্লব কিন্তু একদিনে হয়নি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিবর্তন এসেছে। নিচে এর পর্যায়গুলো আলোচনা করা হলো:
প্রাচীন কৃষি বিপ্লব
মানবসভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ কৃষিকাজ শুরু করে। প্রথমে যাযাবর জীবন ছেড়ে স্থায়ী বসতি গড়ে তোলে এবং খাদ্য উৎপাদন শুরু করে। পাথর, কাঠ ও হাড়ের তৈরি সরঞ্জাম ব্যবহার করত। এই সময়টাতে মূলত নিজেদের জীবনধারণের জন্যই তারা কৃষিকাজ করতো।
মধ্যযুগীয় কৃষি বিপ্লব
এই সময়ে লোহার লাঙল ও সার ব্যবহারের প্রচলন শুরু হয়। শস্য ঘোরানো এবং পশুশক্তি ব্যবহারের ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। মধ্যযুগীয় কৃষি বিপ্লবের ফলে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে।
সবুজ বিপ্লব বা গ্রীন রেভোল্যুশন (Green Revolution)
বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে উচ্চ ফলনশীল বীজ, রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার শুরু হয়। এর ফলে খাদ্য উৎপাদনে ব্যাপক উন্নতি হয়। এই বিপ্লবের ফলে অনেক দেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। বাংলাদেশও এর সুফল ভোগ করেছে।
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও আধুনিক কৃষি বিপ্লব
বর্তমানে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে নতুন নতুন শস্যের জাত উদ্ভাবন করা হচ্ছে, যা রোগ প্রতিরোধক এবং বেশি ফলনশীল। এছাড়া, তথ্য প্রযুক্তি ও স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষিকে আরও আধুনিক করা হচ্ছে। এখন ড্রোন ব্যবহার করে জমিতে কীটনাশক স্প্রে করা হচ্ছে, যা আগে ভাবাই যেত না।
বাংলাদেশের কৃষি বিপ্লব: প্রেক্ষাপট ও সম্ভাবনা (Agricultural Revolution in Bangladesh: Context and Possibilities)
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। আমাদের অর্থনীতির একটা বড় অংশ কৃষির উপর নির্ভরশীল। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে কৃষি বিপ্লবের যাত্রা শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশের কৃষি বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ
- ভূমি স্বল্পতা: আমাদের দেশে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ কম।
- প্রাকৃতিক দুর্যোগ: বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় লেগেই থাকে।
- প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা: আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এখনও সীমিত।
- কৃষকদের অসচেতনতা: অনেক কৃষক এখনও পুরনো পদ্ধতিতে চাষাবাদ করেন।
- পর্যাপ্ত ঋণের অভাব: অনেক কৃষক আর্থিক সমস্যার কারণে আধুনিক চাষাবাদ করতে পারেন না।
বাংলাদেশের কৃষি বিপ্লবের সম্ভাবনা
- উর্বর মাটি: আমাদের দেশের মাটি খুবই উর্বর, যা প্রায় সব ধরনের ফসল ফলানোর জন্য উপযোগী।
- সরকারের সহায়তা: সরকার কৃষকদের জন্য বিভিন্ন প্রণোদনা ও ভর্তুকি দিচ্ছে।
- নতুন প্রযুক্তি: আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ বাড়ছে।
- কৃষি গবেষণা: বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন জাতের ফসল উদ্ভাবন করছেন।
- বেসরকারি উদ্যোগ: অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিচ্ছে।
ধান উৎপাদনে বিপ্লব
বাংলাদেশ ধান উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ স্থান অধিকার করে। উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান উদ্ভাবন এবং চাষাবাদের আধুনিক পদ্ধতির কারণে এটা সম্ভব হয়েছে।
সবজি চাষে বিপ্লব
বর্তমানে বাংলাদেশে সারা বছর বিভিন্ন ধরনের সবজি পাওয়া যায়। আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি এবং উন্নত বীজ ব্যবহারের ফলে সবজি উৎপাদনেও বিপ্লব ঘটেছে।
কৃষি বিপ্লবের প্রভাব (Impact of Agricultural Revolution)
কৃষি বিপ্লব আমাদের জীবনে কী প্রভাব ফেলেছে, তা একটু দেখে নেওয়া যাক:
