জীবনের পথে চলতে গিয়ে, আমরা প্রায়ই এমন কিছু মানুষের সম্মুখীন হই যারা নিজেদের স্বার্থের কাছে সবকিছুকে তুচ্ছ মনে করে। এই স্বার্থপরতা অনেক সময় আমাদের মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে। ইসলামে স্বার্থপরতার বিষয়ে অনেক মূল্যবান উপদেশ ও বাণী রয়েছে, যা আমাদের এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সাহায্য করতে পারে। আজকের আলোচনা সেই বিষয়গুলি নিয়েই।
১০০+স্বার্থপর মানুষ নিয়ে ইসলামিক উক্তি
“দুনিয়াতে সেই ব্যক্তি সবচেয়ে নিকৃষ্ট, যে শুধু নিজের ভালো চায়।”
“স্বার্থপরতা একটি মানসিক ব্যাধি, যা আত্মাকে ধ্বংস করে দেয়।”
“যে ব্যক্তি শুধু নিজের সুখ খোঁজে, সে কখনো প্রকৃত শান্তি পায় না।”
“অন্যের প্রয়োজনে এগিয়ে যাওয়াই ইসলামের শিক্ষা, স্বার্থপরতা নয়।”
“স্বার্থপর মানুষ কখনো আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে পারে না।”
“নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থেকো না, বরং অন্যের জন্য কিছু করো।”
“স্বার্থপরতা মানুষের মধ্যে ঘৃণা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করে।”
“ইসলাম ত্যাগ ও উৎসর্গের শিক্ষা দেয়, স্বার্থপরতার নয়।”
“যে ব্যক্তি শুধু নিজের কথা ভাবে, সে সমাজের জন্য বোঝা।”
“আল্লাহ তাদের অপছন্দ করেন, যারা শুধু নিজেদের স্বার্থ দেখে।”
“স্বার্থপরতা একটি অন্ধকার গর্ত, যা মানুষকে নিচে নামিয়ে দেয়।”
“অন্যের উপকার করাই প্রকৃত মানবতা, স্বার্থপরতা নয়।”
“ইসলামে সবসময় অন্যের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে বলা হয়েছে।”
“যে ব্যক্তি স্বার্থপর, সে কখনো সুখী হতে পারে না।”
“আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন, যারা অন্যের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে।”
“স্বার্থপরতা মানুষের বিবেককে অন্ধ করে দেয়।”
“ইসলামে সবসময় ন্যায় ও ইনসাফের কথা বলা হয়েছে, স্বার্থপরতার নয়।”
“যে ব্যক্তি শুধু নিজের জন্য বাঁচে, সে মৃতপ্রায়।”
“আল্লাহ তাদের ঘৃণা করেন, যারা অন্যের ক্ষতি করে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করে।”
“স্বার্থপরতা একটি বিষাক্ত বীজ, যা সম্পর্ক নষ্ট করে দেয়।”
“অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া ইসলামের অন্যতম শিক্ষা।”
“যে ব্যক্তি স্বার্থপর, সে কখনো সম্মানিত হতে পারে না।”
“আল্লাহ তাদের পছন্দ করেন, যারা অন্যের কল্যাণে কাজ করে।”
“স্বার্থপরতা মানুষের মনুষ্যত্বকে কেড়ে নেয়।”
“ইসলামে সবসময় একে অপরের প্রতি সাহায্য ও সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে।”
“যে ব্যক্তি শুধু নিজের প্রয়োজন মেটায়, সে অকৃতজ্ঞ।”
“আল্লাহ তাদের অপছন্দ করেন, যারা দুর্বলকে শোষণ করে।”
“স্বার্থপরতা একটি অভিশাপ, যা জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে।”
“অন্যের দুঃখে কষ্ট পাওয়া ইসলামের শিক্ষা।”
“যে ব্যক্তি স্বার্থপর, সে কখনো অনুতপ্ত হয় না।”
“আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন, যারা ক্ষমা করতে পারে।”
