জীবনকে একটু ‘স্পিরিটেড’ করতে চান? তাহলে রেকটিফাইড স্পিরিট (Rectified Spirit) জিনিসটা কী, সেটা জানা দরকার! ভাবছেন, এটা আবার কী বস্তু? আরে বাবা, এই জিনিসটা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানাভাবে জড়িয়ে আছে। শুধু একটু চিনে নিতে হবে, এই যা!
রেকটিফাইড স্পিরিট: আসল রহস্যটা কী?
রেকটিফাইড স্পিরিট হল ইথানলের (Ethanol) একটি বিশেষ রূপ। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, এটি একটি অত্যন্ত বিশুদ্ধ অ্যালকোহল। কিন্তু সব অ্যালকোহল কি রেকটিফাইড স্পিরিট? একদমই না! সাধারণ অ্যালকোহল পান করার জন্য তৈরি করা হয়, তবে রেকটিফাইড স্পিরিট বিভিন্ন শিল্প এবং ঔষধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
কীভাবে তৈরি হয় এই রেকটিফাইড স্পিরিট?
রেকটিফায়েড স্পিরিট তৈরির পদ্ধতিটা বেশ মজার। প্রথমে শস্য, ফল বা অন্য কোনো শর্করা জাতীয় জিনিস থেকে অ্যালকোহল তৈরি করা হয়। এরপর সেই অ্যালকোহলকে একাধিকবার পাতন (Distillation) করা হয়। এই পাতন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অ্যালকোহলের ভেতরের অশুদ্ধি দূর করা হয় এবং অ্যালকোহলের ঘনত্ব বাড়ানো হয়। যত বেশি পাতন করা হয়, স্পিরিট তত বেশি বিশুদ্ধ হয়। রেকটিফাইড স্পিরিটে প্রায় ৯৫% অ্যালকোহল থাকে।
রেকটিফাইড স্পিরিটের ব্যবহার: কোথায় কোথায় লাগে এই জিনিস?
রেকটিফাইড স্পিরিটের ব্যবহার ব্যাপক। এটা শুধু এক জায়গায় আটকে নেই, বরং বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর চাহিদা রয়েছে। আসুন, কয়েকটি প্রধান ব্যবহার দেখে নেওয়া যাক:
ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পে রেকটিফাইড স্পিরিট
- কাশি সিরাপ (Cough syrup) তৈরিতে লাগে
- অ্যান্টিসেপটিক (Antiseptic) হিসেবে ব্যবহার করা হয়
- বিভিন্ন ধরনের মলম (Ointment) তৈরিতে কাজে লাগে
- জীবাণুনাশক (Disinfectant) হিসেবে ব্যবহার করা হয়
- হ্যান্ড স্যানিটাইজার (Hand sanitizer) बनाने में ব্যবহার করা হয়।
শিল্প কারখানায় রেকটিফাইড স্পিরিট
- রং (Paint) बनाने में কাজে লাগে।
- বার্নিশ (Varnish) তৈরিতে লাগে।
- বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য (Chemicals) তৈরিতে লাগে।
- পরিষ্কারক (Cleaning agents) তৈরিতে কাজে লাগে।
কসমেটিক্স শিল্পে রেকটিফাইড স্পিরিট
- পারফিউম (Perfume) তৈরিতে লাগে।
- ডিওডোরেন্ট (Deodorant) তৈরিতে লাগে।
- লোশন (Lotion) তৈরিতে লাগে।
- ক্রিম (Cream) তৈরিতে লাগে কারণ এটা ত্বককে মসৃণ করে।
অন্যান্য ব্যবহার
- গবেষণাগারে দ্রাবক (Solvent) হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
- জ্বালানি (Fuel) হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
- কিছু অ্যালকোহলীয় পানীয় (Alcoholic beverages) তৈরিতে ব্যবহার করা হয় (তবে তা খুবই নিয়ন্ত্রিত)।
রেকটিফাইড স্পিরিট কি পান করা যায়?
এই প্রশ্নটা অনেকের মনেই আসে। সত্যি বলতে, রেকটিফাইড স্পিরিট পান করার জন্য তৈরি করা হয় না। এটা অত্যন্ত শক্তিশালী অ্যালকোহল, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এমনকি, এটি পান করলে অন্ধ হয়ে যাওয়া বা মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই ভুলেও এটা পান করার চেষ্টা করবেন না!
রেকটিফাইড স্পিরিট এবং অন্যান্য অ্যালকোহলের মধ্যে পার্থক্য
রেকটিফাইড স্পিরিট অন্যান্য অ্যালকোহলের থেকে আলাদা কেন, সেটা একটু ভালোভাবে বোঝা দরকার। বাজারে আরও অনেক ধরনের অ্যালকোহল পাওয়া যায়, কিন্তু তাদের মধ্যে রেকটিফাইড স্পিরিটের বিশেষত্ব কী?
