আসুন, শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ধরে রাখার কিছু কার্যকরী কৌশল জেনে নেই!
বর্তমান যুগে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ধরে রাখা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। ক্লাসে বা বাসায়, পড়ার টেবিলে বসলেই মন যেন উড়ে যায় অন্য কোথাও। ফেসবুক, ভিডিও গেমস, বন্ধুদের আড্ডা – চারিদিকে কত আকর্ষণ! কিন্তু ভালো ফল করতে হলে পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়া তো জরুরি। তাই, শিক্ষার্থীদের মনোযোগ (Students concentration) বৃদ্ধির কৌশল (Tricks) জানা আমাদের সবার জন্য খুব দরকার।
শিক্ষার্থীদের মনোযোগ কেন কমে যায়?
মনোযোগ কমে যাওয়ার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। নিচে কয়েকটি প্রধান কারণ আলোচনা করা হলো:
- শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি: পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া, অতিরিক্ত পরিশ্রম, এবং মানসিক চাপের কারণে মনোযোগ কমে যেতে পারে।
- খাদ্যাভ্যাস: অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, যেমন ফাস্ট ফুড বা চিনিযুক্ত খাবার, মনোযোগের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে।
- ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার: অতিরিক্ত মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ব্যবহারের কারণে চোখের সমস্যা এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, যা মনোযোগ কমাতে সহায়ক। আজকাল তো সবকিছুতেই অনলাইন এর ছোঁয়া, তাই দরকার পরে ল্যাপটপ। আপনি চাইলে কম্পিউটার বিজ্ঞান (Computer Science) বিষয় নিয়ে বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন।
- একঘেয়েমি: একই ধরনের কাজ বা পড়ার পদ্ধতি অনুসরণ করলে একঘেয়েমি লাগতে পারে, যা মনোযোগ কমিয়ে দেয়।
- পরিবেশ: পড়ার পরিবেশ শান্ত ও অনুকূল না হলে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন।
মনোযোগ বাড়ানোর কার্যকরী কৌশল
শিক্ষার্থীদের মনোযোগ (Students concentration) বাড়ানোর জন্য কিছু প্রমাণিত কৌশল নিচে দেওয়া হলো:
পড়ার পরিবেশ তৈরি
মনোযোগ ধরে রাখার জন্য সঠিক পরিবেশ (Environment) খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- নির্দিষ্ট স্থান: পড়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থান নির্বাচন করুন, যেখানে অন্য কোনো কাজ করা হয় না।
- পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন: পড়ার টেবিল ও চারপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
- আলো ও বাতাস: পর্যাপ্ত আলো এবং বাতাস চলাচল করে এমন স্থানে বসুন।
- শব্দমুক্ত: পড়ার সময় শব্দ দূষণ (sound pollution) এড়িয়ে চলুন।
সময় ব্যবস্থাপনা
সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার (Time management) করতে পারলে মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হয়।
- সময়সূচি তৈরি: একটি বাস্তবসম্মত সময়সূচি তৈরি করুন এবং সেটি অনুসরণ করার চেষ্টা করুন।
- ছোট বিরতি: একটানা বেশিক্ষণ না পড়ে প্রতি 45 মিনিট পর 10-15 মিনিটের বিরতি নিন।
- অগ্রাধিকার: কঠিন বিষয়গুলো প্রথমে পড়ুন, যখন মন সবচেয়ে সতেজ থাকে।
- সময় ভাগ করুন: দিনের কাজ গুলোকে সময় অনুযায়ী ভাগ করে নিন।
শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা
শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য (Mental health) ভালো থাকলে মনোযোগ ধরে রাখা যায়।
- পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন।
- নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিটের জন্য ব্যায়াম করুন।
- স্বাস্থ্যকর খাবার: ফল, সবজি ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন। ফাস্ট ফুড ও চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
- মানসিক চাপ কমানো: যোগা, মেডিটেশন বা শখের কাজ করার মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানো যায়।
পড়ার পদ্ধতি পরিবর্তন
পড়ার পদ্ধতিতে পরিবর্তন (Reading method) আনলে একঘেয়েমি দূর হয় এবং মনোযোগ বাড়ে।
- বিভিন্ন পদ্ধতি: উচ্চস্বরে পড়া, লিখে পড়া, আলোচনা করে পড়া – ইত্যাদি পদ্ধতি ব্যবহার করুন।
- কৌতূহল তৈরি: পড়ার বিষয়বস্তুকে বাস্তব জীবনের সাথে মিলিয়ে কৌতূহল তৈরি করুন।
- প্রশ্ন করা: পড়ার সময় নিজের মনে প্রশ্ন তৈরি করুন এবং সেগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করুন।
- নিজের মতো করে নোট: জটিল বিষয়গুলোকে সহজভাবে নিজের ভাষায় নোট করে পড়ুন।
লক্ষ্য নির্ধারণ
লক্ষ্য নির্ধারণ (Target Fix) করলে মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হয়।
- ছোট লক্ষ্য: বড় লক্ষ্যকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে নিন।
- পুরস্কার: প্রতিটি ছোট লক্ষ্য অর্জনের পর নিজেকে পুরস্কৃত করুন।
- ইতিবাচক চিন্তা: সবসময় ইতিবাচক চিন্তা করুন এবং নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন।
- নিজের অগ্রগতি দেখুন: নিজের কাজের দিকে লক্ষ্য রাখুন।
মাল্টিটাস্কিং পরিহার
মাল্টিটাস্কিং (Multitasking) করলে মনোযোগ কমে যায়।
- একটি কাজ: একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি কাজের উপর মনোযোগ দিন।
- ** distractions দূর করা:** পড়ার সময় মোবাইল ফোন, টিভি বা অন্য কোনো distractions থেকে দূরে থাকুন।
- মনোযোগ ধরে রাখার অ্যাপস: মনোযোগ ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করতে পারেন।
শিক্ষকের সহযোগিতা
শিক্ষকের সহযোগিতা (Teachers help) মনোযোগ বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।
- প্রশ্ন করা: ক্লাসে শিক্ষকের কাছে বিষয়বস্তু সম্পর্কে প্রশ্ন করুন।
- আলোচনা: বন্ধুদের সাথে পড়ালেখার বিষয় নিয়ে আলোচনা করুন।
- পরামর্শ: শিক্ষকের কাছ থেকে মনোযোগ বাড়ানোর জন্য পরামর্শ নিন।
কিছু অতিরিক্ত টিপস
- পড়ার সময় একটি পেন্সিল ব্যবহার করুন এবং গুরুত্বপূর্ণ লাইনগুলো দাগিয়ে রাখুন।
- পড়ার মাঝে মাঝে ছোট বিরতি নিন এবং হালকা ব্যায়াম করুন।
- সবুজ প্রকৃতির মাঝে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করুন, এটি মনকে সতেজ রাখে।
- নিজের পছন্দের গান শুনুন, তবে গানের তালে যেন মন হারিয়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখুন।
শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বৃদ্ধির কৌশল: কিছু জরুরি প্রশ্ন ও উত্তর
শিক্ষার্থীদের মনোযোগ (Students concentration) নিয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্ন থাকে। এখানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো:
১. মনোযোগ বাড়াতে কোন খাবারগুলো সাহায্য করে?
কিছু খাবার আছে যা মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। যেমন:
- মাছ: ওমেগা-3 ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ মাছ, যেমন স্যামন ও টুনা, মস্তিষ্কের জন্য খুব উপকারী।
- ডিম: ডিমের মধ্যে কোলিন নামক একটি উপাদান থাকে, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- বাদাম ও বীজ: এগুলো ভিটামিন ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
- ফল ও সবজি: রঙিন ফল ও সবজি, যেমন ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি, পালং শাক, এবং ব্রকলি মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারী। আপনি চাইলে আপনার বাড়ির ছাদেও একটি সুন্দর বাগান তৈরী করতে পারেন।
২. মোবাইল ফোন কিভাবে মনোযোগ কমায়?
মোবাইল ফোন (Mobile phone) আমাদের মনোযোগ কমানোর অন্যতম প্রধান কারণ। এর কয়েকটি দিক নিচে উল্লেখ করা হলো:
- নোটিফিকেশন: लगातार नोटिफिकेशन আসতে থাকলে মনোযোগ বিক্ষিপ্ত হয়।
- সোশ্যাল মিডিয়া: অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ফলে সময় নষ্ট হয় এবং মানসিক চাপ বাড়ে।
- নীল আলো: মোবাইল ফোনের স্ক্রিন থেকে নির্গত নীল আলো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়, যা মনোযোগ কমিয়ে দেয়। এই জন্য রাতে বেশিক্ষণ মোবাইল ব্যবহার করা উচিত না।
৩. পড়ার সময় ঘুম পেলে কি করা উচিত?
পড়ার সময় ঘুম পেলে কিছু কৌশল অবলম্বন (Follow) করতে পারেন:
- বিরতি নিন: কিছুক্ষণ হেঁটে আসুন বা হালকা ব্যায়াম করুন।
- ঠাণ্ডা পানি: চোখে-মুখে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা দিন।
- চা বা কফি: অল্প পরিমাণে চা বা কফি পান করতে পারেন, তবে অতিরিক্ত ক্যাফিন গ্রহণ করা উচিত নয়।
- আলো বাড়ান: পর্যাপ্ত আলোতে পড়ার চেষ্টা করুন, কারণ কম আলোতে ঘুম আসতে পারে।
৪. মনোযোগ ধরে রাখার জন্য কোন ব্যায়ামগুলো উপকারী?
মনোযোগ ধরে রাখার জন্য কিছু ব্যায়াম (Exercise) খুবই উপকারী:
- মেডিটেশন: প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিটের জন্য মেডিটেশন করুন। এটি মনকে শান্ত করে এবং মনোযোগ বাড়ায়।
- যোগা: যোগা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং মানসিক চাপ কমায়।
- শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম: গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম মনকে শান্ত করে এবং মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে।
৫. মনোযোগের অভাবে পরীক্ষায় খারাপ করলে কি করা উচিত?
পরীক্ষায় খারাপ করলে হতাশ না হয়ে কিছু পদক্ষেপ (Steps) নেওয়া উচিত:
- কারণ বিশ্লেষণ: কেন খারাপ ফল হলো, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন।
- নতুন পরিকল্পনা: নতুন করে পড়ার পরিকল্পনা তৈরি করুন এবং সেটি অনুসরণ করুন।
- শিক্ষকের পরামর্শ: শিক্ষকের কাছ থেকে সাহায্য ও পরামর্শ নিন।
- আত্মবিশ্বাস: নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন এবং কঠোর পরিশ্রম করুন।
৬. কিভাবে পড়াশোনাকে আকর্ষণীয় করা যায়?
পড়াশোনাকে আকর্ষণীয় (Attractive) করার কিছু উপায়:
- বিষয়বস্তুকে বাস্তব জীবনের সাথে সংযোগ করুন।
- বন্ধুদের সাথে গ্রুপ স্টাডি করুন।
- পড়ার বিষয়গুলোকে গল্পের আকারে উপস্থাপন করুন।
- বিভিন্ন শিক্ষামূলক গেমস ও কুইজে অংশ নিন।
৭. মনোযোগ বাড়াতে গান শোনা কি ভালো?
পড়াশোনার সময় গান (Music) শোনা কারো জন্য উপকারী হতে পারে, আবার কারো জন্য ক্ষতিকর। যদি গান শুনলে মনোযোগ বাড়ে, তবে হালকা ইন্সট্রুমেন্টাল (Instrumental) সঙ্গীত শোনা যেতে পারে। তবে, গানের কথা মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটালে গান এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
৮. মনোযোগ ধরে রাখার জন্য ঘুমের গুরুত্ব কতটুকু?
মনোযোগ ধরে রাখার জন্য পর্যাপ্ত ঘুমের (Sleep) গুরুত্ব অনেক। ঘুম আমাদের মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দেয় এবং নতুন করে কাজ করার জন্য প্রস্তুত করে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমে যায়, যার ফলে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
৯. পরীক্ষার আগে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়?
পরীক্ষার আগে মনোযোগ ধরে রাখার জন্য কিছু টিপস:
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন এবং সময় মতো ঘুমান।
- স্বাস্থ্যকর খাবার খান এবং প্রচুর পানি পান করুন।
- পড়ার সময় মোবাইল ফোন ও অন্যান্য distractions থেকে দূরে থাকুন।
- নিয়মিত বিরতি নিন এবং হালকা ব্যায়াম করুন।
- ইতিবাচক চিন্তা করুন এবং আত্মবিশ্বাসী থাকুন।
মনে রাখবেন, মনোযোগ একটি দক্ষতা (Skills), যা অনুশীলনের মাধ্যমে বাড়ানো যায়। তাই, চেষ্টা করতে থাকুন আর নিজের জন্য সঠিক কৌশল খুঁজে বের করুন।
সারণী: মনোযোগ বৃদ্ধির কৌশল এবং সুবিধা
কৌশল | সুবিধা | ব্যবহারের নিয়ম |
---|---|---|
সঠিক পরিবেশ তৈরি | মনোযোগ বৃদ্ধি, পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি | পড়ার জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্বাচন, পরিচ্ছন্ন ও শব্দমুক্ত পরিবেশ |
সময় ব্যবস্থাপনা | কাজের চাপ কমানো, সঠিক সময়ে কাজ শেষ করা | সময়সূচি তৈরি, বিরতি নেওয়া, অগ্রাধিকার দেওয়া |
শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা | সুস্থ মন ও শরীর, যা মনোযোগের জন্য জরুরি | পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ |
পড়ার পদ্ধতি পরিবর্তন | একঘেয়েমি দূর, পড়ার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি | বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার, কৌতূহল তৈরি, প্রশ্ন করা |
লক্ষ্য নির্ধারণ | কাজের প্রতি আগ্রহ, সহজে লক্ষ্য অর্জন | ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ, পুরস্কার, ইতিবাচক চিন্তা |
মাল্টিটাস্কিং পরিহার | একটি কাজে সম্পূর্ণ মনোযোগ, ভালো ফল পাওয়া | একটি কাজ এক সময়ে, distractions থেকে দূরে থাকা |
শিক্ষকের সহযোগিতা | সঠিক দিকনির্দেশনা, সমস্যা সমাধান | প্রশ্ন করা, আলোচনা, পরামর্শ নেওয়া |
এই কৌশলগুলো অনুসরণ করে শিক্ষার্থীরা তাদের মনোযোগ বৃদ্ধি করতে পারে এবং ভালো ফল করতে সক্ষম হতে পারে। এছাড়াও, আপনি এইচএসসি (HSC) পরীক্ষার বাংলা প্রথম পত্র গাইড দেখতে পারেন।
মনোযোগ ধরে রাখার কিছু বিজ্ঞানসম্মত উপায়
মনোযোগ (Attention) একটি মূল্যবান সম্পদ, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য। আধুনিক মনোবিজ্ঞান (psychology) এবং নিউরোসায়েন্স (neuroscience) মনোযোগ ধরে রাখার কিছু কার্যকরী উপায় বের করেছে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই উপযোগী হতে পারে:
১. মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন (Mindfulness Meditation)
মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন হলো বর্তমান মুহূর্তে মনোযোগ ধরে রাখার একটি প্রক্রিয়া। এটি শিক্ষার্থীদের মনকে শান্ত (keep calm) করে এবং বিক্ষিপ্ততা কমাতে সাহায্য করে।
- নিয়ম: একটি শান্ত জায়গায় বসুন, চোখ বন্ধ করুন এবং আপনার শ্বাসের দিকে মনোযোগ দিন। যখন মন অন্য দিকে চলে যায়, তখন আলতো করে আবার শ্বাসের দিকে ফিরিয়ে আনুন। প্রতিদিন ৫-১০ মিনিট এই অনুশীলন করুন।
২. ব্রেইন ট্রেনিং গেমস (Brain Training Games)
কিছু বিশেষ ধরণের গেমস রয়েছে যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা উন্নত করে।
- উদাহরণ: সুডোকু, ক্রসওয়ার্ড, ব্রেইন টিজার ইত্যাদি। এ ধরনের গেমস মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশকে সক্রিয় রাখে এবং মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে।
৩. নিউরোফিডব্যাক (Neurofeedback)
এটি একটি আধুনিক প্রযুক্তি, যেখানে মস্তিষ্কের তরঙ্গ (brain wave) পরিমাপ করে মনোযোগের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
- কার্যকারিতা: নিউরোফিডব্যাক থেরাপি মনোযোগ ঘাটতিজনিত সমস্যা (ADHD) কমাতে এবং মনোযোগের উন্নতি ঘটাতে খুবই কার্যকর।
৪. বায়োফিডব্যাক (Biofeedback)
বায়োফিডব্যাক হলো শরীরের বিভিন্ন শারীরিক প্রক্রিয়া, যেমন হৃদস্পন্দন, শ্বাস-প্রশ্বাস এবং মাংসপেশীর টান পরিমাপ করে সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনার প্রশিক্ষণ।
- উপকারিতা: এটি মানসিক চাপ কমায় এবং মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে।
৫. কালার থেরাপি (Color Therapy)
বিভিন্ন রঙের ব্যবহার আমাদের মনোযোগ ও মানসিক অবস্থার উপর প্রভাব ফেলে। কিছু রং মনোযোগ বাড়াতে সহায়ক।
- ব্যবহার: পড়ার ঘরে সবুজ বা নীল রং ব্যবহার করুন, যা মনকে শান্ত রাখে এবং মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে।
৬. অ্যারোমাথেরাপি (Aromatherapy)
কিছু বিশেষ গন্ধ আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- উদাহরণ: ল্যাভেন্ডার, রোজমেরি, এবং পেপারমিন্ট তেল মনোযোগ বাড়াতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক। এসেনশিয়াল অয়েল ডিফিউজারের মাধ্যমে ব্যবহার করতে পারেন।
৭. পমোডোরো টেকনিক (Pomodoro Technique)
পমোডোরো টেকনিক একটি সময় ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি, যা মনোযোগ ধরে রাখার জন্য খুবই কার্যকর।
- নিয়ম: ২৫ মিনিট একটানা কাজ করুন, তারপর ৫ মিনিটের বিরতি নিন। এভাবে ৪টি পমোডোরো সেশন শেষ করার পর ২০-৩০ মিনিটের একটি বড় বিরতি নিন।
৮. ভিজ্যুয়াল সাপোর্ট (Visual Support)
দৃষ্টিভিত্তিক উপকরণ ব্যবহার করে মনোযোগ ধরে রাখা যায়।
- ব্যবহার: পড়ার সময় চার্ট, ডায়াগ্রাম, এবং ছবি ব্যবহার করুন, যা বিষয়বস্তু সহজে বুঝতে এবং মনে রাখতে সাহায্য করে।
৯. অ্যাক্টিভ লার্নিং (Active Learning)
নিষ্ক্রিয়ভাবে পড়ার পরিবর্তে সক্রিয়ভাবে শিখলে মনোযোগ বাড়ে।
- পদ্ধতি: পড়ার সময় প্রশ্ন করুন, নোট নিন, আলোচনা করুন এবং নিজের ভাষায় বিষয়বস্তু বুঝিয়ে লেখার চেষ্টা করুন।
১০. পর্যাপ্ত আলো (Enough Light)
পড়ার স্থানে পর্যাপ্ত আলো থাকা জরুরি। কম আলোতে ঘুম আসতে পারে এবং মনোযোগ কমে যেতে পারে।
- করণীয়: টেবিল ল্যাম্প ব্যবহার করুন এবং প্রাকৃতিক আলো আসার সুযোগ রাখুন।
এই বিজ্ঞানসম্মত উপায়গুলো শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বাড়াতে এবং পড়াশোনায় ভালো ফল করতে সাহায্য করতে পারে।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায়, শিক্ষার্থীদের মনোযোগ (Students concentration) একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা তাদের শিক্ষাজীবনে সফলতা আনতে সহায়ক। সঠিক কৌশল অবলম্বন করে এবং নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে মনোযোগ বৃদ্ধি করা সম্ভব। এই ব্লগ পোস্টে উল্লেখিত কৌশলগুলো অনুসরণ করে শিক্ষার্থীরা তাদের মনোযোগ বাড়াতে পারবে এবং পড়াশোনায় আরও বেশি মনোযোগী হতে পারবে।
যদি আপনার আরও কিছু জানার থাকে, তাহলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আর এই পোস্টটি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আপনার একটি শেয়ার হয়তো অনেকের উপকারে আসতে পারে। পড়াশোনার পাশাপাশি ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা সম্পর্কে জ্ঞান রাখাটাও জরুরি।