আমাদের শরীরের জটিল কার্যকলাপের পেছনের কারিগর: নিউরন!
আচ্ছা, কখনো কি ভেবে দেখেছেন, কিভাবে আপনি একটা গরম পাত্রে হাত দেওয়ার সাথে সাথেই সরিয়ে নেন? কিংবা কিভাবে একটি গান শুনে মুহূর্তেই আপনার মন ভালো হয়ে যায়? এই সবকিছুর পেছনে রয়েছে এক বিশেষ কোষ, যার নাম নিউরন। আজ আমরা এই নিউরন নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করব। চলুন, নিউরনের জগতে একটু ঘুরে আসা যাক!
নিউরন কি? (What is a Neuron?)
নিউরন হলো আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের (nervous system) মূল গঠন ও কার্যকারী একক। একে স্নায়ুকোষও বলা হয়। এটি আমাদের মস্তিষ্কে তথ্যের আদান প্রদানে সাহায্য করে। অনেকটা যেন ইলেক্ট্রনিক সার্কিটের তার! আমাদের অনুভূতি, চিন্তা, এবং কার্যকলাপ সবকিছুই এই নিউরনের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রিত হয়।
নিউরন মূলত তিনটি প্রধান অংশে বিভক্ত:
- কোষদেহ (Cell Body/Soma): এটি নিউরনের মূল অংশ, যেখানে নিউক্লিয়াস এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সেলুলার অর্গানেল থাকে।
- ডেনড্রাইট (Dendrites): এগুলো কোষদেহের চারপাশের শাখা-প্রশাখা, যা অন্য নিউরন থেকে সংকেত গ্রহণ করে।
- অ্যাক্সন (Axon): এটি একটি লম্বা, সরু প্র projection, যা কোষদেহ থেকে সংকেত দূরে অন্য নিউরনে প্রেরণ করে।
নিউরনের গঠন (Neuron Structure)
নিউরনের গঠন বেশ জটিল এবং এর প্রতিটি অংশের নিজস্ব বিশেষ কাজ আছে। আসুন, আমরা এর গঠন বিস্তারিতভাবে জেনে নেই:
- কোষদেহ (Cell Body/Soma): এটি নিউরনের কেন্দ্র এবং এখানে নিউক্লিয়াস অবস্থিত। কোষদেহের মধ্যে সাইটোপ্লাজম, মাইটোকন্ড্রিয়া এবং অন্যান্য সেলুলার অঙ্গাণু থাকে, যা নিউরনের কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- ডেনড্রাইট (Dendrites): ডেনড্রাইটগুলো ছোট ছোট শাখার মতো, যেগুলো কোষদেহের চারপাশে বিস্তৃত থাকে। এগুলোর প্রধান কাজ হলো অন্য নিউরন থেকে আসা সংকেত গ্রহণ করা। ডেনড্রাইটের মাধ্যমে নিউরন অন্যান্য নিউরনের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে।
- অ্যাক্সন (Axon): অ্যাক্সন হলো নিউরনের সবচেয়ে লম্বা অংশ, যা কোষদেহ থেকে শুরু হয়ে অন্য নিউরনে গিয়ে শেষ হয়। অ্যাক্সনের মাধ্যমে নিউরন তার সংকেত অন্য নিউরনে পাঠায়। অ্যাক্সনের চারপাশে মায়েলিন শীথ (Myelin Sheath) নামক একটি চর্বিযুক্ত স্তর থাকে, যা সংকেত দ্রুত পরিবহনে সাহায্য করে।
- মায়েলিন শীথ (Myelin Sheath): এটি অ্যাক্সনের চারপাশে থাকা একটি প্রতিরক্ষামূলক স্তর, যা সংকেত দ্রুত এবং মসৃণভাবে পরিবহনে সাহায্য করে। মায়েলিন শীথ মূলত “সোয়ান কোষ” (Schwann cells) দ্বারা গঠিত।
- নোড অফ র্যানভিয়ার (Node of Ranvier): মায়েলিন শীথ কিছুদূর পরপর বিচ্ছিন্ন থাকে, এই বিচ্ছিন্ন স্থানগুলোকে নোড অফ র্যানভিয়ার বলা হয়। এই স্থানগুলো অ্যাক্সনের মাধ্যমে সংকেত দ্রুত লাফিয়ে লাফিয়ে যেতে সাহায্য করে, যা “সল্টেটরি কন্ডাকশন” (Saltatory Conduction) নামে পরিচিত।
- অ্যাক্সন টার্মিনাল (Axon Terminal): এটি অ্যাক্সনের শেষ প্রান্ত, যেখানে নিউরোট্রান্সমিটার (Neurotransmitter) নামক রাসায়নিক পদার্থ থাকে। যখন একটি সংকেত অ্যাক্সন টার্মিনালে পৌঁছায়, তখন নিউরোট্রান্সমিটার নিঃসৃত হয় এবং অন্য নিউরনের ডেনড্রাইটে সংকেত পাঠায়।
