আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “কৃষিকাজে বিজ্ঞান ও বাংলাদেশ“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।
কৃষিকাজে বিজ্ঞান ও বাংলাদেশ
ভূমিকা : আমাদের দেশে কৃষি নিয়ে অনেক প্রবাদ বাক্য প্রচলিত আছে। সভ্যতার ঊষালগ্নে মানুষ যেদিন মাটিতে বীজ বুনে ফল ও ফসল ফলাতে শুরু করে, সেদিন থেকেই ফসল উৎপাদনের কাজে নতুন নতুন পন্থা উদ্ভাবিত হচ্ছে। বিজ্ঞানের অব্যাহত জয়যাত্রার পরিপ্রেক্ষিতে কৃষির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিজ্ঞানকে ব্যাপকভাবে জড়িত করা প্রয়োজন। কারণ, গোটা বাংলাদেশই একটা কৃষিক্ষেত্র। বাংলাদেশের মানুষ প্রায় সবাই কৃষিনির্ভর। কৃষি আমাদের প্রাণ, কৃষি আমাদের ধ্যানজ্ঞান ও সাধনা। তাই আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে চাষাবাদ করা হলে একদিকে যেমন উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে তেমনি সমৃদ্ধ হবে দেশ এবং স্বনির্ভর হবে দেশের মানুষ ।
কৃষক ও কৃষি : কালের স্রোতধারায় গোটা বিশ্ব আজ অপ্রতিহত গতিতে ছুটে চলেছে উন্নয়নের স্বর্ণশিখরের দিকে । অথচ বাংলাদেশের কৃষক আর কৃষি আজও সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। মানুষের জীবনকে নিরাপত্তা দানের ব্যাপারে কৃষির বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তার সাথে বিজ্ঞানের সংযোগ ঘটেছে ঠিকই, কিন্তু ব্যাপক সম্পর্ক গড়ে ওঠে নি। উন্নত দেশগুলোতে কৃষিকাজে বিজ্ঞানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠলেও আমাদের দেশে তেমন অগ্রগতি সাধিত হয় নি। কৃষিব্যবস্থা এখনো প্রাচীন পদ্ধতিতেই চলছে। উন্নত কৃষি পদ্ধতির সঙ্গে এদেশের নিরক্ষর কৃষক সমাজ এখনো পরিচিত হয়ে ওঠতে পারে নি। আধুনিক কৃষিব্যবস্থা প্রয়োগের মতো জ্ঞান ও অর্থ তাদের নেই। তাই ফসলের উৎপাদন বাড়ছে না। ফলে অনেকটা ভাগ্যের ওপর নির্ভরশীল বাংলাদেশের কৃষকসমাজ প্রকৃতির খেয়ালখুশির খেলনা হয়ে ধুকে ধুকে মরছে।
বিজ্ঞানের দান : কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানের দান বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সমস্যাটি সমগ্র বিশ্বে বিদ্যমান থাকায় কৃষির উৎপাদন বাড়িয়ে তা মোকাবিলা করার উদ্যোগ উন্নত বিশ্বে দেখা দেয়। ফলে, কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানের প্রয়োগ হওয়ায় কৃষির অনেক উন্নতি সাধিত হয়েছে। চাষাবাদ পদ্ধতি এখন যান্ত্রিককরণ করা হয়েছে। কৃষি উৎপাদনের সামগ্রিক ব্যবস্থায় বিজ্ঞান অবদান রেখেছে। বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণে বিজ্ঞানের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। সার, সেচ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ব্যবহার হচ্ছে। বিভিন্ন কৃষিজ ফসল নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে উন্নতমানের এবং বেশি পরিমাণে ফসল ফলনের উপায় উদ্ভাবন করা হয়েছে। এসব অগ্রগতির ফলে বিশ্বের বহু দেশে কৃষির উৎপাদন প্রচুর বেড়েছে এবং উদ্বৃত্ত ফসল বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।
কৃষিকাজে বিজ্ঞান : একুশ শতকের এ সূচনা লগ্নে বিশ্ব ও বিশ্ববাসীর কোনো কাজেই বিজ্ঞানের অনুপস্থিতি নেই। বিজ্ঞানের জয়যাত্রা আজ সর্বত্র অব্যাহত। বিজ্ঞানের বদৌলতে অন্ধকার পৃথিবী আজ আলোকাভায় ঝলমল। বিজ্ঞানের বদৌলতেই আজ ঊষর মরু হয়েছে সরস ও উর্বর, উঁচু নিচু পাহাড়ের বন্ধুর ভূমি পরিণত হয়েছে দিগন্ত বিস্তৃত সমভূমিতে, নদী পেয়েছে নতুন গতি, শুকনো ক্ষেতে হতে পারছে জলসিঞ্চন । জগৎ ও জীবনের কর্মপ্রবাহের প্রতিটি স্তরে বিজ্ঞান তার অবদানের স্বাক্ষর বহন করে চলেছে। কৃষিবিজ্ঞানীরা বর্তমান শতাব্দীতে কৃষিকাজে বিজ্ঞানের ব্যবহারকে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছেন। অল্প জমিতে অধিক ফসল উৎপাদনের প্রয়াসে নিবিড় চাষের জন্য যান্ত্রিক সরঞ্জামের আবিষ্কার কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লবের সূচনা করেছে। ট্রাক্টর ও পাওয়ার ট্রিলারের সাথে আরও নানা ধরনের যান্ত্রিক সরঞ্জামের আবিষ্কার মানুষ ও পশুশ্রমকে মুক্তি দিয়েছে। একই সঙ্গে গোবর সার, কম্পোস্ট সার ও সবুজ সারের স্থলে রাসায়নিক সার, যথা : ইউরিয়া, টিএসপি ও এমপি ইত্যাদি আবিষ্কারের ফলে একর প্রতি উৎপাদন দ্বিগুণের ওপর চলে গেছে। সম্ভব হয়েছে ধান ও গমের ক্ষেত্রে উচ্চ ফলনশীল বীজ আবিষ্কার। ফিলিপাইনের আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা কেন্দ্রে ইরিধান আবিষ্কৃত হয়। এরপর বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ‘ইরি-৮’ নামক উচ্চ ফলনশীল ধান আবিষ্কার করে এদেশের কৃষিক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বিজ্ঞানী নর্মান বেরলগের মাক্সিপাক ও অন্যান্য জাতের উচ্চ ফলনশীল গম আবিষ্কার করে কৃষিকাজে বিজ্ঞানের এক মহতী উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন।
