আচ্ছা, চিঠি! ভাবছেন তো, এই যুগেও চিঠির কথা? এসএমএস, ইমেইল, আর সোশাল মিডিয়ার ভিড়ে চিঠি যেন একটু সেকেলে। কিন্তু জানেন কি, ভাষার শুরুটা কিন্তু এই চিঠির হাত ধরেই? মনের আবেগ, অনুভূতি, জরুরি খবর—সবকিছুর প্রথম বাহন ছিল চিঠি। তাহলে চলুন, আজ আমরা একটু অন্যভাবে চিঠি নিয়ে কথা বলি। চিঠি শুধু Communication-এর মাধ্যম নয়, এটা একটা Art!
আজকের ব্লগ পোস্টে আমরা আলোচনা করব: letter কাকে বলে (উদাহরণ সহ)।
Letter কাকে বলে? (Definition of Letter)
Letter বা চিঠি হলো লিখিত যোগাযোগের একটি মাধ্যম। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে হাতে লিখে অথবা কম্পিউটারে টাইপ করে কোনো বার্তা পাঠানোই হলো চিঠি। চিঠির মাধ্যমে আমরা নিজেদের চিন্তা, ভাবনা, অনুভূতি অথবা কোনো তথ্য অন্য কারো কাছে পৌঁছে দিতে পারি। শুধু তথ্য আদান-প্রদান নয়, একটা সুন্দর চিঠি কিন্তু সম্পর্কের উষ্ণতাও ধরে রাখে!
চিঠি লেখার সময় কিছু নির্দিষ্ট নিয়মকানুন অনুসরণ করা হয়। এর একটা নির্দিষ্ট কাঠামো আছে, যা চিঠিকে আরও গোছানো করে তোলে।
চিঠির প্রকারভেদ (Types of Letters)
চিঠি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, প্রয়োজন অনুযায়ী এদের ভিন্ন ভিন্ন কাঠামো ও ভাষা ব্যবহার করা হয়। প্রধানত চিঠি দুই প্রকার:
- আনুষ্ঠানিক চিঠি (Formal Letter)
- অনানুষ্ঠানিক চিঠি (Informal Letter)
আনুষ্ঠানিক চিঠি (Formal Letter)
আনুষ্ঠানিক চিঠি সাধারণত অফিসিয়াল বা প্রাতিষ্ঠানিক কাজে ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের চিঠিতে মার্জিত ও বিনয়ী ভাষা ব্যবহার করা হয় এবং একটি নির্দিষ্ট কাঠামো অনুসরণ করা হয়।
আনুষ্ঠানিক চিঠির উদাহরণ:
- চাকরির আবেদনপত্র
- অফিসের কোনো কাজের জন্য চিঠি
- ব্যাংকের কাজের জন্য চিঠি
- সরকারি কোনো কাজের জন্য চিঠি
- সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্য চিঠি
অনানুষ্ঠানিক চিঠি (Informal Letter)
অনানুষ্ঠানিক চিঠি ব্যক্তিগত বা পারিবারিক যোগাযোগের জন্য লেখা হয়। এই ধরনের চিঠিতে লেখকের ব্যক্তিগত অনুভূতি ও আবেগের প্রকাশ থাকে এবং ভাষা সাধারণত ঘরোয়া ও সহজ হয়।
অনানুষ্ঠানিক চিঠির উদাহরণ:
- বন্ধু বা বান্ধবীর কাছে চিঠি
- পরিবারের সদস্যদের কাছে চিঠি
- আত্মীয়-স্বজনের কাছে চিঠি
একটি চিঠির কাঠামো (Structure of a Letter)
একটি আদর্শ চিঠির কিছু নির্দিষ্ট অংশ থাকে। এই অংশগুলো চিঠিকে সুন্দর ও গোছানো করে এবং প্রাপকের কাছে বিষয়বস্তু স্পষ্ট করে তোলে। নিচে একটি সাধারণ চিঠির কাঠামো আলোচনা করা হলো:
- শিরোনাম (Heading): চিঠির উপরের ডানদিকে লেখকের ঠিকানা ও তারিখ লিখতে হয়। এটি চিঠির শুরুতেই থাকে।