- খাদ্য নিরাপত্তা: উৎপাদন বাড়ার কারণে দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। আগে যেখানে চাল আমদানি করতে হতো, এখন আমরা চাল রপ্তানি করি।
- অর্থনৈতিক উন্নয়ন: কৃষির উন্নতির ফলে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হয়েছে। মানুষের আয় বেড়েছে, দারিদ্র্য কমেছে।
- কর্মসংস্থান: কৃষি ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট শিল্পে নতুন নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
- জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন: গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। তারা এখন ভালো খাবার খেতে পারছে, ভালো থাকতে পারছে।
কৃষি বিপ্লবের পথে অন্তরায় ও সমাধান (Obstacles and Solutions in the Path of Agricultural Revolution)
কৃষি বিপ্লবের পথে কিছু বাধা আছে, তবে সেগুলো মোকাবেলা করার উপায়ও আছে।
প্রধান অন্তরায়গুলো
- জলবায়ু পরিবর্তন: এই সমস্যা মোকাবেলার জন্য দরকার জলবায়ু-সহনশীল শস্যের জাত উদ্ভাবন।
- কীটপতঙ্গ ও রোগবালাই: এর জন্য দরকার সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা (Integrated Pest Management)।
- মাটির উর্বরতা হ্রাস: জৈব সার ব্যবহার করে মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা করতে হবে।
- কৃষিঋণের অভাব: কৃষকদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ নিশ্চিত করতে হবে।
সম্ভাব্য সমাধান
- আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার: ড্রোন, সেন্সর ও ডেটা অ্যানালিটিক্স ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষিকে আরও আধুনিক করতে হবে।
- কৃষি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ: কৃষকদের জন্য আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতির উপর প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করতে হবে।
- কৃষি গবেষণা জোরদার: নতুন নতুন শস্যের জাত উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা বাড়াতে হবে।
- কৃষি বীমা: ফসলের ক্ষতি থেকে কৃষকদের রক্ষা করার জন্য কৃষি বীমা চালু করতে হবে।
- সঠিক বাজারজাতকরণ: কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হবে।
টেবিল: কৃষি বিপ্লবের অন্তরায় ও সমাধান
অন্তরায় | সমাধান |
---|---|
জলবায়ু পরিবর্তন | জলবায়ু-সহনশীল শস্যের জাত উদ্ভাবন, পানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি ব্যবহার |
কীটপতঙ্গ ও রোগবালাই | সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা (IPM), জৈব কীটনাশক ব্যবহার |
মাটির উর্বরতা হ্রাস | জৈব সার ব্যবহার, শস্য পর্যায় |
কৃষি ঋণের অভাব | সহজ শর্তে কৃষি ঋণ সরবরাহ, ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম জোরদার |
বাজারজাতকরণ সমস্যা | সঠিক বাজার অবকাঠামো তৈরি, ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতকরণ |
কৃষি বিপ্লবের ভবিষ্যৎ (Future of Agricultural Revolution)
কৃষি বিপ্লবের ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল। নতুন নতুন প্রযুক্তি আর উদ্ভাবনের মাধ্যমে কৃষিকে আরও উন্নত করা সম্ভব।
স্মার্ট ফার্মিং (Smart Farming)
স্মার্ট ফার্মিং হলো তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষিকাজ করা। এখানে সেন্সর, ড্রোন ও অন্যান্য ডিভাইস ব্যবহার করে জমি ও ফসলের তথ্য সংগ্রহ করা হয় এবং সেই অনুযায়ী চাষাবাদ করা হয়।
জৈবপ্রযুক্তি (Biotechnology)
জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহার করে নতুন নতুন শস্যের জাত উদ্ভাবন করা যায়, যা রোগ প্রতিরোধক এবং বেশি ফলনশীল। এছাড়া, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাটির গুণাগুণও উন্নত করা যায়।
উল্লম্ব কৃষি (Vertical Farming)
উল্লম্ব কৃষি হলো বহুতল ভবনে বা অন্য কোনো আবদ্ধ স্থানে স্তূপ করে ফসল ফলানো। এতে কম জায়গায় বেশি ফসল উৎপাদন করা সম্ভব।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence)
