আসসালামু আলাইকুম! কেমন আছেন সবাই? গণিত ক্লাসে সেই মধ্যক আর প্রচুরক নিয়ে শিক্ষকের বকুনি খেয়েছেন, কিন্তু আজও মনে প্রশ্নটা ঘোরাফেরা করে – “আসলে এই জিনিসগুলো কী?” ভয় নেই, আজ আমরা এই মধ্যক আর প্রচুরকের জট খুলে ফেলব! একদম সহজ ভাষায়, গল্পে গল্পে বুঝিয়ে দেব। তাই খাতা-কলম নিয়ে তৈরি হয়ে যান, গণিতের মজা নিতে!
মধ্যক ও প্রচুরক: খেলার মাঠে হিসাবের মজা!
গণিতকে অনেকে ভয় পায়, কিন্তু বিশ্বাস করুন, এটা মজার একটা খেলা। আর এই খেলার কিছু গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হল মধ্যক (Median) এবং প্রচুরক (Mode)। এরা সংখ্যা আর ডেটার মধ্যে লুকানো গল্প খুঁজে বের করতে সাহায্য করে। চলুন, এদের সঙ্গে পরিচিত হই!
মধ্যক (Median) কী?
মনে করুন, আপনার ক্লাসের বন্ধুদের উচ্চতা মাপা হল। এখন জানতে চান, মাঝামাঝি উচ্চতার বন্ধুটি কে? এখানেই মধ্যকের কাজ। মধ্যক হল কোনো ডেটা সেটের সেই মান, যা ডেটাগুলোকে ছোট থেকে বড় অথবা বড় থেকে ছোট হিসেবে সাজানোর পর একদম মাঝখানে থাকে।
মধ্যক বের করার নিয়ম:
১. প্রথমে ডেটাগুলোকে ছোট থেকে বড় (ascending) অথবা বড় থেকে ছোট (descending) ক্রমে সাজান।
২. যদি ডেটার সংখ্যা বিজোড় (odd) হয়, তাহলে মাঝের সংখ্যাটিই হল মধ্যক।
৩. আর যদি ডেটার সংখ্যা জোড় (even) হয়, তাহলে মাঝের দুটি সংখ্যার গড় (average) হবে মধ্যক।
উদাহরণ:
ধরুন, আপনার পাঁচ বন্ধুর উচ্চতা (সেন্টিমিটারে) হল: ১৫০, ১৬০, ১৪০, ১৭০, ১৮০।
১. প্রথমে ছোট থেকে বড় ক্রমে সাজান: ১৪০, ১৫০, ১৬০, ১৭০, ১৮০।
২. এখানে ডেটার সংখ্যা বিজোড় (৫)। মাঝের সংখ্যাটি হল ১৬০।
সুতরাং, এই ডেটা সেটের মধ্যক হল ১৬০ সেন্টিমিটার। তার মানে, আপনার বন্ধুদের মধ্যে মাঝামাঝি উচ্চতার বন্ধুটির উচ্চতা ১৬০ সেন্টিমিটার।
এখন, যদি বন্ধুর সংখ্যা ৬ জন হতো এবং উচ্চতাগুলো হত: ১৪০, ১৫০, ১৬০, ১৭০, ১৮০, ১৯০।
১. এখানে ডেটার সংখ্যা জোড় (৬)। মাঝের দুটি সংখ্যা হল ১৬০ এবং ১৭০।
২. এদের গড় হল (১৬০ + ১৭০) / ২ = ১৬৫।
সুতরাং, এই ডেটা সেটের মধ্যক হল ১৬৫ সেন্টিমিটার।
প্রচুরক (Mode) কী?