- অভিবাদন (Salutation): প্রাপকের সাথে সম্পর্কের ভিত্তিতে উপযুক্ত সম্ভাষণ জানাতে হয়। যেমন: প্রিয় বন্ধু, শ্রদ্ধেয় বাবা, ইত্যাদি। আনুষ্ঠানিক চিঠিতে “মহাশয়” বা “জনাব” ব্যবহার করা হয়।
- মূল বক্তব্য (Body): এটা চিঠির প্রধান অংশ। এখানে আপনি যা বলতে চান বা জানাতে চান, তা বিস্তারিতভাবে লিখতে হয়। মূল বক্তব্য সহজ ও স্পষ্ট হওয়া উচিত।
- সমাপ্তি (Closing): চিঠির শেষে বিদায়সূচক কিছু শব্দ ব্যবহার করা হয়, যেমন: “আপনার বিশ্বস্ত”, “ইতি”, ইত্যাদি। আনুষ্ঠানিক চিঠিতে “বিনীত” লেখা হয়।
- স্বাক্ষর (Signature): লেখকের নাম ও স্বাক্ষর চিঠির শেষে দিতে হয়।
চিঠি লেখার নিয়ম (Rules for Writing a Letter)
চিঠি লেখার সময় কিছু নিয়ম অনুসরণ করলে চিঠিটি আরও সুন্দর ও কার্যকর হয়। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম উল্লেখ করা হলো:
- ভাষা সহজ ও স্পষ্ট হতে হবে। জটিল শব্দ বা বাক্য ব্যবহার করা উচিত না।
- চিঠির উদ্দেশ্য পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করতে হবে।
- প্রাপকের সাথে সম্পর্কের ভিত্তিতে ভাষা ব্যবহার করতে হবে।
- ব্যাকরণ ও বানানের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- চিঠিটি পরিষ্কার ও পরিপাটি হতে হবে। কাটাকাটি বা অপরিষ্কার লেখা পরিহার করতে হবে।
আনুষ্ঠানিক চিঠি লেখার নিয়ম (Rules for Writing a Formal Letter)
- ভাষা মার্জিত ও বিনয়ী হতে হবে।
- বিষয়বস্তু সরাসরি উল্লেখ করতে হবে, অপ্রাসঙ্গিক কথা পরিহার করতে হবে।
- চিঠির কাঠামো যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।
- অফিসিয়াল ভাষা ব্যবহার করতে হবে।
অনানুষ্ঠানিক চিঠি লেখার নিয়ম (Rules for Writing an Informal Letter)
- ভাষা ঘরোয়া ও আন্তরিক হতে পারে।
- নিজের অনুভূতি ও আবেগের প্রকাশ থাকতে পারে।
- চিঠির কাঠামো কিছুটা নমনীয় হতে পারে।
- প্রিয়জনের প্রতি স্নেহ ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ থাকতে পারে।
চিঠি লেখার গুরুত্ব (Importance of Letter Writing)
আধুনিক যুগে প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে যোগাযোগের অনেক মাধ্যম তৈরি হলেও, চিঠি লেখার গুরুত্ব আজও কমেনি। নিচে এর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক আলোচনা করা হলো:
- চিঠি একটি ব্যক্তিগত ও আন্তরিক যোগাযোগের মাধ্যম।
- চিঠির মাধ্যমে মনের ভাব আরও সুন্দরভাবে প্রকাশ করা যায়।
- চিঠি একটি স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে সংরক্ষণ করা যায়।
- গুরুত্বপূর্ণ দলিলপত্র এবং তথ্যের জন্য লিখিত প্রমাণ হিসেবে চিঠি অনেক জরুরি।
আধুনিক যুগে চিঠির ব্যবহার (Use of Letters in Modern Times)