“স্বার্থপরতা মানুষের হৃদয়কে কঠিন করে দেয়।”
“ইসলামে সবসময় সত্য ও ন্যায়ের পথে চলতে বলা হয়েছে।”
“যে ব্যক্তি শুধু নিজের জয় চায়, সে পরাজিত।”
“আল্লাহ তাদের ঘৃণা করেন, যারা মিথ্যা বলে স্বার্থ হাসিল করে।”
“স্বার্থপরতা একটি প্রতারণা, যা নিজেকেও ঠকায়।”
“অন্যের প্রতি দয়া দেখানো ইসলামের সৌন্দর্য।”
“যে ব্যক্তি স্বার্থপর, সে কখনো বিশ্বস্ত হতে পারে না।”
“আল্লাহ তাদের পছন্দ করেন, যারা ওয়াদা রক্ষা করে।”
“স্বার্থপরতা মানুষের আত্মাকে কলুষিত করে।”
“ইসলামে সবসময় অন্যের বিশ্বাসকে সম্মান করতে বলা হয়েছে।”
“যে ব্যক্তি শুধু নিজের সম্মান চায়, সে অসম্মানিত।”
“আল্লাহ তাদের অপছন্দ করেন, যারা অহংকার করে।”
“স্বার্থপরতা একটি ভুল পথ, যা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।”
“অন্যের প্রয়োজনে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়াই ইসলামের মহত্ত্ব।”
“যে ব্যক্তি স্বার্থপর, সে কখনো সম্মানিত জীবন যাপন করতে পারে না।”
“ইসলামে ধৈর্য ও সহনশীলতার গুরুত্ব অপরিসীম, যা স্বার্থপরতাকে জয় করতে সাহায্য করে।”
“আল্লাহ সেইসব মানুষদের অপছন্দ করেন, যারা অন্যের অধিকার হরণ করে।”
“স্বার্থপরতা একটি ভয়ানক অন্ধকার, যা আলোকিত হৃদয়কেও গ্রাস করে।”
“নিজের থেকে বেশি অন্যকে প্রাধান্য দেওয়াই ইসলামের শিক্ষা।”
“যে ব্যক্তি স্বার্থের মোহে অন্ধ, সে সত্য দেখতে পায় না।”
“আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন, যারা নিঃস্বার্থভাবে মানুষের সেবা করে।”
“স্বার্থপরতা মানুষকে অকৃতজ্ঞ ও নিষ্ঠুর করে তোলে।”
“ইসলামে সকলের প্রতি সুবিচার ও দয়া প্রদর্শনের কথা বলা হয়েছে।”
“যে ব্যক্তি নিজের লাভের জন্য অন্যকে কষ্ট দেয়, সে মূলত নিজেকেই কষ্ট দেয়।”
“আল্লাহ তাদের অপছন্দ করেন, যারা অন্যের দুর্বলতার সুযোগ নেয়।”
“স্বার্থপরতা একটি আত্মঘাতী প্রবণতা, যা ধীরে ধীরে মানুষকে নিঃশেষ করে দেয়।”
“ইসলামে অসহায় ও দরিদ্রদের সাহায্য করার কথা বলা হয়েছে।”
“যে ব্যক্তি শুধু নিজের প্রশংসা শোনার জন্য কাজ করে, তার কাজের কোনো মূল্য নেই।”
“আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন, যারা নিজের ভুল স্বীকার করে সংশোধন করে।”
“স্বার্থপরতা মানুষকে একাকী ও নিঃসঙ্গ করে দেয়।”
“ইসলামে প্রতিবেশীর অধিকার রক্ষার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।”
“যে ব্যক্তি শুধু নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত, সে বর্তমানকে উপভোগ করতে পারে না।”
“আল্লাহ তাদের অপছন্দ করেন, যারা অন্যের সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়।”
“স্বার্থপরতা একটি কারাগার, যা মানুষকে আবদ্ধ করে রাখে।”
“ইসলামে জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি তা বিতরণের কথা বলা হয়েছে।”
“যে ব্যক্তি শুধু নিজের ক্ষমতা জাহির করে, সে দুর্বল।”
“আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন, যারা অন্যের পরামর্শ শোনে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়।”
