আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “পাট“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।
পাট
ভূমিকা : পাট বাংলাদেশে অর্থকরী ফসল হিসেবে খ্যাত এবং কৃষিজাত দ্রব্যের মধ্যে অন্যতম। এক্ষেত্রে ধানের পরেই পাট চাষের বিষয়টি গুরুত্ব পায়। বিদেশে পাট রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। আর এ কারণে পাটকে স্বর্ণসূত্র বা সোনালি আঁশ বলা হয়।
পাটের উৎপত্তিগত অবস্থান : বাংলাদেশের প্রায় সব স্থানেই পাট উৎপন্ন হয়। পৃথিবীতে যে পরিমাণ পাট উৎপন্ন হয় তার ৮০ ভাগ বাংলাদেশে উৎপন্ন হয়। ফলে ২০ ভাগ পাট এশিয়ার অন্যান্য দেশে জন্মে। এক্ষেত্রে ভারত, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ইত্যাদি দেশের নাম উল্লেখ করা যায়। বাংলাদেশের ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, কুমিল্লা, রাজশাহী, রংপুর, পাবনা ও মেহেরপুর জেলায় অপেক্ষাকৃত পাট উৎপন্ন বেশি পরিমাণে লক্ষ করা যায় ।
পাটের প্রকারভেদ : বাংলাদেশে পাটের নানাবিধ প্রকারভেদ রয়েছে। এর মধ্যে ব্রুস বটম, বি-বটম, তোষা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তবে তোষা পাট উৎকৃষ্ট বলে অনেকে মনে করে থাকে।
পাটের উপকারিতা : পাটের উপকারিতা অনস্বীকার্য। বাংলাদেশ গ্রীষ্মপ্রধান দেশ। তাই পাট থেকে উৎপন্ন সুতা দ্বারা যে কাপড় তৈরি হয়, তা দিয়ে বস্ত্র তৈরি করে বাংলাদেশের মানুষ পরিধান করে গরমকালে আরামবোধ করে থাকে। পাট দ্বারা সুতা ও রেশম তৈরি হয়। পাটকাঠি বেড়া ও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পাটগাছের পাতা দ্বারা ওষুধ তৈরি হয়। আবার পাটের পাতা শাক হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায় । পাট দ্বারা কাগজ ও হার্ডবোর্ড তৈরি হয়। এভাবে পাট আমাদের বিভিন্ন উপকারিতা বয়ে আনে।
অপকারিতা : পাট লাভজনক কৃষিজাত দ্রব্য। তবে এর কিছু অপকারিতা লক্ষ করা যায়, যদিও তা সাময়িক। পাট লাভজনক হলেও এর চাষে অনেক খরচ ও পরিশ্রম বহন করতে হয়। পাট পানিতে পচানোর সময় পরিবেশ দুর্গন্ধময় হয়ে ওঠে এবং রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। এভাবে পরিবেশ দূষণের ফলে মানুষের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে।
উপসংহার : পাট বিদেশে রপ্তানি করে আমরা অধিক মুনাফা অর্জন করি। ফলে পাট বাংলাদেশের মূল্যবান সম্পদ হিসেবে গণ্য হয় । পাট বিদেশে রপ্তানি করে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হলেও কৃষকরা এর সঠিক মূল্য পায় না, এ বিষয়ে সরকারকে সজাগ থাকতে হবে। দেশ ও জাতির অর্থনৈতিক কাঠামো যেন দৃঢ় ও মজবুত হয়— এ বিষয়ে সবাইকে সহায়ক ভূমিকা
রাখতে হবে ।
৭২. চা শিল্প
প্রবন্ধ-সংকেত
ভূমিকা ॥ উৎপন্ন স্থল ॥ চা-চাষ প্রণালি ॥ চা-পাতা সংগ্রহ ॥ চা-পানের উপকারিতা ॥ চা-পানের অপকারিতা ॥ উপসংহার । ভূমিকা : সুস্বাদু পানীয় হিসেবে চা আধুনিক যুগের অন্যতম ও জনপ্রিয় পানীয়। পৃথিবীর প্রায় সব দেশের জনগণই চা পান করে থাকে। বাংলাদেশের চা-পানের প্রচলন তেমন ছিল না। এশিয়া মহাদেশের অন্তর্গত চীন দেশে এর ব্যবহার প্রথমে শুরু হয়েছিল । পরে চা আমাদের দেশে আমদানি করা হয়।