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে কৃষিকাজের বিভিন্ন দিক, যেমন – বীজ বপন, সেচ ও কীটনাশক প্রয়োগ স্বয়ংক্রিয় করা যায়। এছাড়া, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসলের রোগ নির্ণয় ও প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
কৃষি বিপ্লবের প্রকারভেদ (Types of Agricultural Revolution)
কৃষি বিপ্লব বিভিন্ন প্রকার হতে পারে, যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রভাব ফেলে:
সবুজ বিপ্লব (Green Revolution)
উচ্চ ফলনশীল বীজ, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা সবুজ বিপ্লবের মূল লক্ষ্য।
শ্বেত বিপ্লব (White Revolution)
দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধি এবং দুগ্ধ শিল্পের উন্নতি করা হলো এই বিপ্লবের উদ্দেশ্য।
নীল বিপ্লব (Blue Revolution)
মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর উৎপাদন বৃদ্ধি এবং মৎস্য শিল্পের উন্নতি করা নীল বিপ্লবের অংশ।
হলুদ বিপ্লব (Yellow Revolution)
সর্ষে, সূর্যমুখী ও অন্যান্য তৈলবীজ উৎপাদন বৃদ্ধি করা হলুদ বিপ্লবের উদ্দেশ্য।
কৃষ্ণাঙ্গ বিপ্লব (Black Revolution)
জীবাশ্ম জ্বালানি (Fossil Fuel) ও বায়োফুয়েল উৎপাদন বৃদ্ধি করা এই বিপ্লবের লক্ষ্য।
কৃষি বিপ্লবে সরকারের ভূমিকা (Role of Government in Agricultural Revolution)
কৃষি বিপ্লবে সরকারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকার বিভিন্ন নীতি ও পদক্ষেপের মাধ্যমে কৃষকদের সহায়তা করতে পারে।
নীতি প্রণয়ন
কৃষকদের জন্য সহায়ক নীতি প্রণয়ন করা, যেমন – ভর্তুকি, ঋণ ও বীমা প্রদান।
গবেষণা ও উন্নয়ন
কৃষি গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য তহবিল সরবরাহ করা, যাতে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা যায়।
অবকাঠামো তৈরি
সেচ ব্যবস্থা, গুদামঘর ও পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত করা।
কৃষি শিক্ষা
কৃষি শিক্ষার প্রসার ঘটানো এবং কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা।
বাজার সংযোগ
কৃষিপণ্যের বাজার সংযোগ উন্নত করা, যাতে কৃষকরা তাদের পণ্যের ন্যায্য মূল্য পায়।
কৃষি বিপ্লব ও পরিবেশ (Agricultural Revolution and Environment)
আধুনিক কৃষি বিপ্লবের ফলে পরিবেশের উপর কিছু নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
রাসায়নিক সারের ব্যবহার
রাসায়নিক সারের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মাটি ও পানি দূষিত হতে পারে।
কীটনাশকের ব্যবহার
কীটনাশকের ব্যবহারের ফলে উপকারী পোকামাকড় মারা যেতে পারে এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।
জমির ক্ষয়
অতিরিক্ত চাষাবাদের ফলে জমির উর্বরতা কমে যেতে পারে।
জৈববৈচিত্র্য হ্রাস
একই ধরনের ফসল বারবার চাষ করার ফলে জমির জৈববৈচিত্র্য হ্রাস পেতে পারে।
কৃষি বিপ্লব ও জিডিপি (Agricultural Revolution and GDP)
কৃষি বিপ্লব দেশের জিডিপিতে (GDP) গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
উৎপাদন বৃদ্ধি
কৃষি বিপ্লবের ফলে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, যা জিডিপিতে সরাসরি যোগ হয়।
রপ্তানি আয়
কৃষি পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি পায়, যা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সাহায্য করে।
কর্মসংস্থান সৃষ্টি
কৃষি খাতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়, যা বেকারত্ব কমাতে সাহায্য করে।
শিল্পের বিকাশ
কৃষিভিত্তিক শিল্পের বিকাশ ঘটে, যা জিডিপিতে অবদান রাখে।
কৃষি বিপ্লব: কিছু জরুরি জিজ্ঞাসা (Frequently Asked Questions – FAQs)
কৃষি বিপ্লব নিয়ে আপনাদের মনে কিছু প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক। তাই কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো:
১. কৃষি বিপ্লব বলতে কী বোঝায়? (What do you mean by agricultural revolution?)