নিউরনের প্রকারভেদ (Types of Neurons)
কার্যকারিতা ও অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে নিউরনকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়:
-
সংবেদী নিউরন (Sensory Neurons): এই নিউরনগুলো আমাদের শরীরের বিভিন্ন সংবেদী অঙ্গ (যেমন: ত্বক, চোখ, কান) থেকে মস্তিষ্কে সংবেদী তথ্য প্রেরণ করে। উদাহরণস্বরূপ, যখন আপনি কোনো গরম জিনিস স্পর্শ করেন, তখন সংবেদী নিউরন সেই তথ্য মস্তিষ্কে পাঠায় এবং আপনি তা অনুভব করেন।
-
মোটর নিউরন (Motor Neurons): এই নিউরনগুলো মস্তিষ্ক এবং স্পাইনাল কর্ড (Spinal Cord) থেকে পেশী এবং গ্রন্থিগুলোতে সংকেত প্রেরণ করে। এর ফলে পেশী সংকুচিত হয় এবং আমরা নড়াচড়া করতে পারি। যেমন, যখন আপনি হাঁটার সিদ্ধান্ত নেন, তখন মোটর নিউরন আপনার পায়ের পেশীগুলোকে সংকেত পাঠায় এবং আপনি হাঁটতে শুরু করেন।
-
ইন্টারনিউরন (Interneurons): এই নিউরনগুলো সংবেদী এবং মোটর নিউরনের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। এরা মূলত মস্তিষ্ক এবং স্পাইনাল কর্ডে পাওয়া যায় এবং জটিল স্নায়বিক কার্যকলাপের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইন্টারনিউরনগুলো সংবেদী নিউরন থেকে আসা তথ্য বিশ্লেষণ করে এবং মোটর নিউরনকে উপযুক্ত সংকেত পাঠাতে সাহায্য করে।
নিউরনের কাজ (Functions of Neurons)
নিউরনের প্রধান কাজ হলো তথ্য আদান প্রদান করা। এই তথ্য আদান প্রদানের মাধ্যমেই আমাদের শরীর বিভিন্ন উদ্দীপনার প্রতি সাড়া দিতে পারে। নিচে নিউরনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ উল্লেখ করা হলো:
-
সংবেদী সংকেত গ্রহণ: সংবেদী নিউরনগুলো ত্বক, চোখ, কান, নাক এবং জিহ্বা থেকে বিভিন্ন সংবেদী সংকেত গ্রহণ করে। এই সংকেতগুলো মস্তিষ্কে প্রেরণ করা হয়, যেখানে সেগুলি বিশ্লেষণ করে উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া তৈরি করা হয়।
-
মোটর সংকেত প্রেরণ: মোটর নিউরনগুলো মস্তিষ্ক এবং স্পাইনাল কর্ড থেকে পেশী এবং গ্রন্থিগুলোতে সংকেত প্রেরণ করে। এই সংকেতগুলোর মাধ্যমে পেশী সংকুচিত হয় এবং শরীরের নড়াচড়া সম্ভব হয়।
-
তথ্য প্রক্রিয়াকরণ: ইন্টারনিউরনগুলো সংবেদী এবং মোটর নিউরনের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে তথ্য প্রক্রিয়াকরণে সহায়তা করে। এরা মস্তিষ্কে জটিল স্নায়বিক সার্কিট তৈরি করে, যা চিন্তা, স্মৃতি এবং শেখার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন করতে সাহায্য করে।
-
স্নায়ু সংবেদনের পরিবহন: নিউরনগুলো অ্যাকশন পটেনশিয়াল (Action Potential) নামক একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্নায়ু সংবেদন পরিবহন করে। অ্যাকশন পটেনশিয়াল হলো একটি বৈদ্যুতিক সংকেত, যা অ্যাক্সনের মাধ্যমে দ্রুত গতিতে পরিবাহিত হয়।
-
যোগাযোগ স্থাপন: নিউরনগুলো একে অপরের সাথে সিনাপ্স (Synapse) নামক বিশেষ সংযোগস্থলের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করে। সিনাপ্স হলো দুটি নিউরনের মধ্যে একটি ছোট স্থান, যেখানে নিউরোট্রান্সমিটার নামক রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে সংকেত প্রেরণ করা হয়।
সিনাপ্স কিভাবে কাজ করে? (How Synapse Works?)