আধুনিক যুগে ইমেইল, এসএমএস ও সামাজিক মাধ্যমগুলোর জনপ্রিয়তা বাড়লেও, চিঠির ব্যবহার এখনও পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়নি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে এখনও চিঠির গুরুত্ব বিদ্যমান।
- অফিসিয়াল কাজে এখনও অনেক ক্ষেত্রে চিঠির ব্যবহার অপরিহার্য।
- গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র এবং দলিল পাঠানোর জন্য চিঠির বিকল্প নেই।
- বিশেষ কোনো অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য হাতে লেখা চিঠির গুরুত্ব অনেক বেশি।
- প্রিয়জনকে ব্যক্তিগত শুভেচ্ছা জানানোর জন্য চিঠির মাধ্যমে অনুভূতি প্রকাশ করা আজও স্পেশাল।
হাতে লেখা চিঠির জাদু (The Magic of Handwritten Letters)
হাতে লেখা চিঠির একটা আলাদা জাদু আছে, যা অন্য কোনো মাধ্যমে পাওয়া যায় না। নিজের হাতে লেখা একটি চিঠি প্রাপকের মনে যে অনুভূতি জাগায়, তা ইমেইল বা মেসেজের মাধ্যমে সম্ভব নয়। হাতে লেখা চিঠি লেখকের ব্যক্তিত্ব ও আন্তরিকতার পরিচয় বহন করে।
ইমেইল বনাম চিটি (Email vs Letter)
ইমেইল এবং চিটি দুটোই যোগাযোগের মাধ্যম হলেও এদের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। নিচে এদের কয়েকটি পার্থক্য আলোচনা করা হলো:
বৈশিষ্ট্য | ইমেইল | চিঠি |
---|---|---|
গতি | দ্রুত | ধীর |
খরচ | কম | বেশি |
পরিবেশবান্ধব | বেশি | কম |
ব্যক্তিগত স্পর্শ | কম | বেশি |
আনুষ্ঠানিকতা | কম (ক্ষেত্রবিশেষে বেশি) | বেশি (ক্ষেত্রবিশেষে কম) |
সংরক্ষণ | সহজে ডিজিটালভাবে সংরক্ষণ করা যায় | ফিজিক্যালি সংরক্ষণ করতে হয় |
চিঠি লেখার কিছু টিপস এবং কৌশল (Tips and Tricks for Writing Letters)
চিঠি লেখার সময় কিছু কৌশল অবলম্বন করলে আপনার চিঠি আরও আকর্ষণীয় ও কার্যকর হতে পারে। নিচে কয়েকটি টিপস দেওয়া হলো:
- চিঠির শুরুটা আকর্ষণীয় করুন, যাতে প্রাপকের মনোযোগ আকর্ষণ করা যায়।
- বিষয়বস্তু সহজ ও সাবলীল ভাষায় উপস্থাপন করুন।
- প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো গুছিয়ে লিখুন।
- চিঠিতে ব্যক্তিগত স্পর্শ দিন, যা প্রাপকের মনে দাগ কাটে।
- শেষ করার আগে একবার পুরো চিঠিটি পড়ে নিন, যাতে কোনো ভুল না থাকে।
চিঠি লেখার উদাহরণ (Examples of Letter Writing)
এখানে কয়েকটি বিভিন্ন ধরনের চিঠির উদাহরণ দেওয়া হলো:
বন্ধুর কাছে চিঠি
প্রিয় রিয়া,
কেমন আছিস? অনেক দিন তোর কোনো খবর নেই। আশা করি ভালো আছিস। আমার পরীক্ষা শেষ হয়েছে। ভাবছি, সামনের সপ্তাহে তোর বাড়িতে বেড়াতে যাব। একসাথে অনেক মজা করব।
তোর বাবা-মাকে আমার সালাম জানাবি। নিজের শরীরের যত্ন নিস। খুব তাড়াতাড়ি দেখা হবে।
ইতি,
তোর প্রিয় বান্ধবী,
তাসনিয়া
বাবার কাছে চিঠি
শ্রদ্ধেয় বাবা,