“স্বার্থপরতা মানুষের মধ্যে সন্দেহ ও অবিশ্বাস সৃষ্টি করে।”
“ইসলামে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।”
“যে ব্যক্তি নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নেয় না, সে একই ভুল বারবার করে।”
“আল্লাহ তাদের অপছন্দ করেন, যারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে।”
“স্বার্থপরতা একটি অন্ধকার সুরঙ্গ, যার শেষ নেই।”
“ইসলামে ত্যাগের মহিমা ও গুরুত্ব অপরিসীম।”
“যে ব্যক্তি শুধু নিজের আরাম আয়েশ খোঁজে, সে জীবনের আসল স্বাদ পায় না।”
“আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন, যারা বিপদগ্রস্তদের সাহায্য করে।”
“স্বার্থপরতা মানুষকে অমানবিক করে তোলে।”
“ইসলামে সত্যবাদিতা ও ন্যায়পরায়ণতার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।”
“যে ব্যক্তি শুধু নিজের জয়গান গায়, সে আসলে একা।”
“আল্লাহ তাদের অপছন্দ করেন, যারা মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে।”
“স্বার্থপরতা একটি মরণব্যাধি, যা ধীরে ধীরে সব শেষ করে দেয়।”
“ইসলামে ক্ষমা ও সহানুভূতির শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।”
“যে ব্যক্তি শুধু নিজের স্বার্থ বোঝে, সে আসলে কিছুই বোঝে না।”
“আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন, যারা অন্যের জন্য বাঁচে।”
“স্বার্থপরতা মানুষকে পশুর পর্যায়ে নামিয়ে আনে।”
“ইসলামে মানবপ্রেম ও সেবার আদর্শ তুলে ধরা হয়েছে।”
“যে ব্যক্তি শুধু নিজের অধিকার চায়, সে দায়িত্ব এড়ায়।”
“আল্লাহ তাদের অপছন্দ করেন, যারা অহংকারী ও দাম্ভিক।”
“স্বার্থপরতা একটি ধ্বংসাত্মক শক্তি, যা সব সম্পর্ক ভেঙে দেয়।”
“ইসলামে শান্তি ও সহাবস্থানের কথা বলা হয়েছে।”
“যে ব্যক্তি শুধু নিজের কথা ভাবে, সে সমাজের শত্রু।”
“আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন, যারা সত্য পথে অবিচল থাকে।”
“স্বার্থপরতা মানুষের জীবনে অভিশাপ ডেকে আনে।”
“ইসলামে মানবজাতির কল্যাণের কথা বলা হয়েছে।”
“যে ব্যক্তি শুধু নিজের যশ চায়, সে মূল্যহীন।”
“আল্লাহ তাদের অপছন্দ করেন, যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়।”
“স্বার্থপরতা একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত, যা অনুতাপের কারণ হয়।”
“ইসলামে ধৈর্য ও সহনশীলতার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, যা স্বার্থপরতাকে পরাস্ত করতে সাহায্য করে।”
এই উক্তিগুলো আমাদের জীবনে চলার পথে পাথেয় হতে পারে।
স্বার্থপর মানুষ চেনার উপায় কি?
স্বার্থপর মানুষদের চেনা সবসময় সহজ নয়, কারণ তারা প্রায়শই নিজেদের স্বার্থপরতা ঢেকে রাখার চেষ্টা করে। তবে কিছু লক্ষণ দেখে তাদের চেনা যেতে পারে:
১. সবসময় নিজের কথা ভাবে
স্বার্থপর ব্যক্তিরা সবসময় নিজেদের সুবিধা এবং চাহিদাকে প্রাধান্য দেয়। তারা অন্যের প্রয়োজন বা অনুভূতির প্রতি খুব কম মনোযোগ দেয় অথবা একেবারেই দেয় না। যেকোনো পরিস্থিতিতে তাদের প্রথম চিন্তা থাকে “এতে আমার কী লাভ?”