উৎপন্ন স্থল : বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম ও সিলেট জেলায় প্রচুর চা চাষ করা হয়। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি পাউন্ড চা উৎপন্ন হয় বলে জানা যায় ৷
চা-চাষ প্রণালি : চা-চাষ করতে হলে জমিকে উর্বর করে নিতে হয়। চৈত্র-বৈশাখ মাসে চায়ের বীজ ছড়াতে হয়। চায়ের চারা গজালে তা কয়েকদিন পর ছেঁটে দিতে হয়। পরবর্তীকালে নতুন পাতা গজালে তা সংগ্রহ করা হয়। চায়ের এ গাছ থেকে অনেক দিন পাতা সংগ্রহ করা যায় । চা গাছ ৩/৪ হাত লম্বা হতে পারে। তবে বেশি লম্বা হলে চা-পাতা তেমন গজায় না। তাই ২/৩ হাতের বেশি লম্বা হলে এর মাথা ছেঁটে দেওয়া হয় । চা-গাছের জন্য পানি বিশেষভাবে উপকারী। এতে পানি সেচন করে দেওয়া হয়ে থাকে । চা-পাতা সংগ্রহ : চা-পাতা সংগ্রহ করা অত্যন্ত আনন্দদায়ক একটি বিষয় । চা-চাষ এলাকায় স্ত্রী-পুরুষ দলবেঁধে পিঠে ঝুড়ি আটকিয়ে আনন্দের সঙ্গে চা-পাতা সংগ্রহ করে। বছরে চারবার চা-পাতা সংগ্রহ করা যায়। চা-পাতা সংগ্রহের পর তা বাতাসে শুকাতে হয় । পরে চা-পাতা ভাঙার যন্ত্র দিয়ে তা গুঁড়ো করে গুদামঘরে আবদ্ধ করে রাখতে হয়। এর কিছুদিন পর চা চালুনি দিয়ে ছেঁকে বিভিন্ন প্রকারের চা ভাগ করে বিক্রির জন্য প্রেরণ করা হয়। এভাবে চা-পাতা সংগ্রহের কাজটি করা হয় ।
1
চা-পানের উপকারিতা : সাধারণ ও মুখরোচক পানীয় হিসেবে চা বর্তমানকালে বিশ্বের সর্বত্র ব্যবহার হয়ে চলেছে। চা-পান করার ফলে দেহের জড়তা, রাত্রি জাগরণ ও সর্দি-কাশিতে উপশম ও স্বস্তিবোধ হয়। অর্থাৎ চা-পানে শ্রমক্লান্তি দূর হয়। আর এ কারণে কল ও মিল-কারখানার শ্রমিকরা ঘন ঘন চা-পান করে। চা-পানে সাময়িকভাবে স্নায়ুর মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় বলে তা সামান্য পরিমাণে
শরীরে শক্তি আনয়ন করে।
চা-পানের অপকারিতা : চা-পানের অপকারিতা রয়েছে। অধিক চা-পানে শরীরের ক্ষতিসাধন হয়। খালি পেটে চা-পান করলে গ্যাসট্রিক আলসার হয়ে থাকে। আবার চা অনেকের ক্ষুধা নাশ করে। চা-পানে অনেকে অনিদ্রায় ভোগে। এভাবে চা পানের উপকারিতার পাশাপাশি এর অপকারিতাও রয়েছে।
উপসংহার : বাংলাদেশের জনগণের কাছে চা পান করা একটি অন্যতম অভ্যাস হয়ে পড়েছে। এটি বর্তমানকালে জনপ্রিয় পানীয় হিসেবে গণ্য । চা চাষ করে বিদেশে রপ্তানি করে অধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায়। চা বাগানে কাজ করে অনেক শ্রমিক তাদের জীবিকা নির্বাহ করে চলেছে। তাই চা চাষ করা এবং চা শিল্পের প্রতি যত্নবান হওয়া প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য বলে মনে
করা হয় ।
সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করছি আমাদের এই পোস্ট থেকে রচনা যেটি তুমি চাচ্ছিলে সেটি পেয়ে গিয়েছ। যদি তুমি আমাদেরকে কোন কিছু জানতে চাও বা এই রচনা নিয়ে যদি তোমার কোনো মতামত থাকে, তাহলে সেটি আমাদের কমেন্টে জানাতে পারো। আজকের পোস্টে এই পর্যন্তই, তুমি আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করে আমাদের বাকি পোস্ট গুলো দেখতে পারো।