সিনাপ্স (Synapse) হলো দুটি নিউরনের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী স্থান। এখানে একটি নিউরন থেকে অন্য নিউরনে তথ্য স্থানান্তরিত হয়। এই প্রক্রিয়াটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর মাধ্যমেই আমাদের মস্তিষ্কের জটিল কার্যকলাপগুলো সম্পন্ন হয়।
-
অ্যাকশন পটেনশিয়াল: যখন একটি অ্যাকশন পটেনশিয়াল (বৈদ্যুতিক সংকেত) একটি নিউরনের অ্যাক্সন টার্মিনালে পৌঁছায়, তখন ক্যালসিয়াম আয়ন (Calcium Ion) নিউরনে প্রবেশ করে।
-
নিউরোট্রান্সমিটার নিঃসরণ: ক্যালসিয়াম আয়নের কারণে অ্যাক্সন টার্মিনালে থাকা ভেসিকল (Vesicle) থেকে নিউরোট্রান্সমিটার (Neurotransmitter) নিঃসৃত হয়। এই নিউরোট্রান্সমিটার সিনাপ্সের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
-
সংকেত গ্রহণ: নিউরোট্রান্সমিটার অন্য নিউরনের ডেনড্রাইটের রিসেপ্টর (Receptor) এর সাথে যুক্ত হয়। এর ফলে দ্বিতীয় নিউরনে একটি বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি হয়, যা অ্যাকশন পটেনশিয়াল শুরু করতে পারে।
- পুনরায় গ্রহণ বা ধ্বংস: সিনাপ্সের মধ্যে থাকা নিউরোট্রান্সমিটার হয় পুনরায় প্রথম নিউরনে ফিরে যায় (reuptake), অথবা কিছু এনজাইম (enzyme) দ্বারা ধ্বংস হয়ে যায়। এটি সিনাপ্সের সংকেত পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এবং নিউরনের মধ্যে সঠিক যোগাযোগ বজায় রাখে।
নিউরোট্রান্সমিটার কি? (What is Neurotransmitter?)