সালাম নিবেন। আশা করি, আপনারা সবাই ভালো আছেন। আমি আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। আমার পড়াশোনা ভালোভাবে চলছে। সামনের মাসে আমার সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা।
পরীক্ষার জন্য দোয়া করবেন। মায়ের শরীর কেমন আছে? নিজের শরীরের প্রতি খেয়াল রাখবেন।
ইতি,
আপনার স্নেহের পুত্র,
রাতুল
চাকরির আবেদনপত্র
বরাবর,
ব্যবস্থাপনা পরিচালক,
এবিসি কোম্পানি লিমিটেড,
ঢাকা।
বিষয়: সহকারী হিসাবরক্ষক পদে নিয়োগের জন্য আবেদন।
মহোদয়,
আমি আপনার কোম্পানির সহকারী হিসাবরক্ষক পদের জন্য আবেদন করতে আগ্রহী। আমি সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক সম্পন্ন করেছি। আমার অ্যাকাউন্টিংয়ের ওপর ভালো দক্ষতা আছে এবং আমি আত্মবিশ্বাসী যে আমি এই পদে সফল হতে পারব।
আমার সকল শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এই আবেদনের সাথে সংযুক্ত করা হলো।
অতএব, আমাকে এই পদে নিয়োগ করে আপনার কোম্পানির উন্নয়নে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।
বিনীত,
আতিকুল ইসলাম
(স্বাক্ষর)
চিঠি বিষয়ক কিছু প্রশ্ন ও উত্তর (FAQs)
এখানে চিঠি নিয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো:
প্রশ্ন: চিঠিতে কী কী বিষয় উল্লেখ করা জরুরি?
উত্তর: চিঠিতে তারিখ, ঠিকানা, অভিবাদন, মূল বক্তব্য, সমাপ্তি এবং স্বাক্ষর উল্লেখ করা জরুরি।
প্রশ্ন: আনুষ্ঠানিক চিঠি লেখার সময় কোন বিষয়গুলো মনে রাখতে হয়?
উত্তর: আনুষ্ঠানিক চিঠি লেখার সময় মার্জিত ভাষা, সঠিক কাঠামো এবং অফিসিয়াল নিয়মকানুন মনে রাখতে হয়।
প্রশ্ন: অনানুষ্ঠানিক চিঠিতে কি ব্যক্তিগত কথা লেখা যায়?
উত্তর: হ্যাঁ, অনানুষ্ঠানিক চিঠিতে ব্যক্তিগত অনুভূতি ও অভিজ্ঞতার কথা লেখা যায়।
প্রশ্ন: চিঠি লেখার জন্য কি কোনো বিশেষ কাগজের প্রয়োজন?
উত্তর: তেমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে, ভালো মানের কাগজ ব্যবহার করলে চিঠিটি দেখতে সুন্দর হয়।
প্রশ্ন: ইমেইলের যুগেও কি চিঠির গুরুত্ব আছে?
উত্তর: হ্যাঁ, বিশেষ করে ব্যক্তিগত এবং অফিসিয়াল গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগের ক্ষেত্রে চিঠির গুরুত্ব এখনও অনেক বেশি।
শেষ কথা (Conclusion)
চিঠি শুধু কয়েকটি শব্দের সমষ্টি নয়, এটি একটি শিল্প। যুগের পরিবর্তনে হয়তো এর ব্যবহার কিছুটা কমেছে, কিন্তু এর আবেদন আজও অমলিন। তাই, মাঝে মাঝে প্রিয়জনদের হাতে লেখা চিঠি দিন, দেখুন তাদের মুখে কতটা হাসি ফোটে!
আশা করি, আজকের আলোচনা থেকে letter কাকে বলে এবং চিঠি লেখার নিয়ম সম্পর্কে আপনারা একটি স্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন। এই বিষয়ে যদি আরও কিছু জানার থাকে, তবে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।