২. শুধু নেয়, দেয় না
তারা অন্যদের কাছ থেকে সুবিধা নিতে দ্বিধা করে না, কিন্তু যখন অন্যদের সাহায্য করার প্রয়োজন হয়, তখন পিছিয়ে যায়। তাদের কাছে দেওয়া-নেওয়ার হিসাবটা একতরফা।
৩. মনোযোগ কাড়তে চায়
স্বার্থপর ব্যক্তি সবসময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে চায়। তারা নিজেদের গল্প বলতে এবং নিজেদের অভিজ্ঞতা জাহির করতে ভালোবাসে, অন্যের কথা শুনতে খুব একটা আগ্রহী হয় না।
৪. অন্যের কৃতিত্বকে ছোট করে দেখে
তারা অন্যের সাফল্যকে স্বীকার করতে চায় না এবং প্রায়শই অন্যের কৃতিত্বকে ছোট করে দেখানোর চেষ্টা করে। তারা মনে করে, অন্যের প্রশংসা করলে তাদের নিজেদের গুরুত্ব কমে যাবে।
৫. প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে না
স্বার্থপর ব্যক্তিরা খুব সহজে প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু তা রক্ষা করার ব্যাপারে তাদের মধ্যে তেমন আগ্রহ দেখা যায় না। কারণ তাদের কাছে নিজের সুবিধাটাই আসল।
৬. আবেগ দেখায় না
তারা অন্যের দুঃখে খুব কম সহানুভূতি দেখায়। তাদের আবেগ সাধারণত নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। অন্যের কষ্ট তাদের স্পর্শ করে না বললেই চলে।
৭. Manipulative বা ছলনাময়ী হয়
স্বার্থপর ব্যক্তিরা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য অন্যকে ব্যবহার করতে দ্বিধা করে না। তারা বিভিন্ন ছলনার আশ্রয় নিয়ে কাজ হাসিল করতে ওস্তাদ।
৮. খুব দ্রুত রেগে যায়
যখন তাদের চাহিদা পূরণ হয় না, তখন তারা খুব দ্রুত রেগে যায় এবং অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে। তারা মনে করে, সবকিছু তাদের ইচ্ছেমতো চলতে হবে।
৯. সম্পর্কের ক্ষেত্রে সুযোগসন্ধানী
তারা সম্পর্ক তৈরি করে শুধুমাত্র নিজেদের প্রয়োজনে। যখন সেই প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়, তখন তারা সম্পর্ক থেকে সরে যেতে দ্বিধা করে না।
১০. Feedback গ্রহণ করতে পারে না
তারা নিজেদের ভুল স্বীকার করতে চায় না এবং কোনো ধরনের সমালোচনা শুনতে রাজি নয়। তারা মনে করে, তারা সবসময় সঠিক।
ইসলামী দৃষ্টিকোণে স্বার্থপরতা
ইসলামে স্বার্থপরতা একটি নিন্দনীয় কাজ। ইসলাম সবসময় ত্যাগ, উৎসর্গ এবং অন্যের প্রতি সহানুভূতি দেখানোর কথা বলে।
কুরআনের আলোকে
কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা নিজের জন্য যা পছন্দ করো, তা অন্যের জন্যও পছন্দ করো।” (বুখারী, মুসলিম)
অন্যত্র বলা হয়েছে, “যারা নিজেদের সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস্যবীজ, যা সাতটি শীষ উৎপাদন করে, প্রত্যেক শীষে একশ’ শস্যদানা। আল্লাহ যাকে চান তার জন্য বহুগুণ বৃদ্ধি করেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।” (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৬১)
এই আয়াতগুলোতে সম্পদ এবং নিজের ভালো লাগা জিনিস অন্যর সাথে ভাগ করে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যা স্বার্থপরতার বিপরীত।
হাদিসের আলোকে
হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “সেই ব্যক্তি মুমিন নয়, যে পেটপুরে খায়, আর তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে।” (আল-আদাব আল-মুফরাদ)
অন্য একটি হাদিসে তিনি বলেছেন, “তোমরা দয়া করো, তোমাদের প্রতি দয়া করা হবে।” (মুসনাদে আহমদ)
এসব হাদিস থেকে বোঝা যায়, ইসলামে অন্যের প্রতি সহানুভূতি এবং সাহায্য করার কথা বলা হয়েছে। স্বার্থপরতা পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
কেন একজন মানুষ স্বার্থপর হয়?
