চিকেন বিরিয়ানি! নামটা শুনলেই জিভে জল চলে আসে, তাই না? আর যদি হয় সেটা নিজের হাতে বানানো, তাহলে তো কোনো কথাই নেই। আজকের ব্লগ পোস্টে আমরা আলোচনা করব কিভাবে খুব সহজে এবং পারফেক্ট স্বাদে চিকেন বিরিয়ানি তৈরি করা যায়, আর এর জন্য কি কি উপকরণ (উপকরণ) লাগবে। তাহলে চলুন, শুরু করা যাক!
চিকেন বিরিয়ানি: স্বাদে অতুলনীয়, রান্নায় সহজ!
বিরিয়ানি ভালোবাসে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। বিয়েবাড়ি থেকে শুরু করে যেকোনো অনুষ্ঠানে বিরিয়ানি একটি অপরিহার্য পদ। কিন্তু পারফেক্ট বিরিয়ানি বানানোর জন্য সঠিক উপকরণ এবং পদ্ধতি জানাটা খুব জরুরি। আমি আজ আপনাদের সাথে সেই সবকিছু শেয়ার করব, যাতে আপনি ঘরে বসেই রেস্টুরেন্টের মতো সুস্বাদু বিরিয়ানি তৈরি করতে পারেন।
কেন এই রেসিপিটি বিশেষ?
এই রেসিপিটির বিশেষত্ব হলো, এটি খুব সহজভাবে তৈরি করা যায় এবং উপকরণগুলোও হাতের কাছেই পাওয়া যায়। আমি নিজে অনেকবার এই রেসিপিটি ব্যবহার করে বিরিয়ানি বানিয়েছি এবং প্রতিবারই প্রশংসা পেয়েছি। তাই, আপনিও নিশ্চিন্তে এই রেসিপিটি অনুসরণ করতে পারেন।
চিকেন বিরিয়ানির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ
ভালো বিরিয়ানি বানানোর প্রথম শর্ত হলো সঠিক উপকরণ নির্বাচন করা। আসুন, আমরা দেখে নেই কি কি উপকরণ লাগবে:
চাল (Rice)
- বাসমতী চাল – ৫০০ গ্রাম (ভালো মানের বাসমতী চাল বিরিয়ানির স্বাদ অনেক বাড়িয়ে দেয়)
চিকেন (Chicken)
- চিকেন – ১ কেজি (ছোট টুকরা করে কাটা)
পেঁয়াজ (Onion)
- পেঁয়াজ কুচি – ২ কাপ (বেরেস্তার জন্য ১ কাপ + রান্নার জন্য ১ কাপ)
আদা ও রসুন (Ginger and Garlic)
- আদা বাটা – ২ টেবিল চামচ
- রসুন বাটা – ২ টেবিল চামচ
টক দই (Yogurt)
- টক দই – ১ কাপ
বিরিয়ানি মশলা (Biryani Masala)
- বিরিয়ানি মশলা – ৩ টেবিল চামচ (বাজারে কিনতে পাওয়া যায়, অথবা নিজে বানিয়ে নিতে পারেন)
গরম মশলা (Garam Masala)
- গরম মশলা গুঁড়ো – ১ চা চামচ
হলুদ গুঁড়ো (Turmeric Powder)
- হলুদ গুঁড়ো – ১ চা চামচ
মরিচ গুঁড়ো (Chili Powder)
- মরিচ গুঁড়ো – ১ চা চামচ (স্বাদমতো)
ধনে গুঁড়ো (Coriander Powder)
- ধনে গুঁড়ো – ১ চা চামচ
জিরা গুঁড়ো (Cumin Powder)
- জিরা গুঁড়ো – ১ চা চামচ
কাঁচা মরিচ (Green Chilies)
- কাঁচা মরিচ – ৪-৫টি (ফালি করে কাটা)
কেওড়া জল (Kewra Water)
- কেওড়া জল – ১ টেবিল চামচ
গোলাপ জল (Rose Water)
- গোলাপ জল – ১ টেবিল চামচ
জাফরান (Saffron)
- জাফরান – ১ চিমটি (সামান্য দুধ বা গরম জলে ভিজিয়ে রাখুন)
ঘি (Ghee)
- ঘি – ৩ টেবিল চামচ
তেল (Oil)
- সয়াবিন তেল – পরিমাণ মতো
লবণ (Salt)
- লবণ – স্বাদমতো
অন্যান্য (Others)
- আলু – ২টি (বড় টুকরা করে কাটা, ঐচ্ছিক)
- পুদিনা পাতা – ১/২ কাপ (কুচি করা)
- ধনে পাতা – ১/২ কাপ (কুচি করা)
- এলাচ – ৪টি
- দারুচিনি – ২ টুকরা
- তেজপাতা – ২টি
