আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “শরৎকাল“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।
শরৎকাল
ভূমিকা : ঋতুরঙ্গময়ী রূপসী বাংলার তৃতীয় ঋতু শরৎ। ঋতু পরিবর্তনের বিচিত্র ধারাপথে নিয়ত উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে তার অন্তহীন রূপের খেলা, রঙের খেলা ও সুরের খেলা। বর্ষণ ধৌত, মেঘমুক্ত আকাশের সুনীল রূপকান্তি, আলো ছায়ার লুকোচুরি, শিউলি ফুলের মন উদাস করা গন্ধ, নদীতীরে কাশফুলের অপূর্ব শুভ্র সমারোহ, প্রভাতে তৃণপল্লবে নতুন শিশিরের আলিম্পন, তাতে প্রভাত সূর্যের রশ্মিপাত এবং শুভ্র জ্যোৎস্না পুলকিত রাত্রি— এই অনুপম রূপরাশি নিয়ে বাংলাদেশে শরতের আবির্ভাব ঘটে। এ সময়ে নানা উৎসব আনন্দে মেতে ওঠে বাংলার গ্রাম ও শহর।
শরতের বৈশিষ্ট্য : বর্ষার অত্যাচারের পর শরতের আকাশ ও প্রকৃতি নতুন রূপে সাজে। সে আসে অমল ধবল মেঘের পাল তুলে। ঝলমলে রোদ, ফুরফুরে নির্মল হাওয়া আর আকাশে ভেসে বেড়ায় সাদা মেঘের ভেলা। প্রকৃতির রাজ্যে নতুন চেতনার সঞ্চার করে শরতের আবির্ভাব হয়। সে আসে প্রশান্ত মাধুর্য নিয়ে। বর্ষার বেদনামলিন বক্ষে যে আনন্দ ফুটি ফুটি করছিল, শরতে তার অপরূপ আবির্ভাব ঘটে। শরতে পৃথিবী যেন সদ্যস্নাতা তরুণীর মূর্তি পরিগ্রহ করে অপরূপ মহিমায় দেখা দেয়। তারই বন্দনার জন্য গাছ থেকে শেফালি ঝরে পড়ে। শরতের মূর্তিতে নিহিত রয়েছে একটি পরিতৃপ্তির হাসি। বর্ষার আলো আঁধারি ক্রীড়ার সমাপ্তিতে শরতে আলোকের মেলা বসে। শরৎ তাই আলোর শিশু। তার আগমনে বিশ্ব চরাচরে মধুর আনন্দের সাড়া পড়ে যায়। সে আনন্দের অভিব্যক্তি ঘটে নানা উৎসব অনুষ্ঠানে। শরতের এসব বৈশিষ্ট্যে মুগ্ধ হয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ‘শরৎ” কবিতায় বলেছেন-
“আজি কী তোমার মধুর মুরতি হেরিনু শারদ প্রভাতে”
শরৎকালের সৌন্দর্য : শরতের অনুপম সৌন্দর্যে কবির কি হৃদয়গ্রাহী উপলব্ধি। শরৎকালে বাংলাদেশে যে রূপঐশ্বর্য ফুটে ওঠে তা অন্য ঋতুতে দেখা যায় না। রাত্রিকালে শারদশশীর উজ্জ্বল কিরণে পথঘাট প্লাবিত হয়ে অপরূপ সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়ে ওঠে, চাঁদের, উজ্জ্বল কিরণে বাংলার কাশবন, গৃহচূড়া ও নদীর নির্জন বুক সমস্তই হাস্যময়ী রূপ ধারণ করে। শরৎকালের জ্যোৎস্নাচ্ছন্ন রাতে গ্রামগঞ্জের নরনারী গানের মধ্যে ডুবে থাকে । তারা যাত্রা, কবিগান ইত্যাদি নিয়ে এক পাড়া থেকে অন্য পাড়ায় আসর জমায়। বর্ষণ ও আকাশের পটভূমিকায় রৌদ্রবসন শরতের এই উদার আনন্দময় আবির্ভাব সত্যি নয়নাভিরাম। তার রোদের রং কচিকাঁচা তরল সোনার মতো। শারদীয় মৃদুমন্দ হাওয়া, ফোটা ফুলের স্নিগ্ধ সৌরভ, নীলিমার দিগন্ত বিস্তৃত পরিবেশ মানবমনকে উদাস করে আগমনে বাংলার বন-উপবন, দোয়েল, কোয়ে তোলে। রাতের শিউলি ঝরে পড়ে প্রভাতের প’ ধ্বনিতে, খেতের ফসল আমন্ত্রণ জানায়, জানান দিয়ে যায় শরতের বার্তা। শরতের সৌন্দর্যমর পটভূমিকায় শস্য বিচিত্রা ধরিত্রীর নির্বচনীয় রূপলাবণ্য, সেই সঙ্গে নদীর ভরাস্রোতে ভাসমান পালতোলা নৌকাশ্রেণি এবং রজত শুভ্র জ্যোৎস্নার পুলকিত স্নিগ্ধ সমারোহ বাংলাদেশকে পরিণত করে এক অপরূপ সৌন্দর্যের অমরাবতীতে। এই সৌন্দর্যের জন্য বংকে ঋতুর রাণী বলা হয়ে থাকে। ছড়াকার মোহাম্মদ আবদুল মান্নান শরতের রূপে মুগ্ধ হয়ে লিখেছেন—