নিউরোট্রান্সমিটার হলো সেই রাসায়নিক পদার্থ, যা একটি নিউরন থেকে অন্য নিউরনে সংকেত বহন করে নিয়ে যায়। এগুলো সিনাপ্সের মাধ্যমে তথ্য আদান প্রদানে প্রধান ভূমিকা পালন করে। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নিউরোট্রান্সমিটার এবং তাদের কাজ উল্লেখ করা হলো:
নিউরোট্রান্সমিটার | কাজ |
---|---|
অ্যাসিটাইলকোলিন (Acetylcholine) | পেশী সংকোচন, স্মৃতি এবং শিক্ষার সাথে জড়িত। |
ডোপামিন (Dopamine) | আনন্দ, পুরস্কার, মনোযোগ এবং আন্দোলনের সাথে জড়িত। |
সেরোটোনিন (Serotonin) | মেজাজ, ঘুম, ক্ষুধা এবং আবেগের সাথে জড়িত। |
গামা-অ্যামিনোবিউটিরিক অ্যাসিড(GABA) | উদ্বেগ কমায় এবং স্নায়ু শান্ত করে। |
গ্লুটামেট (Glutamate) | স্মৃতি এবং শিক্ষার সাথে জড়িত, মস্তিষ্কের প্রধান উত্তেজনাপূর্ণ নিউরোট্রান্সমিটার। |
নিউরনের রোগ (Neuron Diseases)
নিউরন ক্ষতিগ্রস্ত হলে বিভিন্ন ধরনের স্নায়বিক রোগ হতে পারে। এই রোগগুলো মানুষের জীবনযাত্রার মান কমিয়ে দিতে পারে। নিচে কয়েকটি প্রধান নিউরনের রোগ এবং তাদের লক্ষণ আলোচনা করা হলো:
-
আলঝেইমার রোগ (Alzheimer’s Disease): এটি একটি মস্তিষ্কের রোগ, যা স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা ধীরে ধীরে তাদের পরিচিত মানুষ এবং স্থানগুলোও ভুলে যেতে শুরু করেন।
-
পারকিনসন রোগ (Parkinson’s Disease): এই রোগে মস্তিষ্কের ডোপামিন উৎপাদনকারী নিউরনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার ফলে কাঁপুনি, শরীরের অনমনীয়তা এবং চলাফেরায় ধীরগতি দেখা যায়।
-
মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (Multiple Sclerosis): এটি একটি অটোইমিউন রোগ, যেখানে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা মস্তিষ্কের এবং স্পাইনাল কর্ডের মায়েলিন শীথকে আক্রমণ করে ক্ষতি করে। এর ফলে স্নায়ু সংবেদনের পরিবহন ব্যাহত হয় এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।
-
এএলএস (ALS) বা অ্যামিওট্রফিক ল্যাটারাল স্ক্লেরোসিস: এটি একটি মারাত্মক স্নায়বিক রোগ, যা মোটর নিউরনগুলোকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে দেয়। এর ফলে পেশী দুর্বল হয়ে যায় এবং শরীরের নড়াচড়া করার ক্ষমতা হ্রাস পায়।
-
এপিলেপসি (Epilepsy): এপিলেপসি হলো একটি স্নায়বিক disorder, যেখানে মস্তিষ্কের নিউরনগুলো অস্বাভাবিকভাবে সক্রিয় হয়ে যায়, যার ফলে খিঁচুনি বা সিজার (seizure) হতে পারে।
নিউরনের স্বাস্থ্য কিভাবে ভালো রাখা যায়? (How to Keep Neurons Healthy?)
কিছু সহজ উপায় অনুসরণ করে আপনি আপনার নিউরনের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারেন। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ টিপস দেওয়া হলো:
-
শারীরিক ব্যায়াম: নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বাড়ে, যা নিউরনের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিটের জন্য হাঁটা, দৌড়ানো বা যোগা করতে পারেন।
-
সুস্থ খাবার: মস্তিষ্কের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা খুবই জরুরি। ফল, সবজি, শস্য এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার নিউরনের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং চিনি যুক্ত পানীয় পরিহার করুন।
-
পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। ঘুমের সময় মস্তিষ্ক নিজেকে মেরামত করে এবং নতুন তথ্য সংরক্ষণে সাহায্য করে।
-
মানসিক ব্যায়াম: মস্তিষ্ককে সচল রাখতে নতুন কিছু শিখুন, যেমন – বই পড়া, পাজল সমাধান করা বা নতুন ভাষা শেখা।
-
মানসিক চাপ কমানো: অতিরিক্ত মানসিক চাপ নিউরনের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই ধ্যান, যোগা বা শখের কাজ করার মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন।
-
সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখা: বন্ধু এবং পরিবারের সাথে সময় কাটানো মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং নিউরনের কার্যকারিতা বাড়ায়।
- ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার: ধূমপান ও মদ্যপান মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর। এগুলো নিউরনের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয় এবং বিভিন্ন স্নায়বিক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
নিউরন নিয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্ন এবং উত্তর (FAQs about Neurons)
এখানে নিউরন সম্পর্কিত কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো, যা আপনার আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে:
১. নিউরন কি রিজেনারেট (regenerate) হতে পারে?
