জ্যামিতির জগতে স্বাগতম, বন্ধুরা! আজ আমরা কথা বলব এমন একটি বিষয় নিয়ে যা হয়তো আপনারা স্কুলে পড়েছেন, কিন্তু একটু ঝালিয়ে নিলে ক্ষতি কি? তাহলে চলুন, দেরি না করে জেনে নেই সম্পূরক কোণ (Supplementary Angle) কাকে বলে এবং এর খুঁটিনাটি।
আচ্ছা, কখনো কি আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখেছো, মেঘ আর সূর্যের লুকোচুরি খেলা? অথবা দুটো গাছের ডাল কিভাবে একে অপরের দিকে ঝুঁকে থাকে? এদের মধ্যেও কিন্তু লুকিয়ে আছে কোণের ধারণা।
সম্পূরক কোণ: সংজ্ঞা ও চিত্র
সম্পূরক কোণ হলো সেই দুটি কোণ, যাদের যোগফল ১৮০° (ডিগ্রি) হয়। সহজ ভাষায়, যদি দুটি কোণ মিলে একটি সরলরেখা তৈরি করে, তবে তারা একে অপরের সম্পূরক কোণ।
উপরের ছবিতে, ∠AOB এবং ∠BOC হলো সম্পূরক কোণ। কারণ, ∠AOB + ∠BOC = ১৮০°
সম্পূরক কোণের বৈশিষ্ট্য
- দুটি কোণের সমষ্টি সবসময় ১৮০° হবে।
- একটি কোণ স্থূলকোণ (obtuse angle) হলে, অন্যটি সূক্ষ্মকোণ (acute angle) হবে।
- যদি একটি কোণ সমকোণ (right angle) হয়, তবে অন্যটিও সমকোণ হবে।
সম্পূরক কোণের উদাহরণ
বাস্তব জীবনে আমরা অনেক সম্পূরক কোণের উদাহরণ দেখতে পাই। কয়েকটি উদাহরণ নিচে দেওয়া হলো:
- কাঁচির দুটি ধার: কাঁচির দুটি ধার যখন একটি সরলরেখা তৈরি করে, তখন তারা সম্পূরক কোণ তৈরি করে।
- ঘড়ির কাঁটা: যখন মিনিটের কাঁটা এবং ঘণ্টার কাঁটা একে অপরের বিপরীতে থাকে, তখন তারা সম্পূরক কোণ তৈরি করে। (যেমন: ৬টা বাজে)
- ঘরের কোণ: ঘরের দেয়ালের কোণগুলো সাধারণত ৯০° হয়, তাই দুটি দেয়াল মিলে ১৮০° তৈরি করলে তারা সম্পূরক কোণ হবে।
সম্পূরক কোণ এবং পূরক কোণ: পার্থক্য কি?
অনেকেই সম্পূরক কোণ এবং পূরক কোণ (Complementary Angle) গুলিয়ে ফেলেন। এদের মধ্যে মূল পার্থক্য হলো:
বৈশিষ্ট্য | সম্পূরক কোণ (Supplementary Angle) | পূরক কোণ (Complementary Angle) |
---|---|---|
সংজ্ঞা | দুটি কোণের যোগফল ১৮০° | দুটি কোণের যোগফল ৯০° |
সম্পর্ক | একটি কোণ অন্যটির “সম্পূরক” | একটি কোণ অন্যটির “পূরক” |
উদাহরণ | ১৪০° এবং ৪০° | ৬০° এবং ৩০° |
চিত্র | সরলরেখার উপর গঠিত দুটি কোণ | সমকোণী ত্রিভুজের সূক্ষ্মকোণ |
সম্পূরক কোণ নির্ণয় করার নিয়ম
যদি একটি কোণের মান দেওয়া থাকে, তবে অন্য কোণটি বের করার নিয়ম খুবই সহজ। ১৮০° থেকে প্রথম কোণটির মান বিয়োগ করলেই দ্বিতীয় কোণটির মান পাওয়া যায়।
সূত্র: দ্বিতীয় কোণ = ১৮০° – প্রথম কোণ
উদাহরণ:
- যদি একটি কোণ ৬০° হয়, তবে তার সম্পূরক কোণ হবে: ১৮০° – ৬০° = ১২০°
- যদি একটি কোণ ৯০° হয়, তবে তার সম্পূরক কোণ হবে: ১৮০° – ৯০° = ৯০°
ব্যবহারিক জীবনে সম্পূরক কোণের প্রয়োগ
জ্যামিতি শুধু পরীক্ষার খাতায় আটকে থাকার বিষয় নয়। এর অনেক ব্যবহারিক প্রয়োগও আছে। নিচে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো:
- নির্মাণ কাজ: স্থপতি এবং প্রকৌশলীরা ভবন এবং অন্যান্য কাঠামো তৈরি করার সময় সম্পূরক কোণ ব্যবহার করেন।
- নেভিগেশন: নাবিক এবং পাইলটরা দিক নির্ণয়ের জন্য সম্পূরক কোণ ব্যবহার করেন।
- গ্রাফিক্স ডিজাইন: গ্রাফিক্স ডিজাইনাররা তাদের ডিজাইনকে সুন্দর এবং সঠিক করার জন্য এই কোণের ধারণা ব্যবহার করেন।
কিছু গাণিতিক সমস্যা ও সমাধান
১. যদি দুটি সম্পূরক কোণের অনুপাত ২:৩ হয়, তবে কোণগুলোর মান নির্ণয় করো।
সমাধান:
ধরি, কোণ দুটি হলো ২x এবং ৩x।
যেহেতু তারা সম্পূরক কোণ, তাই:
২x + ৩x = ১৮০°
বা, ৫x = ১৮০°
সুতরাং, x = ৩৬°
অতএব, কোণগুলো হলো:
২x = ২ * ৩৬° = ৭২°
এবং ৩x = ৩ * ৩৬° = ১০৮°
২. একটি কোণ তার সম্পূরক কোণের অর্ধেক হলে, কোণটির মান কত?