রেকটিফাইড স্পিরিট vs ডিনেচার্ড স্পিরিট
ডিনেচার্ড স্পিরিট (Denatured spirit)-এর সাথে রেকটিফাইড স্পিরিটের একটা বড় পার্থক্য আছে। ডিনেচার্ড স্পিরিট হল রেকটিফাইড স্পিরিটের মতোই, কিন্তু এর সাথে কিছু বিষাক্ত পদার্থ মেশানো হয়। কেন মেশানো হয়? যাতে কেউ এটা পান করতে না পারে। ডিনেচার্ড স্পিরিট সাধারণত শিল্প এবং পরিষ্কার করার কাজে ব্যবহৃত হয়।
এখানে একটি টেবিলের মাধ্যমে এই দুটি স্পিরিটের মধ্যেকার পার্থক্য তুলে ধরা হলো:
বৈশিষ্ট্য | রেকটিফাইড স্পিরিট | ডিনেচার্ড স্পিরিট |
---|---|---|
বিশুদ্ধতা | ৯৫% এর বেশি ইথানল | ৯৫% এর বেশি ইথানল + বিষাক্ত পদার্থ |
পানের উপযোগী | নয় | নয় (পান করা অত্যন্ত বিপজ্জনক) |
ব্যবহার | ঔষধ, কসমেটিক্স, শিল্প | শিল্প, পরিষ্কারক, জ্বালানি |
বিষাক্ত পদার্থ | মেশানো হয় না | মেশানো হয় |
রেকটিফাইড স্পিরিট vs মিথিলেটেড স্পিরিট
মিথিলেটেড স্পিরিট (Methylated spirit)-ও ডিনেচার্ড স্পিরিটের মতোই। এতে মিথানল (Methanol) মেশানো থাকে, যা খুবই বিষাক্ত। মিথিলেটেড স্পিরিট সাধারণত বার্নার বা স্টোভ জ্বালানোর কাজে ব্যবহৃত হয়।
রেকটিফাইড স্পিরিট vs আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল
আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল (Isopropyl alcohol) সাধারণত রাবিং অ্যালকোহল (Rubbing alcohol) নামে পরিচিত। এটি জীবাণুনাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং এটিও পানের জন্য নয়।
রেকটিফাইড স্পিরিট ব্যবহারের সতর্কতা
রেকটিফাইড স্পিরিট ব্যবহার করার সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ এটি একটি দাহ্য পদার্থ এবং এর ভুল ব্যবহার বিপজ্জনক হতে পারে।
নিরাপত্তা টিপস
- সবসময় শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন।
- আগুন থেকে দূরে রাখুন, কারণ এটি সহজেই আগুন ধরতে পারে।
- ব্যবহারের সময় ভালো ভেন্টিলেশন (Ventilation) আছে এমন জায়গায় থাকুন।
- চোখে বা ত্বকে লাগলে সঙ্গে সঙ্গে প্রচুর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- ব্যবহারের আগে প্যাকেজের নির্দেশাবলী ভালোভাবে পড়ুন।
রেকটিফাইড স্পিরিট নিয়ে কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)
রেকটিফাইড স্পিরিট নিয়ে মানুষের মনে অনেক প্রশ্ন থাকে। এখানে কয়েকটি সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হল:
রেকটিফাইড স্পিরিট কি শরীরের জন্য ক্ষতিকর?
হ্যাঁ, রেকটিফাইড স্পিরিট শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এটি পান করলে লিভারের সমস্যা, অন্ধত্ব, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
রেকটিফাইড স্পিরিট কি দিয়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করা যায়?
হ্যাঁ, রেকটিফাইড স্পিরিট দিয়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করা যায়, তবে এর সাথে গ্লিসারিন এবং হাইড্রোজেন পেরক্সাইড মেশাতে হয়।
রেকটিফাইড স্পিরিট এবং ইথানলের মধ্যে পার্থক্য কী?
ইথানল হল অ্যালকোহলের একটি প্রকার, আর রেকটিফাইড স্পিরিট হল সেই ইথানলের একটি বিশুদ্ধ রূপ। রেকটিফাইড স্পিরিটে ইথানলের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে।
ডিনেচার্ড স্পিরিট কি রেকটিফাইড স্পিরিটের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়?
কিছু ক্ষেত্রে ডিনেচার্ড স্পিরিট রেকটিফাইড স্পিরিটের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়, তবে এটি পান করার জন্য একেবারেই নিরাপদ নয়।
রেকটিফাইড স্পিরিট কোথায় পাওয়া যায়?
ফার্মেসি, কেমিক্যাল স্টোর এবং কিছু শিল্প সরবরাহকারী দোকানে রেকটিফাইড স্পিরিট পাওয়া যায়।
রেকটিফাইড স্পিরিটের দাম কেমন?
রেকটিফাইড স্পিরিটের দাম সাধারণত এর বিশুদ্ধতা এবং পরিমাণের উপর নির্ভর করে।
শেষ কথা
তাহলে, রেকটিফাইড স্পিরিট নিয়ে আপনার মনে যে প্রশ্নগুলো ছিল, আশা করি তার উত্তর দিতে পেরেছি। এটা মনে রাখতে হবে, রেকটিফাইড স্পিরিট একটি শক্তিশালী রাসায়নিক দ্রব্য, তাই ব্যবহারের সময় অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। জীবনকে ‘স্পিরিটেড’ করুন, তবে সাবধানে!