কাপড়ের দুনিয়ায় স্বাগতম! “টেক্সটাইল কাকে বলে” – এই প্রশ্নটা নিশ্চয়ই আপনার মনেও উঁকি দিয়েছে, তাই না? চিন্তা নেই, আজ আমরা টেক্সটাইলের অন্দরমহলে ডুব দেব, খুঁটিনাটি সব জানব। শুধু সংজ্ঞা নয়, টেক্সটাইলের ইতিহাস, প্রকারভেদ, ব্যবহার এবং আধুনিক বিশ্বে এর গুরুত্ব – সবকিছু নিয়েই আলোচনা করব। তাই, আরাম করে বসুন, আর পড়তে থাকুন!
টেক্সটাইল: জীবনের বুনন
টেক্সটাইল শব্দটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে নানা রঙের কাপড়, পোশাক, পর্দা, আরও কত কি! কিন্তু টেক্সটাইল আসলে কী? সহজ ভাষায়, টেক্সটাইল মানে হল বস্ত্র বা কাপড়। তবে এর পেছনের গল্পটা বেশ বিস্তৃত। টেক্সটাইল শুধু আমাদের শরীর ঢাকার উপকরণ নয়, এটা আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং অর্থনীতির একটা বড় অংশ।
টেক্সটাইল কী? (What is Textile?)
টেক্সটাইল হলো সেইসব জিনিস যা ন fiber (ফাইবার) বা তন্ত্র থেকে তৈরি। এই তন্ত্র হতে পারে প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম। এই তন্ত্রগুলোকে একসাথে করে সুতা তৈরি করা হয়, আর সেই সুতা দিয়ে কাপড় বোনা হয়। টেক্সটাইল শব্দটি ল্যাটিন শব্দ “texere” থেকে এসেছে, যার মানে “বোনা” (to weave)। শুধু পোশাক নয়, ঘর সাজানোর জিনিস, ব্যাগ, জুতো—সবকিছুতেই টেক্সটাইলের ব্যবহার রয়েছে।
টেক্সটাইলের সংজ্ঞা
টেক্সটাইলকে যদি সংজ্ঞায়িত করতে হয়, তবে বলা যায়: টেক্সটাইল হলো ন fiber (ফাইবার) বা তন্ত্র থেকে উৎপাদিত নমনীয় বস্তু, যা বয়ন, নিটিং, ফিল্টিং অথবা অন্য কোনো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা হয় এবং যা পোশাক, গৃহসজ্জা, শিল্প এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে।
টেক্সটাইলের ইতিহাস
টেক্সটাইলের ইতিহাস মানবসভ্যতার মতোই প্রাচীন। সেই প্রস্তর যুগে মানুষ যখন গাছের ছাল বা পশুর চামড়া দিয়ে শরীর ঢাকতে শুরু করল, তখন থেকেই টেক্সটাইলের যাত্রা শুরু। ধীরে ধীরে মানুষ বুঝতে পারল, কীভাবে প্রাকৃতিক তন্তু থেকে সুতা তৈরি করে কাপড় বোনা যায়।
- প্রাচীন মিশর: লিনেন কাপড় তৈরিতে মিশরীয়দের দক্ষতা ছিল অসাধারণ। তারা লিনেন দিয়ে পোশাক তৈরি করত, এমনকি মমিকেও লিনেনের কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হত।
- ভারতবর্ষ: ভারতবর্ষ মসলিনের জন্য বিখ্যাত ছিল। মসলিন ছিল এতটাই মিহি যে, একটা আংটির ভেতর দিয়ে পুরো কাপড় বের করে আনা যেত!
- চীন: চীন রেশম বা সিল্কের জন্মস্থান। কয়েক হাজার বছর ধরে চীনারা রেশম উৎপাদন করে আসছে এবং এটা তাদের সংস্কৃতির একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
আধুনিক টেক্সটাইল
শিল্প বিপ্লবের পর টেক্সটাইল জগতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। হাতে বোনার পরিবর্তে যন্ত্রের ব্যবহার শুরু হয়, যা উৎপাদনকে অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়। আজকের দিনে টেক্সটাইল শিল্প শুধু পোশাকের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর ব্যবহার ছড়িয়ে আছে অটোমোবাইল, চিকিৎসা, নির্মাণ শিল্পসহ আরও অনেক ক্ষেত্রে।
টেক্সটাইলের প্রকারভেদ (Types of Textile)
টেক্সটাইলকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়: প্রাকৃতিক তন্তু (Natural Fibers) এবং কৃত্রিম তন্তু (Synthetic Fibers)।
প্রাকৃতিক তন্তু (Natural Fibers)
প্রকৃতি থেকে পাওয়া যায় এমন তন্তুগুলোই হলো প্রাকৃতিক তন্তু। এগুলো সাধারণত উদ্ভিদ, প্রাণী অথবা খনিজ উৎস থেকে আসে।
উদ্ভিদ উৎস (Plant Fibers)
- তুলা (Cotton): তুলা সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রাকৃতিক তন্তু। এটি হালকা, নরম এবং আরামদায়ক। গরমের পোশাকের জন্য তুলা আদর্শ।
- পাট (Jute): পাট বাংলাদেশের সোনালী আঁশ নামে পরিচিত। এটি খুব শক্তিশালী এবং পরিবেশবান্ধব। ব্যাগ, কার্পেট, এবং প্যাকিংয়ের কাজে পাট ব্যবহার করা হয়।
- লিনেন (Linen): লিনেন ফ্লাক্স নামক উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়। এটি খুব টেকসই এবং গ্রীষ্মকালে শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
- নারকেল fiber (Coconut Fiber): এটি নারকেল গাছের ফল থেকে পাওয়া যায়।
প্রাণী উৎস (Animal Fibers)
- উল (Wool): ভেড়া থেকে উল পাওয়া যায়। এটি শীতের পোশাকের জন্য সেরা, কারণ এটি শরীরকে গরম রাখে।
- রেশম (Silk): রেশম কীট থেকে রেশম পাওয়া যায়। এটি খুব মসৃণ এবং উজ্জ্বল। শাড়ি, স্কার্ফ তৈরিতে রেশমের ব্যবহার বেশি।
- পশম (Cashmere): কাশ্মীরী ছাগল থেকে পশম সংগ্রহ করা হয়। এটি খুব মূল্যবান এবং উষ্ণ।
- মোহের (Mohair): এটি অ্যাঙ্গোরা ছাগলের থেকে পাওয়া যায়।
খনিজ উৎস (Mineral Fibers)
- অ্যাসবেস্টস (Asbestos): যদিও বর্তমানে এর ব্যবহার সীমিত, কারণ এটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তবুও এটি এক প্রকার খনিজ তন্তু।
কৃত্রিম তন্তু (Synthetic fibers)
কৃত্রিম তন্তুগুলো মানুষের তৈরি। এগুলো সাধারণত রাসায়নিক পদার্থ থেকে তৈরি করা হয়।
- পলিয়েস্টার (Polyester): পলিয়েস্টার খুব শক্তিশালী এবং টেকসই। এটি সহজে কুঁচকায় না এবং পানি প্রতিরোধী। পোশাক, পর্দা এবং অন্যান্য গৃহস্থালি সামগ্রী তৈরিতে এর ব্যবহার ব্যাপক।
- নাইলন (Nylon): নাইলন খুব হালকা এবং স্থিতিস্থাপক। এটি মোজা, অন্তর্বাস, এবং দড়ি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
- অ্যাক্রিলিক (Acrylic): অ্যাক্রিলিক উলের মতো দেখতে এবং এটি সোয়েটার, কম্বল এবং অন্যান্য শীতের পোশাক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
- রেয়ন (Rayon): রেয়ন দেখতে সিল্কের মতো এবং এটি শার্ট, ড্রেস এবং লাইনিং তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
- স্প্যানডেক্স (Spandex): এটি খুব স্থিতিস্থাপক এবং পোশাকের ফিটিং উন্নত করতে ব্যবহৃত হয়।
তন্তুর প্রকার | উৎস | বৈশিষ্ট্য | ব্যবহার |
---|---|---|---|
তুলা | উদ্ভিদ | নরম, হালকা, আরামদায়ক | পোশাক, বিছানার চাদর |
পাট | উদ্ভিদ | শক্তিশালী, পরিবেশবান্ধব | ব্যাগ, কার্পেট |
উল | প্রাণী | উষ্ণ, স্থিতিস্থাপক | সোয়েটার, কোট |
রেশম | প্রাণী | মসৃণ, উজ্জ্বল | শাড়ি, স্কার্ফ |
পলিয়েস্টার | কৃত্রিম | টেকসই, কুঁচকায় না | পোশাক, পর্দা |
নাইলন | কৃত্রিম | হালকা, স্থিতিস্থাপক | মোজা, দড়ি |
টেক্সটাইলের ব্যবহার (Uses of Textile)
টেক্সটাইলের ব্যবহার ব্যাপক ও বহুমুখী। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে এর উপস্থিতি লক্ষণীয়।
- পোশাক (Clothing): টেক্সটাইলের প্রধান ব্যবহার হলো পোশাক তৈরি করা। শার্ট, প্যান্ট, শাড়ি, কামিজ থেকে শুরু করে শীতের কোট—সবকিছুই টেক্সটাইল দিয়ে তৈরি।
- গৃহসজ্জা (Home Furnishings): ঘর সাজানোর বিভিন্ন উপকরণ যেমন পর্দা, কুশন, কার্পেট, বিছানার চাদর—এগুলো টেক্সটাইল দিয়েই তৈরি হয়।
- শিল্প (Industry): শিল্পক্ষেত্রে টেক্সটাইলের ব্যবহার অনেক। যেমন—গাড়ির সিট, এয়ার ফিল্টার, সুরক্ষা সরঞ্জাম ইত্যাদি তৈরিতে টেক্সটাইল ব্যবহার করা হয়।
- চিকিৎসা (Medical): চিকিৎসাক্ষেত্রেও টেক্সটাইলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সার্জিক্যাল গজ, ব্যান্ডেজ, কৃত্রিম অঙ্গ তৈরিতে টেক্সটাইল ব্যবহার করা হয়।
- অন্যান্য ব্যবহার (Other Uses): এছাড়াও প্যাকিং, ব্যাগ তৈরি, জুতা তৈরি, খেলাধুলার সরঞ্জাম তৈরিতেও টেক্সটাইল ব্যবহৃত হয়।
পোশাক শিল্পে টেক্সটাইল
পোশাক শিল্পে টেক্সটাইল একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পোশাকের ধরণ, আরাম এবং টেকসই হওয়ার বিষয়টি টেক্সটাইলের ওপর নির্ভর করে। বিভিন্ন ঋতু এবং অনুষ্ঠানের জন্য ভিন্ন ভিন্ন টেক্সটাইল ব্যবহার করা হয়।
- গ্রীষ্মকালে হালকা কাপড়: গ্রীষ্মকালে সুতি, লিনেন বা রেয়নের মতো হালকা কাপড় ব্যবহার করা হয়, যা শরীরকে ঠান্ডা রাখে।
- শীতকালে উষ্ণ কাপড়: শীতকালে উল, পশম বা ফ্লিসের মতো উষ্ণ কাপড় ব্যবহার করা হয়, যা শরীরকে গরম রাখে।
- বৃষ্টিতে জলরোধী কাপড়: বর্ষাকালে ওয়াটারপ্রুফ বা জলরোধী কাপড় ব্যবহার করা হয়, যা বৃষ্টি থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
- অনুষ্ঠানে ঝলমলে কাপড়: পার্টি বা অনুষ্ঠানে সিল্ক, সাটিন বা ভেলভেটের মতো ঝলমলে কাপড় ব্যবহার করা হয়, যা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
গৃহসজ্জায় টেক্সটাইল
ঘরকে সুন্দর ও আরামদায়ক করে তোলার জন্য টেক্সটাইলের ব্যবহার অপরিহার্য। গৃহসজ্জার বিভিন্ন উপকরণ টেক্সটাইল দিয়েই তৈরি।
- পর্দা: পর্দা ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং সূর্যের আলো নিয়ন্ত্রণ করে।
- কুশন: কুশন সোফা বা বিছানায় আরাম যোগ করে এবং ঘরের সাজসজ্জাকে আকর্ষণীয় করে।
- কার্পেট: কার্পেট ঘরের মেঝেতে উষ্ণতা আনে এবং শব্দ কমায়।
- বিছানার চাদর: বিছানার চাদর আরামদায়ক ঘুমের জন্য অপরিহার্য এবং এটি ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
- টেবিল ক্লথ: টেবিল ক্লথ খাবার টেবিলকে রক্ষা করে এবং সাজানোকে আরও সুন্দর করে।
শিল্পক্ষেত্রে টেক্সটাইল
শিল্পক্ষেত্রে টেক্সটাইল বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। এইগুলির মধ্যে কিছু নীচে উল্লেখ করা হল:
- গাড়ির সিট: গাড়ির সিট তৈরি করার জন্য টেকসই এবং আরামদায়ক টেক্সটাইল ব্যবহার করা হয়।
- এয়ার ফিল্টার: এয়ার ফিল্টার বাতাসকে পরিষ্কার রাখার জন্য টেক্সটাইল ব্যবহার করে।
- সুরক্ষা সরঞ্জাম: সুরক্ষা সরঞ্জাম যেমন গ্লাভস, হেলমেট ইত্যাদি তৈরিতে টেক্সটাইল ব্যবহার করা হয়, যা শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
চিকিৎসাক্ষেত্রে টেক্সটাইল
চিকিৎসাক্ষেত্রে টেক্সটাইল জীবন রক্ষাকারী উপাদান হিসেবে কাজ করে। এই সংক্রান্ত কয়েকটি ব্যবহার নিচে দেওয়া হলো:
- সার্জিক্যাল গজ: সার্জিক্যাল গজ ক্ষত পরিষ্কার এবং রক্তপাত বন্ধ করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
- ব্যান্ডেজ: ব্যান্ডেজ আঘাত সারাতে এবং সুরক্ষা দিতে ব্যবহৃত হয়।
- কৃত্রিম অঙ্গ: কৃত্রিম অঙ্গ তৈরিতে টেক্সটাইল ব্যবহার করা হয়, যা রোগীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সাহায্য করে।
টেক্সটাইল শিল্পে বাংলাদেশের অবস্থান (Bangladesh in Textile Industry)
বাংলাদেশ টেক্সটাইল শিল্পে একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। আমাদের দেশের তৈরি পোশাক (RMG – Ready Made Garments) বিশ্বজুড়ে পরিচিত। বাংলাদেশের অর্থনীতির একটা বড় অংশ এই টেক্সটাইল শিল্পের উপর নির্ভরশীল।
বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্পের ইতিহাস
বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্পের ইতিহাস অনেক পুরোনো। মসলিন থেকে শুরু করে আজকের গার্মেন্টস শিল্প—সবকিছুই আমাদের ঐতিহ্য ও দক্ষতার পরিচয় দেয়।
বাংলাদেশের অর্থনীতির চাবিকাঠি
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে টেক্সটাইল শিল্পের অবদান অনেক। আমাদের দেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলো থেকে প্রতি বছর বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়, যা দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে সাহায্য করে।
চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
টেক্সটাইল শিল্পে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি, পরিবেশ দূষণ, এবং আধুনিক প্রযুক্তির অভাব—এগুলো আমাদের মোকাবেলা করতে হবে। তবে, এই শিল্পের সম্ভাবনাও অনেক। নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়িয়ে আমরা টেক্সটাইল শিল্পকে আরও উন্নত করতে পারি।
টেক্সটাইল নিয়ে কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ about Textile)
টেক্সটাইল নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে কিছু প্রশ্ন থাকে। নিচে কয়েকটি সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো:
-
প্রশ্ন: টেক্সটাইল fabric এবং টেক্সটাইল উপকরণ এর মধ্যে পার্থক্য কি?
উত্তর: টেক্সটাইল fabric হল বোনা বা সেলাই করা কাপড়। অন্যদিকে, টেক্সটাইল উপকরণ বলতে কাপড় তৈরির জন্য ব্যবহৃত কাঁচামাল, যেমন সুতা বা তন্তু বোঝায়। -
প্রশ্ন: পরিবেশবান্ধব টেক্সটাইল কী?
উত্তর: পরিবেশবান্ধব টেক্সটাইল হলো সেইসব কাপড়, যা পরিবেশের উপর কম প্রভাব ফেলে তৈরি করা হয়। যেমন—Organic Cotton বা প্রাকৃতিক রং দিয়ে তৈরি কাপড়। রিসাইকেল করা যায় এমন ফাইবার থেকেও পরিবেশবান্ধব টেক্সটাইল তৈরি করা সম্ভব। -
প্রশ্ন: টেক্সটাইল ব্যবসার ভবিষ্যৎ কেমন?
উত্তর: টেক্সটাইল ব্যবসার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। মানুষের পোশাকের চাহিদা বাড়ছে, সেই সাথে বাড়ছে নতুন নতুন টেক্সটাইল পণ্যের ব্যবহার। টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব টেক্সটাইলের চাহিদা এখন অনেক বেশি।
-
প্রশ্ন: পোশাকের জন্য কোন টেক্সটাইল ভালো?
উত্তর: পোশাকের জন্য টেক্সটাইল নির্বাচন করার সময় কিছু বিষয় মনে রাখতে হয়। গরমের জন্য সুতি বা লিনেন ভালো, কারণ এগুলো হালকা এবং বাতাস চলাচল করতে দেয়। শীতের জন্য উল বা পশম ভালো, কারণ এগুলো শরীর গরম রাখে। এছাড়া, পোশাকের ডিজাইন এবং ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে টেক্সটাইল নির্বাচন করা উচিত। -
প্রশ্ন: টেক্সটাইলের মান কিভাবে বুঝবো?
উত্তর: টেক্সটাইলের মান বোঝার জন্য কিছু বিষয় লক্ষ্য করতে হয়। যেমন—কাপড়ের বুনন কেমন, রং পাকা কিনা, কাপড় টেকসই কিনা, এবং কাপড়ের উপাদান কী। ভালো মানের টেক্সটাইল সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং সহজে নষ্ট হয় না। -
প্রশ্ন: টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কি?
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং হলো প্রকৌশলবিদ্যার একটি শাখা, যেখানে টেক্সটাইল উৎপাদন প্রক্রিয়া, যন্ত্রপাতি এবং বস্ত্রের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করা হয়। একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার বস্ত্রশিল্পে নতুন প্রযুক্তি ও পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন, যা উৎপাদন প্রক্রিয়াকে আরও উন্নত ও সাশ্রয়ী করে।
-
প্রশ্ন: ডেনিম কি ধরনের টেক্সটাইল?
ডেনিম হলো একটি বিশেষ ধরনের কটন টেক্সটাইল। এটি সাধারণত জিন্স কাপড় তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ডেনিমের বৈশিষ্ট্য হলো এর টেকসই গঠন এবং রঙের ভিন্নতা, যা ব্যবহারের সাথে সাথে আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। -
প্রশ্ন: টেক্সটাইল ডিজাইনের গুরুত্ব কী?
টেক্সটাইল ডিজাইন হলো বস্ত্রের নকশা তৈরি করার প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে কাপড়ের রঙ, প্যাটার্ন এবং গঠন নির্ধারণ করা হয়। সুন্দর এবং আধুনিক টেক্সটাইল ডিজাইন পোশাক এবং অন্যান্য টেক্সটাইল পণ্যের চাহিদা বাড়াতে সহায়ক। একজন ভালো টেক্সটাইল ডিজাইনার বাজারের চাহিদা অনুযায়ী নতুন নতুন ডিজাইন তৈরি করতে পারেন।
টেক্সটাইল শিল্পের ভবিষ্যৎ (Future of Textile Industry)
টেক্সটাইল শিল্পের ভবিষ্যৎ বেশ উজ্জ্বল। এখন মানুষ পরিবেশ নিয়ে অনেক সচেতন, তাই পরিবেশবান্ধব টেক্সটাইলের চাহিদা বাড়ছে। এছাড়াও, টেকনোলজির উন্নতির সাথে সাথে নতুন নতুন টেক্সটাইল পণ্য তৈরি হচ্ছে, যা এই শিল্পকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
টেকসই টেক্সটাইল
টেকসই টেক্সটাইল হলো পরিবেশবান্ধব উপায়ে তৈরি করা কাপড়। এতে প্রাকৃতিক রং এবং রিসাইকেলড উপকরণ ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের টেক্সটাইল পরিবেশের উপর কম ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
স্মার্ট টেক্সটাইল
স্মার্ট টেক্সটাইল হলো আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে তৈরি করা কাপড়। এই কাপড়ে সেন্সর, ইলেকট্রনিক্স এবং অন্যান্য ডিভাইস যুক্ত করা হয়, যা ব্যবহারকারীর শারীরিক অবস্থা, তাপমাত্রা এবং অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। স্মার্ট টেক্সটাইল স্বাস্থ্যখাতে, খেলাধুলায় এবং ফ্যাশনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
3D প্রিন্টিং
3D প্রিন্টিং টেক্সটাইল শিল্পে একটি নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে। এর মাধ্যমে খুব সহজেই জটিল ডিজাইন তৈরি করা সম্ভব। এই প্রযুক্তির ব্যবহার পোশাকের নকশা এবং উৎপাদনে নতুনত্ব আনতে সাহায্য করে।
টেক্সটাইল শুধু কাপড় নয়, এটি আমাদের জীবনযাত্রার একটা অংশ। এর ইতিহাস, প্রকারভেদ এবং ব্যবহার সম্পর্কে জানা আমাদের সবার জন্য দরকারি। বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্প আমাদের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি, তাই এই শিল্পের উন্নয়নে আমাদের সবার সহযোগিতা করা উচিত। টেক্সটাইল নিয়ে আপনার যদি আরও কিছু জানার থাকে, তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
আশা করি, “টেক্সটাইল কাকে বলে” এই প্রশ্নের উত্তর আপনি পেয়েছেন। টেক্সটাইল সম্পর্কে আরও জানতে আমাদের সাথেই থাকুন!