মানুষ বিভিন্ন কারণে স্বার্থপর হতে পারে। এর পেছনে কিছু মনস্তাত্ত্বিক, সামাজিক এবং পরিবেশগত কারণ থাকতে পারে। নিচে কয়েকটি প্রধান কারণ আলোচনা করা হলো:
১. শৈশবের অভিজ্ঞতা
শৈশবের কিছু অভিজ্ঞতা মানুষের মধ্যে স্বার্থপরতার বীজ বপন করতে পারে। যেমন:
- স্নেহের অভাব: যদি কোনো শিশু ছোটবেলায় পর্যাপ্ত স্নেহ ও ভালোবাসা না পায়, তাহলে তার মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হতে পারে। এই কারণে সে বড় হয়ে নিজের প্রয়োজনকে সবার আগে প্রাধান্য দিতে শেখে।
- অতিরিক্ত প্রশ্রয়: আবার কোনো শিশুকে যদি অতিরিক্ত প্রশ্রয় দেওয়া হয় এবং তার সব আবদার পূরণ করা হয়, তাহলে সে মনে করতে শুরু করে যে তার সবকিছু পাওয়ার অধিকার আছে। ফলে, সে অন্যদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে পারে না।
২. নিরাপত্তাহীনতা
কিছু মানুষ নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত থাকে এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। তারা মনে করে, যদি তারা অন্যদের সাহায্য করে, তাহলে তাদের নিজেদের প্রয়োজন পূরণ নাও হতে পারে।
৩. সামাজিক চাপ
অনেক সময় সমাজ এবং সংস্কৃতির প্রভাবেও মানুষ স্বার্থপর হয়ে ওঠে। এমন সমাজে যেখানে ব্যক্তিগত সাফল্য এবং প্রতিযোগিতাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, সেখানে মানুষ নিজের স্বার্থকে বড় করে দেখে।
৪. ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য
কিছু মানুষের ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য এমন হয় যে তারা অন্যদের তুলনায় বেশি স্বার্থপর হয়। যেমন, Narcissistic Personality Disorder-এ আক্রান্ত ব্যক্তিরা নিজেদেরকে অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করে এবং অন্যের অনুভূতিকে গ্রাহ্য করে না।
৫. অর্থনৈতিক কারণ
দারিদ্র্য এবং অভাবের কারণেও মানুষ স্বার্থপর হতে পারে। যখন জীবন ধারণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করাই কঠিন হয়ে পড়ে, তখন মানুষ নিজের এবং নিজের পরিবারের কথা আগে ভাবে।
৬. খারাপ দৃষ্টান্ত
পরিবার এবং সমাজে যদি কেউ সবসময় স্বার্থপর আচরণ করে, তাহলে সেই দেখে অন্যরাও এমন আচরণ করতে উৎসাহিত হয়। শিশুরা বড়দের কাছ থেকে শেখে, তাই তাদের সামনে ভালো উদাহরণ রাখা উচিত।
৭. ভয়
অনেক সময় মানুষ ভয় থেকে স্বার্থপর হয়। তারা ভয় পায় যে যদি তারা অন্যদের সাহায্য করে, তাহলে তাদের নিজেদের ক্ষতি হয়ে যাবে। এই ভয় তাদের স্বার্থপর আচরণ করতে বাধ্য করে।
স্বার্থপরতা থেকে মুক্তির উপায়
স্বার্থপরতা একটি নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য, যা আমাদের ব্যক্তিগত এবং সামাজিক জীবনে অনেক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ইসলামে স্বার্থপরতা পরিহার করে অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার কথা বলা হয়েছে। নিচে কিছু উপায় আলোচনা করা হলো, যার মাধ্যমে আপনি স্বার্থপরতা থেকে মুক্তি পেতে পারেন:
১. নিজের মনকে বোঝা
প্রথমত, আপনাকে বুঝতে হবে যে আপনি কেন স্বার্থপর আচরণ করছেন। নিজের ভেতরের ভয়, নিরাপত্তাহীনতা এবং চাহিদাগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে। যখন আপনি আপনার ভেতরের কারণগুলো জানতে পারবেন, তখন সেগুলোকে মোকাবিলা করা সহজ হবে।
২. অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া
অন্যের কষ্ট এবং চাহিদাকে অনুভব করার চেষ্টা করুন। তাদের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করুন এবং ভাবুন যে তারা কেমন অনুভব করছে। এটি আপনাকে তাদের প্রতি আরও বেশি সহানুভূতিশীল হতে সাহায্য করবে।
৩. দান করা এবং সাহায্য করা
নিয়মিতভাবে দান করুন এবং অন্যদের সাহায্য করুন। এটি শুধু তাদের উপকার করবে না, বরং আপনার মনকেও শান্তি দেবে। ইসলামে যাকাত এবং সাদকার মাধ্যমে গরিব ও অভাবীদের সাহায্য করার কথা বলা হয়েছে।
৪. কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা
আপনার জীবনে যা কিছু আছে, তার জন্য কৃতজ্ঞ থাকুন। প্রতিদিন আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করুন এবং আপনার চারপাশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। এটি আপনাকে অন্যদের প্রতি আরও বেশি উদার হতে সাহায্য করবে।
৫. নিজের ভুল স্বীকার করা
যখন আপনি কোনো ভুল করেন, তখন তা স্বীকার করুন এবং ক্ষমা চান। নিজের ভুল স্বীকার করা এবং তা থেকে শিক্ষা নেওয়া আপনাকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে।
৬. অহংকার পরিহার করা
অহংকার একটি খারাপ গুণ, যা মানুষকে স্বার্থপর করে তোলে। নিজেকে অন্যদের চেয়ে বড় মনে করা থেকে বিরত থাকুন এবং সবসময় নম্র ও বিনয়ী থাকার চেষ্টা করুন।
৭. অন্যের কথা শোনা
অন্যের মতামত এবং পরামর্শকে গুরুত্ব দিন। যখন কেউ আপনার সাথে কথা বলে, তখন মনোযোগ দিয়ে শুনুন এবং তাদের প্রতি সম্মান দেখান।
৮. নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসা
মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসতে শিখুন। কোনো প্রতিদান ছাড়াই অন্যদের জন্য কিছু করুন। এটি আপনাকে স্বার্থপরতা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করবে।
৯. দোয়া করা
আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, যাতে তিনি আপনাকে সঠিক পথে চালান এবং আপনাকে স্বার্থপরতা থেকে রক্ষা করেন। নিয়মিত নামাজ পড়ুন এবং কুরআন তেলাওয়াত করুন।
১০. ভালো সঙ্গ নির্বাচন করা
ভালো বন্ধুদের সাথে সময় কাটান, যারা আপনাকে ভালো কাজে উৎসাহিত করে এবং আপনার মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে। খারাপ সঙ্গ ত্যাগ করুন, যা আপনাকে স্বার্থপর হতে উৎসাহিত করে।
স্বার্থপরতা নিয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্ন (FAQ)
স্বার্থপরতা নিয়ে আমাদের মনে অনেক প্রশ্ন জাগে। এখানে কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো:
প্রশ্ন ১: স্বার্থপরতা কি সবসময় খারাপ?
উত্তর: সাধারণভাবে, স্বার্থপরতা একটি নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য। তবে, কিছু ক্ষেত্রে নিজের যত্ন নেওয়া এবং নিজের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি। কিন্তু যখন এটি অন্যের ক্ষতি করে বা অন্যের অধিকার হরণ করে, তখন তা অবশ্যই খারাপ।
প্রশ্ন ২: ইসলামে কি স্বার্থপরতা ক্ষমাযোগ্য?
উত্তর: ইসলামে স্বার্থপরতা নিন্দনীয়। তবে, যদি কেউ অনুতপ্ত হয় এবং নিজের ভুল সংশোধন করে, তাহলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করতে পারেন।
প্রশ্ন ৩: কিভাবে বুঝব আমি স্বার্থপর হচ্ছি?
উত্তর: যদি আপনি সবসময় নিজের সুবিধা এবং চাহিদাকে প্রাধান্য দেন, অন্যের প্রতি সহানুভূতি কম দেখান, এবং শুধু নিতে চান দিতে চান না, তাহলে আপনি সম্ভবত স্বার্থপর হচ্ছেন।
প্রশ্ন ৪: স্বার্থপর মানুষের সাথে কেমন আচরণ করা উচিত?
উত্তর: স্বার্থপর মানুষের সাথে ধৈর্য ধরে এবং সহানুভূতিশীল আচরণ করা উচিত। তাদের ভুলগুলো বুঝিয়ে বলা এবং তাদের ভালো কাজে উৎসাহিত করা উচিত। তবে, যদি তারা পরিবর্তন না হয়, তাহলে তাদের থেকে দূরে থাকাই ভালো।
প্রশ্ন ৫: স্বার্থপরতা কি একটি মানসিক রোগ?
উত্তর: সবসময় নয়। তবে, Narcissistic Personality Disorder-এর মতো কিছু মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা অতিরিক্ত স্বার্থপর হতে পারে।
উপসংহার
স্বার্থপরতা একটি জটিল বিষয়, যা আমাদের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ইসলামে স্বার্থপরতাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে এবং অন্যের প্রতি সহানুভূতি ও সাহায্য করার কথা বলা হয়েছে। আমাদের উচিত নিজেদের মনকে বোঝা, অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া, এবং নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসা। এই পথে চললে আমরা শুধু স্বার্থপরতা থেকে মুক্তি পাব না, বরং একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়তে contribution রাখতে পারব।