“বর্ষা শেষে রানির বেশে
এলো শরৎ এলো,
ধানের ক্ষেতে উঠলো মেতে
বাতাস এলোমেলো”
শরতের অর্থনৈতিক অবদান : বাংলাদেশে বিগত বর্ষায় যে ফসল ফলিয়েছে এবং যা আগামী হেমন্তে খামারে উঠবে, শরৎ সেই ফসলের শুভ সম্ভাবনার সংবাদ বহন করে এনে বাংলাদেশের অন্তরে বইয়ে দেয় এক অনবদ্য আনন্দের বন্যা। ক্রমে, সেই আনন্দ পরিণত হয় এক বর্ণাঢ্য উৎসব সজ্জায়। শরতের এ উজ্জ্বল অর্থনৈতিক পটভূমিকায় রচিত হয় শারদীয় উৎসবের প্রাণোচ্ছল আয়োজন। আর, শরৎ যে আগামী ফসলের সম্ভাবনার বাণী বহন করে নিয়ে আসে, তার সুগভীর আশ্বাসেই কৃষিমাতৃক বাংলাদেশের সারা বছরের আয় ব্যয়ের হিসাব নিকাশ রচিত হয়ে যায়। সেই আশ্বাসের নিবিড় স্পর্শে বাঙালির মুখে ফুটে ওঠে উৎসবের অমলিন হাসি । শরৎ বাংলাদেশের আনন্দের অগ্রদূত, বাঙালির উৎসবের বার্তাবহ, তার সচ্ছলতার নিপুণ কারিগর।
শরতের উৎসব : শরতে উৎসবের সাজে সেজে ওঠে শস্যময়ী বাংলাদেশ। জলে স্থলে আর গগনে গগনে বেজে ওঠে মাটির কন্যার আগমনী গান । বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা শরতেই উদযাপিত হয়। তাই একে বলা হয় শারদীয় উৎসব। আকাশে ও মাটিতে শুভ্রতার অপূর্ব সমারোহের মধ্যে যেন শারদলক্ষ্মীর স্পর্শ পাওয়া যায়। জগজ্জননীর পূজার আনন্দ উৎসবের রূপসজ্জায় সেজে ওঠে সারা বাংলাদেশ। বাংলার ঘরে ঘরে নতুন বসন ভূষণে সাজবার ধুম পড়ে যায়। দুর্গাপূজা, লক্ষ্মীপূজা, শ্যামাপূজা, ভ্রাতৃদ্বিতীয়া- সবই শরৎ ঋতুর আলোকোজ্জ্বল অবদান ।
শরতের ফুল : শরৎকালে ফোটে নানা জাতের ফুল। শেফালি, মালতী, জুঁই, টগর, কামিনী ইত্যাদি শারদীয় ফুল। এসমস্ত ফুলের সৌরভ ও সৌন্দর্যে সকলেই মুগ্ধ হয়। শিশিরস্নাত উজ্জ্বল শারদ প্রভাতে ঝরা শেফালির স্নিগ্ধ মন্দ্রি সুবাস চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। শরতে মৃদুমন্দ হাওয়া ফুলের স্নিগ্ধ সৌরভ, নীল আকাশ তলে দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ মাঠ মনকে উদাস করে তোলে ।
উপসংহার : শরৎ বাংলাদেশকে উৎসবের আনন্দে হাসিয়ে এবং বিসর্জনের বেদনায় কাঁদিয়ে বিদায় গ্রহণ করে। তার চলার পথে পড়ে থাকে বিষণ্ন ঝরা কাঁশের গুচ্ছ, ছিন্ন ম্লান শেফালির মালা, আর নবীন ধানের অজস্র মঞ্জুরী । শিশিরাশ্রুপূর্ণ চোখে বাংলাদেশ তার বিদায় পথের দিকে করুণ বিষণ্ণ হৃদয়ে চেয়ে থাকে । বর্ষা বাঙালির প্রিয় ঋতু, শরৎ বাংলাদেশের হৃদয়ের ঋতু। বর্ষা তার স্বাচ্ছন্দ্যের কারিগর, আর শরৎ তার আনন্দের অগ্রদূত। তাই শরতের প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশের হৃদয়ের মণিকোঠায়।
সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করছি আমাদের এই পোস্ট থেকে রচনা যেটি তুমি চাচ্ছিলে সেটি পেয়ে গিয়েছ। যদি তুমি আমাদেরকে কোন কিছু জানতে চাও বা এই রচনা নিয়ে যদি তোমার কোনো মতামত থাকে, তাহলে সেটি আমাদের কমেন্টে জানাতে পারো। আজকের পোস্টে এই পর্যন্তই, তুমি আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করে আমাদের বাকি পোস্ট গুলো দেখতে পারো।