- লবঙ্গ – ৪টি
উপকরণ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
উপকরণগুলো সঠিক পরিমাণে ব্যবহার করলে বিরিয়ানির স্বাদ একদম পারফেক্ট হয়। যেমন, বাসমতী চাল ব্যবহার করলে বিরিয়ানি ঝরঝরে হয় এবং খেতে ভালো লাগে। আবার, ঘি ব্যবহার করলে একটা সুন্দর গন্ধ আসে, যা বিরিয়ানির স্বাদ বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
চিকেন বিরিয়ানি তৈরির পদ্ধতি
উপকরণ তো জানা হলো, এবার আসুন জেনে নেই কিভাবে এই উপকরণগুলো দিয়ে সুস্বাদু বিরিয়ানি তৈরি করা যায়:
প্রথম ধাপ: চাল প্রস্তুত করা
- প্রথমে বাসমতী চাল ভালোভাবে ধুয়ে ৩০ মিনিটের জন্য ভিজিয়ে রাখুন।
- একটি পাত্রে জল গরম করে তাতে এলাচ, দারুচিনি, তেজপাতা ও সামান্য লবণ দিন।
- জল ফুটে উঠলে চাল দিয়ে দিন এবং ৭০% সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন।
- চাল সেদ্ধ হয়ে গেলে জল ঝরিয়ে নিন এবং ঠান্ডা হতে দিন।
দ্বিতীয় ধাপ: চিকেন ম্যারিনেট করা
- একটি পাত্রে চিকেন নিয়ে তাতে আদা বাটা, রসুন বাটা, টক দই, বিরিয়ানি মশলা, হলুদ গুঁড়ো, মরিচ গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, জিরা গুঁড়ো এবং লবণ দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
- ম্যারিনেট করা চিকেন কমপক্ষে ১ ঘণ্টার জন্য ফ্রিজে রেখে দিন।
তৃতীয় ধাপ: বেরেস্তা তৈরি করা
- পেঁয়াজ কুচি করে কেটে ডুবো তেলে সোনালী হওয়া পর্যন্ত ভেজে তুলে নিন।
- ভাজা পেঁয়াজগুলো একটি কিচেন টিস্যুর উপর রাখুন, যাতে অতিরিক্ত তেল শুষে নেয়।
চতুর্থ ধাপ: চিকেন রান্না করা
- একটি পাত্রে তেল গরম করে তাতে তেজপাতা, এলাচ, দারুচিনি ও লবঙ্গ দিন।
- এবার ম্যারিনেট করা চিকেন দিয়ে ভালোভাবে কষিয়ে নিন।
- চিকেন সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত অল্প আঁচে রান্না করুন। মাঝে মাঝে নেড়ে দিন, যাতে নিচে লেগে না যায়।
- চিকেন সেদ্ধ হয়ে গেলে কাঁচা মরিচ ও সামান্য ধনে পাতা দিয়ে কিছুক্ষণ ভেজে নামিয়ে নিন।
পঞ্চম ধাপ: বিরিয়ানি স্তরে স্তরে সাজানো
- একটি বড় পাত্রে প্রথমে সামান্য ঘি দিন।
- এরপর অর্ধেক সেদ্ধ করা চালের একটি স্তর দিন।
- তারপর রান্না করা চিকেনের একটি স্তর দিন।
- এর উপর বেরেস্তা, পুদিনা পাতা, ধনে পাতা ও জাফরান মেশানো দুধ ছিটিয়ে দিন।
- আবার চালের একটি স্তর দিন এবং একই ভাবে চিকেন, বেরেস্তা ও অন্যান্য উপকরণ দিয়ে সাজান।
- সবশেষে বাকি ঘি ও কেওড়া জল ছিটিয়ে দিন।
ষষ্ঠ ধাপ: দমে বসানো
- পাত্রের মুখ ভালোভাবে ঢেকে দিন, যাতে ভেতরের বাতাস বের হতে না পারে।
- একটি তাওয়া বা ফ্রাইং প্যান গরম করে তার উপর বিরিয়ানির পাত্রটি বসিয়ে দিন।
- অল্প আঁচে ২০-২৫ মিনিটের জন্য দমে রাখুন।
সপ্তম ধাপ: পরিবেশন
- দম হয়ে গেলে ঢাকনা খুলে সাবধানে বিরিয়ানি পরিবেশন করুন।
- রাইতা বা সালাদের সাথে গরম গরম পরিবেশন করুন এবং উপভোগ করুন!