কৃষি বিপ্লব হলো কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি, উন্নত বীজ ও চাষাবাদের নতুন পদ্ধতির ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ানো।
২. বাংলাদেশে কৃষি বিপ্লবের গুরুত্ব কী? (What is the importance of agricultural revolution in Bangladesh?)
জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণ, দারিদ্র্য বিমোচন ও অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশে কৃষি বিপ্লব জরুরি।
৩. কৃষি বিপ্লবের ফলে কী কী পরিবর্তন হয়েছে? (What changes have occurred due to the agricultural revolution?)
উৎপাদন বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত, গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হয়েছে।
৪. কৃষি বিপ্লবের পথে প্রধান বাধাগুলো কী কী? (What are the main obstacles in the path of agricultural revolution?)
জলবায়ু পরিবর্তন, কীটপতঙ্গ ও রোগবালাই, মাটির উর্বরতা হ্রাস এবং কৃষি ঋণের অভাব প্রধান বাধা।
৫. কিভাবে কৃষিকে আরও আধুনিক করা যায়? (How can agriculture be further modernized?)
স্মার্ট ফার্মিং, জৈবপ্রযুক্তি, উল্লম্ব কৃষি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষিকে আরও আধুনিক করা যায়।
৬. কৃষি ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার কিভাবে করা যায়?
স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার করে কৃষকরা আবহাওয়ার পূর্বাভাস, বাজার দর এবং নতুন চাষাবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারেন। এছাড়া, মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে ফসলের রোগ নির্ণয় এবং কীটনাশক প্রয়োগের সঠিক সময় জানতে পারেন।
৭. কৃষি বিপণন (agricultural marketing) বলতে কী বোঝায়?
কৃষি বিপণন হলো কৃষিপণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তার কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত সকল কার্যক্রম। এর মধ্যে রয়েছে ফসল সংগ্রহ, বাছাই, প্যাকেজিং, পরিবহন, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ। সঠিক বিপণন ব্যবস্থা কৃষকদের ন্যায্য মূল্য পেতে সাহায্য করে।
৮. শস্য বহুমুখীকরণ (crop diversification) কি এবং কেন প্রয়োজন?
শস্য বহুমুখীকরণ হলো একই জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করা। এর ফলে মাটির উর্বরতা বজায় থাকে, রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয় এবং কৃষকরা বিভিন্ন ধরনের ফসল বিক্রি করে বেশি আয় করতে পারেন।
৯. বীজ বিপ্লব (seed revolution) বলতে কী বোঝায়?
বীজ বিপ্লব হলো উন্নত ও উচ্চ ফলনশীল বীজ ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন বাড়ানো। উন্নত বীজ ব্যবহার করার ফলে কম সময়ে অধিক ফলন পাওয়া যায় এবং এটি কৃষি বিপ্লবের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
১০. খামার যান্ত্রিকীকরণ (farm mechanization) বলতে কী বোঝায়?
খামার যান্ত্রিকীকরণ হলো কৃষিকাজে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা। এর মাধ্যমে সময় ও শ্রম সাশ্রয় হয় এবং ফসলের উৎপাদনশীলতা বাড়ে। ট্রাক্টর, লাঙল, বীজ বপন যন্ত্র, ফসল কাটার যন্ত্র ইত্যাদি ব্যবহার করে কৃষিকাজকে আরও সহজ করা যায়।
উপসংহার (Conclusion)
কৃষি বিপ্লব শুধু খাদ্য উৎপাদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটা একটা দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত উন্নয়নের চাবিকাঠি। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য কৃষি বিপ্লব আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
আমি বিশ্বাস করি, সঠিক পরিকল্পনা, আধুনিক প্রযুক্তি আর সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ একদিন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবেই। শুধু তাই নয়, আমরা আমাদের কৃষিকে এমন এক উচ্চতায় নিয়ে যাব, যা বিশ্বে উদাহরণ সৃষ্টি করবে। আসুন, সবাই মিলে সেই স্বপ্ন পূরণ করি।