আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধ“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।
নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধ
ভূমিকা : শিক্ষা হচ্ছে মানুষের সার্বিক বিকাশের পথ। প্রকৃতি প্রদত্ত জ্ঞানের সর্বোত্তম ব্যবহারে যার দক্ষতা যত বেশি সে তত শিক্ষিত। যা নিজের এবং অন্যের কল্যাণে অবদান রাখে, সুন্দর ও অসুন্দরের ভেদ বিবেচনায় সহায়তা করে তাই শিক্ষা। মানুষ প্রকৃতি থেকেই প্রথম শিক্ষা গ্রহণ করে। পরে ধীরে ধীরে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও শিক্ষালয় থেকে জ্ঞান অর্জন করে নিজেকে গড়ে তোলে । শিক্ষা মানুষকে মানবীয় করে, প্রত্যাশার মতো করে সময়োপযোগী করে গড়ে তোলে । শিক্ষা, প্রকৃত শিক্ষা, নৈতিক শিক্ষা এগুলোর উদ্দেশ্য একই। শিক্ষা মূলত সেই বস্তু যা সকল অনিয়ম থেকে, সকল অকল্যাণ থেকে, সকল অসুন্দর থেকে আমাদের মুক্ত রাখে এবং নিয়মে, কল্যাণে, সুন্দরে আমাদের জীবনকে ভরিয়ে তোলে— প্রকৃতির সূর্যালোকের মতো, বায়ুর মতো, শত সহস্র সহজ নিয়মের মতো সবাইকে আপন করে নেয়। শিক্ষা সবার সাথে সবার বন্ধন রচনা করে। প্রকৃত লব্ধ জ্ঞানের সাথে অর্জিত জ্ঞানের সুসমন্বয়ই নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের মূল ভিত্তি। এই মূল ভিত্তিকে সুদৃঢ় করার মধ্য দিয়ে ব্যক্তি, দেশ, সমাজ ও জাতির কল্যাণ বয়ে আসে।
নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধ : যে শিক্ষা মানুষের জীবনবোধের সঙ্গে নৈতিকতার সমন্বয় সাধন করে তাই নৈতিক শিক্ষা। নৈতিক শিক্ষা নৈতিক মূল্যবোধের জন্ম দেয়। মনুষ্যত্ব অর্জনে মানুষের যে অব্যাহত সাধনা চলছে সেই পথে এগিয়ে নেওয়ার যথার্থ নিয়ামক নৈতিক শিক্ষা। নৈতিক শিক্ষা এমন কিছু বিশেষ গুণাবলি অর্জন যা মানুষকে ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, উচিত-অনুচিত বিচার করার শক্তি দেয়। অন্যদিকে তা অন্যায়, অনিয়ম, অনুচিত ও মন্দ কাজকে পরিহার করে নৈতিক আদর্শের অনুবর্তী করে তোলে। মানবসমাজ গড়ে ওঠার নেপথ্যে নৈতিক মূল্যবোধের দান অসীম। মানুষের জীবনের যাবতীয় কল্যাণকর, শুভবুদ্ধি ও শুভচিন্তা এবং তার বিপরীত বুদ্ধি ও চিন্তা বিচারের আপেক্ষিক মানদণ্ডই হলো নৈতিক মূল্যবোধ ।
নৈতিক মূল্যবোধের গুরুত্ব : নৈতিক মূল্যবোধ হচ্ছে মানুষের জীবনব্যবস্থা ও জীবনপদ্ধতিকে সুন্দরভাবে নির্মলভাবে পরিচালনার অনুসরণযোগ্য কিছু আচরণ। নৈতিকতা মানুষকে অন্যায় ও বন্ধুর পথ থেকে বাঁচায়; আত্মস্বার্থ, লোভ, হিংসা, ভোগ থেকে মুক্ত রাখে; ত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল হয়ে উঠতে অনুপ্রাণিত করে। নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধ মানুষকে প্রবল আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ় মানসিক শক্তি এনে দেয়। যার বলে বলীয়ান হয়ে মানুষ যাবতীয় দুর্নীতিকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করতে শেখে; সচেতনভাবে অন্যায় ও অবৈধ পথ পরিহার করতে শেখে; সত্য ও ন্যায়ের আদর্শ অনুসরণ করে; পরের কারণে আত্মস্বার্থ ত্যাগ করে পরহিতে এগিয়ে যায়; সজ্ঞানে কখনোই অন্যের ক্ষতি করে না। ধর্মের কল্যাণধর্মিতাকে আদর্শ ধরে নৈতিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটে। নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ আলোকিত মানুষ। এ মানুষদের দ্বারাই নিষ্কলুষ আলোকিত সমাজ গড়ে ওঠে। কাজেই মানুষের আত্মিক, সামাজিক ও জাতীয় জীবনের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধ একান্ত জরুরি।