প্রচুরক হল কোনো ডেটা সেটে সবচেয়ে বেশিবার আসা সংখ্যা বা মান। মানে, যেটা সবচেয়ে ‘পপুলার’।
প্রচুরক বের করার নিয়ম:
১. ডেটা সেটের প্রতিটি সংখ্যা কতবার আছে, তা গণনা করুন।
২. যে সংখ্যাটি সবচেয়ে বেশিবার এসেছে, সেটিই হল প্রচুরক।
উদাহরণ:
মনে করুন, একটি ক্রিকেট ম্যাচে একজন বোলার ১০ ওভারে কতগুলো ডট বল দিয়েছে তার সংখ্যা হল: ২, ৩, ৪, ২, ৫, ২, ৬, ২, ৭, ২।
এখানে, ২ সংখ্যাটি সবচেয়ে বেশিবার (৫ বার) এসেছে।
সুতরাং, এই ডেটা সেটের প্রচুরক হল ২। তার মানে, বোলার সবচেয়ে বেশি ২ টি ডট বল দিয়েছে প্রতি ওভারে।
কেন এই মধ্যক আর প্রচুরক দরকার?
মধ্যক এবং প্রচুরক শুধু গণিতের জটিল হিসাব নয়, বরং এগুলো আমাদের বাস্তব জীবনে অনেক কাজে লাগে।
-
গড় আয় বনাম মধ্যক আয়: একটি দেশের মানুষের গড় আয় (average income) বের করলে ধনী লোকেরা বেশি আয় করার কারণে অনেকের প্রকৃত অবস্থা বোঝা যায় না। কিন্তু মধ্যক আয় বের করলে একটা ভালো ধারণা পাওয়া যায়, কতজন মানুষ আসলে কেমন আয় করে।
-
পোশাকের দোকানে: একটি পোশাকের দোকানে কোন সাইজের পোশাক বেশি বিক্রি হয়, তা জানতে প্রচুরক ব্যবহার করা হয়। এতে দোকানদার বুঝতে পারে কোন সাইজের পোশাক বেশি স্টক করতে হবে।
-
পরীক্ষার ফলে: একটি ক্লাসের পরীক্ষার ফলে মধ্যক নম্বর বের করলে বোঝা যায়, ছাত্রদের মধ্যে মাঝামাঝি ফল কেমন হয়েছে।
মধ্যক, প্রচুরক এবং গড়ের মধ্যে পার্থক্য কী?
গণিতের এই তিনটি বন্ধু – মধ্যক, প্রচুরক ও গড় (Mean) – ডেটা বিশ্লেষণের গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। তবে এদের কাজ ভিন্ন। গড় হল ডেটা সেটের সব মানের যোগফলকে মোট সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা। মধ্যক হল ডেটাগুলোকে সাজিয়ে মাঝের মান বের করা। আর প্রচুরক হল সবচেয়ে বেশিবার আসা মান।
বৈশিষ্ট্য | গড় (Mean) | মধ্যক (Median) | প্রচুরক (Mode) |
---|---|---|---|
সংজ্ঞা | সব মানের যোগফলকে মোট সংখ্যা দিয়ে ভাগ | সাজানোর পর মাঝের মান | সবচেয়ে বেশিবার আসা মান |
গণনার নিয়ম | যোগ করে ভাগ করা | সাজিয়ে মাঝেরটি বের করা | গণনা করে বের করা |
সংবেদনশীলতা | চরম মানের (extreme values) দ্বারা প্রভাবিত হয় | চরম মান দ্বারা প্রভাবিত হয় না | চরম মান দ্বারা প্রভাবিত হয় না |
ব্যবহার | সাধারণ ডেটা বিশ্লেষণের জন্য উপযুক্ত | চরম মান থাকলে ডেটার সঠিক চিত্র পাওয়ার জন্য ভালো | কোন মানটি বেশি জনপ্রিয় তা জানার জন্য দরকারি |
বাস্তব জীবনে মধ্যক ও প্রচুরকের ব্যবহার
মধ্যক (Median) ও প্রচুরক (Mode) শুধু ক্লাসরুমের অঙ্ক নয়, আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও এদের অনেক ব্যবহার রয়েছে। আসুন, কিছু উদাহরণ দেখি:
১. ব্যবসা ও বাণিজ্য
-
বিক্রয় বিশ্লেষণ: একটি পোশাক কোম্পানি জানতে চায় কোন সাইজের পোশাক তাদের বেশি বিক্রি হয়। এক্ষেত্রে প্রচুরক (Mode) ব্যবহার করে তারা সহজেই বুঝতে পারে কোন সাইজের পোশাকের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
