আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “প্রিয় এ দেশ আমার“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।
প্রিয় এ দেশ আমার
ভূমিকা : এক বিশাল জনসংখ্যাবিশিষ্ট তৃতীয় বিশ্বের দারিদ্র্যপীড়িত একটি দেশ হলো বাংলাদেশ। বিগত শতকে এ দেশটিকেই ঘিরে রয়েছে কত ঐতিহাসিক ঘটনা। পাওয়া না পাওয়ার বেদনা । একুশ শতকের সূচনালগ্নে তাই বাংলাদেশের চাওয়া পাওয়া অনেক । এর সময়ের সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা নদীমাতৃক এ বাংলাদেশ পথ পরিক্রমায় বর্তমানে তার নিজ গতি, লক্ষ্য, উদ্দেশ্যে এনেছে ব্যাপক পরিবর্তন। তারই প্রেক্ষাপটে একুশ শতকের বাংলাদেশের প্রত্যাশা।
অতীতের বাংলাদেশ : আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি তথা বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির অতীত ইতিহাস সংগ্রামমুখর, স্বাধীনতাকামী তথা বিদ্রোহাত্মক কর্মকাণ্ডে জর্জরিত। সুদীর্ঘ দু শ বছর ব্রিটিশ শাসনের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত হয়েছে বাঙালি। আমাদের কৃষ্টি-কালচার হয়েছে ভূ-লুণ্ঠিত । পদে পদে লাঞ্ছনা-বঞ্চনা, শোষণ আর নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাঙালি বারবার প্রতিবাদমুখর হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে বিশ শতকের মাঝামাঝি পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করে। কিন্তু তাতে বাংলাদেশের প্রভু বদল ছাড়া বাস্তব কিছু ঘটে নি। ব্রিটিশ শাসনের অবসানে পাকিস্তানিরা চেপে বসে বাঙালিদের বুকে জগদ্দল পাথরের মতো। আঘাত আসে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর। কিন্তু বাঙালি ঐতিহ্য তথা সংগ্রামপ্রিয়তা থেমে থাকে নি। ভাষার জন্য উৎসর্গিত হলো বুকের তাজা রক্ত। সেই রক্তমাখা পিচ্ছিল পথেই আসে একাত্তরের মহান মুক্তি সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠে ১৭৯১ সালের ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে ঘোষিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। তিরিশ লাখ মানুষের জীবন, দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত আর কোটি কোটি টাকার ধন-সম্পদের বিনিময়ে অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হলো বাঙালি জাতির বহু আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। এ গর্ব নিয়েই স্বাগত জানাই নতুন শতককে, নতুন সহস্রাব্দকে আমার স্বপ্নের বাংলাদেশ, প্রিয় দেশ গড়ার মানসে জীবন উৎসর্গ করা বাঙালি ভাই-বোনদেরকে ।
বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট : সুদীর্ঘ ৪৪ বছর পার হলেও বাংলাদেশ এখনো স্বাধীনতার স্বাদ পায় নি। আজো বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার সুফল দিতে পারে নি। বহুবিধ সমস্যা আর প্রতিকূলতা ক্রমেই ঘিরে ফেলেছে এ দেশকে। এসব সমস্যার অন্যতম প্রধান হলো দারিদ্র্য। দারিদ্র্যের নির্মম কষাঘাতে জর্জরিত বাংলাদেশ। এ থেকে উত্তরণের সমস্ত পথই যেন রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে দিনে দিনে। ভয়াবহ জনসংখ্যা বিস্ফোরণের মারাত্মক প্রতিক্রিয়ায় দিন দিন বাড়ছে বেকারের সংখ্যা, সেই সাথে সৃষ্টি হচ্ছে নানাবিধ সমস্যা। বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা লাভের সুযোগ খুবই সীমিত। জাতীয় প্রবৃদ্ধি নেই বললেই চলে। আন্তর্জাতিক দেনার দায়ে জর্জরিত এ দেশ । দিন দিন আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্য প্রতিকূলই থেকে যাচ্ছে। আমার প্রিয় দেশবাসীর কাছে আমার প্রার্থনা দেশের এ সমস্যা দূর করে সবাই মিলে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলুন ।
গ্রাম ও শহরের বৈষম্য : “ছায়া সুশীতল শান্তির নীড়” পল্লীবাংলা আজ তার নিজস্ব প্রকৃতি হারিয়েছে। দিন দিন যেন পল্লীবাংলা নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। এক সময় বাস্তবেই ছিল ‘মাছে ভাতে বাঙালি’ কিংবা “পুকুর ভরা মাছ আর গোয়াল ভরা গরু”। এখন এসব শুধু প্রবাদেই শোনায়। বাস্তব চিত্র ভিন্নরূপ। আজ মানুষ ক্রমেই শহরমুখী। উপার্জনের আশায়, একটু সচ্ছল জীবনের প্রত্যাশায় শহরমুখী মানুষের ভিড় উপচে পড়ছে। গ্রামের গাছপালা নিধন হয়ে যাচ্ছে অবিবেচকের মতো, নদী শুকিয়ে গেছে, বহু সোনালি ধানের জমিতে মানুষ নিজ মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিচ্ছে। সর্বত্রই শুধু সমস্যা আর সমস্যা। উপরন্তু সন্ত্রাস এখন বাংলাদেশের এক অতি পরিচিত শব্দ। চাঁদাবাজি, রাহাজানি, অপহরণ, নারী ধর্ষণ যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে মানুষ আজ চরম উৎকণ্ঠায় ভুগছে। আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা সমস্যার জটকে আরও বেশি জটিল করে তুলছে। নতুন শতকের শুভলগ্নে বাংলাদেশ এসব সমস্যা কাটিয়ে সুন্দর সুখময় বাংলাদেশ অর্জন করবে এটিই আমার স্বপ্ন ও সাধনা ।