সমাধান:
ধরি, কোণটি হলো x।
তাহলে, তার সম্পূরক কোণ হবে ১৮০° – x।
প্রশ্নানুসারে, x = (১৮০° – x) / ২
বা, ২x = ১৮০° – x
বা, ৩x = ১৮০°
সুতরাং, x = ৬০°
অতএব, কোণটির মান ৬০°।
অনুশীলনী
নিজে চেষ্টা করার জন্য কয়েকটি সমস্যা:
- দুটি সম্পূরক কোণের পার্থক্য ২০° হলে, কোণগুলোর মান নির্ণয় করো।
- একটি কোণ তার সম্পূরক কোণের চেয়ে ৩০° বেশি হলে, কোণটির মান কত?
- একটি সরলরেখার উপর দণ্ডায়মান দুটি সন্নিহিত কোণের মধ্যে একটি ১১০° হলে, অপর কোণটি কত?
FAQ সেকশন: সম্পূরক কোণ নিয়ে কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসা
এখানে কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো, যা আপনাদের মনে আসতে পারে:
Q: সম্পূরক কোণ চেনার উপায় কি?
A: সম্পূরক কোণ চেনার সহজ উপায় হলো, দেখতে হবে দুটি কোণ মিলে একটি সরলরেখা তৈরি করছে কিনা। যদি করে, তাহলে তারা সম্পূরক কোণ। অথবা, দুটি কোণের যোগফল ১৮০° হতে হবে।
Q: সম্পূরক কোণের ছবি কেমন হয়?
A: সম্পূরক কোণের ছবি একটি সরলরেখার উপর দুটি কোণ তৈরি করে। একটি কোণ ছোট এবং অন্যটি বড় হতে পারে, তবে তাদের সমষ্টি সবসময় ১৮০° হবে। উপরে ছবি দেওয়া আছে, দেখে নিতে পারেন।
Q: সম্পূরক কোণের সূত্র কি?
A: সম্পূরক কোণের সূত্র হলো: প্রথম কোণ + দ্বিতীয় কোণ = ১৮০°
Q: দুইটি কোণের সমষ্টি ১৮০ ডিগ্রী হলে তাদের কি কোণ বলে?
A: দুইটি কোণের সমষ্টি ১৮০ ডিগ্রী হলে তাদের সম্পূরক কোণ বলে।
Q: সম্পূরক কোণের বাস্তব উদাহরণ কি কি?
A: কাঁচির দুটি ধার, ঘড়ির কাঁটা (৬টার সময়), এবং ঘরের দেয়ালের কোণ – এগুলো সবই সম্পূরক কোণের উদাহরণ।
Q: পূরক কোণ ও সম্পূরক কোণের মধ্যে পার্থক্য কি?
A: পূরক কোণের সমষ্টি ৯০° এবং সম্পূরক কোণের সমষ্টি ১৮০°। এটাই প্রধান পার্থক্য।
আরও কিছু মজার তথ্য
- জ্যামিতির জনক ইউক্লিড (Euclid) তার “Elements” বইতে সম্পূরক কোণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
- ত্রিকোণমিতিতে (trigonometry) সম্পূরক কোণের ধারণা ব্যবহার করে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা হয়। যেমন, sin(θ) = sin(180° – θ).
শেষ কথা
আশা করি, সম্পূরক কোণ নিয়ে আপনার মনে আর কোনো ধোঁয়াশা নেই। জ্যামিতি ভয়ের কিছু নয়, বরং মজার একটি জগৎ। শুধু একটু মনোযোগ দিয়ে বুঝলেই সবকিছু সহজ হয়ে যায়। নিয়মিত অনুশীলন করতে থাকুন, আর নতুন কিছু শিখতে থাকুন।
যদি এই আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগে থাকে, তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আর কোনো প্রশ্ন থাকলে, নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আজকের মতো বিদায়, আবার দেখা হবে নতুন কিছু নিয়ে!