-
বেতন নির্ধারণ: একটি কোম্পানিতে বিভিন্ন পদে কর্মীদের বেতন ভিন্ন হয়। মধ্যক (Median) বেতন বের করে কোম্পানি বুঝতে পারে কর্মীদের গড় বেতন কত এবং বেতন কাঠামো কেমন হওয়া উচিত।
২. স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা
-
রোগ নির্ণয়: ডাক্তাররা কোনো রোগের লক্ষণগুলোর মধ্যে কোন লক্ষণটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, তা জানতে প্রচুরক ব্যবহার করেন। এতে রোগ নির্ণয় করতে সুবিধা হয়।
-
ওষুধের কার্যকারিতা: একটি নতুন ওষুধ কতজনের উপর কাজ করছে, তা জানতে মধ্যক ব্যবহার করা হয়। এতে বোঝা যায় ওষুধটি কতখানি কার্যকর।
৩. শিক্ষা
-
ফলাফল মূল্যায়ন: শিক্ষকরা পরীক্ষার ফলাফলের মধ্যক বের করে বুঝতে পারেন ছাত্রদের পারফরমেন্স কেমন।
-
শ্রেণী নির্বাচন: কোন ক্লাসে কতজন ছাত্র কোন বিষয়ে ভালো, তা জানতে প্রচুরক ব্যবহার করা হয়। এতে ছাত্রদের জন্য সঠিক শ্রেণী নির্বাচন করতে সুবিধা হয়।
৪. খেলাধুলা
- খেলোয়াড়ের পারফরমেন্স: একজন খেলোয়াড় একটি সিরিজে কত রান করেছে, তার মধ্যক বের করে তার ধারাবাহিকতা মাপা যায়।
- জনপ্রিয়তা নির্ধারণ: কোন খেলোয়াড় সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জিতেছে, তা জানতে প্রচুরক ব্যবহার করা হয়।
৫. অর্থনীতি
- আয় বৈষম্য: একটি দেশের মানুষের আয়ের মধ্যক বের করে আয় বৈষম্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
- পণ্যের চাহিদা: কোন পণ্যের চাহিদা সবচেয়ে বেশি, তা জানতে প্রচুরক ব্যবহার করা হয়।
গণিতের অন্যান্য ক্ষেত্রে মধ্যক ও প্রচুরকের প্রয়োগ
পরিসংখ্যান (Statistics) এবং ডেটা বিশ্লেষণের (Data Analysis) জগতে মধ্যক (Median) ও প্রচুরকের (Mode) ব্যবহার ব্যাপক। এই দুটি পরিমাপক তথ্যের বৈশিষ্ট্য বুঝতে এবং সিদ্ধান্ত নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্র আলোচনা করা হলো:
১. ডেটা সারাংশ (Data Summarization)
যখন বিশাল পরিমাণ ডেটা নিয়ে কাজ করা হয়, তখন সেগুলোর একটি সংক্ষিপ্ত রূপ বের করা প্রয়োজন হয়। মধ্যক এবং প্রচুরক এক্ষেত্রে ডেটার মূল বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরতে সাহায্য করে।
- মধ্যক: ডেটার কেন্দ্র কোথায় অবস্থিত, তা জানতে সাহায্য করে। এটি ডেটার গড় মানের চেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য, বিশেষ করে যখন ডেটাতে কিছু ব্যতিক্রমী মান (Outliers) থাকে।
- প্রচুরক: কোন মানটি সবচেয়ে বেশিবার ঘটেছে, তা জানতে সাহায্য করে। এটি সাধারণত গুণবাচক ডেটার (Qualitative Data) জন্য বেশি উপযোগী, যেমন – পছন্দের রং, পোশাকের সাইজ ইত্যাদি।
২. সম্ভাবনা নির্ণয় (Probability Distribution)
সম্ভাবনা তত্ত্বে মধ্যক এবং প্রচুরক ব্যবহার করে কোনো ডেটার বিন্যাস (Distribution) বোঝা যায়।