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ : উপযুক্ত সহস্র সমস্যার মাঝেও বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অবদান রেখে চলেছে। বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের চেতনাধারী বাংলাদেশ বিশ্বের নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে সবসময়। আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে এবং হচ্ছে। বহুজাতিক বাহিনীতে বাঙালির অংশগ্রহণ, সাইপ্রাস-নামিবিয়া, সিয়েরা লিওনে সৈন্য প্রেরণ, ফিলিস্তিন সমস্যায় জোরালো বক্তব্য প্রদান বাংলাদেশের মর্যাদা বাড়িয়েছে বহুগুণে। বর্তমানে বাংলাদেশ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য নির্বাচিত হয়েছে, সেই সাথে বাঙালির গর্ব, বাঙালির অহংকার ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান একটি অনন্যসাধারণ ঘটনা। বিশ্বময় বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করতে পারা আমাদের এক গৌরবের ব্যাপার । ক্রীড়াঙ্গনে বিগত শতকে বাংলাদেশ আরেকটি মাইলস্টোন স্থাপন করেছে। সারা বিশ্ব চমৎকৃত হয়েছে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে সোনার ছেলেদের হুঙ্কারে। আই. সি. সি. চ্যাম্পিয়ন হওয়া, বিশ্বকাপে পাকিস্তান ও ভারতকে পরাজিত করতে পারা- সবই এক একটি ইতিহাস। এ সোনালি ইতিহাসের মণিকোঠায় পা রেখেই একবিংশ শতকে বাংলাদেশের পদচারণা আরও তাৎপর্যময় হবে, আরও সুগভীর নিবিড়তায় বাঙালি জাতি ~ বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে— এটিই সকলের কাম্য।
স্বনির্ভর বাংলাদেশ : আমার প্রিয় দেশ আত্মপ্রত্যয় ও আত্মপ্রচেষ্টার দ্বারা আত্মপ্রতিষ্ঠা লাভ করবে এটিই হবে স্বনির্ভরতার মূলমন্ত্র । জনসমস্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করে দেশকে উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশের কৃষি শিল্প, বাণিজ্য সকল ক্ষেত্রে উন্নতির জন্য কাজ করতে হবে । পরোমুখাপেক্ষিতা কমাতে হবে। তবেই দেশ স্বনির্ভর হবে ।
বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ শিল্পী-সাহিত্যিক : বিগত শতাব্দীতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও অমর্ত্য সেনের নোবেল পুরস্কার লাভ বাঙালি জাতির শিরকে সমুন্নত করেছে। সে সাথে গত শতকে শরৎচন্দ্র, নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ, বুদ্ধদেব বসু, জসীমউদ্দীনের মতো কালজয়ী লেখক; জয়নুল আবেদীন, কামরুল হাসান, এস এম সুলতান প্রমুখ প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী। সংগীতের ক্ষেত্রে আলাউদ্দিন খাঁ, গোলাম আলী খাঁ, রবি শংকর, বেলায়েত খা প্রমুখ বিশ্বসভায় নিজ নামে পরিচিত। রাজনীতির ক্ষেত্রে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, সুভাষ বোস, মাওলানা ভাসানী, এ. কে. ফজলুল হক, সোহরাওয়ার্দী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজ মহিমায় সমুজ্জ্বল। এদের স্মৃতিচারণ করে ও আদর্শকে সামনে রেখে বাংলাদেশ একবিংশ শতাব্দীতে নিজেদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে গড়ে তুলতে পারবে স্বপ্নের স্বনির্ভর দেশ এ প্রত্যাশা সকলের।
উপসংহার : নতুন শতকের কাছে প্রত্যাশা আমার স্বপ্নের বাংলাদেশ হবে শোষণ, বঞ্চনা, অন্যায় ও অর্থনৈতিক বৈষম্যমুক্ত। এদেশের আর কোনো নারী নির্যাতিত হবে না, অসহায়ত্বের শিকার হবে না। এদেশের প্রতিটি শিশুই প্রকৃত মানবসন্তানের মতো বেড়ে উঠবে— অনাহারে, বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে না একজন মানুষও। প্রত্যাশা করি নতুন শতকে এদেশ হবে দুর্নীতিমুক্ত দেশ। শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হবে। পথপাশে পড়ে থাকবে না একজন ভিখেরী । রাজনীতির অসহিষ্ণুতা বিদূরিত হবে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যারা থাকবেন তারা হবেন আকাশের মতোই উদার। লোভ-লালসা, হানাহানি কিছুই স্পর্শ করতে পারবে না তাদের। তবেই বাংলাদেশ সোনার বাংলা হয়ে বিশ্বসভায় নিজ আসন মজবুত করতে পারবে।
সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করছি আমাদের এই পোস্ট থেকে রচনা যেটি তুমি চাচ্ছিলে সেটি পেয়ে গিয়েছ। যদি তুমি আমাদেরকে কোন কিছু জানতে চাও বা এই রচনা নিয়ে যদি তোমার কোনো মতামত থাকে, তাহলে সেটি আমাদের কমেন্টে জানাতে পারো। আজকের পোস্টে এই পর্যন্তই, তুমি আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করে আমাদের বাকি পোস্ট গুলো দেখতে পারো।