পাটের জন্মসূত্র আবিষ্কার কৃষিকাজে বিজ্ঞানের প্রয়োগজনিত সাফল্য শুধু ধান ও গমের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয় । বিজ্ঞানের এই সাফল্য দেশের প্রায় সকল ধরনের ফলমূল ও কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রেই সাধিত হয়েছে। কৃষিকাজে বিজ্ঞানের প্রয়োগের মাধ্যমে পোকামাকড়, রোগবালাই দমন ও নির্মূল করার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের প্রয়োগ ঘটেছে অন্য সকল ক্ষেত্রের মতোই। নানা ধরনের পোকার আক্রমণ থেকে শস্যকে রক্ষার জন্য ইনসেকটিসাইড বা পোকা দমনকারী বহু রাসায়নিক দ্রব্য আবিষ্কৃত হয়েছে।
কৃষিকাজে প্রযুক্তি ব্যবহারের দৃষ্টান্ত : বিস্ফোরণোন্মুখ জনসংখ্যার ভারে বাংলাদেশ আজ ন্যুব্জ। জনসংখ্যার গুরুভার সৃষ্টি করেন প্রকট খাদ্য সংকট। আমাদের দেশের প্রচলিত প্রাচীন পদ্ধতি জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সমতা বজায় রেখে কৃষিক্ষেত্রে ফসল উৎপাদন প্রকরতে পারছে না। আমাদের মাটির তুলনায় জাপানের মাটির স্বাভাবিক উৎপাদন ক্ষমতা এক-চতুর্থাংশ। অথচ তারা কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমাদের চেয়ে কম জমিতে সর্বাধিক ফসল ফলিয়ে খাদ্য সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হয়েছে। ফিলিপাইন, চীন, কোরিয়া প্রভৃতি দেশের কৃষিবিজ্ঞানকে আমরা ব্যবহার করে উপকৃত হতে পারি।
আমাদের কৃষিকাজে বিজ্ঞান : উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের দেশে কৃষিকাজে বিজ্ঞানকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হয় নি। আমাদের কৃষক সম্প্রদায় এখনো জমি চাষের জন্য গবাদিপশু চালিত লাঙল ব্যবহার করে। এ ব্যবস্থা যেমন কষ্টকর তেমন সময়সাধ্য। এ কাজে আমরা ট্রাক্টর ব্যবহার করে অল্প পরিশ্রমে অধিক জমিতে চাষাবাদ করতে পারি। কৃষিক্ষেত্রের মান অনুযায়ী রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ওষুধ ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা যেতে পারে। তবে ইতোমধ্যে আমাদের কৃষিকাজে বিজ্ঞানের প্রভাব লক্ষ করা গেছে। সীমিত আকারে হলেও কোনো কোনো দিক দিয়ে বিজ্ঞানের অবদানে আমাদের কৃষিব্যবস্থার উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা যথেষ্ট নয় ৷
উন্নত দেশসমূহের মতো আমরাও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ফসল ফলানো থেকে শুরু করে অল্প পরিশ্রমে অধিকতর ফসল উৎপাদন ও মাড়াই করে আমাদের খাদ্য সমস্যার সমাধান করতে পারি। মানুষের মৌলিক চাহিদার সবটাই যোগান দেয় কৃষি। তাই কৃষিকে অবহেলা করে বেঁচে থাকা যেমন সম্ভব নয়, তেমনি দেশ ও জাতির সামগ্রিক কল্যাণ সাধনও অসম্ভব। আশার কথা, এদিকে লক্ষ রেখেই সরকার কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে সচেতন। কৃষিব্যবস্থার সামগ্রিক কল্যাণের স্বার্থে এদেশে কৃষি কলেজ ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কৃষিকে মাধ্যমিক স্তর থেকে পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষি সম্প্রসারণে সবরকম সাহায্য সহযোগিতা করে আসছে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক কালে কৃষিক্ষেত্রে যে উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে তার পেছনে বিজ্ঞানের যথেষ্ট অবদান রয়েছে।
উপসংহার : বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়ন সম্পূর্ণরূপে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তাই কৃষিব্যবস্থাকে আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত করার জন্য জোর দিতে হবে। কৃষির সর্বক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে হবে। বিজ্ঞানকে কার্যকর করে তোলার জন্য শিক্ষার সম্প্রসারণ করতে হবে। দূর করতে হবে পরনির্ভরশীলতা। একমাত্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমেই কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে আমরা পরনির্ভরশীলতার অভিশাপ থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি।
সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করছি আমাদের এই পোস্ট থেকে রচনা যেটি তুমি চাচ্ছিলে সেটি পেয়ে গিয়েছ। যদি তুমি আমাদেরকে কোন কিছু জানতে চাও বা এই রচনা নিয়ে যদি তোমার কোনো মতামত থাকে, তাহলে সেটি আমাদের কমেন্টে জানাতে পারো। আজকের পোস্টে এই পর্যন্তই, তুমি আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করে আমাদের বাকি পোস্ট গুলো দেখতে পারো।