মাটন বিরিয়ানি: স্বাদে অতুলনীয়, রান্নায় সহজ!
বিরিয়ানি! এই একটি শব্দই যথেষ্ট জিভে জল আনার জন্য। আর সেটা যদি হয় মাটন বিরিয়ানি, তাহলে তো আর কথাই নেই। বিশেষ কোনো উপলক্ষ হোক বা সাধারণ একটি দিন, মাটন বিরিয়ানির কদর সবসময়ই থাকে। কিন্তু সবসময় কি আর রেস্টুরেন্টে যাওয়া সম্ভব? তাই আজ আমি আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি ঘরেই রেস্টুরেন্টের স্বাদে মাটন বিরিয়ানি তৈরির সহজ রেসিপি।
মাটন বিরিয়ানির প্রস্তুতি: উপকরণ থেকে শুরু
মাটন বিরিয়ানি রাঁধতে কি কি লাগে, সেটা জানার আগে চলুন, জেনে নেয়া যাক, কেন এই খাবারটি এত জনপ্রিয়। এর প্রধান কারণ হলো মাংসের স্বাদ এবং মশলার সুগন্ধের এক অপূর্ব মিশ্রণ।
উপকরণ তালিকা
- মাটন: ১ কেজি (ছোট টুকরা করে কাটা)
- বাসমতী চাল: ৫০০ গ্রাম
- পেঁয়াজ কুচি: ২ কাপ
- আদা বাটা: ২ টেবিল চামচ
- রসুন বাটা: ২ টেবিল চামচ
- পেঁয়াজ বেরেস্তা: ১ কাপ
- টক দই: ১ কাপ
- বিরিয়ানি মশলা: ৩ টেবিল চামচ
- হলুদ গুঁড়ো: ১ চা চামচ
- লাল লঙ্কার গুঁড়ো: ১ চা চামচ (স্বাদমতো)
- ধনে গুঁড়ো: ১ চা চামচ
- জিরা গুঁড়ো: ১ চা চামচ
- গরম মশলা গুঁড়ো: ১ চা চামচ
- কেওড়া জল: ১ টেবিল চামচ
- গোলাপ জল: ১ টেবিল চামচ
- জাফরান: ১ চিমটি (সামান্য দুধে ভেজানো)
- কাঁচা লঙ্কা: ৪-৫টি (ফালি করে কাটা)
- ধনে পাতা কুচি: ২ টেবিল চামচ
- পুদিনা পাতা কুচি: ২ টেবিল চামচ
- সর্ষের তেল/ঘি: পরিমাণ মতো
- নুন: স্বাদমতো
- আলু: ২টি (বড় টুকরা করে কাটা, ঐচ্ছিক)
মাটন ম্যারিনেট করার পদ্ধতি
মাংস ম্যারিনেট করাটা খুব জরুরি। এতে মাংস নরম হয় এবং মশলার স্বাদ ভালোভাবে ঢোকে।
- প্রথমে মাটনের টুকরাগুলো ভালো করে ধুয়ে নিন।
- একটি পাত্রে মাংস, আদা বাটা, রসুন বাটা, টক দই, বিরিয়ানি মশলা, হলুদ গুঁড়ো, লাল লঙ্কার গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, জিরা গুঁড়ো এবং নুন দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
- কমপক্ষে ২-৩ ঘণ্টা বা সারারাত ম্যারিনেট করে ফ্রিজে রেখে দিন।
চাল প্রস্তুতি
- বাসমতী চাল ভালো করে ধুয়ে ৩০ মিনিটের জন্য ভিজিয়ে রাখুন।
- একটি পাত্রে জল গরম করে তাতে সামান্য নুন এবং ১ টেবিল চামচ তেল দিন।
- জল ফুটে উঠলে চাল দিয়ে দিন এবং ৭০% সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন।
- চাল সেদ্ধ হয়ে গেলে জল ঝরিয়ে নিন এবং ঠান্ডা হতে দিন।
মাটন বিরিয়ানি রান্নার পদ্ধতি
এবার আসি আসল রান্নার পর্বে। ধৈর্য ধরে প্রতিটি ধাপ অনুসরণ করলে আপনিও পারবেন পারফেক্ট মাটন বিরিয়ানি বানাতে।
ধাপে ধাপে রান্না
- একটি বড় হাঁড়িতে তেল বা ঘি গরম করুন।
- পেঁয়াজ কুচি দিয়ে সোনালী হওয়া পর্যন্ত ভাজুন।
- ম্যারিনেট করা মাংস যোগ করুন এবং মাঝারি আঁচে ভালোভাবে কষিয়ে নিন। খেয়াল রাখবেন, মাংস যেন হাঁড়ির তলায় লেগে না যায়।
- আলু যোগ করুন এবং কিছুক্ষণ ভাজুন।
- প্রয়োজন মতো জল দিয়ে মাংস সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন। মাংস সেদ্ধ হয়ে গেলে আঁচ কমিয়ে দিন এবং ৫-১০ মিনিটের জন্য রান্না করুন, যাতে মশলা ভালোভাবে মিশে যায়।
- এবার সেদ্ধ করা চালের অর্ধেকটা মাংসের উপর ছড়িয়ে দিন।
- কাঁচালঙ্কা, ধনে পাতা, পুদিনা পাতা, পেঁয়াজ বেরেস্তা এবং সামান্য বিরিয়ানি মশলা দিয়ে দিন।
- বাকি চালটুকুও একই ভাবে মাংসের উপরে ছড়িয়ে দিন।
- দুধে ভেজানো জাফরান, কেওড়া জল এবং গোলাপ জল উপরে ছড়িয়ে দিন।
- হাঁড়ির মুখ ভালোভাবে ঢেকে দিন এবং অল্প আঁচে ২০-২৫ মিনিটের জন্য দমে বসিয়ে দিন।
দম দেওয়ার নিয়ম
দম দেওয়াটা বিরিয়ানির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি বিরিয়ানির স্বাদ এবং গন্ধ আরও বাড়িয়ে তোলে।
- হাঁড়ির মুখ ভালোভাবে সিল করে দিন, যাতে ভেতরের গরম হাওয়া বাইরে না বের হয়।
- আপনি চাইলে আটা দিয়ে হাঁড়ির মুখ সিল করতে পারেন।
- অল্প আঁচে ২০-২৫ মিনিটের জন্য দমে রাখুন।
পরিবেশন
দম দেওয়া হয়ে গেলে ঢাকনা খুলে সাবধানে বিরিয়ানি পরিবেশন করুন। রায়তা, বোরহানি অথবা আপনার পছন্দের যেকোনো সাইড ডিশের সাথে পরিবেশন করুন গরম গরম সুস্বাদু মাটন বিরিয়ানি।
কিছু দরকারি টিপস
- সবসময় ভালো মানের বাসমতী চাল ব্যবহার করুন।
- মাংস ম্যারিনেট করার সময় অবশ্যই টক দই ব্যবহার করুন, এতে মাংস নরম হবে।
- বিরিয়ানির মশলার মান ভালো হওয়াটা খুব জরুরি।
- দমে দেওয়ার সময় আঁচ একদম কম রাখুন, নাহলে বিরিয়ানি পুড়ে যেতে পারে।
মাটন বিরিয়ানি রেসিপি নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ)
মাটন বিরিয়ানি নিয়ে আপনাদের মনে কিছু প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক। তাই কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর নিচে দেওয়া হলো:
মাটন বিরিয়ানিতে কি কি মশলা ব্যবহার করা হয়?
মাটন বিরিয়ানিতে সাধারণত বিরিয়ানি মশলা, আদা বাটা, রসুন বাটা, হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, জিরা গুঁড়ো এবং গরম মশলা ব্যবহার করা হয়। এছাড়া, কিছু বিশেষ মশলা যেমন শাহী জিরা বা জয়ফল-এর গুঁড়ো ব্যবহার করলে স্বাদ আরও বাড়বে।
বিরিয়ানির জন্য কোন চাল ভালো?
বিরিয়ানির জন্য বাসমতী চাল সবচেয়ে ভালো। এই চাল লম্বা এবং এতে সুন্দর একটা সুবাস আছে, যা বিরিয়ানির স্বাদ অনেক বাড়িয়ে দেয়।
বিরিয়ানি তে জাফরান কেন ব্যবহার করা হয়?
জাফরান বিরিয়ানিতে শুধু সুন্দর একটা রং দেয় না, এটি বিরিয়ানির স্বাদ ও গন্ধকেও উন্নত করে। সামান্য জাফরান দুধে ভিজিয়ে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
বেরেস্তা কিভাবে তৈরি করতে হয়?
বেরেস্তা তৈরি করার জন্য পেঁয়াজ কুচি করে কেটে ডুবো তেলে সোনালী হওয়া পর্যন্ত ভাজতে হবে। ভাজার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন পেঁয়াজ পুড়ে না যায়।
বিরিয়ানি দমে দেওয়ার নিয়ম কি?
বিরিয়ানি দমে দেওয়ার সময় হাঁড়ির মুখ ভালোভাবে ঢেকে দিতে হয়, যাতে ভেতরের গরম হাওয়া বাইরে না বের হয়। প্রথমে ৫ মিনিট বেশি আঁচে এবং পরে ২০-২৫ মিনিট অল্প আঁচে দমে রাখতে হয়।
মাংস সেদ্ধ না হলে কি করব?
যদি দেখেন মাংস সেদ্ধ হচ্ছে না, তাহলে অল্প গরম জল দিয়ে আরও কিছুক্ষণ ঢেকে রান্না করুন। প্রয়োজনে প্রেসার কুকার ব্যবহার করতে পারেন, এতে মাংস তাড়াতাড়ি সেদ্ধ হবে।
বিরিয়ানিতে আলু ব্যবহার না করলে কি স্বাদ কম হবে?
আলু ব্যবহার করাটা সম্পূর্ণ ঐচ্ছিক। তবে, অনেকে বিরিয়ানিতে আলু পছন্দ করেন। আলু না দিলেও বিরিয়ানির স্বাদে তেমন কোনো পার্থক্য হবে না।
বিরিয়ানি মশলা তৈরি করার নিয়ম কি?
বিরিয়ানি মশলা তৈরি করার জন্য ধনে, জিরা, এলাচ, দারচিনি, লবঙ্গ, জয়ফল, জয়ত্রী এবং শাহী জিরা সামান্য ভেজে গুঁড়ো করে নিতে হয়।
মাটন বিরিয়ানি কতক্ষণ সংরক্ষণ করা যায়?
মাটন বিরিয়ানি সাধারণত ফ্রিজে ২-৩ দিন পর্যন্ত ভালো থাকে। তবে, টাটকা বিরিয়ানি খাওয়াই ভালো।
ডায়াবেটিস রোগীরা কি মাটন বিরিয়ানি খেতে পারবে?
ডায়াবেটিস রোগীরা মাটন বিরিয়ানি খেতে পারবে, তবে পরিমাণটা অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এছাড়া, তেল ও মশলার ব্যবহার কমিয়ে এবং সবজির পরিমাণ বাড়িয়ে বিরিয়ানি তৈরি করলে ভালো হয়।
উপসংহার
তাহলে আর দেরি কেন? আজই তৈরি করে ফেলুন সুস্বাদু মাটন বিরিয়ানি এবং পরিবার ও বন্ধুদের সাথে উপভোগ করুন। আর হ্যাঁ, আপনার রান্নার অভিজ্ঞতা কেমন হলো, তা জানাতে ভুলবেন না! যদি কোনো প্রশ্ন থাকে, তবে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। হ্যাপি কুকিং!