কিছু দরকারি টিপস (Tips)
- বিরিয়ানির চাল সবসময় রান্নার আগে ভালোভাবে ধুয়ে ভিজিয়ে রাখবেন, এতে চাল ঝরঝরে হবে।
- চিকেন ম্যারিনেট করার সময় টক দই ব্যবহার করলে মাংস নরম হয় এবং মশলা ভালোভাবে ঢোকে।
- বেরেস্তা তৈরির সময় পেঁয়াজ সোনালী করে ভাজলে বিরিয়ানিতে সুন্দর একটা স্বাদ আসে।
- দমে দেওয়ার সময় খেয়াল রাখবেন যাতে পাত্রের মুখ ভালোভাবে ঢাকা থাকে, নাহলে বিরিয়ানি পারফেক্টলি সেদ্ধ হবে না।
চিকেন বিরিয়ানি রেসিপি উপকরণ নিয়ে কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)
১. বিরিয়ানিতে কি কি মশলা ব্যবহার করা হয়?
বিরিয়ানিতে সাধারণত বিরিয়ানি মশলা, গরম মশলা, হলুদ গুঁড়ো, মরিচ গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, জিরা গুঁড়ো, এলাচ, দারুচিনি, তেজপাতা ও লবঙ্গ ব্যবহার করা হয়।
২. বিরিয়ানিতে জাফরান কেন ব্যবহার করা হয়?
জাফরান বিরিয়ানিতে সুন্দর রং এবং সুগন্ধ যোগ করে, যা বিরিয়ানির স্বাদ ও আকর্ষণ বাড়ায়।
৩. বিরিয়ানি তৈরির জন্য কোন তেল ব্যবহার করা ভালো?
বিরিয়ানি তৈরির জন্য ঘি এবং সয়াবিন তেল ব্যবহার করা ভালো। ঘি বিরিয়ানির স্বাদ বাড়ায় এবং সয়াবিন তেল ভালোভাবে রান্না করতে সাহায্য করে।
৪. বিরিয়ানিতে আলু ব্যবহার করা কি জরুরি?
আলু ব্যবহার করাটা ঐচ্ছিক। আপনি যদি আলু পছন্দ করেন, তাহলে ব্যবহার করতে পারেন।
৫. বিরিয়ানি দমে দেওয়ার নিয়ম কি?
বিরিয়ানি দমে দেওয়ার সময় পাত্রের মুখ ভালোভাবে ঢেকে একটি তাওয়ার উপর বসিয়ে অল্প আঁচে ২০-২৫ মিনিটের জন্য রাখতে হয়। এতে বিরিয়ানি ভালোভাবে সেদ্ধ হয় এবং মশলার সুগন্ধ ছড়ায়।
৬. চিকেন বিরিয়ানিতে কি কি সবজি ব্যবহার করা যায়?
ঐতিহ্যগতভাবে, চিকেন বিরিয়ানিতে সাধারণত কোনো সবজি ব্যবহার করা হয় না। তবে, আপনি চাইলে আপনার পছন্দ অনুযায়ী কিছু সবজি যোগ করতে পারেন, যেমন আলু।
৭. চিকেন বিরিয়ানি তৈরিতে কতক্ষণ সময় লাগে?
চিকেন বিরিয়ানি তৈরি করতে সাধারণত ১.৫ থেকে ২ ঘণ্টা সময় লাগে।
৮. বাসমতী চালের পরিবর্তে অন্য কোন চাল ব্যবহার করা যায়?
বাসমতী চালের পরিবর্তে আপনি চিনিগুঁড়া চাল ব্যবহার করতে পারেন, তবে বাসমতী চালের মতো স্বাদ পাবেন না।
৯. বিরিয়ানিতে কি রং ব্যবহার করা উচিত?
আমি রং ব্যবহারের বিপক্ষে। জাফরান ব্যবহার করাই ভালো, এটা স্বাস্থ্যসম্মত এবং খাবারের সুন্দর একটা রং নিয়ে আসে।
১০. বিরিয়ানির মশলা কিভাবে তৈরি করতে হয়?
বিরিয়ানির মশলা তৈরি করার জন্য আপনি বিভিন্ন ধরনের গরম মশলা যেমন এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, জয়ফল, জয়ত্রী, শাহী জিরা ইত্যাদি একসাথে মিশিয়ে গুঁড়ো করে নিতে পারেন। এছাড়া, বাজারে রেডিমেড বিরিয়ানি মশলাও পাওয়া যায়।
শেষ কথা
তাহলে, এই ছিল চিকেন বিরিয়ানি তৈরির সহজ রেসিপি এবং প্রয়োজনীয় উপকরণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। আমি আশা করি, এই রেসিপিটি অনুসরণ করে আপনি খুব সহজেই সুস্বাদু চিকেন বিরিয়ানি তৈরি করতে পারবেন। যদি আপনার কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আর হ্যাঁ, বিরিয়ানি কেমন হলো, সেটা জানাতে ভুলবেন না! হ্যাপি কুকিং!