উত্তর: কিছু ক্ষেত্রে, পেরিফেরাল নার্ভাস সিস্টেমের (peripheral nervous system) নিউরনগুলো সামান্য পরিমাণে রিজেনারেট হতে পারে। তবে, সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের ( central nervous system) নিউরনগুলোর রিজেনারেট হওয়ার ক্ষমতা খুবই কম।
২. মস্তিষ্কে কতগুলো নিউরন থাকে?
উত্তর: মানব মস্তিষ্কে প্রায় ৮৬ বিলিয়ন (৮৬০০ কোটি) নিউরন থাকে।
৩. নিউরন কিভাবে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে?
উত্তর: নিউরন সিনাপ্সের (synapse) মাধ্যমে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে। সিনাপ্সে নিউরোট্রান্সমিটার (neurotransmitter) নামক রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে সংকেত প্রেরণ করা হয়। যেমন ধরুন, একটি বন্ধু আরেক বন্ধুকে মেসেজ পাঠাচ্ছে।
৪. নিউরনের কাজ কী?
উত্তর: নিউরনের প্রধান কাজ হলো তথ্য আদান প্রদান করা, যা আমাদের অনুভূতি, চিন্তা এবং কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এটা অনেকটা আমাদের শরীরের তথ্য মহাসড়কের মতো।
৫. নিউরন কোথায় পাওয়া যায়?
উত্তর: নিউরন প্রধানত মস্তিষ্ক, স্পাইনাল কর্ড এবং পেরিফেরাল নার্ভাস সিস্টেমে পাওয়া যায়।
৬. নিউরন কি শুধুই মস্তিষ্কে থাকে?
উত্তর: না, নিউরন শুধু মস্তিষ্কে নয়, এটি স্পাইনাল কর্ড এবং সারা শরীরের স্নায়ুতন্ত্রে ছড়িয়ে আছে।
৭. নিউরন এবং স্নায়ুর মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: একটি নিউরন হলো একটি একক কোষ, যেখানে স্নায়ু হলো অনেকগুলো নিউরনের সমষ্টি, যা একসাথে একটি বান্ডেলের মতো কাজ করে।
৮. নিউরন কি বিভাজিত হতে পারে?
উত্তর: মানুষের জন্মের পর নতুন নিউরন তৈরির হার খুবই কম। তবে, মস্তিষ্কের কিছু অংশে, যেমন হিপ্পোক্যাম্পাসে (hippocampus), নতুন নিউরন তৈরি হতে পারে।
৯. নিউরনের গঠন কেমন?
উত্তর: নিউরনের গঠনে মূলত তিনটি অংশ থাকে: কোষদেহ (cell body), ডেনড্রাইট (dendrite) এবং অ্যাক্সন (axon)।
১০. নিউরনের প্রকারভেদগুলো কী কী?
উত্তর: কার্যকারিতা অনুযায়ী নিউরন তিন প্রকার: সংবেদী নিউরন (sensory neuron), মোটর নিউরন (motor neuron) এবং ইন্টারনিউরন (interneuron)।
১১. নিউরোট্রান্সমিটারের কাজ কী?
উত্তর: নিউরোট্রান্সমিটার হলো রাসায়নিক সংকেত, যা একটি নিউরন থেকে অন্য নিউরনে তথ্য প্রেরণ করে।
১২. নিউরনের রোগগুলো কী কী?
উত্তর: কিছু সাধারণ নিউরনের রোগ হলো আলঝেইমার, পারকিনসন, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস এবং এপিলেপসি।
শেষ কথা
নিউরন আমাদের শরীরের জটিল নেটওয়ার্কের অংশ, যা আমাদের জীবনকে সচল রাখতে অপরিহার্য। এর গঠন, কাজ এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানা আমাদের নিজেদের শরীরকে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করে। তাই, নিউরনের যত্ন নিন এবং সুস্থ থাকুন!
আশা করি, এই ব্লগ পোস্টটি আপনাকে নিউরন সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দিতে পেরেছে। আপনার যদি আরও কিছু জানার থাকে, তবে কমেন্ট সেকশনে জিজ্ঞাসা করতে পারেন। আপনার মূল্যবান মতামত আমাদের জানাতে ভুলবেন না। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন!