আসুন, পাটিসাপটা বানাই! শীতের সকালে ধোঁয়া ওঠা পাটিসাপটা, আহ! ভাবলেই জিভে জল আসে, তাই না?
শীতকাল মানেই পিঠাপুলির ধুম। আর বাঙালি মাত্রই পিঠার প্রতি দুর্বলতা থাকবে, এটা তো খুবই স্বাভাবিক। এই শীতে যদি নিজের হাতে তৈরি করা যায় দারুণ স্বাদের পাটিসাপটা, তাহলে কেমন হয় বলুন তো?
আজকে আমরা শিখব কিভাবে খুব সহজে এবং পারফেক্ট স্বাদে পাটিসাপটা পিঠা তৈরি করা যায়। আমি আপনাদের এমন একটি রেসিপি জানাবো, যা অনুসরণ করে আপনি খুব সহজেই সুস্বাদু পাটিসাপটা তৈরি করতে পারবেন। তাহলে আর দেরি না করে, চলুন শুরু করা যাক!
পাটিসাপটা পিঠা রেসিপি: শীতের স্পেশাল
পাটিসাপটা পিঠা শুধু একটি খাবার নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতির অংশ। ছোটবেলার শীতের সকালে মায়ের হাতের গরম পাটিসাপটা যেন এক টুকরো সুখ। আসুন, সেই স্মৃতিগুলো ফিরিয়ে আনি!
পাটিসাপটা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ
পারফেক্ট পাটিসাপটা বানানোর জন্য সঠিক উপকরণ নির্বাচন করাটা খুবই জরুরি। আসুন, দেখে নেই কী কী লাগবে:
- ব্যাটারের জন্য:
- ময়দা – ১ কাপ
- চালের গুঁড়ো – ১/২ কাপ
- সুজি – ২ টেবিল চামচ
- চিনি – ২ টেবিল চামচ (স্বাদমতো)
- নুন – ১/৪ চা চামচ
- দুধ – ২ কাপ (তরল)
- জল – প্রয়োজন অনুযায়ী
- পুর বা stuffing এর জন্য:
- নারকেল কোরা – ২ কাপ
- খেজুরের গুড় – ১ কাপ (স্বাদমতো)
- এলাচ গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ
- ঘি – ১ টেবিল চামচ (ইচ্ছা)
পাটিসাপটা তৈরির পদ্ধতি
উপকরণ তো জানা হলো, এবার দেখা যাক কিভাবে তৈরি করতে হয়:
পুর তৈরি করার নিয়ম
- প্রথমে নারকেল কোরা ও খেজুরের গুড় একটি পাত্রে মিশিয়ে নিন।
- এরপর মিশ্রণটি চুলায় বসিয়ে মাঝারি আঁচে নাড়তে থাকুন।
- যখন গুড় গলে নারকেলের সাথে মিশে যাবে এবং পুর ঘন হয়ে আসবে, তখন এলাচ গুঁড়ো দিয়ে নামিয়ে নিন।
- ঠাণ্ডা হয়ে গেলে এই পুর পাটিসাপটার ভেতরে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।
ব্যাটার তৈরির নিয়ম
- একটি বড় পাত্রে ময়দা, চালের গুঁড়ো, সুজি, চিনি ও নুন মিশিয়ে নিন।
- ধীরে ধীরে দুধ মেশাতে থাকুন এবং ভালোভাবে ফেটিয়ে একটি মসৃণ ব্যাটার তৈরি করুন। খেয়াল রাখবেন, ব্যাটারে যেন কোনো দলা না থাকে।
- প্রয়োজনে অল্প জল মিশিয়ে ব্যাটারের ঘনত্ব ঠিক করে নিন। ব্যাটারটি খুব বেশি পাতলা বা ঘন হবে না।
পাটিসাপটা ভাজার নিয়ম
- প্রথমে একটি ননস্টিক তাওয়া বা ফ্রাইং প্যান মাঝারি আঁচে গরম করুন।
- তাওয়া গরম হয়ে গেলে সামান্য তেল ব্রাশ করে নিন।
- এবার এক হাতা ব্যাটার তাওয়ায় ঢেলে দিন এবং হাতার পেছনের দিক দিয়ে ঘুরিয়ে একটি পাতলা রুটির আকার দিন।
- যখন রুটির ওপরের দিকটা সামান্য শুকিয়ে আসবে, তখন এর মধ্যে নারকেলের পুর লম্বা করে দিন।
- এবার রুটির এক পাশ থেকে মুড়ে অন্য পাশে নিয়ে আসুন, যেন পুরটি ভেতরে থাকে।
- হালকা সোনালী হওয়া পর্যন্ত ভাজুন।
- তৈরি হয়ে গেলে প্লেটে তুলে নিন।
এইভাবে এক এক করে সবগুলো পাটিসাপটা বানিয়ে নিন। গরম গরম পরিবেশন করুন সুস্বাদু পাটিসাপটা পিঠা!
পারফেক্ট পাটিসাপটা তৈরির কিছু টিপস
- ব্যাটার তৈরির সময় খেয়াল রাখবেন যেন কোনো grume না থাকে। মসৃণ ব্যাটার তৈরি করার জন্য ব্লেন্ডার ব্যবহার করতে পারেন।
- পুর নিজের স্বাদমতো তৈরি করুন। খেজুরের গুড়ের বদলে চিনি ব্যবহার করতে পারেন, তবে খেজুরের গুড়ে স্বাদটা বেশি ভালো হয়।
- পাটিসাপটা ভাজার সময় তাওয়ার তাপমাত্রা মাঝারি রাখতে হবে। বেশি আঁচে ভাজলে পিঠা পুড়ে যেতে পারে।
- পরিবেশনের আগে সামান্য ঘি ব্রাশ করলে পাটিসাপটার স্বাদ আরও বেড়ে যায়।
পাটিসাপটা পিঠা নিয়ে কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)
পাটিসাপটা পিঠা তৈরি করার সময় অনেকের মনে কিছু প্রশ্ন জাগে। আমি চেষ্টা করব সেগুলোর উত্তর দিতে:
পাটিসাপটা পিঠার ব্যাটার কতক্ষণ রাখতে হয়?
ব্যাটার তৈরি করার পর অন্তত ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা রেখে দিলে ভালো হয়। এতে সুজি ভালোভাবে ফুলে যায় এবং পিঠা নরম হয়।
পাটিসাপটা পিঠার পুর কি আগে থেকে তৈরি করে রাখা যায়?
অবশ্যই! পুর আগে থেকে তৈরি করে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। এতে আপনার সময় বাঁচবে।
চালের গুঁড়ো কি পাটিসাপটা পিঠার জন্য জরুরি?
চালের গুঁড়ো ব্যবহার করলে পাটিসাপটা পিঠা একটু মুচমুচে হয়। তবে যদি চালের গুঁড়ো না থাকে, তাহলে শুধু ময়দা দিয়েও তৈরি করতে পারেন।
পাটিসাপটা পিঠা নরম করার উপায় কি?
পাটিসাপটা পিঠা নরম করার জন্য ব্যাটারে দুধের পরিমাণ একটু বাড়িয়ে দিন। এছাড়াও, পিঠা ভাজার পর একটি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখলে নরম থাকবে।
পাটিসাপটা পিঠা কত দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়?
সাধারণত, পাটিসাপটা পিঠা ২-৩ দিন পর্যন্ত ভালো থাকে। ফ্রিজে রাখলে একটু বেশি দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
পাটিসাপটা পিঠার রেসিপিতে কি ডিম ব্যবহার করা যায়?
হ্যাঁ, ডিম ব্যবহার করা যায়। ডিম দিলে পিঠা আরও নরম এবং ফুলকো হয়। তবে ডিম ছাড়াও পাটিসাপটা পিঠা খুব সুস্বাদু হয়।
সুজি ছাড়া পাটিসাপটা পিঠা তৈরি করা যায়?
সুজি ছাড়াও পাটিসাপটা পিঠা তৈরি করা যায়। সেক্ষেত্রে, ময়দা ও চালের গুঁড়োর পরিমাণ একটু বাড়িয়ে দিতে হবে।
পাটিসাপটা পিঠা কি শুধু মিষ্টি হয়?
সাধারণত পাটিসাপটা পিঠা মিষ্টি হয়। তবে আপনি চাইলে নোনতা পুর দিয়ে নোনতা পাটিসাপটাও তৈরি করতে পারেন।
পাটিসাপটা পিঠা বানানোর জন্য কোন ধরনের তাওয়া ব্যবহার করা ভালো?
পাটিসাপটা পিঠা বানানোর জন্য ননস্টিক তাওয়া সবচেয়ে ভালো। এতে পিঠা লেগে যায় না এবং সহজেই উল্টানো যায়।
পাটিসাপটা পিঠার পুর তৈরি করার সময় গুড় এর বদলে চিনি ব্যবহার করা যাবে?
যাবে, তবে গুড় দিলে স্বাদ বেশি ভালো হয়।
পাটিসাপটা পিঠার আধুনিক সংস্করণ
পাটিসাপটা পিঠা একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার হলেও, এর আধুনিক সংস্করণগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
চকলেট পাটিসাপটা
বাচ্চাদের জন্য এটি একটি দারুণ পছন্দ। ব্যাটারে সামান্য কোকো পাউডার মিশিয়ে এবং পুরে চকলেট চিপস ব্যবহার করে এই পাটিসাপটা তৈরি করা হয়।
পনির পাটিসাপটা
যারা নোনতা খাবার পছন্দ করেন, তাদের জন্য পনির পাটিসাপটা একটি চমৎকার বিকল্প। পুরে পনির, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ এবং ধনে পাতা মিশিয়ে এটি তৈরি করা হয়।
ফ্রুট পাটিসাপটা
বিভিন্ন ধরনের ফল যেমন কলা, আপেল, আঙুর ইত্যাদি ছোট করে কেটে পুরে ব্যবহার করে এই পাটিসাপটা তৈরি করা হয়। এটি স্বাস্থ্যকর এবং মুখরোচক।
শেষ কথা
তাহলে, এই শীতে আর দেরি কেন? আজই তৈরি করে ফেলুন মজাদার পাটিসাপটা পিঠা। আর আমাকে জানাতে ভুলবেন না আপনার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল! শীতের সন্ধ্যায় পরিবারের সাথে গরম গরম পাটিসাপটা উপভোগ করার মজাই আলাদা। হ্যাপি কুকিং!