নৈতিকতা বর্জিত শিক্ষার ফল : নৈতিক শিক্ষার অভাবে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি অন্যায়, অবিচার ও দুর্নীতি হচ্ছে। নৈতিকতার অভাবে শিক্ষাগ্রহণ করেও নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে ছোট থেকে বড় পর্যন্ত সবাই। সারাবিশ্বে আজ ভোগবাদী মানসিকতার ব্যাপক প্রসার লক্ষ করা যাচ্ছে। মানুষ মানবতা ভুলে নিজের পশুত্বকে জাগিয়ে তুলছে। ক্ষমতাবলে কে কত বেশি হিংস্র হতে পারে সে প্রিতিযোগিতায় মেতেছে সবাই। দেশ-কাল-ধর্মাধর্ম, কোনোকিছুতেই তাদের কোনো মনোযোগ নেই। মনোযোগ কেবল অর্থসম্পদ, ক্ষমতা, প্রভাব-প্রতিপত্তির দিকে। তারা ভুলেই গেছে মানুষ হয়ে জন্মানোর বিশেষ দায়-দায়িত্বের কথা। আমাদের দেশেও নৈতিক শিক্ষার অভাবে নৈতিক মূল্যবোধের ব্যাপক অবক্ষয় শুরু হয়েছে। সীমাহীন দুর্নীতি সর্বস্তরে, গ্রাস করছে সমাজকে । গীতিনৈতিকতাহীন, বিবেকহীন মানুষ আজ সদম্ভে সমাজে বিচরণ করছে, ন্যায়-নীতির গলা টিপে ধরছে। সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকারকে বাকস্বাধীনতাকে অত্যন্ত সুকৌশলে রোধ করার হীন চেষ্টা চালাচ্ছে। চারদিকে কেবল ঠকানোর প্রতিযোগিতা, অন্যায় । হরে করে কে কত বড় রেকর্ড করতে পারে সেই প্রতিযোগিতায় উন্মাদ হয়ে ছুটছে সবাই। আজকের এই ফল আজ থেকে দুই যুগ মাগে শুরু হওয়া নৈতিক শিক্ষার প্রতি এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি অবহেলা। আজকে যদি নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের শুভ উদ্বোধন না করা যায়, তাহলে দুই যুগ পরে এর ফল হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। আজ যতটুকু আশার আলো দেখা যায়, মেঘের আড়ালে এতটুকু সূর্য হাসে, সেদিন তাও থাকবে না। কাজেই আর কালক্ষেপণ না করে, অবহেলা আর উদাসীনতায় গা না ভাসিয়ে এখনই । আমাদেরই দায়ী থাকতে হবে । নৈতিক শিক্ষার প্রসার, মানবিক আচরণ ও মূল্যবোধের উপর জোর দিতে হবে। না হলে আমাদের ভবিষ্যতের দুর্ভাগ্যের জন্য
নৈতিক অবক্ষয়ের কারণ : কোনোকালেই একটিমাত্র কারণে নৈতিক অবক্ষয় চূড়ান্ত রূপ লাভ করে নি। বহুবিধ কারণের যোগফলের ভারে নৈতিক অবক্ষয় ঘটে থাকে। শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে মানবতাবোধসম্পন্ন মানসিকতায় গড়ে ওঠার মতো অনুকরণীয় আদর্শ বা পন্থা পাঠ্যতালিকায় না থাকা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না হওয়া, রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক জীবনে অস্থিতিশীলতা, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরের ব্যবস্থা না থাকা, বেকারত্বের হার অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়া, সম্পদের সুষম বণ্টন ও সাম্যনীতি না থাকা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অতিব্যবহার, শিল্প-সংস্কৃতি ও সমাজকর্ম-সাহিত্যের মূলধারা থেকে সরে দাঁড়ানো, গণমাধ্যমে রুচিহীন ও বিকৃত রুচির বিনোদন, জনজীবনের স্বাভাবিক নিরাপত্তার অনিশ্চয়তা, পারিবারিক ভাঙন, নেশা-জাতীয় দ্রব্যের ব্যাপক ব্যবহার ও সহজলভ্যতা ইত্যাদি কারণে সমাজে নৈতিক অবক্ষয় নেমে আসে। আর ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও জাতীয় জীবনে একবার নষ্টের ঘুণপোকা ঢুকে গেলে, নষ্ট না হওয়া পর্যন্ত বের হয় না। বর্তমান সময় এ অপ্রিয় সত্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে।
নৈতিক অবক্ষয় রোধের উপায় : নৈতিক অবক্ষয় রোধের প্রধান উপায় হচ্ছে নৈতিক শিক্ষার প্রসার ঘটানো। নৈতিক শিক্ষার প্রসারে ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র ও জাতীয় জীবনে সুস্থ ধারা ফিরে আসতে বাধ্য। নৈতিক অবক্ষয়ের প্রধান কারণ হচ্ছে প্রকৃত শিক্ষা থেকে দূরে সরে যাওয়া। মূল থেকে সরে গিয়ে পাতায় পাতায় ঘুরে বেড়ানো। ধর্মের প্রকৃত অনুশাসন ও প্রকৃত আদর্শ অনুধাবনের মতো শিক্ষার অভাবও এক্ষেত্রে সহায়ক কারণ। হযরত মুহম্মদ (স), যিশু খ্রিস্ট, গৌতম বুদ্ধ, শ্রীকৃষ্ণ প্রমুখ ধর্মপ্রবক্তা ন্যায়-নীতি ও মানবিক মূল্যবোধের যে মহান মর্মবাণী মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন, তার গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে। স্বার্থ হাসিলের জন্য কোনো ধর্মেরই অপব্যাখ্যা করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। বিভিন্ন ধর্মের সারবস্তুর সাথে আদর্শ ও নীতির উদ্দেশ্য ও কাজের সাথে পরিচয় ঘটলে শিক্ষার্থীদের নৈতিক মূল্যবোধ গড়ে উঠবে। মানুষের মানসিক বিকাশে নৈতিকতা ইতিবাচক দিক হিসেবে জায়গা করে নেবে । নৈতিক শিক্ষার মধ্য দিয়ে সমাজজীবনে ন্যায়-নীতি, মানবিক মূল্যবোধ ও মহৎ আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে হলে সবাইকে আত্মোপলব্ধিতে সত্য ও ন্যায়কর্মের মহাসমাবেশ নিশ্চিত করতে হবে ।
উপসংহার : অন্যায়ের বিষবাষ্পে জাতি আজ মর্মাহত। নৈতিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় ঠেকাতে নৈতিক শিক্ষার বিকল্প নেই। ধর্মীয় অনুশাসন ও নৈতিক শিক্ষার অভাবে সমাজের সর্বস্তরে কেবল দুর্নীতি নয়, মানবদেহে নানা রকম মরণ ব্যাধিও সংক্রমিত হচ্ছে। কাজেই নৈতিকতা বর্জিত শিক্ষা আমাদের জন্য আত্মঘাতী এবং আত্মহত্যার শামিল। সুতরাং প্রত্যেককেই নৈতিকতাবোধে উন্নীত হয়ে সুন্দর আগামী বিনির্মাণে এগিয়ে আসা উচিত।
সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করছি আমাদের এই পোস্ট থেকে রচনা যেটি তুমি চাচ্ছিলে সেটি পেয়ে গিয়েছ। যদি তুমি আমাদেরকে কোন কিছু জানতে চাও বা এই রচনা নিয়ে যদি তোমার কোনো মতামত থাকে, তাহলে সেটি আমাদের কমেন্টে জানাতে পারো। আজকের পোস্টে এই পর্যন্তই, তুমি আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করে আমাদের বাকি পোস্ট গুলো দেখতে পারো।