- মধ্যক: কোনো সম্ভাবনা বিন্যাসের ৫০তম শতাংশক (50th Percentile) হিসেবে কাজ করে। এর মাধ্যমে ডেটার অর্ধেক মান এর নিচে এবং বাকি অর্ধেক মান এর উপরে থাকে।
- প্রচুরক: কোনো বিন্যাসের সর্বোচ্চ ঘনত্বের বিন্দু (Point of Highest Density) নির্দেশ করে। এটি বিন্যাসের আকার এবং বৈশিষ্ট্য বুঝতে সাহায্য করে।
৩. নির্ভুলতা যাচাই (Robust Statistics)
কিছু ডেটাতে ভুল বা ব্যতিক্রমী মান থাকতে পারে, যা গড় মানের উপর বড় প্রভাব ফেলে। এক্ষেত্রে মধ্যক একটি শক্তিশালী পরিমাপক হিসেবে কাজ করে, কারণ এটি ব্যতিক্রমী মান দ্বারা প্রভাবিত হয় না।
- গড় (Mean): ব্যতিক্রমী মান দ্বারা দ্রুত পরিবর্তিত হতে পারে।
- মধ্যক (Median): ব্যতিক্রমী মানের প্রভাব কম থাকায় ডেটার মূল বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ণ থাকে।
৪. সিদ্ধান্ত গ্রহণ (Decision Making)
বিভিন্ন ব্যবসায়িক এবং অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে মধ্যক ও প্রচুরকের ব্যবহার অপরিহার্য।
- বাজার বিশ্লেষণ (Market Analysis): কোনো পণ্যের চাহিদা কেমন, তা জানতে প্রচুরক ব্যবহার করা হয়। যেমন, কোন মডেলের গাড়ি বেশি বিক্রি হয়, তা জানতে প্রচুরক ব্যবহৃত হয়।
- বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত (Investment Decisions): কোনো শেয়ারের দামের মধ্যক বের করে বিনিয়োগকারীরা বুঝতে পারেন শেয়ারটির দাম সাধারণত কোন সীমার মধ্যে থাকে।
কীভাবে মধ্যক ও প্রচুরক মনে রাখবেন?
গণিতের এই ধারণাগুলো মনে রাখা সহজ, যদি আপনি এদের বাস্তব জীবনের সাথে মেলাতে পারেন। এখানে কিছু টিপস দেওয়া হলো:
- মধ্যক (Median): “মাঝামাঝি” – এই শব্দটি মনে রাখুন। মধ্যক হল ডেটা সেটের মাঝামাঝি মান।
- প্রচুরক (Mode): “পপুলার” – এই শব্দটি মনে রাখুন। প্রচুরক হল ডেটা সেটে সবচেয়ে বেশিবার আসা মান।
মধ্যক ও প্রচুরক: কিছু মজার উদাহরণ
আসুন, মধ্যক ও প্রচুরকের ধারণা আরও একটু পরিষ্কার করার জন্য কিছু মজার উদাহরণ দেখা যাক:
উদাহরণ ১: বন্ধুদের জন্মদিন
ধরুন, আপনার ১০ জন বন্ধুর জন্মদিন নিচে দেওয়া হলো:
জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ, মার্চ, এপ্রিল, মে, জুন, জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর।
এখানে, প্রচুরক (Mode) হলো মার্চ মাস, কারণ এই মাসে আপনার সবচেয়ে বেশি বন্ধুর জন্মদিন।
উদাহরণ ২: ক্লাসের পরীক্ষার নম্বর
একটি ক্লাসে ২০ জন ছাত্রের গণিতের পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরগুলো হলো:
50, 60, 70, 80, 90, 55, 65, 75, 85, 95, 52, 62, 72, 82, 92, 58, 68, 78, 88, 98.
এই ডেটা সেটের মধ্যক (Median) বের করতে হলে প্রথমে নম্বরগুলোকে ছোট থেকে বড় ক্রমে সাজাতে হবে:
50, 52, 55, 58, 60, 62, 65, 68, 70, 72, 75, 78, 80, 82, 85, 88, 90, 92, 95, 98.
যেহেতু এখানে ২০টি সংখ্যা আছে (জোড় সংখ্যা), তাই মধ্যক হবে মাঝের দুটি সংখ্যার গড়। মাঝের সংখ্যা দুটি হলো 72 এবং 75.
সুতরাং, মধ্যক = (72 + 75) / 2 = 73.5
উদাহরণ ৩: ফলের দোকান
একটি ফলের দোকানে বিভিন্ন ধরনের ফল আছে। তাদের মধ্যে কোন ফলটি সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়, তা জানার জন্য প্রচুরক ব্যবহার করা যেতে পারে। যদি দেখা যায় আপেল সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়, তাহলে আপেল হবে প্রচুরক।
মধ্যক ও প্রচুরক নিয়ে কিছু সাধারণ ভুল ধারণা
মধ্যক (Median) এবং প্রচুরক (Mode) নিয়ে অনেকের মনে কিছু ভুল ধারণা থাকে। এই ভুল ধারণাগুলো পরিষ্কার করা দরকার, যাতে এই ধারণাগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়। নিচে কয়েকটি সাধারণ ভুল ধারণা এবং তাদের সঠিক ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:
১. ভুল ধারণা: মধ্যক সবসময় গড়ের সমান
অনেকেই মনে করেন মধ্যক এবং গড় একই জিনিস, কিন্তু এটি ভুল। মধ্যক হলো ডেটা সেটের মাঝের মান, যেখানে গড় হলো সব মানের যোগফলকে মোট সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা। যদি ডেটা সেটে কিছু ব্যতিক্রমী মান (extreme values) থাকে, তাহলে গড় অনেক বেশি প্রভাবিত হতে পারে, কিন্তু মধ্যক তেমন প্রভাবিত হয় না।
-
উদাহরণ: ধরা যাক, একটি ডেটা সেট হলো: ১০, ২০, ৩০, ৪০, ১০০।
- গড় = (১০ + ২০ + ৩০ + ৪০ + ১০০) / ৫ = ৪০
- মধ্যক = ৩০
এখানে দেখা যাচ্ছে, গড় এবং মধ্যক ভিন্ন।
২. ভুল ধারণা: প্রচুরক সবসময় ডেটা সেটের মাঝে থাকে
প্রচুরক হলো সেই মান যা ডেটা সেটে সবচেয়ে বেশিবার আসে। এটি ডেটা সেটের শুরুতে, মাঝে বা শেষে যেকোনো জায়গায় থাকতে পারে।
-
উদাহরণ: ধরা যাক, একটি ডেটা সেট হলো: ২, ২, ২, ৩, ৪, ৫, ৬।
- এখানে প্রচুরক হলো ২, যা ডেটা সেটের শুরুতে অবস্থিত।
৩. ভুল ধারণা: প্রতিটি ডেটা সেটের প্রচুরক থাকতে হবে
কিছু ডেটা সেটে কোনো প্রচুরক নাও থাকতে পারে। যদি প্রতিটি মান সমান সংখ্যকবার আসে, তাহলে সেই ডেটা সেটের কোনো প্রচুরক থাকে না।
- উদাহরণ: ধরা যাক, একটি ডেটা সেট হলো: ১, ২, ৩, ৪, ৫। এখানে প্রতিটি মান একবার করে এসেছে, তাই এই ডেটা সেটের কোনো প্রচুরক নেই।
৪. ভুল ধারণা: মধ্যক বের করতে ডেটা সাজানো জরুরি নয়
মধ্যক বের করার জন্য ডেটাগুলোকে ছোট থেকে বড় অথবা বড় থেকে ছোট ক্রমে সাজানো আবশ্যক। যদি ডেটা সাজানো না হয়, তাহলে মধ্যক ভুল হতে পারে।
-
উদাহরণ: ধরা যাক, একটি ডেটা সেট হলো: ২৫, ১০, ১৫, ৩৫, ২০।
- সাজানো ছাড়া মধ্যক বের করলে ভুল হতে পারে।
- সাজানোর পর ডেটা সেটটি হবে: ১০, ১৫, ২০, ২৫, ৩৫। এখন মধ্যক হলো ২০।
৫. ভুল ধারণা: প্রচুরকের মান সবসময় একটি সংখ্যা হবে
কোনো ডেটা সেটে একাধিক প্রচুরক থাকতে পারে। যদি দুটি বা তিনটি মান সমান সংখ্যকবার আসে এবং সেটি অন্য যেকোনো মানের চেয়ে বেশি হয়, তবে সেই মানগুলো প্রত্যেকটিই প্রচুরক হবে।
- উদাহরণ: ধরা যাক, একটি ডেটা সেট হলো: ২, ২, ৩, ৩, ৪, ৫। এখানে ২ এবং ৩ উভয়ই দুইবার করে এসেছে। সুতরাং, এই ডেটা সেটের প্রচুরক হলো ২ এবং ৩।
“মধ্যক ও প্রচুরক” নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ):
১. মধ্যক ও প্রচুরক কেন দরকার?
উত্তর: ডেটা অ্যানালাইসিস করে কোনো তথ্য সহজে বের করতে এই দু’টো খুব দরকারি।
২. গাণিতিকভাবে মধ্যক কীভাবে নির্ণয় করা হয়?
উত্তর: প্রথমে ডেটাগুলোকে ছোট থেকে বড় অথবা বড় থেকে ছোট হিসেবে সাজিয়ে, তারপর যদি ডেটার সংখ্যা বিজোড় হয়, তাহলে মাঝের সংখ্যাটিই মধ্যক। আর জোড় হলে, মাঝের দুটি সংখ্যার গড় হবে মধ্যক।
৩. বাস্তব জীবনে মধ্যকের ব্যবহার কী?
উত্তর: গড় আয়ের হিসাবের থেকে মধ্যক আয়ের হিসাব অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য।
৪. কীভাবে বুঝব কখন মধ্যক ব্যবহার করতে হবে?
উত্তর: যখন ডেটার মধ্যে অনেক বেশি outlier থাকবে, তখন মধ্যক ব্যবহার করাই ভালো।
৫. প্রচুরক এর সুবিধা কী?
উত্তর: খুব সহজেই ডেটা সেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় মানটি বের করা যায়।
৬. গড়, মধ্যক এবং প্রচুরকের মধ্যে প্রধান পার্থক্যগুলো কী কী?
উত্তর: গড় হল সব মানের যোগফলকে মোট সংখ্যা দিয়ে ভাগ, মধ্যক হল ডেটাগুলোকে সাজিয়ে মাঝের মান আর প্রচুরক হল সবচেয়ে বেশি বার আসা মান।
উপসংহার
গণিতের জটিল ধাঁধাগুলোও মজার হয়ে ওঠে, যদি আমরা সেগুলোকে সহজভাবে বুঝতে পারি। মধ্যক (Median) এবং প্রচুরক (Mode) তেমনই দুটি ধারণা, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে ব্যবসা, শিক্ষা, এবং অর্থনীতি পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজে লাগে। এই ব্লগপোস্টে আমরা চেষ্টা করেছি মধ্যক ও প্রচুরকের সংজ্ঞা, ব্যবহারের ক্ষেত্র, এবং এদের মধ্যেকার পার্থক্যগুলো সহজ ভাষায় বুঝিয়ে দিতে।
আশা করি, এই আলোচনার পর মধ্যক এবং প্রচুরক নিয়ে আপনার মনে আর কোনো দ্বিধা থাকবে না। গণিতের এই মজার খেলোয়াড়দের সঙ্গে থাকুন, আর ডেটার জগতকে আরও ভালোভাবে বুঝতে শিখুন। যদি এই বিষয়ে আরও কিছু জানার থাকে, তবে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। আপনার প্রতিটি জিজ্ঞাসাই আমাদের কাছে মূল্যবান।
গণিতকে ভয় নয়, ভালোবাসুন – এই কামনায় আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন! আল্লাহ হাফেজ!